অনুগল্প-তুমি আমি পাশাপাশি||

in hive-129948 •  2 months ago 

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।


বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমি @shopon700 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। অনুগল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। যখন সময় পাই তখন গল্প লিখি। প্রত্যেক সপ্তাহে একটি করে গল্প লিখার চেষ্টা করি। অনুগল্প লিখতে খুবই বেশি ভালো লাগে। আজকে আমি একটি অনুগল্প শেয়ার করবো। আর গল্পের নাম দিয়েছি "তুমি আমি পাশাপাশি"। তো বন্ধুরা চলুন আমার আজকের গল্প পড়ে নেয়া যাক।

অনুগল্প:তুমি আমি পাশাপাশি

couple-4027859_1280 (1).jpg

source


সুমন বাসের জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে পুরোনো দিনগুলোর কথা ভাবছে। কতই না পাগলামি করতে সে। সুমন সীমাকে ভালোবাসতো। কিন্তু সীমা তাকে পছন্দ করতো না তেমন টাও নয়। তবে মেয়েটা বড্ড অভিমানী। সুমন যতই তার কাছে আসার চেষ্টা করতো সীমা অভিমান করে ততই দুরত্ব তৈরি করতো। হয়তো সীমা থাকে ভালোবাসতো। কিন্তু তার অভিমানের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা বড্ড দেরি করে বুঝতে পেরেছিল সীমা। মেয়েদের মন হয়তো এমনই হয়। যখন কেউ তাকে ভালোবাসে তখন তার ভালোবাসা বুঝতে পারে না। কিন্তু যখন দূরত্ব বেড়ে যায় তখন ভালোবাসা উপলব্ধি করতে পারে। সুমন আর সীমা সম্পর্কে চাচাতো ভাই বোন। সুমন ছোটবেলা থেকেই সীমাকে খুবই পছন্দ করতো। কিন্তু সীমা সুমনকে দেখলেই রেগে যেত। কেন জানি মেয়েটা তাকে সহ্য করতে পারতো না

দেখতে দেখতে সুমন এবং সীমা বেশ বড় হলো। সুমন এখন আর সীমাকে খুব একটা বিরক্ত করে না। আড়াল থেকেই সীমাকে চুপি চুপি দেখে। সীমা সবকিছু বুঝতে পারে। কিন্তু তাতে তার কিছুই যায় আসে না। কারণ সে মনে করে সে সুমনকে ভালোবাসেনা। কেটে যাচ্ছে দিনগুলো। কিন্তু হঠাৎ একদিন সীমার বিয়ের সম্বন্ধ আসে। ছেলে বড় চাকরি করে। শহরে বসবাস করে ছেলের পরিবার। প্রথম দিকে পরিবারের সবাই রাজি হলেও সীমা কেন জানি খুশি হতে পারছিলো না। সীমার মন খারাপ দেখে সুমন বারবার সীমার মন খারাপের কারণ জানতে চায়।সুমন বারবার সীমাকে বলে বিয়ে করে ওই দূর শহরে চলে যাও। তখন আর আমাকে দেখতে পাবে না। আর আমিও কোনদিন তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো না। কথাগুলো বলে সুমন আপন মনে সীমার দিকে তাকিয়ে ছিল। সেই চাহনিতে সীমা নিজের ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছিল। সীমা খুঁজে পেয়েছিল তার আপন মানুষটিকে।

সীমা সুমনের কথাই ভাবছিল। দু চোখে তার ঘুম নেই। রাত জেগে চিন্তা করছিল সীমা। কি করে বিয়েটা ভেঙে দিবে এই চিন্তায় যেন তার ঘুম আসছিল না। সে সুমনের ভালোবাসা বুঝতে পারলো ঠিকই কিন্তু অনেকটা দেরিতে বুঝতে পারলো। অন্যদিকে দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো। সুমন ধীরে ধীরে সীমার থেকে দূরে চলে যেতে লাগলো। সুমনের এই বদলে যাওয়া সীমা মেনে নিতে পারছিল না। যেই ছেলেটি তার পিছনে লেগেই থাকতো সেই ছেলেটি এখন আর তার দিকে ফিরেও তাকায় না। তার সাথে কথাও বলে না। সীমা এসব কিছু মেনে নিতে পারছিল না। তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। ঘরের দরজা বন্ধ করে কেঁদেছিল সে। যেই কান্না কেউ দেখেনি। দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসে। বিয়ের দিন সকালবেলায় সীমা ঘরের দরজা খুলছিল না। কেউ বুঝতে পারছিল না সীমার কি হয়েছে। ঘরের দরজা ধাক্কা দিলে দরজা খুলে যায়। সবাই যখন ঘরে প্রবেশ করে তখন দেখে সীমা পালিয়ে গেছে। আর রেখে গেছে একটি চিঠি।

এরপর কেটে গেছে কয়েক বছর। আজ সীমা আর সুমন দুজনে গ্রামে ফিরছে। সীমার কোলে ছোট্ট ফুটফুটে মেয়েটা দেখতে সীমার মতোই হয়েছে। গ্রামে ফেরার সময় পুরোনো কথাগুলো অনেক মনে পড়ছিল সুমনের। সেদিন রাতে সীমা সুমনের সাথে দেখা করেছিল আর বলেছিল সে যদি তাকে নিয়ে পালিয়ে না যায় তাহলে সে আত্মহত্যা করবে। অবশেষে সুমন কোন কিছু না ভেবেই তার ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরিবারের সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর সাহস তাদের ছিল না। তাই কয়েক বছর পর আজ তারা গ্রামের পথে। দুজনে পাশাপাশি বসে আছে। তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছে ঠিকই কিন্তু পরিবার থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গে। হয়তো কোন এক সময় সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে। আর তাদের দুজনের পরিবার তাদেরকে মেনে নিবে। জীবনে যা কিছুই হয়ে যাক না কেন ভালোবাসার মানুষটির হাত ছেড়ে দিতে নেই। হয়তো পরিস্থিতি একসময় ঠিক হবে। কিন্তু ভালোবাসার মানুষটি হারিয়ে গেলে তাকে আর কখনোই পাওয়া যাবে না।

🥀ধন্যবাদ সকলকে।🌹


আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

আমি মো: স্বপন । আমি একজন বাংলাদেশী। বাংলা আমার মাতৃভাষা। তাই আমি বাংলায় লেখালেখি করতে ভালোবাসি। ফটোগ্রাফি, পেইন্টিং এবং ক্রাফটিং করা হচ্ছে আমার অন্যতম শখ। অবসর সময়ে গান শুনতেও অনেক ভালোবাসি। এছাড়া বাগান করতে আমার অনেক ভালো লাগে। মাঝে মাঝে রান্না করতেও অনেক ভালো লাগে। আমার স্টিমিট আইডি নাম @shopon700। আমি ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে স্টিমিট ব্লগিং শুরু করি। আমি গর্বিত, কারণ আমি আমার বাংলা ব্লগের একজন ভেরিফাইড ব্লগার।


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

খুব ভালো লেগেছে ভাইয়া, আপনার লেখা এই অনু গল্পটা পড়তে। খুবই সুন্দর ভাবে এই গল্পটি লিখেছেন আপনি। আমি তো ভেবেছিলাম সীমা আর সুমনের ভালোবাসা হয়তো পূর্ণতা পাবে না। কিন্তু শেষটা এত সুন্দর হবে এটা ভাবিনি। সীমা যদি পালিয়ে না যেত তাহলে হয়তো অন্য কারো সাথে তার বিয়ে হয়ে যেত, আর অনেক কষ্টে থাকতো। আর সুমন ও অনেক কষ্টে থাকত এজন্য। তাদের দুজনের ফুটফুটে একটা কন্যা সন্তান হয়েছে শুনে আরো ভালো লেগেছে। ভালোবাসার মানুষটাকে হারালে আর কখনোই ফিরে পাওয়া যায় না, ফ্যামিলি তো একদিন মেনেই নিবে। সব ভালোবাসা যেন পূর্ণতা পায় এটাই কামনা করি।

মাঝে মাঝে ভালোবাসা পূর্ণতা পায়। আর গল্পের শেষটা ভালো হয় আপু। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে মূল্যবান মন্তব্য প্রকাশের জন্য।

🌹 ধন্যবাদ সকলকে! 🥀

আমি এখানে আপনাদের সুন্দর ফটো এবং ভালোবাসার গল্প উপভোগ করছি। জীবনের মূল বিষয় হচ্ছে ভালোবাসা, এটি আমাদের প্রকৃতির অন্যতম শখ। আমাদের জীবনের গরিবি-ভালোবাসা আছে, এটি হচ্ছে একজন ভালোবাসার মানুষ। তাই পরিবার, দৃশ্য, আখ্যা, গ্রাম, উপকূল এবং ধন-সম্পদ হচ্ছে ভালোবাসার জীবনের।

আমি তখনই স্টিমিট এর কথা শুনেছি, যখন দূর হতে হলেও, একজন মানুষের মনে ভালোবাসা অগত্য থাকে।

আমি দিচ্ছি শুধুই এটি, হঠাৎ আপনার আর নাও থাকুক তাহলে?