স্বপ্ন ভঙ্গ

in hive-129948 •  2 years ago 

sad-g2cae6cfd3_1920.jpg
Source

দিন দিন পরিচিত মানুষগুলো কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে। কত পরিচিত মুখ তাদের সঙ্গে যে কত সময় কাটিয়েছি, তা হুটহাট করে যখন মনে পড়ে তখন মুহুর্তেই যেন আবেগপ্রবণ হয়ে যাই। আর পরিচিত মুখ গুলোর যখন কষ্টকর ঘটনা শোনা যায়, তখন যেন হৃদয়টা বেশ রক্তাক্ত হয়ে যায়।

এই যে তপন, যদিও সে আমার বন্ধু ছিল না। তবে তাকে আমি ভালোভাবেই চিনতাম। বন্ধু না হলেও বেশ ভালো একটা সম্পর্ক ছিল। আর তাছাড়া হয়তো সম্পর্ক গুলো এমনি, কখন কার সঙ্গে বন্ধন হবে তা তো বলা মুশকিল। ওর সঙ্গে মূলত পরিচয় হয়েছিল এলাকার লোকজনের মাধ্যমেই। সবাই বলতো মেধাবী ছেলে হয়তো সেখান থেকেই পরিচয়ের সূত্রপাত।

মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তপন। বেশ চড়াই-উতরাই করে গ্রাজুয়েশনটা শেষ করেছে। এখনো বিয়েটাও করিনি। তবে তার আগেই একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা তার পুরো জীবনটাকে শেষ করে দিয়েছে। মানে ঘটনাটা তার জীবনকে কেড়েই নিয়েছে ।

কলেজ জীবনের পরে হঠাৎ করে তার মাথার একপাশে বেশ ভালোই ব্যথা করতো, চোখে ঝাপসা দেখতো। হয়তো শুরুতে খুব একটা ব্যাপার গুলো পাত্তা দেয়নি। ভাবতো অতিরিক্ত রাত জাগা, চিন্তাভাবনা পরিবার নিয়ে, হয়তো এই সব কারণেই তার শারীরিক সমস্যাটা কিন্তু একটা সময়ের পরে তা যেন ক্রমাগত বেড়েই যাচ্ছিল ।

যেহেতু নামকরা একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছে। তাই মোটামুটি ইচ্ছা ছিল জজ হওয়ার। আসলে তার এই স্বপ্নটা ছোটবেলা থেকেই বেশ তাকে তাড়া করে বেরাতো । মোটামুটি আমার যখন পড়াশুনা শেষ হয়েছে, তখনও দেখতাম ও বেশ ভালই পড়াশোনার সঙ্গে লেগে ছিল। সেই যে উচ্চতর ডিগ্রী নেওয়া থেকে শুরু করে, বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় ক্রমাগত পরীক্ষা দেওয়া আবার সঙ্গে পড়াশোনাটার পিছনেও লেগে থাকতো তপন।কারণ জীবনে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে চেয়েছিল।

বয়সটা ওর বেড়েই যাচ্ছে, যদি সে সেটা বুঝতো। তবে বিয়ে করার ব্যাপারে বেশ উদাসীন ছিল খালি চাকরির অভাবে। যদিও কিছুদিন আগেও শুনেছিলাম ও জজ নিয়োগের পরীক্ষায় সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছে, তাই ভেবেছিলাম যাইহোক এবার তাহলে তপনের বিয়েটা খাবো। কিন্তু হুট করেই আসল উৎপত্তিটা ঘটে গেল ।

ব্যথাটা যেন ক্রমাগত তার বেড়েই যাচ্ছিল। কোনভাবেই যেন সেটা কম ছিল না। যাইহোক এবার একবার ডাক্তার দেখানোর মনস্থির করেই বসলো। যদিও প্রথমে মেডিসিনের ডাক্তার দেখিয়েছিল, তারপর ওষুধ খাইলে ব্যথা কমে থাকতো আবার পরবর্তীতে বেড়ে যেত।

অতঃপর নিউরো মেডিসিনের ডাক্তারের শরণাপন্ন হল। যখন সিটি স্ক্যান রিপোর্ট হাতে আসলো, তখন ব্যাপারটা আসলেই বেশ ভাবিয়ে তুলল তপন আর তার পরিবারকে ।

আসলে শুরু থেকেই ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভাবা উচিত ছিল। তবে এখন যখন ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে, তখন ব্যাপারটা অনেকটাই হিতে-বিপরীত হওয়ার মতো । এখন তার পরিবারের একটাই চাওয়া তপন সুস্থ হলেই যেন, তার পরিবারের কাছে শান্তি। তবে সবকিছু তো আর চাইলেই হয় না। তপনও চাচ্ছিল, সে যেন মানসিক ও শারীরিকভাবে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক ।

অতঃপর ডাক্তার বলেই দিল, যেভাবেই হোক অপারেশনটা দ্রুত করতে হবে নতুবা ব্যাপারটা আরো একটু অন্যদিকে গড়িয়ে যেতে পারে। যেহেতু খরচাপাতির ব্যাপার ছিল, তাই সব কিছু বন্দোবস্ত করতে কিছুটা সময় লেগে গিয়েছিল। তারপরেও অবশেষে অপারেশন করার সিদ্ধান্তে তপন নিজের থেকেই রাজি হয়ে গিয়েছিল। কারণ তার ক্রমাগত মাথাব্যথা ও অস্থিরতা তাকে, কোনভাবেই সুস্থ থাকতে দিচ্ছিল না ।

অবশেষে অপারেশনের জন্য দিনক্ষণ সব ঠিক করা হয়েছে। সবকিছু নিয়ম মেনেই অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং অপারেশনটাও বেশ ভালোভাবেই সাকসেসফুল হয়েছিল। তবে পরবর্তী সময়ে যখন ডাক্তারদের তত্ত্বাবধানে ছিল, তার কয়েকদিন পরেই তপন না ফেরার দেশে ।

ভাষা ভাষা ভাবে যতটুকু শুনেছিলাম, তা আসলে কতটুকু সঠিক জানিনা। কারণ আমি নিজে সেই জায়গায় ছিলাম না। যেহেতু ব্রেন টিউমার ছিল, তাই ভালোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তার মস্তিষ্ক। ডাক্তারাও চেষ্টা করেছিল অপারেশনটা করার জন্য যদিও ভালোভাবেই সফল হয়েছিল। তবে রিলিজের আগেই ঘটনাটা ঘটেছিল ।

কোন কিছুই কারো হাতে ছিল না। অবশেষে তপনের জীবন প্রদীপ হসপিটালেই ফুরিয়ে গিয়েছিল। তার ইচ্ছা গুলো অধরাই থেকে গেল। বড্ড অসময়ে চলে গেল তপন। কেন যে শুরুতেই চিকিৎসা নিল না। বড্ড মনে পড়ছে ওর মুখটা এই মাঝরাতে। বেশ ব্যথিত হয়েছি ওর চলে যাওয়ার খবরটা শুনে।

Banner-5.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

খুবই দুঃখ জনক ঘটনা।এত দিন সংগ্রাম করে যখন বিজয় দোড়গোড়ায় তখনই জীবন তাকে একপেশে যুদ্ধে হারিয়ে দিল।ঈশ্বর তার পরিবার কে এই বিপদের সময় ধৈর্য ধরার ক্ষমতা দিক।তার আত্মার শান্তি কামনা করি।

জীবন এমনিরে ভাই, কখন কার কি হয় বলা মুশকিল।

ভাইয়া এর আগেও কি কখনো তপনকে নিয়ে লিখে লিখেছিলেন? নামটা পরিচিত মনে হচ্ছে। যাইহোক আসলে খুবই দুঃখজনক একটি ঘটনা। একটা স্বপ্ন শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেল। তাই আমাদের সকলেরই উচিত অসুখ-বিসুখ নিয়ে অবহেলা না করা। ছোটখাটো সমস্যা হলেও ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া। শুরুতে হয়তো ডাক্তার দেখালে ভালো কিছু হতেও পারতো। যাইহোক আল্লাহ বেহেস্ত নসিব করুক এবং পরিবারকে এই শোক কাটিয়ে ওঠার শক্তি দিক।

না আপু এর আগে কখনোই তপনকে নিয়ে লেখা হয় নি। এবারই প্রথম লিখলাম। তবে ব্যাপারটা গতরাতে শুনেই বেশ ব্যথিত হয়েছি।

তবে পরবর্তী সময়ে যখন ডাক্তারদের তত্ত্বাবধানে ছিল, তার কয়েকদিন পরেই তপন না ফেরার দেশে ।

ভাইয়া আপনার লেখাগুলো পড়ছিলাম আর মনে মনে ভাবছিলাম হয়তো শেষ রক্ষা হবে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আসলে এভাবেই হয়তো একটি জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেন। তাই তো হাজার চেষ্টা করেও তার পরিবার তাকে শেষ রক্ষা করতে পারল না। তপনের মত একজন মেধাবী মানুষ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল। এই বিষয়ে আসলে কারো হাত থাকে না। সত্যি অনেক খারাপ লাগলো ভাইয়া। একজন অচেনা মানুষের জন্যও মনের ভিতরে অনেক কষ্ট অনুভব করলাম।

খুবই খারাপ আর কষ্ট লাগা মনের ভেতর ভর করলো।স্বপ্ন যেখানে শুরু হওয়ার কথা সেখানেই শেষ হয়ে গেল।কখন যে কার কি হয়ে যায় আল্লাহই ভালো জানেন।কোন কিছুকে আসলে ছোট করে দেখা ঠিক নয়।তপনের মত একজন মেধাবী মানুষ এভাবে হারিয়ে গেল।😥 তার পরিবারকে সহ্য করার ক্ষমতা আল্লাহ দান করুক।বেহেশত নসিব করুক আল্লাহ তাকে।আপনার মত আমারও ভাইয়া প্রায় রাতে এমন সব মানুষদের কথা মনে পরে খারাপ লাগে, ভাবি সেই মানুষ গুলো যদি জানতে পেতো এদিকের এই আমি মানুষটা তাকে নিয়ে ভাবছি তবে ভাল হতো।ধন্যবাদ ভাইয়া।

আসলে এই শোক কেটে ওঠাটা বেশ কষ্ট কর তপনের পরিবার ও সব পরিচিত আত্নীয় স্বজনের জন্য।

সত্যি বলেছেন ভাইয়া পরিচিত লোকের কষ্টের কথা শুনলে আসলে অনেক খারাপ লাগে।তপনের জীবন শুরু হওয়ার আগেই জেন শেষ হয়ে গেল। আসলে আমাদের সবারই উচিত অসুখ বিসুখ নিয়ে অবহেলা না করা। আমরা যদি ও ভাবছি তপন আগে ডাক্তার দেখালে হয়তো তপনের সাথে এমন হতো না। আসলে তা নয় তপনের হায়াত এই পর্যন্ত আছে তাই আরকি । আর এটাই প্রকৃতির নিয় জন্ম গ্রহণ করলে মরতে হবে এটাই স্বাভাবিক, তবে আগে আর পরে।যাইহোক তপনের পরিবারকে এই শোক সহ্য করার শক্তি দিন।আপনাকে ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

হুম আসলে অসময়ে তপনের চলে যাওয়াটা আসলেই আমাকে বেশ ব্যথিত করেছে।

একটি বিষয়ে আমার মা আমাকে সবসময় বলে রোগ/সমস্যা যত ছোট হোক না কেন সেই বিষয়টি জানাতে হবে। তাছাড়া এরকমও ঘটনা ঘটতে পারে। সত্যি আজকে এটার বাস্তব প্রমান পেলাম ভাই, সত্যিই অনেক কষ্ট লাগছে।

সত্যি এক দুঃখ জনক ঘটনা ৷ আসলে তপনের আরো আগে চিকিৎসা করা উচিত ছিল ৷ তাহলে হয়তো বা এরকম বড় ঘটনা না ঘটতেও পারতো ৷ যা হোক সব তো বলে আসে না ৷আসলে মৃত্যু কে স্বীকার করতেই হবে ৷ তবে কিছু কিছু মৃত্যু কখনোই মেনে নেওয়ার মতো না ৷

লেখাটা পড়তে পড়তে হঠাৎ করে যেন থমকে গেলাম ভাই। শেষ টাতে এমন কিছু অপেক্ষা করছে এটা কল্পনাও করতে পারিনি। আসলে আমি জানিনা কি বলা উচিত। এটুকুই বলবো অসুখ-বিসুখ কে ছোট মনে করে কখনো অবহেলা করা এজন্যই হয়তো উচিত নয়। আবার অন্যভাবে বললে, নিয়তির খেলা হয়তো এমনই ছিল । তপন ভাইয়ের আত্মার শান্তি কামনা করি। যেখানেই থাকুক সব সময় যেন ভালো থাকেন।

কখন যে কার যাবার ডাক এসে যাবে কিছুই বলা যায় না।আসলে মানুষের জীবনটাই একটা রহস্য। শুধু আসা আর যাওয়া। বাকি সব রহস্য। তার পরেও এভাবে কাউকে চলে যেতে দেখলে খারাপ লাগে।

আসলে দাদা আমাদের জন্মটাই হলো একটা অ্যাক্সিডেন্ট।বরং মৃত্যুটাই হলো চিরসত্য।কখন যে কার কিভাবে মৃত্যু চলে আসে,আমরা জানিও না।বুঝতেও পারি না।এই হয়তো আজকে আমার চোখ খুলল ঘুম থেকে, কাল নাও খুলতে পারে।তবুও আমরা চেষ্টা করি,নিজেদের শখ পূরণ,ইচ্ছে পূরণ এগুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার। অনেকে মৃত্যু চিরন্তন সত্য জেনেও, কত মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। মানুষকে মানুষ বলেই গণ্য করে না। তাদের অবশ্যই একবার ভাবা উচিত যে, মৃত্যুর পরে তার শরীরটা পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যাবে।খারাপ লাগলো তপনদার ঘটনাটা পড়ে।