আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা -৪৩ | অনলাইন থেকে প্রথম ইনকাম

in hive-129948 •  last year 

smartphone-4877094_1280.jpg
source

আসেন একটা গল্প শোনাই, তখন ২০১৭ সাল আমার এক পরিচিত বাল্য বন্ধুর মাধ্যমেই এই প্ল্যাটফর্মটির সন্ধান পাই। মূলত তার ফুপা থাকতো আমেরিকাতে। ভদ্রলোক এখনো আমেরিকাতেই আছে, পুরো পরিবার নিয়ে। সেসময় ভদ্রলোক একবার বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছিল, তখনই আমার বাল্যবন্ধুকে এই স্টিমিট প্লাটফর্ম সম্পর্কে অবগত করেছিল। আমার বাল্য বন্ধু সেই সময় বেকার ছিল, তাই হয়তো তার ফুফা তাকে এখানে কাজ করার কথা বলেছিল।

তবে বন্ধু আমার নিজে কাজ না করে, আমাকে এই প্লাটফর্মের কথা বলেছিল। যদিও শুরুর দিকে সেইভাবে তার কথার কর্ণপাত করি নি, অনেকটা অবহেলাই করে ছিলাম । তবে তারপরেও একটা আইডি অনেক কষ্টে খুলেছিলাম। তবে দুঃখের বিষয় ২০১৭ সালের দিকে যে আইডিটা আমার ছিল, সেই আইডিটা আমার নিজের ভুলের কারণেই পরবর্তীতে নষ্ট হয়ে যায়।

তারপরে দীর্ঘ বিরতি, ২০১৮ সালের দিকে আবারো এখানে যুক্ত হই। মূলত চেম্বারে বসে সারাদিন ফাঁকা সময়ই কাটতো, সেই সময়টাকে কাজে লাগানোর জন্যই পরবর্তীতে নতুন করে আবারো এই আইডিটা খুলেছিলাম। যেটা এখনো সচল আছে। এখন যেমন চাইলেই হরহামেশাই আইডি খোলা যায়, তখন ব্যাপারটা মোটেও এতটা সহজ ছিল না। নতুন জিমেইল দিয়ে আইডি খোলার জন্য স্টিমিটে সাইন ইন করেছিলাম, দেখা গিয়েছে কমপক্ষে প্রায় ১৫ দিন থেকে একমাস পরে স্টিমিট কর্তৃপক্ষ আমার ইমেইল ভেরিফিকেশন করে, তারপরে আমাকে ইমেইলের মাধ্যমেই একটা পাসওয়ার্ড পাঠিয়েছিল। সেটা ছিল মূলত মাস্টার পাসওয়ার্ড।

তখন আসলে আইডির যাবতীয় কার্যকলাপ ঐ একটি পাসওয়ার্ড দিয়েই করতে হতো। ডিসকর্ড নামে যে এখানে আর একটা জগৎ আছে সেটাও সেই সময় জানতাম না। অনেকটা অপরিপক্ক ছিলাম এই প্লাটফর্মে। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করতাম বিভিন্ন মানুষের পোস্টগুলো অল পোস্ট থেকে চেক করার জন্য। সেভাবে কিছুই বুঝতাম না, শুধুমাত্র দিনে একটি করে পোস্ট লিখতাম তাও আবার ইংলিশে । কালে-ভদ্রে কখনো ভোট পেতাম আবার পেতাম না। ভোট পেলেও তাও সেটা খুবই নগণ্য। সেইসময় পুরো একমাস মিলে আমার সংগ্রহ হয়েছিল ২০ থেকে ২৫ সেন্টের মত।

আমার শুরুতেই যে ভুলটা ছিল, সেটা হচ্ছে আমি মানুষের পোস্টে গিয়ে তেমন কমেন্টস করিনি, হয়তো কমেন্টস করলে বা যোগাযোগ ঠিক রাখলে আরও দ্রুত কিছু করা যেত। তবে ঐ যে বললাম, চেম্বার করার ফাঁকে ফাঁকে এখানে সময় দিতাম। সেই সময় বাঙালি তেমন কোন কমিউনিটি ছিল না, সবাই মূলত ট্যাগ কে ভিত্তি করে পোস্ট লিখতো। সেইসময় অনেক কষ্টে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমবয়সী এক ছেলের পোস্ট পড়ে তার সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলাম, তার পোস্টে দেওয়া ফেসবুক লিংকের মাধ্যমে। পরবর্তীতে তার মাধ্যমেই জানতে পেরেছিলাম, এখানে ডিসকর্ড নামে আলাদা একটা দুনিয়া আছে।

যখন ডিসকর্ড সম্পর্কে জানতে পারলাম, তখন অনেকগুলো কমিউনিটিতেই যুক্ত হয়েছিলাম, অনেকের সঙ্গেই টুকটাক কথাবার্তা হতো, তবে একটা জিনিস আমি শুরু থেকেই কখনো করিনি, সেটা হচ্ছে অন্যের জিনিস নিজের বলে চালিয়ে দেওয়া। তাই হয়তো এই আইডির উপর কখনো বিদ্রুপ কোন প্রতিক্রিয়া পড়েনি।

দীর্ঘ ছয় মাস পর সম্ভবত আমার ১০০ স্টিম এর মত ওয়ালেটে যোগ হয়েছিল। অনেক বিদেশী ও স্বদেশী মানুষ যেমন আমাকে এখানে উপকার করেছিল, তেমন আবার অনেকেই সূক্ষ্ম বুদ্ধি খাটিয়ে ক্রমাগত বাঁশ দিয়ে গিয়েছিল। সেইসময় ১০০ স্টিমের দাম সম্ভবত ছয় হাজার টাকার উপরে ছিল। তবে আমি হাতে পেয়েছিলাম মাত্র ১৩০০ টাকা।

এখনকার মতো, তখন এতো মানি এক্সচেঞ্জার সম্পর্কেও ধারণা ছিল না। তাই বাধ্য হয়েই দালালদের কাছে শরণাপন্ন হতে হয়েছিল, তারা যা দিয়েছিল তাতেই খুশি হয়েছিলাম। ঐ ১৩০০ টাকাই ছিল আমার প্রথম অনলাইন থেকে ইনকাম। যখন আমি দেখেছি এখানে কাজ করলে টাকা পাওয়া যায়, তখন থেকেই আসলে কাজের প্রতি আগ্রহ আরো অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। চেষ্টা করছিলাম এই প্ল্যাটফর্মের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো জানার জন্য, অনেকটা সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ ও চিরুনি অভিযান তখন থেকেই চালিয়ে গিয়েছিলাম।

তাই হয়তো ভাগ্যক্রমে পরবর্তীতে, আগের বাস্তব জীবনের প্রফেশন ছেড়ে পুরোপুরি এখানে চলে আসতে সক্ষম হয়েছি। যদিও চলার পথটা মোটেও মসৃণ ছিল না, বলতে গেলে ভীষণ মন্থর ছিল। আর খুব কাছের মানুষদের কাছ থেকে, বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছিলাম। এছাড়াও স্বদেশী মানুষজনের কাছ থেকে তো প্রতিনিয়ত বাঁশ খেয়েই যেতাম।

আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন, বিশেষ করে যারা এই কমিউনিটির শুরুর দিকের সদস্য আছেন, তখন আমি প্রায়ই বলতাম বাঙ্গালীদের সাপোর্ট করার পক্ষে আমি নই। আসলে এই কথাটা শুনতে হয়তো আপনাদের কাছে খুবই খারাপ লাগতো, তবে কতটা পরিমাণ দুঃখ নিয়ে যে এই কথাটা বলতাম, তা হয়তো বলে বোঝাতে পারবো না।

এই প্লাটফর্মের মাধ্যমেই আমার অনলাইন জগতের প্রথম ইনকাম শুরু হয়েছে, এটা যেমন সত্য কথা। ঠিক এটাও তেমন সত্য কথা, এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে আবার প্রতিনিয়ত ধাক্কা খেতে খেতে প্রচুর অভিজ্ঞতাও হয়েছে।

Banner-16.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

এক বাল্য বন্ধুর মাধ্যমে আপনার স্টিমিট প্লাটফর্মে আগমণ সম্ভব হয়েছিল।আর সেখান থেকে প্রথম আইডি। অতঃপর আইডি টা নিজের কিছু ভুলের জন্য নষ্ট হয়ে যাওয়া।তারপর এই দ্বিতীয় আইডি দিয়ে এখন পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন।আগে স্টিমিট আইডি খুলতে বেশ সমস্যা হতো বুঝতে পারলাম।আর এখন তো চোখের পলকেই খোলা সম্ভব।প্রথমে অনলাইন থেকে আপনি ১৩০০ টাকা ইনকাম করেছিলেন।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

ধন্যবাদ আপু ব্যাপারটা সাবলীল ভাবে বুঝতে পারার জন্য ও নিজের মতামত তুলে ধরার জন্য।

আসলে কোনো বিষয় সম্পর্কে সঠিকভাবে না জানার কারণে আমরা প্রতিনিয়ত বাশঁ খাই অন্যের দ্বারা। আপনাদের সময় আইডি খোলাটাও ঝামেলাকর ছিল আর এখন কয়েক মিনিটেই খোলা যায়। খারাপ লাগার বিষয় হলো ১০০ স্টিমের দাম বেশি থাকলেও আপনি না জানার কারণে কম টাকা দিয়েছে আপনাকে। আপনি সবসময় বলতেন বাঙালিরা হলো চোর-বাটপার! হ্যাংআউটে প্রায়ই বলতেন বাঙালিরা ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য না। আসলে এটা শুধু আমরা না তথাপি পুরো বাঙালিদের দুর্নাম! বাঙালিদের স্বভাবের জন্যই এতো অধঃপতন।

আসলে ভাই আমার অভিজ্ঞতা এতটাই বাজে ছিল, যা আসলে মুখে বলে প্রকাশ করতে পারবো না। তবে এখন আমি সেসব নিয়ে আর খুব একটা মাথা ঘামাই না। বেশ ভালো একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে, এটাই তো অনেক কিছু।

আপনার সঙ্গে স্টিমিট এর পরিচয়ের ব‍্যাপার টা বেশ চমৎকার লেগেছে আমার কাছে। কিন্তু অনাকাঙ্খিতভাবে আপনার প্রথম আইডি টা নষ্ট হয়ে যায় এটা দুঃখজনক। আরেকটা বিষয় দারুণ বলেছেন যেটা আপনার ভুল ছিল যে আপনি প্রথমে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করেন নাই। সেজন্য খুব একটা সাপোর্ট ও পান নাই। তবে পরবর্তীতে ঠিকই সেগুলো শুধরে নিয়েছেন। দারুণ ছিল আপনার প্রথম অনলাইন ইনকামের অভিজ্ঞতা টা।

Posted using SteemPro Mobile

এভাবেই প্রতিনিয়ত অভিজ্ঞতা হয়েছে ভাই, তবে আমি মনেকরি যে অভিজ্ঞতাগুলো হয়েছে, সেগুলো না হলে, পরবর্তীতে আমার জন্য চলা অনেকটাই কষ্টকর হয়ে যেত।

আপনার স্টিমিটের জার্নিটা খুবই কষ্টের ছিল। একাউন্ট খোলা বর্তমান সময়ে অনেক সহজ বলতে হয়। কিন্তু তখন যে এতদিন সময় অপেক্ষা করতে হতো তা জানা ছিল না। আপনি তো অনেক কষ্টের বিনিময়ে আজ এই পর্যায়ে চলে এসেছেন। তবে আপনার ৬০০০ টাকায় ১৩০০ টাকা পেলেন মাত্র সেটা খুবই আফসোসের বিষয়। যাক তারপরেও আপনি প্রথম ইনকাম পেয়েছিলেন সেটা অনেক ভালোলাগার একটি কথা। আপনার পুরো লেখা পড়ে যেমন কষ্ট পেয়েছি তেমন ভালো লেগেছে। অনেক ধন্যবাদ আশা করি আপনি আরো এগিয়ে যাবেন এই প্রত্যাশা করি।

ধন্যবাদ আপু আমাকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য।

তখনকার সময়ে আইডি খোলা থেকে শুরু করে, সবকিছুই তো অনেক কঠিন ছিলো দেখছি। আমরা তো পোস্ট করে নিয়মিত সাপোর্ট পাচ্ছি এবং নিজেই নিজের ওয়ালেট থেকে উইথড্র দিতে পারছি। আসলেই আমরা খুব লাকী। আপনাদের সময়টাতে ধৈর্য ধরে কাজ করে যাওয়াটা খুবই কঠিন ছিলো। তবে এতো বাঁধা অতিক্রম করে এতো দূরে আসতে পেরেছেন, এটা অবশ্যই অনেক বড় একটি অর্জন। আপনার পোস্ট পড়ে আসলেই অনেকে অনুপ্রাণিত হবে বলে আমি মনে করি। যাইহোক এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

Posted using SteemPro Mobile

আসলে তখনকার কথা চিন্তা করলে, সত্যিই আপনারা অনেক লাকি।

ভাইয়া তাহলে আপনারও প্র্রথম ইনকাম স্টিমিট প্লাটফর্ম। খুবই ভাল লাগলো বিষয়টা জানতে পেরে। ভাইয়া সবাই তো প্রথম ইনকামের টাকা দিয়ে কি কি করেছে সেটা বর্ণনা করেছে। আপনি প্রথম ১৩০০ টাকা কিভাবে খরচ করলেন সেটা জানতে চাই আমার অবুঝ মন। ধন্যবাদ ভাইয়া।

সেই সময়ে ঐ টাকা দিয়ে, বাসার ইলেকট্রিক বিল দিয়েছিলাম।

আপনার বন্ধু নিজে কাজ না করে আপনাকে কাজটি দিয়েছিলেন বলেই আজ আপনি সফল ভাইয়া।এমন বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার,এটা জেনে ভালো লাগলো।তাছাড়া প্রথম দিকে টাকা তোলার ব্যাপারটি জটিল ছিল।তাই অনেক সময় মানুষ না বুঝে ঠকে গেছে বিভিন্ন ভাবে। যেমন-আপনি, এটা জেনে খারাপ লাগছে।আর নিজেদের জাতির মানুষ তো বরাবরই স্বার্থবাদী হয়ে থাকে।যাইহোক ধন্যবাদ আপনাকে।

প্রথমেই শুভ কামনা জানাই আপনাকে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করার জন্য। তারপর বলবো আপনার প্রথম ইনকামের অভিজ্ঞতার কথা। মনে হচ্ছে অনলাইনের প্রথম অভিজ্ঞতা নিয়ে আপনার যেমন তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে তেমনি আছে কিছুটা আনন্দও। তবে সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে আপনি সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন এটাই কামনা করি। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।