অনু গল্প-মায়াবী চোখ||

in hive-129948 •  3 months ago 

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।


বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমি @shopon700 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। অনু গল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। মাঝে মাঝে গল্প লিখি। বিশেষ করে অনু গল্প লিখে সবার মাঝে শেয়ার করতে ভালো লাগে। আজকে নতুন একটি অনু গল্প শেয়ার করবো। আর আজকের অনু গল্পের নাম হচ্ছে মায়াবী চোখ। তো বন্ধুরা এবার চলুন আমার লেখা অনু গল্প পড়ে নেয়া যাক।

মায়াবী চোখ:

woman-6212065_1280.jpg
source


সকাল বেলায় রাকিব যখন নিজের ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়েছিল তখন হঠাৎ করেই বাসস্টান্ডে একটি মেয়ের সাথে তার দেখা হয়ে যায়। বোরখা পরা মেয়েটির মায়াবী চোখ দুটো দেখে রাকিব সেই মায়াবী চোখের মায়ায় পড়েছিল। অপলক দৃষ্টিতে রাকিব যখন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ছিল তখন মেয়েটি আনমনে কিছু একটা ভেবে যাচ্ছিল। হয়তো রাকিবের দিকে তার কোন খেয়াল ছিল না। অপলক দৃষ্টিতে মেয়েটিকে দেখছিল। এভাবে কেটে যায় কিছুক্ষণ। এরপর চলে আসে বাস। সবাই যে যার মত করে বাসে উঠতে শুরু করে। কিন্তু মেয়েটি তখনো দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার বান্ধবী কাছে গিয়ে বলে বাস চলে এসেছে এবার চল। মেয়েটির অদ্ভুত আচরণ দেখে রাকিব কিছুটা অবাক হয়ে যায়। ভাবে এ কেমন মেয়ে বাস এসে পড়েছে অথচ তার যাওয়ার কোন তারা নেই। দেখতে দেখতে বাস চলতে শুরু করেছে। মেয়েটি সেই আগের মতই আনমনে তাকিয়ে আছে। মেয়েটির এই মায়াবী চোখ দেখে রাকিব যেন নিজেকে আর আটকে রাখতে পারছিল না। কিন্তু কি করে মেয়েটির কাছে যাবে সেটাও বুঝতে পারছিল না। দেখতে দেখতে কেটে গেল কিছুটা সময়।

রাকিব নিজের গন্তব্যে চলে এলো। কিন্তু কেন জানি রাকিবের নামতে ইচ্ছে করছে না। এরপর আরও কিছুটা সময় রাকিব সেখানে থেকে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই মেয়েটি নেমে গেল। রাকিব মেয়েটিকে নেমে যেতে দেখে সেও গাড়ি থেকে নেমে গেলো। মেয়েটির বান্ধবীর সাথে মেয়েটি যাচ্ছিল। আর মেয়েটির বান্ধবী তাকে কিছু একটা বলতে যাবে তখনই রাকিব পেছন থেকে বলে আমার কিছু বলার আছে। কিন্তু এই কথা শুনে মেয়েটি আর সেখানে দাঁড়ায় না। তার বান্ধবীর হাত চেপে ধরে বলে চলো তাড়াতাড়ি ক্লাসে যেতে হবে। এরপর দ্রুতই তারা সেখান থেকে চলে যায়। রাকিব নিজের ভার্সিটিতে চলে যায়। রাকিব মেয়েটিকে কিছুতেই ভুলতে পারছে না। তার মায়াবী দুটি চোখের জাদুতে রাকিব নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে। এভাবে দেখতে দেখতে দিন কেটে যায়। এরপর রাত কেটে যায়। সকাল হতে না হতেই রাকিব আবার সেই জায়গায় চলে যায়। যেখানে মেয়েটির সাথে তার প্রথম দেখা হয়েছিল।

এভাবে কেটে যায় বেশ কিছুদিন। রাকিব প্রতিদিন দূর থেকে মেয়েটিকে দেখতো। আর মনের মাঝে ভালোবাসার ছবি আঁকতো। রাকিব মেয়েটিকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছিল। কিন্তু কিভাবে মেয়েটিকে তার ভালোবাসার কথা বলবে বুঝতে পারছিলো না। একটি অপরিচিত মেয়ের মায়াবী দুটো চোখ দেখে রাকিব তাকে ভালোবেসে ফেলেছিল। এরপর হঠাৎ করে রাকিব মেয়েটিকে আর দেখতে পেল না। কেটে গেল বেশ কয়েকদিন। রাকিব কোথাও মেয়েটিকে খুঁজে পেল না। রাকিবের খুবই কষ্ট হয়েছে। প্রতিদিন রাকিব মেয়েটির জন্য অপেক্ষা করতো। হঠাৎ একদিন রাকিব দেখে মেয়েটির বাবা তাকে রিকশা থেকে নামিয়ে দিচ্ছে। এসব দেখে রাকিবের কেন জানি সন্দেহ হয়। এরপর সে আরো কিছুটা সময় সেখানে কাটায় আর মেয়েটির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

এবার রাকিব মেয়েটিকে বলে আমি আপনার মায়াবী চোখের মায়ায় পড়েছি। আপনার মায়াবী দুটি চোখ দেখে আমার মনে ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। এই কথা শুনে মেয়েটি অবাক হয়ে যায়। এরপর মেয়েটি বলে আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। তখন রাকিব বলে আমার কোন ভুল হচ্ছে না। এবার মেয়েটি বলে আপনি যে মায়াবী চোখের মায়ায় পড়েছেন সেই মায়াবী চোখে কোন আলো নেই। একটি দুর্ঘটনায় আমি আমার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছি। এই কথা শুনে রাকিব খুবই কষ্ট পায়। রাকিবের চোখে পানি চলে আসে। কিন্তু এরপর রাকিব নিজের হাত বাড়িয়ে মেয়েটির হাত দুটো ধরে বলে তোমার চোখের দৃষ্টি নেই তাতে কি হয়েছে আমি আমার চোখ দিয়ে তোমাকে পুরো বিশ্ব দেখাবো। মেয়েটি বলে আপনি আমাকে করুনা করছেন? তখন রাকিব বলে ভালোবাসা কোন করুণা নয়। আমি ভালোবেসে সারাজীবন তোমার হাত দুটো ধরে বাঁচতে চাই। আর তোমার মায়াবী চোখের মায়ায় ভালোবাসা খুঁজে নিতে চাই।

🥀ধন্যবাদ সকলকে।🌹


আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20240504_102129.jpg

আমি মো: স্বপন । আমি একজন বাংলাদেশী। ব্যক্তিজীবনে আমি আইন পেশার সাথে জড়িত। এছাড়াও ফটোগ্রাফি, পেইন্টিং ও ব্লগিং করা হচ্ছে আমার অন্যতম শখ। আমার স্টিমিট আইডি নাম @shopon700। আমি ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে স্টিমিট ব্লগিং শুরু করি। আমি গর্বিত, কারণ আমি আমার বাংলা ব্লগের একজন ভেরিফাইড ব্লগার।


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

image.png

ভাইয়া শুনেছি পড়েছি অনু কবিতা কিন্তু অনুগল্প আজও পড়া হয়নি। আপনি আজকে মায়াবী চোখ অনেক সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করেছেন। ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যা কোন কিছুই বাধা মানে না। যেমন রাকিব মেয়েটির চোখের মায়ায় পড়ে তাকে ভালবেসে ছিল। শেষে সে যখন জানতে পারে মেয়েটি তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে তার পরেও সে তার হাত বাড়িয়ে তাকে নিজের করে নিয়েছে। সত্যিই পৃথিবীতে যদি এরকম প্রকৃত ভালোবাসা প্রতিটি মানুষের মাঝে থাকত তাহলে পৃথিবী আরো সুন্দর হতো। ধন্যবাদ ভাইয়া।

ঠিক বলেছেন আপু সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো এমনই হয়। আর সব সময় সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো সার্থক হয়। ধন্যবাদ আপু মন্তব্য করার জন্য।

এই গল্পটা সত্যি অনেক বেশি সুন্দর ছিল। রাকিব ওই মেয়েটার মায়াবী দুইটা চোখ দেখে তাকে ভালোবাসলেও মেয়েটা ওই মায়াবী চোখ গুলো দিয়ে দেখতো না শুনে খুব খারাপ লেগেছে। কিন্তু রাকিব তখনও দূরে না সরে গিয়ে মেয়েটার এরকম অবস্থায়ও তার কাছে থাকবে এবং ভালোবাসবে বলেছিলে দেখে খুব ভালো লাগলো। যদিও রাজিব প্রথমে মেয়েটার এই অবস্থার কথা শুনে কষ্ট পেয়েছিলে, কিন্তু পরবর্তীতে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে দেখে ভালো লেগেছে। নিজের চোখ দিয়ে তাকে বিশ্ব দেখাবে বলেছে কথাটা সত্যি অনেক ভালো লাগলো। অনেক সুন্দর ছিল এই গল্পটি।

রাকিব ওই মেয়েটির মায়াবী চোখ দেখে ভালোবেসে ছিল। শেষ পর্যন্ত তার সাথেই ছিল আপু। কারণ তার সত্যিকারের ভালোবাসা মেয়েটির প্রতি ছিল। ধন্যবাদ আপু মন্তব্য করার জন্য।

আসলে কিছু কিছু মানুষের চোখের মায়া এতটাই মায়াবী হয় যে, দেখলে আর সেটা ভুলা যায় না। আর তেমনি ভাবে রাকিব নিজেও পারেনি সেই মেয়েটার চোখের মায়া ভুলে যেতে। তাইতো প্রতিনিয়তই মেয়েটার জন্য অপেক্ষায় থাকতো। কিন্তু এক্সিডেন্টে মেয়েটা চোখের দৃষ্টি হারিয়েছে শুনে খুব খারাপ লেগেছে। কিন্তু রাকিব তাকে আশা দিয়েছে, আর তাকে ভালোবাসা দেওয়ার কথা দিয়েছে। সব সময় পাশে থাকবে বলে নিজের ভালোবাসাটা প্রকাশ করেছে। মেয়েটা প্রথমে করুণা মনে করলেও, পরবর্তীতে বুঝেছিল রাকিবের ভালোবাসাটা। এরকম ভালোবাসা সত্যি খুব সুন্দর।

ঠিক বলেছেন ভাইয়া কিছু কিছু মায়াবী চোখের মায়ায় অনেকে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। আর নিজের ভালোবাসা খুঁজে পায়। ধন্যবাদ ভাইয়া মন্তব্য করার জন্য।

সত্যি এইরকম ভালোবাসা খুব একটা দেখা যায় না।মেয়েটি অন্ধ জানার পরেও রাকিব তার পাশে থেকেছিল শেষ পর্যন্ত।ভালোবাসা এমনি হওয়া উচিত।খুবই সুন্দর একটি গল্প লিখেছেন ভাইয়া। আপনার লেখা গল্পটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।