অনুগল্প-একটি দুর্ঘটনা||

in hive-129948 •  2 months ago  (edited)

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।


বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমি @shopon700 🇧🇩 বাংলাদেশ থেকে। অনুগল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। আজ আমি "একটি দুর্ঘটনা" শিরোনামের একটি অনুগল্প লিখে আপনাদের সবার মাঝে শেয়ার করবো। তো বন্ধুরা চলুন আমার লেখা গল্প পড়ে নেয়া যাক।

অনুগল্প:একটি দুর্ঘটনা

india-6274349_1280.jpg

source


রাইসা সকাল থেকে পথের পানে চেয়ে আছে কখন তার বাবা আসবে। অনেকদিন বাবাকে দেখেনা সে। বাবা বলেছিল আসার সময় তার জন্য একটি লাল টুকটুকে জামা নিয়ে আসবে আর সাথে নিয়ে আসবে একটি সুন্দর পুতুল। রাইসার বাবা ঢাকা শহরে ছোট একটি চাকরি করে। পরিবার নিয়ে ঢাকা শহরে থাকার মত সামর্থ্য তার নেই। তাই গ্রামের বাড়িতে পরিবারকে রেখে একাই ঢাকায় অবস্থান করছে। রাইসার বাবা দুই মাস কিংবা তিন মাস অন্তর অন্তর পরিবারের সাথে দেখা করতে আসে।

রাইসার বাবা রফিক সাহেব খুবই সামান্য বেতনের চাকরি করেন। নিজের উপার্জন দিয়ে পরিবার চালাতে কষ্ট হয় তার। তবুও সন্তানের কথা চিন্তা করে রফিক সাহেব চাকরিটা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার যে একটি মেয়ে রয়েছে। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই তার সব কষ্ট যেন নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। রফিক সাহেব তার মেয়ে রাইসাকে খুবই ভালোবাসে। অন্যদিকে রাইসাও তার বাবার জন্য পাগল। বাবা মেয়ের ভালোবাসা দেখে প্রাণ ভরে ওঠে। কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো। বেতন পাওয়ার পর চলে গিয়েছিল মেয়ের জন্য জামা কিনতে আর পুতুল কিনতে। সাধ্য আর সামর্থ্য দুটো মিলেমিশে নিজের আদরের মেয়ের জন্য জামা কিনেছিল রফিক সাহেব। সাথে কিনেছিল একটি সুন্দর পুতুল।

গাড়িতে ওঠার আগে ফোন করেছিল রফিক সাহেব। রাতের গাড়িতে বাড়ি ফিরবে সে। সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠেই রাইসার যেন প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছিল না। এদিকে ওদিকে ছোটা ছুটি করছিল মেয়েটা। কখন তার বাবা আসবে এই কথাই ভাবছিল সারাক্ষণ। তার অস্থিরতা দেখে তার মা তাকে বলছিল হয়তো রাস্তায় জ্যাম আছে। তাই দেরি হচ্ছে। অন্যদিকে ফোনটাও ধরছিল না রফিক সাহেব। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে এলো। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো। রফিক সাহেব বাড়ি ফিরলো না। অবশেষে রফিক সাহেবের নাম্বার থেকে একটি ফোন আসলো। আর জানানো হলো সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে রফিক সাহেব। এই কথা শুনে যেন রফিক সাহেবের স্ত্রী নির্বাক হয়ে গেছে।

রফিক সাহেবের স্ত্রীর মুখে যেন কোন ভাষা নেই। মেয়েকে কি করে এই সত্যি কথাটা বলবে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেন না। অন্যদিকে বৃদ্ধা বাবা-মা চেয়ে আছে তাদের বৌমার দিকে। রফিক সাহেবের স্ত্রী যেন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। একটি দুর্ঘটনা নিমিষেই সব স্বপ্ন যেন শেষ করে দিয়েছে। একটি দুর্ঘটনা একটি পরিবারের স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে। আর শেষ করে দিয়েছে রাইসার আনন্দ গুলো। হয়তো রাইসার প্রতীক্ষার প্রহর কখনোই শেষ হবে না। রাইসা তার বাবার হাসি মাখা মুখ আর কোনদিন দেখবে না।

🥀ধন্যবাদ সকলকে।🌹


আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

আমি মো: স্বপন । আমি একজন বাংলাদেশী। বাংলা আমার মাতৃভাষা। তাই আমি বাংলায় লেখালেখি করতে ভালোবাসি। ফটোগ্রাফি, পেইন্টিং এবং ক্রাফটিং করা হচ্ছে আমার অন্যতম শখ। অবসর সময়ে গান শুনতেও অনেক ভালোবাসি। এছাড়া বাগান করতে আমার অনেক ভালো লাগে। মাঝে মাঝে রান্না করতেও অনেক ভালো লাগে। আমার স্টিমিট আইডি নাম @shopon700। আমি ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে স্টিমিট ব্লগিং শুরু করি। আমি গর্বিত, কারণ আমি আমার বাংলা ব্লগের একজন ভেরিফাইড ব্লগার।


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

আপনার লেখা গল্পটা পড়ে আমার কাছে অনেক বেশি খারাপ লেগেছে। এই দুর্ঘটনা একটা পরিবারকে একেবারে নিঃস্ব করে দিয়েছে। সবার সব স্বপ্ন একেবারে ভেঙ্গে ফেলেছে। ছোট্ট একটা মেয়ের আশা ভরসা সবকিছু ভেঙে গিয়েছে এক নিমিষে। এত সুন্দর করে আপনি পুরো গল্পটা লিখে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন এটা দেখে আমার অনেক ভালো লেগেছে। এরকম একটা দুর্ঘটনার গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

ঠিক বলেছেন আপু একটি দুর্ঘটনা পরিবারের সব স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে দেয়। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।