অনু গল্প-জীবন ছবি||

in hive-129948 •  3 months ago 

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।


বন্ধুরা, কেমন আছেন? আমি @shopon700 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। অনু গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। তাই মাঝে মাঝে অনু গল্প লিখি। আজকে আমি "জীবন ছবি" নামক একটি অনু গল্প লিখে আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো। আশা করছি ভালো লাগবে। তো বন্ধুরা সবাই চলুন আমার লেখা অনুগল্পটি পড়ে নেয়া যাক।

অনু গল্প-জীবন ছবি:

notebook-2757629_1280.jpg
source


ছোটবেলা থেকেই রফিক সাহেব লেখালেখি করতে ভালোবাসতেন। লেখালেখি করা যেন তার শখে পরিণত হয়েছিল। কলেজের ম্যাগাজিনে যেদিন প্রথম রফিক সাহেবের লেখা প্রকাশিত হয়েছিল সেদিন থেকেই রফিক সাহেবের মনের ইচ্ছাটা আরো প্রবল আকার ধারণ করেছিল। মানুষটির সহজ সরল। লিখতে ভালোবাসতো। লিখার ব্যাপারে তার বেশ পারদর্শিতা ছিল। সবার প্রশংসা পেয়ে রফিক সাহেব আরো বেশি উৎসাহ পেতো। রফিক সাহেবের সরলতা আর তার লেখার প্রতিভা সবাইকে মুগ্ধ করতো। সময় যত গড়াতে লাগলো রফিক সাহেবের সফলতা ততই ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। ভালোই কাটছিল দিনগুলো।

দেখতে দেখতে কেটে গেল কয়েকটা বছর। বয়সটা বেড়েছে রফিক সাহেবের। সংসার জীবনে প্রবেশ করেছেন তিনি। লেখালেখি নিয়ে অনেকটা ব্যস্ত থাকতেন। সংসার, সন্তান সবকিছুর মাঝেও লেখালেখিতে সুখ খুঁজে নিয়েছিলেন রফিক সাহেব। দুটো ছেলে হয়েছে তার। তার অর্ধাঙ্গিনী সবসময় তার পাশে ছিল বলেই লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছে রফিক সাহেব। ভালোই কাটছিল তাদের দিনগুলো। কিন্তু হঠাৎ করে নেমে এলো এক অজানা ঝড়। হঠাৎ একদিন রফিক সাহেব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। স্ট্রোক জনিত কারণে প্যারালাইজড হয়ে গেলেন তিনি। একদিকে যেমন লেখার শক্তি হারিয়ে ফেললেন অন্যদিকে হারিয়ে ফেললেন নিজের মুখের ভাষা।

একজন লেখক যখন নিজের লেখার শক্তি হারিয়ে ফেলেন তখন তার জীবন আঁধারে ডুবে যায়। কথা বলার শক্তি যখন হারিয়ে ফেলেন তখন ভেতরের কথাগুলো হাহাকার করে ওঠে। কেটে গেলো প্রায় একটি বছর। ট্রিটমেন্ট করেও কোন কাজ হলো না। এদিকে জমানো টাকা প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। ছেলের স্কুলের বেতন বাকি পড়ে গেছে। সংসারের খরচ করার মতো অর্থ এখন তাদের কাছে নেই। পুরো পরিবার যেন অসহায় হয়ে পড়েছে। অসুস্থ মানুষটার চিকিৎসার টাকাও ফুরিয়ে গেছে। তার স্ত্রী এদিকে ওদিকে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়িয়েছে সাহায্যের জন্য। কিন্তু সেই জনপ্রিয় লেখকের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি বা বিপদের সময় তার পরিবারের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। এভাবে তিলে তিলে বিনা চিকিৎসায় শেষ হয়ে গেল রফিক সাহেব। আর দুটো সন্তান নিয়ে তার স্ত্রী অসহায় হয়ে পড়লো। স্বামীকে হারিয়ে আজ তার স্ত্রী যেন নির্বাক। সন্তানেরা এখনো অবুঝ। বাবার চলে যাওয়া তাদের হৃদয়কে আহত করেছে।

একদিকে ক্ষুধার জ্বালা অন্যদিকে আপন মানুষ হারানো সব মিলিয়ে রফিক সাহেবের পরিবার যখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে লাগলো তখন কেউ তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। ক্ষুধার জ্বালা আর সবার অবহেলা মেনে নিতে না পেরে রফিক সাহেবের স্ত্রী এবং দুই সন্তান বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। যখন তারা নিজের জীবন দিয়েছে তখন কত মানুষ তাদেরকে দেখতে এসেছে তার কোন হিসেব নেই। সংবাদ মাধ্যম থেকে শুরু করে সবাই আজ তাদের পাশে। কিন্তু যখন তারা অসহায়ের মতো দিন কাটিয়েছে তখন কেউ তাদের পাশে ছিল না। সবাই যদি তাদের পাশে থাকতো তাহলে হয়তো একটি পরিবার এভাবে শেষ হয়ে যেতো না। তারাও ভালোভাবে বাঁচতে পারতো। আমাদের সমাজের এমন কিছু মানুষ আছে যারা মানুষের বিপদে পাশে না দাঁড়ালেও তাদের মৃত্যুর পর লোক দেখানো সহানুভূতি দেখাতে ঠিক এগিয়ে আসে। এইসব মানুষকে ধিক্কার জানাই। রফিক সাহেবের জীবনের গল্পটা যেন এক জীবন ছবি।

🥀ধন্যবাদ সকলকে।🌹


আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20240504_102129.jpg

আমি মো: স্বপন । আমি একজন বাংলাদেশী। ব্যক্তিজীবনে আমি আইন পেশার সাথে জড়িত। এছাড়াও ফটোগ্রাফি, পেইন্টিং ও ব্লগিং করা হচ্ছে আমার অন্যতম শখ। আমার স্টিমিট আইডি নাম @shopon700। আমি ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে স্টিমিট ব্লগিং শুরু করি। আমি গর্বিত, কারণ আমি আমার বাংলা ব্লগের একজন ভেরিফাইড ব্লগার।


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

image.png

You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!

ভাইয়া খুব সুন্দর একটি অনু গল্প শেয়ার করেছেন। আপনার গল্প পড়ে যেনো কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। যখন টাকা থাকে তখন পাশে সবাই থাকে কিন্তু যখন টাকা না থাকে তখন কাউকে পাশে পাওয়া যায় না। এই পৃথিবীর মানুষ গুলো বড়ই নিষ্ঠুর। তারা বিপদে পাশে দাঁড়াতে জানে না কিন্তু যখন কেউ আত্মহত্যার মতো কোনো কাজ করে তখন কথা বলার লোকের অভাব হয় না। রফিক সাহেবের পরিবার অবশেষে খেতে না পেয়ে এভাবে চলে যাওয়াটা সত্যিই মেনে নেওয়া যায় না। ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর গল্প শেয়ার করার জন্য।

আমাদের দেশে এরকম রফিক সাহেবের মতো হাজার হাজার পরিবার রয়েছে।আসলে টাকা থাকলে শুভাকাঙ্খীদের অভাব হয়না।বিপদে পড়লে প্রকৃত বন্ধু চেনা যায় সবসময়।ভালো একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন আপনি।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

আপনার লেখা "জীবন ছবি" অনুগল্পটি পড়ে মনটা ভীষণ ভারাক্রান্ত হয়ে গেল ভাইয়া। রফিক সাহেবের জীবনের প্রতিভা, সংগ্রাম, এবং দুঃখময় পরিণতি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক এবং শিক্ষণীয়। আপনার বর্ণনার মাধ্যমে আমাদের সমাজের নিষ্ঠুর বাস্তবতা খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।

এমন অনেক মানুষ আছেন যারা বিপদের সময় পাশে না দাঁড়ালেও, দুঃখজনক ঘটনার পর লোক দেখানো সহানুভূতি দেখাতে আসে। এ ধরনের অবস্থা আমাদের সমাজে পরিবর্তন করা উচিত। আপনার লেখা সত্যিই আমাদের সবাইকে এই বিষয়গুলোর উপর ভাবতে বাধ্য করবে।

আপনার লেখার মাধ্যমে সমাজের এ ধরনের অসঙ্গতি তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি, আপনার এ ধরনের গল্প আমাদের মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করবে এবং আমরা ভবিষ্যতে আরও মানবিক ও সহানুভূতিশীল হয়ে উঠবো। আপনার পরবর্তী লেখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। শুভকামনা রইল।

[@redwanhossain]