ভারাক্রান্ত মন

in hive-129948 •  last year 

আমার মনে হয়, সব থেকে দ্রুত পরিবর্তন হয় মানুষের মন। যেটা ক্ষণে ক্ষণে বদলে যায়, এই ভালো তো এই হয়তো অন্ধকার নামলো। কেউ তো আর অন্ধকারে ইচ্ছাকৃতভাবে নিমজ্জিত হতে চায় না, তবে পরিস্থিতি অনেক সময় বাধ্য করে ফেলে।

যেহেতু শৈশবের দীর্ঘ সময় দাদু বাড়িতে কাটিয়েছিলাম, তাই আমার বাবার সঙ্গে কন্ঠল কাকুর বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। গ্রামের ঠিক শেষের দিকে কালী মন্দিরের কাছেই কাকুর বাড়ি ছিল, বলা যায় এখনো আছে।

ছোটবেলায় যখন গ্রামে ছিলাম, তখন রোজ সকালবেলা করে বাবার সঙ্গে কালী মন্দিরের ঐ দিকটাতে হাঁটতে যেতাম। গ্রামের ভিতরে একমাত্র মন্দির এলাকার পাশেই, ছোট্ট একটা চায়ের স্টল ছিল আর ওখানেই সকাল বেলা করে লুচি আর মিষ্টি বিক্রি করতো। মূলত গরম লুচি খাওয়ার জন্যই প্রায়ই বাবার সঙ্গে সেদিকটাতে যেতাম। যেহেতু কন্ঠল কাকুর বাড়ির উপর দিয়েই যেতাম, তাই বাবা প্রায়ই কাকুকে ডাকতো। তাছাড়াও বাবার অফিস কলিগ ছিল কাকু। মানে আমার বাবা যে হসপিটালে চাকরি করত, সেই হসপিটালেই ফ্যামিলি প্লানিং বিষয়ক পদে চাকরিতে নিযুক্ত ছিল কন্ঠল কাকু।

সেই সময় থেকেই গ্রামে, খুবই শিক্ষিত লোকের স্বল্পতা ছিল। হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র সরকারি চাকরি করতো। তার ভিতরে ওদিকটা থেকে কন্ঠল কাকু আর এই পাশ থেকে আমার বাবা ছিল। যদিও পরবর্তীতে সেই সংখ্যা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল, তবে যেহেতু তারা আগের মানুষ ছিল, তাই গ্রামের অন্য সকল লোকের কাছে তাদের কদর ছিল অনেকটাই বেশি।

শৈশবের সময়টাতে তাদের বাড়িতে প্রায়ই আমার যাওয়ার সুযোগ হতো। বিশেষ করে কাকুর বড় মেয়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো এবং সে যখন বিভিন্ন ছুটিতে বাড়িতে আসতো, সেই সময় দিদির কাছে মাঝে মাঝেই পড়তে যেতাম। যেহেতু আমি অংকে আগে থেকেই দুর্বল ছিলাম, তাই টুকটাক সেটা শিখে নিয়ে আসতাম।

এভাবেই চলছিল আমাদের সময় গুলো, পরবর্তীতে তো আমরা শহরে চলে এসেছিলাম। ঐদিকে কাকু চাকুরী থেকে অবসরে চলে গেল, তারপরে সেভাবে আর দেখা হয়নি। তবে মাঝে যখন ডাক্তারি পাশ করার পরে, প্রথম চেম্বার দেওয়ার জন্য গ্রামে আমার পোস্টারিং করা হচ্ছিল, সেই সময় কাকুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাও সেটা সীমিত পরিসরে। মোটামুটি ভালই উপদেশ দিয়েছিলেন কাকু। আর তাছাড়া গ্রামের লোকজন বা উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা তাকে ভীষণ পছন্দ করত। হয়তো সেটা তার ব্যক্তিত্বের জন্য।

তবে বাস্তবতার নির্মম পরিহাসের কারণে দীর্ঘ সময় থেকে তার সঙ্গে আমার আর কোন যোগাযোগ ছিল না। কেননা আমি আমার জীবন নিয়ে অনেকটাই ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। সেভাবে আর দাদু বাড়িতেও যাওয়া হচ্ছিল না আর তেমন কারো খোঁজ-খবরও নিতে পারছিলাম না।

আজ হঠাৎই আমার গ্রামের বন্ধুর ফেসবুকের পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম, কন্ঠল কাকু আর বেঁচে নেই। খবরটা দেখার পরপরই, আমার ঐ গ্রামের বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলাম। বন্ধু জানালো, কাকুর অনেক বয়স হয়ে গিয়েছিল, তাছাড়া শরীরিক ব্যাধি তো ছিলই। সব মিলিয়ে অবশেষে তাকে মৃত্যুর কাছে পরাজয় মানতে হয়েছে।

আমাদের সবাইকেই মৃত্যুর কাছে একদিন না একদিন, পরাজয় মানতে হবে। এটা একদম চিরন্তন সত্য ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে আকস্মিকভাবে, প্রিয়জনের মৃত্যুর খবর যখন শোনা যায়, তখন মনটা কিছুটা এমনিতেই ভারাক্রান্তই হয়ে যায়।

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png


<center><sub>Posted using [SteemPro Mobile](https://play.google.com/store/apps/details?id=com.steempro.mobile)</sub></center>

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

জি ভাইয়া সব থেকে দ্রুত পরিবর্তন হয় মানুষের মন। মানুষের মন পরিবর্তন হতে এক সেকেন্ডও টাইম লাগে না। অনেক মানুষ বলে যে লোকটি কেন এইভাবে অন্ধকারে নামল কিন্তু পরিস্থিতি মানুষকে অন্ধকারে নামিয়ে দেয়। কেউ কারো পরিস্থিতি বুঝতে চায় না। এটা অনেক দুঃখজনক। জি ভাইয়া আগেকার সময় শিক্ষিত লোকের স্বল্পতা অনেক কম ছিল হাতে গোনা কয়েকজন ছিল। জি ভাইয়া ব্যক্তিত্বের জন্য মানুষ অনেক পছন্দ করে মানুষের ব্যক্তিত্বতাই মেইন।অনেক খারাপ লাগতেছে যে কন্ঠল কাকু আর বেঁচে নেই 😭😭😭।জ্বী ভাইয়া আমাদের সবাইকে এই মৃত্যুবরণ করতে হবে তাই আমাদের মৃত্যু দেখে ভয় পাওয়া চলবেনা। প্রিয়জন হারানোর ব্যথা যার যায় সেই বোঝে। সৃষ্টিকর্তা আপনাকে ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা

Posted using SteemPro Mobile

আসলে মনটা একটু ভারাক্রান্ত হয়ে গিয়েছে, কাকুর চলে যাওয়ার খবরটি হঠাৎই শুনে।

ভাইয়া বেশ খারাপ লাগলো খবরটি শুনে। আসলে এমন কাছের লোকের মৃত্যু সংবাদ শুনলে তো মনটা এমনিতেই মন খারাপ হয়ে যাওয়ার কথা । আর উনি তো মনে হয় আপনাদের বেশ কাছের মানুষ। আজ কাল তো ফেইস বুক হওয়ার সুবাদে অনেক দূরের খবরও বেশ তাড়াতাড়ি জানা যায়। দোয়া রইল আপনার কাকুর জন্য।

এটা সত্য, কাছের মানুষের চলে যাওয়ার ব্যাপারটি খুবই দুঃখজনক।

আমাদের জীবনটা এমনই, একসময় যাদের সাথে প্রতিদিন দেখা হতো, জীবিকার তাগিদে সেই কাছের মানুষজনের সাথে আমাদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়। আগের দিনে শিক্ষিত মানুষের খুব অভাব ছিলো। তাই গ্রামের মধ্যে শিক্ষিত মানুষদের কদর ছিলো অন্য রকম। যাইহোক আপনার কন্ঠল কাকুর মৃত্যুর সংবাদটি জেনে বেশ খারাপ লাগলো। এভাবে একদিন আমাদেরকেও পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে, কারণ মানুষ মরণশীল। যাইহোক সৃষ্টিকর্তা যেন আপনাকে ধৈর্য্য ধারণ করার ক্ষমতা দেন,সেই কামনা করছি।

Posted using SteemPro Mobile

ধন্যবাদ ভাই আমার মনের অবস্থা বুঝার জন্য।

একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া জীবিকার তাগিদে আমরা কাছের মানুষগুলো থেকে দূরে থাকি।আপনার কাকুর মৃত্যুর খবর শুনে খারাপ লাগলো।এইটা আসলে পৃথিবীর নিয়ম কাউকে আগে বিদায় নিতে হবে বা কাউকে পরে।আপনার অনেক খারাপ লেগেছে মৃত্যুর সংবাদ শুনে।এই অবস্থায় ধৈর্য্য ধারণ করতে চেষ্টা করুন।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

কন্ঠল কাকুর বেশ ভাল কিছু শেয়ার করলেন আপনি। আসলে পাশাপাশি এই গ্রামের মানুষ হলে খুবই ভালো লাগে। যদি হোক না ভিন্ন ধর্মের কিন্তু মানুষ তো আমরা সবাই। দিন শেষে পাশের বাড়ির মানুষ গুলোই খোঁজখবর রাখেন। তাছাড়া তাদের সাথে মেলামেশা করা যায়। তবে আপনার বর্ণনা থেকে যতটুকু জানতে পারলাম বেশ ভালই মানুষ ছিলেন আপনার কন্ঠল কাকু। তবে শেষের দিকে এমন দুঃসংবাদ খুবই খারাপ লাগলো। সৃষ্টিকর্তা ওনার মঙ্গল করুক। আসলে ছোটবেলার স্মৃতিগুলো খুব বেশি মনে পড়ে যায়। যা আপনার খুব সুন্দর স্মৃতিচারণ ছিল।

আসলে মানুষজন ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড়ে । কন্ঠল কাকুর ব্যক্তিত্ব ভালো ছিল বলেই এলাকার মানুষজন থাকে মনে রেখেছে । আপনার শৈশবের অনেক স্মৃতি কন্ঠল কাকুর বাড়িতে আছে । কিন্তু হঠাৎ করেই কন্ঠল কাকুর মৃত্যুর সংবাদ আসলেই কষ্টদায়ক । তবে আমাদের সবাইকে অবশ্যই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে । আমরা কিছু সময়ের জন্য অতিথি হয়ে এসেছি পৃথিবীতে ।