আমার ছেলেবেলা -- 🥰 " গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে "

in hive-129948 •  6 months ago 
আসসালামু আলাইকুম

আমার বাংলা ব্লগে সবাইকে স্বাগতম।


হ্যালো বন্ধুরা,

মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার প্রিয় "আমার বাংলা ব্লগ"এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ,কেমন আছেন সবাই?আশা করি সবাই ভাল আছেন।আমিও আলহামদুলিল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌র অশেষ রহমতে বেশ ভাল আছি।আর প্রতিনিয়ত ভালো থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশাকরি আপনারা ও এমনটাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন ভালো থাকার।

আমি @shimulakter,"আমার বাংলা ব্লগ"এর আমি একজন নিয়মিত ইউজার।আমি বাংলাদেশ ঢাকা থেকে আপনাদের সাথে যুক্ত আছি।আমি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি নতুন নতুন পোস্ট শেয়ার করতে।প্রতিদিনের মত আমি আজও নতুন একটি ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি।ছেলেবেলার কিছু স্মৃতি আজ আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এলাম।আমি বিশ্বাস করি আমার আজকের এই স্মৃতি রোমন্থনের পোস্টটি পড়লে আপনাদের অনেকেরই ছেলেবেলার কিছু স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠবে।

গ্রীষ্মকালীন ছুটিতেঃ


আমার ছেলেবেলা_20240515_001927_0000.jpg

canva দিয়ে বানানো
3YjRMKgsieLsXiWgm2BURfogkWe5CerTXVyUc6H4gicdRPgGed8pU4cH2rA8Hx16HqG9PMWGnM3gfjBmGCHeMt4UCtucTcrF7jmweXEpit...ZGutiKi7KVTt5nDQoetrgsGgZGNELKiF2LVTivTiw6zUbx3qr8PhoJ4RufavUzR2x51cVwfS9ebHEGz1Yoiz7SSqpLp4z6AD13BwUvTWuACAUcDbvGNfob6NSa.png

প্রতিটি মানুষের জীবনে শৈশব হচ্ছে সোনালী অতীত।সেই অতীত কখনও সুখের।কখনও বা কষ্টের।সেই দিন গুলো ছিল খুবই সুন্দর ও আনন্দমুখর।সেই ছেলেবেলার স্মৃতিগুলো আজ মনে হলে খুবই ভালো লাগা কাজ করে।কখনও বা হেসে গড়িয়ে পরি।সেই সময়টাতে কতো কিছুই না ভালো লাগা কাজ করতো। সেই রকম এক ভালো লাগা হলো স্কুলের গ্রীষ্মকালীন ছুটি।গ্রীস্মকালীন ছুটিতে আমরা সবাই খুব আনন্দ নিয়ে বাড়িতে যেতাম।সেই স্মৃতি আজ আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে এলাম।

জৈষ্ট্য মাসকে মধুমাস বলা হয়।কারন এই মাসে নানা রকমের মিষ্টি ফল পাওয়া যায়।আর বাড়িতে যাদের গাছ আছে তাদের গাছে গাছে নানান রকমের ফল যেমন আম,কাঁঠাল,জাম ইত্যাদি দেখা যায়। আমার দাদা বাড়ি যেহেতু বিক্রমপুরে।যদিও মনে হয় খুব কাছে।কিন্তু আগে কিন্তু এতো কাছে লাগেনি।কারন বাসে করে গেলে দুইটা ফেরি পার হয়ে তবেই বাড়িতে যেতে পারতাম।আর এখন তো মনে হয় এই এখানে।

ছোটবেলায় আমরা যৌথ পরিবারে ছিলাম।সবাই ঢাকাতেই থাকেন।যেহেতু আমার দাদা ছিলেন না।তিনি অনেক আগে যখন আমার আব্বুর বয়স ৫/৬ তখন তিনি মারা যান।দাদু গ্রামের বাড়িতে থাকতে চাইলেও আব্বু আর চাচা রাজি হতেন না।একা একা দাদু ওখানে থেকে কি করবেন।আমাদের বাড়িতে বেশ কয়েকটা আম গাছ ছিল।আমগুলো একেকটা একেক রকমের স্বাদের ছিল।দাদু ঠিক জৈষ্ঠ্যমাস আসার আগেই আব্বু আর বড় চাচাকে রাজি করিয়ে বাড়ি চলে যেতেন।তখন তো আর মোবাইল ছিল না।তাই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েই থাকতে হতো।স্কুলে আমাদের গ্রীষ্মকালীন ছুটি এই জৈষ্ঠ্যমাসে প্রায় ১৫/২০ দিন দিতো।আমার বড় চাচী যেতে না চাইলে বাড়িতে আম্মু আমাদের সাথে বড় চাচার মেয়েদের নিয়ে নিতো।আমরা সেইম বয়সের ছিলাম।তাই আনন্দের মাত্রাটা বেশী হতো।সবাই মিলে হৈ হুল্লোর করে বাড়িতে যেতাম।আমার আব্বু খুব আমোদী একজন মানুষ। বাড়িতে গেলে দেখতাম সবাই দেখতে আসতো আমাদের।গ্রামের লোকজন আমাদের বাড়িতে সকাল,সন্ধ্যা আসতেই থাকতো। আর সবার জন্য আম্মু চা নাস্তার আয়োজন করতো।এতো লোকজন আসতে দেখলে আনন্দ হতো আরো বেশী।আমার আব্বু নানান বিনোদনের আয়োজন করতো।বাচ্চারা কে কি গান,নাচ করবে করতে বলতো।আর পুরষ্কারের ও ব্যবস্থা করতো।তখন যে গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না কিংবা আমাদের বাড়ির আর কোন লোকজন নেই সেটা একদমই বোঝার উপায় ছিল না।আমার আব্বু এতোটাই মাতিয়ে রাখতেন।তবে বুঝতাম আম্মুর ভীষণ কষ্ট হয়ে যেতো।কারন গ্রামের বাড়িতে মাটির চুলায় রান্না করা লাগতো।যেহেতু আম্মু অভ্যস্থ নয় তাই কষ্ট তোএকটু হতো তা বেশ বুঝতে পারতাম।

আমার দাদু এক মাস আগে এসে আমাদের জন্য আম দিয়ে নানা রকমের জিনিস তৈরি করে রাখতেন।আমাদের জন্য আম পেরে খাটের নীচে বিছিয়ে রেখে দিতেন।কোন আমটা কাঁচা,আর কোনটা পাকা সব আলাদা আলাদা করে বেছে বেছে রাখতেন।আর নানান রকমের আমের আচার,আমের মোরব্বা, আমসত্ব, আমচূর কোনটার একটাও বাদ রাখেনি করতে।আমাদের একটা আম গাছ ছিল যে আম গাছের আম প্রচুর আঁশ।এই আম কেউ তেমন পছন্দ করতো না আঁশের জন্য।অথচ আমার কাছে ওই আঁশ আমটাই ভীষণ ভালো লাগতো।এখন দাদু নেই। আর কেউ আম পেরে পেরে বিছিয়ে রাখে না।আজ এতো এতো নামের ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের আম খেয়ে থাকি।কিন্তু সেই ছেলেবেলার গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটাতে বাড়ি গিয়ে দেশী আম খাওয়ার মতো আম আর কোথাও খুঁজে পাই না এখন।তার স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে।সেই আম গাছ গুলো এখন আর নেই।আনন্দ গুলো রয়ে গেছে মনের গভীরে।দাদুর হাতে রান্না করা সেই মাটির চুলার খাবার এখনো আমি অনভুব করি মনে মনে।

আমার ভাই-বোন,আর চাচাতো বোনরা মিলে আমাদের পুকুরে মাছ ধরার আয়োজন করতাম।বাজার ছিল অনেক দূরে।আমার দাদু ভাইয়াদের জন্য আগেই গ্রামের কাউকে দিয়ে বরশি কিনে রেখে দিতেন।আমিও মাছ ধরবো বলে বায়না করতাম।তারপর পুকুরে লাইন ধরে বসে মাছ ধরতে বসে যেতাম।কথা বলতে গেলে ভাইয়া ইশারা করে চুপ করতে বলতেন।আমি বলতাম কেন কথা বললে কি হবে? তখন ভাইয়া বলতো মাছেরা কথা শুনলে আর বরশির খাবার খেতে ও আসবে না আর মাছ ও ধরা হবেনা।ওদিকে আমিতো অস্থির হয়ে যেতাম মাছ তুলতে।মাছ একটু খুটলেই দিতাম টান।কিন্তু মাছ আর উঠতো না খেয়েই চলে যেতো।যা কিছু মাছ পেতো ভাইয়াই পেতো।সেই দিনগুলো সত্যি আর ফিরে আসবে না।

গ্রীষ্মকালীন ছুটি মানেই আমাদের সুন্দর সময় কাটানো বাড়িতে গিয়ে।আমাদের বাড়ির পাশেই চিকন একটা খাল ছিল।আমি যে আঁশ আমটা খেতে পছন্দ করতাম সেটার একটা ডাল নীচু হয়ে খালের দিকে পরেছিল।সেই ডালে বসে আমি দোল খেতাম।আর আমার পছন্দের সেই আ্শ আম খেতাম।খুব ভালো লাগতো।সেই গুলো আজ শুধু ই স্মৃতি।আর ভালো লাগা সেই দিনগুলি।ফিরে আসবে না আর কখনও।আজ ছেলের স্কুলের সামার ভ্যাকেশন বা গ্রীষ্মকালীন ছুটির কথা শুনে হঠাৎ করে ই ফেলে আসা সেই দিনগুলোর কথা বড্ড বেশী মনে পরে গেলো।খুব চমৎকার ভাবেই ছুটি কাটাতাম।আপনারা কে,কিভাবে গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটাতেন তা শুনবো আপনাদের কাছ থেকে।আমি আমার অনুভূতি গুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম।আশাকরি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে আমার এই অনুভূতি গুলো।

পোস্ট বিবরন


শ্রেণীআমার ছেলেবেলা
ক্যামেরাSamsungA20
পোস্ট তৈরি@shimulakter
লোকেশনবাংলাদেশ

আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন লেখা নিয়ে ।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।আমার ছেলেবেলার অনুভূতি গুলো পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ সবাইকে

@shimulakter

আমার পরিচয়


আমি শিমুল আক্তার।আমি একজন বাংলাদেশী।বাংলাদেশ ঢাকা থেকে আমি আপনাদের সাথে যুক্ত আছি।আমি এম এস সি ( জিওগ্রাফি) কমপ্লিট করি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আমি বিবাহিতা।আমি একজন গৃহিণী।আমি একজন স্বাধীনচেতা মানুষ। ভালোবাসি বই পড়তে, নানা রকমের রান্না করতে,আর সবাইকে নতুন নতুন রান্না করে খাওয়াতে ভীষণ ভালোবাসি।ফটোগ্রাফি করতে আমি ভীষণ পছন্দ করি।বাংলায় লিখতে আর বলতে পারার মধ্যে অনেক বেশী আনন্দ খুঁজে পাই।নিজের মধ্যে থাকা সৃজনশীলতাকে সব সময় প্রকাশ করতে পছন্দ করি।এই বাংলার মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছি বলে নিজেকে অনেক ধন্য মনে করি।

7AzetLrHVAgHwGYdyYhcd6W1ZFmwPuKeayULXZvV74jWJiYdxcTDg2LhEfugT9XQiehdVjbtAbBU1XdRNXiEF84z5xvEBxaDkrUVjrn3AA...Lme7uHzhBsZNhAwjoPuur37mLpdDUuvdg1BAY5TZSuBhbAxCSvbNMhw31WQJNBoEaz5nQZwwfEzvj2CLYAoyJuR7DiEL6442cdxyPvPjEPk4inCxeffnYMCVXL.png

2r8F9rTBenJQfQgENfxADE6EVYabczqmSF5KeWefV5WL9WQrQvqP5nhp7XM51LVxoiwvG4n2SMPJqq4jr2WDgyE2QvgqfT2KbJEaeoc2UiMkyE3Lt3BykMds72QZ36oyQ.png

2FFvzA2zeqoVJ2SVhDmmumdPfnVEcahMce9nMwwksSDdRvQjV74EiQgbJ1bHnuaQtMGJ82DmjK2jvfqXMgqNbyA8bTES8NsicPw9oefRmFaB9aZAvDYQNLHWt1W7g.png

6bhseHAdLtYRoe4mZ6fU3gFc8eKGc3JgYMfqGaKxkR3mYxeToZJatrzXJ26wyJvrfyUjWUHbwevxJfcy1wNaX2uYf5yHRjEM6kRmppRUgc...Y4qhGk41e9xshdKq7axZeLWprzfJqgtshHQPZjCGuXiyHFG1XqYcZSdGGLYKKmVtY1zvpEFteA1FrU83LMRPP7BcAne3avpKyGdHz9yne2nakYyhwHTfUardAv.png

6bhseHAdLtYRoe4mZ6fU3gFc8eKGc3JgYMfqGaKxkR3mYxgugFkjBFNEHgnHxgjqRLKWnKFTwwKJ9vDEph9jyEpATxyrkzsRxUofieSXvW...XVCPrZEiBQY3DNWnVp6gQMYW4TcQUU4y1uo3Ezg1XbNauP1DnGa1WaLqAP9WHuqV91uPvSqP1kx1PYJ64PVyuWqBr4dV3UwHGUMTVT74SoLbnwqJdiWJhDn669.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

গ্রীষ্মকালে আপনি ছুটি কাটানোর সময় বাড়িতে গিয়ে দেখি আম খাওয়ার অনেক সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। যদিও আমি আম খেতে অনেক পছন্দ করি তবে আপনার কথাগুলো পড়ে আমারও ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আসলে যখন ছোট ছিলাম তখন বাড়িতে ঠিক এভাবেই আমি খেতাম তবে দিন যত যাচ্ছে ব্যস্ততা তো বেড়ে যাচ্ছে যাই হোক ধন্যবাদ আপনাকে আপনার স্মৃতিগুলো শেয়ার করার জন্য।

গ্রীষ্মকালীন ছুটি খুব আনন্দ নিয়েই কাটানো হতো।ধন্যবাদ আপনাকে।

আপু আপনি আজকে আমাদের মাঝে খুবই সুন্দর একটা পোস্ট শেয়ার করেছেন। আপু আপনার আজকের পোষ্টের মাধ্যমে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে আপনার অনুভূতিগুলো পড়ে খুব ভালো লাগলো। আপনার দাদু আপনাদের জন্য একমাস আগে থেকেই আমের নানা রকম কিছু তৈরি করে রেখে দিতেন। এছাড়াও ঠিকই বলেছেন আপনি যে জৈষ্ঠ্য মাছ হচ্ছে মধুমাস। কারণ এ সময় প্রায় ফল পাওয়া যায়। সবমিলিয়ে আপনার গ্রীষ্মকালীন ছুটিটা বেশি দারুন ভাবে কাটতো বিষয়টা বুঝতে পারলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

ধন্যবাদ আপনাকে।

অনেক সুন্দর স্মৃতিচারণ করেছেন আপু। আপনার এত সুন্দর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আমিও আমার অতীতের মধ্যে হারিয়ে গেছিলাম। আপনাদের মত আমিও মাছ ধরতাম আমার চাচাতো দুই বোন দের সাথে। আমাদের বাড়িতে এখনো সেই দুইটা পুকুর রয়েছে। আর দাদা দাদি কবে এইতো চলে গেছেন ওপারে। শুধু স্মৃতিগুলো রয়েছে যে কোন মুহূর্তে স্মরণ হয় এভাবে।

ধন্যবাদ আপু।