আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা-২২|| আমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।


বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমি @shopon700 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি দারুন একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি খুবই স্মরণীয়। এবারের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সবাই নিজের অনুভূতি তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছে। তাইতো আজকে আমি আমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার অনুভূতি জানতে পেরে আপনাদের অনেক ভালো লাগবে।

আমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি:

mobile-g3b4cb30f1_1920.jpg
source


আমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার পিছনে অনেক গল্প লুকিয়ে আছে। এখনকার সময় যেমন খুব সহজেই সবাই মোবাইল ফোন হাতে পায় আমাদের সময় তেমনটা ছিল না। অনেক কষ্টে নিজের একটি মোবাইল পেয়েছিলাম। সেই অনুভূতি আজকে শেয়ার করতে যাচ্ছি। সেই সময় হয়তো এত উন্নত ধরনের মোবাইল ছিল না। তবে একটি মোবাইল ফোনের আশা সবাই করতো। মোবাইল কেনার কথা বাড়িতে বলার কখনো সাহস হতো না। বন্ধুরা যদি কেউ মোবাইল কিনতো তাহলে মনে মনে খারাপ লাগতো। আমার ভাইয়া সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন। ভাইয়া যখন ছুটিতে বাসায় আসলো তখন ভাইয়ার হাতে নতুন চকচকে নোকিয়া ১৬০০ মডেলের মোবাইল ফোন দেখে আমার লোভ লেগে গেল। ভাইয়া আমাকে খুবই ভালোবাসতো। তাই মনে মনে কিছুটা আশার আলো সঞ্চার হলো। মনে মনে ভাবলাম আমি যদি ভাইয়ার কাছে এই মোবাইলটি চাই তাহলে অবশ্যই না করতে পারবে না। তবে বাবা মায়ের ভয়ে বলার সাহস পাচ্ছিলাম না।

আমার ভাবি ছিল আমার খুবই প্রিয় বন্ধু। তাই আমি ভাবির কাছে বায়না করলাম যেভাবেই হোক সেই মোবাইলটি আমার চাই। ভাবি আমার কথা কখনোই ফেলতে পারে না। তাই সেদিনও ভাবি রাজি হয়ে গেল। অবশেষে ভাবি ভাইয়াকে রাজি করালো যে ভাবির সেই মোবাইল ফোনটি লাগবে। ভাইয়া আর না করতে পারল না। যেদিন ভাইয়া চলে গেল সেদিন ভাবি সেই মোবাইলটি আমাকে উপহার দিল। সত্যি কথা বলতে আমার ভাবি আমার বড় বোনের মত। তিনি আমায় ছোট ভাইয়ের মতো আদর করতেন। তাইতো আমার চাওয়া গুলো পূর্ণ করতেন। অবশেষে মোবাইল ফোনটি হাতে পেয়ে গেলাম। প্রথম নিজের মোবাইল ফোন হাতে পেয়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। বন্ধুদেরকে বারবার দেখাতাম সেই মোবাইলটি। সবচেয়ে মজার ব্যাপার ছিল ভাবি আর আমি মোবাইল ফোন নিয়ে বেশ দুষ্টুমি করতাম। মোবাইল ফোনে গেম খেলা নিয়ে অনেক মার খেয়েছি বাবার কাছে। অনেক সময় বাবা চার্জার লুকিয়ে রাখতেন যাতে করে চার্জ শেষ হয়ে গেলে আমি আর গেম খেলতে না পারি। দিন যত কাটতে লাগলো মোবাইলটির প্রতি ভালোবাসা আরো বেড়ে গেল। এরপর ধীরে ধীরে মনের মাঝে আলাদা রকমের দুষ্টুমি তৈরি হলো। তখন সবার কাছে হয়তো মোবাইল ফোন ছিল না। তাই যখন বন্ধুরা মিলে একত্রিত হতাম তখন কয়েকটি ডিজিট মিলিয়ে নাম্বার তৈরি করে ফোন দিতাম। আসলে তখন এই বিষয়গুলো আমার কাছে খুবই আনন্দের ছিল। বন্ধুদের পাল্লায় পরে কতই না দুষ্টুমি করেছি। একদিন তো এক মহিলার ঝাড়ি শুনে দুই দিন আর ফোন হাতে নেইনি।

সেই মোবাইলটির মাধ্যমে আমি প্রথম মোবাইল সম্পর্কে খুব ভালোভাবে বুঝতে শিখি। এই মোবাইলটি দিয়েই আমি যত দুষ্টুমি করেছি। এরপর শুরু হলো এসএমএস খেলা। যাদের বাসায় মোবাইল ফোন ছিল তারা সবাই এসএমএস দিত কখন খেলতে যাবে। আমার বাবা খুবই রাগী মানুষ ছিলেন। তিনি আমাকে খুব একটা বাহিরে যেতে দিতেন না। যদি কোন বন্ধু আমার বাসায় আসতো আমাকে ডাকতে তাহলে বাড়ির গেট থেকেই ধমক দিয়ে পাঠিয়ে দিতেন। এরপর যখন ফোন আসলো হাতে তখন আমার বন্ধুরা আমার বাসায় আর না এসে ছোট্ট করে এসএমএস পাঠিয়ে দিত কোথায় যেতে হবে। অনেক কৌশলে বাবার চোখে ফাঁকি দিয়ে সেখানে পৌঁছে যেতাম। আসলে সেই দিনগুলোর কথা মনে হলে এখন অনেক হাসি পায়। সেই সময় মেমোরি কার্ড ছিল না। তাই হয়তো গান শোনা যেত না কিংবা ভিডিও দেখা যেত না। মাঝে মাঝে রাস্তা দিয়ে মোবাইল ফোনের রিংটোন বাজাতে বাজাতে যেতাম। আসলে সেই অনুভূতিগুলো সত্যি অনেক মধুর ছিল। যখন রিংটোন বাজাতাম তখন আমার গ্রামের বন্ধুরা আমার পিছে পিছে আসত। তখন নিজেকে বেশ রাজা রাজা মনে হতো। সত্যি সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে আলাদা রকমের অনুভূতি তৈরি হয়।

আমি যখন অবসর সময় পেতাম তখন মোবাইলে সাপ গেম, ক্রিকেট, এবং ক্রাম খেলতাম। মাঝে মাঝে বইয়ের ফাঁকে লুকিয়ে লুকিয়ে সাপ খেলতাম। আজকে এই লেখাগুলো লিখতে গিয়ে একটি স্মৃতি মনে পড়ে গেল। একদিন আমি লুকিয়ে লুকিয়ে গেম খেলছিলাম এমন সময় হঠাৎ করে লক্ষ্য করলাম আমার বাবা আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। বাবা যে কখন এসে দাড়িয়েছে তা আমি বুঝতেই পারিনি। এরপর যখন দেখলাম বাবা পিছনে দাঁড়িয়ে আছে দেখে আমার গলা একেবারে শুকিয়ে গিয়েছিল। বুঝতে পারছিলাম না কোন দিকে দৌড় দিব। তখনই আমি মনে মনে বুঝে গিয়েছিলাম আমার কপালে আজ মাইর আছে। তবে সেদিন অনেক বড় বিপদের হাত থেকে ভাবি আমাকে রক্ষা করেছিল। বাবাকে সামলানোর জন্য ওই একটি মানুষই যথেষ্ট ছিল। অবশেষে আমি ভয়ংকর পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম। তবে সেদিনের পর থেকে খুব সাবধানে লুকিয়ে লুকিয়ে গেম খেলতাম। কোন চিপায় চাপায় গিয়ে যে গেম খেলতাম সেটা শুধু আমি জানি। কখনো বাঁশ গাছের আড়ালে, কখনো ক্ষেতের মাঝখানে কিংবা পুকুর পাড়ে। এই জায়গাগুলো ছিল আমার এবং আমার বন্ধুদের আস্তানা। সবাই মিলে সেখানে বসে বসে মোবাইলে গেম খেলতাম এবং রিংটোন শুনতাম। সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়লে অতীতের মাঝে হারিয়ে যাই। সত্যিই সেই স্মৃতিগুলো খুবই মধুর ছিল। কারণ সেই সময় মনের মাঝে কোন জটিলতা ছিল না। সবকিছুই ছিল সহজ এবং সাবলীল।

সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এখন অনেক ভালো মোবাইল হাতে পেয়েছি। কিন্তু সেই প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতির মতো এখন আর সেই অনুভূতি তৈরি হয় না। আসলে সময় বদলে গেছে। তাই অনুভূতিও বদলে গেছে। কিন্তু প্রথম হাতে পাওয়া মোবাইলের অনুভূতি দামি মোবাইলের মাঝে কিছুতেই আর খুঁজে পাই না। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে সেই অনুভূতিগুলোর স্মৃতিচারণ হয়ে গেল। প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার প্রত্যেকটি মুহূর্ত অনেক মধুর ছিল। এ যেন এক অন্যরকম ভালো লাগার অনুভূতি ছিল। যে অনুভূতিগুলো লিখলেও কম হয়ে যাবে। হয়তো পুরোপুরি ভাবে তুলে ধরা সম্ভব হবে না। কিছু কিছু স্মৃতি সারা জীবন থেকে যায়।

আমি চেষ্টা করেছি প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য। আশা করছি আমার এই পোস্ট সকলের কাছে ভালো লেগেছে।


f82b22f9-8ba1-4faa-94e8-4250452f3e5b.jpeg


Logo.png


🥀ধন্যবাদ সকলকে।🌹

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানায় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য, আপনার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ দেখতে পেয়ে খুবই ভাল লাগল এবং এর প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আপনি আপনার প্রথম মোবাইল পাওয়ার অনুভূতি সুন্দর ভাবে প্রকাশ করেছেন। আসলে মোবাইল প্রথম পাওয়ার অনুভূতিটা দারুন ছিল।

ভাইয়া আপনাকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার এই পোস্টটি পরিদর্শন করার জন্য। আমি চেষ্টা করেছি নিজের অনুভূতি তুলে ধরার জন্য।

আপনার জীবনের প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি বেশ চমৎকার। আপনার ভাইয়া অনেক ভালো মনের মানুষ এবং আপনি অনেক ভালো মনের ভাবি পেয়েছেন যা অনেকের কপালে হয় না। ‌ কারণ ভাবীরা হিংসা করে। আপনার ভাবি আপনার ভাইয়ের কাছ থেকে মোবাইল আপনাকে দেওয়ার জন্য জোরালো সুপারিশ করেছে। যাই হোক এসএমএস চালাচালি এবং প্রথম মোবাইল পাওয়ার অনুভূতি সব মিলিয়ে অনেক ভালো লিখেছেন। ধন্যবাদ ভাই এগিয়ে যান। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া সবার কপালে এরকম ভাবি জোটে না। যাই হোক সেই সময়ের মজার স্মৃতিগুলো সকলের মাঝে তুলে ধরতে পেরে আমারও খুবই ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।