বোবা কান্না || @shy-fox 10% beneficiary

in hive-129948 •  2 years ago 

boy-g1cb4aba71_1920.jpg
pixabay source

কান্নার আওয়াজটা যে আজ প্রথম শুনছি তা কিন্তু না । প্রতিদিন শুনি , রাত যতো গভীর হয় কান্নার শব্দটাও ক্রমশ বেড়ে যায় । বাহিরে দমকা হাওয়া বইছে ঠিক সেই সময়েও আবারো কান্নার আওয়াজ । আজ একটু বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে দেখার চেষ্টা করলাম, আসলে ব্যাপারটা কি ।

এই ফ্ল্যাটে আসার পর থেকেই , মূলত এই ঘটনাটা ঘটছে আমার সঙ্গে । যদিও প্রথমদিকে বেশ চিন্তিত ছিলাম ব্যাপারটা নিয়ে , তবে পরবর্তীতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি । তাও তো হবেই প্রায় দুই মাসের মতো এই ফ্ল্যাটে আসার । যদিও প্রথমদিকে পরিবারের অন্যান্য লোকজন বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিল । কারণ প্রায়ই মাঝরাতে এমন কান্নার শব্দ । যদিও এই ফ্ল্যাটে ওঠার আগেই শুনেছিলাম, পাশের বিল্ডিং এ একটা ছোট বাচ্চা থাকে, তার আসলে বিগত তিন বছর বয়স থেকেই অটিজম সংক্রান্ত সমস্যা ছিল । যার কারণেই সে প্রায়ই এমন আচার-আচরণ করে ।

শহরের বাড়িঘর গুলো বেশ চাপাচাপি । আসলে এক বাসা থেকে আরেক বাসায় কি হচ্ছে, কারো খোঁজ খবর নেওয়ার বিন্দুমাত্র সময় নেই । তবে যদি কখনো বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে থাকা যায়, তাহলে অনেক কিছুই দেখা যায় বা কানে আসে । ঠিক তেমনটাই হয়েছিল আজকে রাতে আমার সঙ্গে । যখন আমি বাহিরে বৃষ্টির অবস্থা বুঝতে পেরে বেলকুনিতে গিয়েছিলাম শুকনো কাপড় গুলো নিয়ে আসার জন্য , তখন কান্নার শব্দটা যেন বেশ ভালোই শুনতে পাচ্ছিলাম।

বাচ্চাটার কতোই বা বয়স হবে ৬ থেকে ৭ বা তার থেকেও কম । আসলে এমন একটা সমস্যায় বাচ্চাটা ভুগছে, সে আসলে কাউকে কোন কিছু মুখেও বলতে পারছে না বা নিজের থেকে অনেক কিছুই সহ্য করতে পারছে না । আসলে তার কাছে পুরো পৃথিবীটার চিত্র যেন সম্পূর্ণ আলাদা ।আসলে এখানে তাকে , তার বাবা মা ছাড়া অন্য কেউ ভালোভাবে সহযোগিতা করার মানুষ নেই । তার বেড়ে ওঠাটা বেশ ভালোই বিঘ্ন হয়ে গিয়েছে ।

শিক্ষক দম্পতির একদম ছোট ছেলে এই সমস্যায় ভুগছে । যদিও তারা এর আগে বিগত সময়ে বহু ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছিল , তবে তারা বলেছে যে একটা সময়ের পরে কিছু অভ্যাসগত পরিবর্তন আসবে , তবে তার জন্য প্রচুর পরিমাণে নার্সিং দরকার । আসলে যেখানে নিজেদের পরিবার নিয়ে টিকে থাকাতেই বেশ হিমশিম খেতে হয় এই দম্পতির, সেখানে এই দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির বাজারে আসলে তাদের বাচ্চার জন্য অতিরিক্ত নার্সিং করাটা তাদের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য।

তারপরেও বাচ্চার বাবা-মা বেশ ভালই চেষ্টা করেছে । আসলে বাচ্চার মনের ভিতরে কি চলে তা তো বলা বেশ মুশকিল । তবে যখনই আমি বেলকুনিতে যাই, তখনই আমি দেখতে পারি, একদম পাশের বাসার বেলকুনিতেই বাচ্চাটা দাঁড়িয়ে আছে নতুবা বসে আছে নতুবা আপন মনে হাসছে নতুবা কান্না করছে নতুবা ভিন্নরকম অঙ্গভঙ্গি করছে ।

যদিও বাচ্চাটার বাবা-মা বাচ্চাটাকে যথেষ্ট মানসিকভাবে প্রতিনিয়ত সহযোগিতা করে, তাকে নিয়ে বেশ ভালই ঘোরাফেরা করে , তারপরেও পারিপার্শ্বিক লোকজনগুলো এমন ভাবে বাচ্চাটার দিকে দেখে, যেটা অনেকটাই দুঃখজনক । আসলে কিছু কিছু ব্যাপার কেউ মুখ ফুটে বলতে পারে না । সেই ব্যাপারগুলো বুঝে নিতে হয় । যাইহোক হয়তো সেই বাচ্চার বাবা-মার মনের অবস্থা কি হয় সেই মুহূর্তে, তা হয়তো বুঝতেই পারছেন।

বাচ্চাটার দিকে তাকালেই আমার বড্ড খারাপ লাগে । আমি তো মাঝে মাঝে বাচ্চাটার ঐ অবস্থা দেখে বেশ অসহ্য যন্ত্রণায় ভুগি । না জানি বাচ্চাটার বাবা-মা কিভাবে সহ্য করে । তবে যতো কিছুই হোক বাচ্চাটার বেড়ে ওঠা যেন আরো সুন্দর হয় , এমনটাই তো আশা করছি ।

যেহেতু এটা ইচ্ছাকৃত কোন সমস্যা না , এটা আসলে একটা রোগ । অনেকটা আমার বা আপনার শরীরে যেমন অসুখ হইলে কষ্ট হয় ঠিক ঐ জায়গাটা থেকে একটু চিন্তা করে দেখুন, তাহলেই হয়তো উত্তর পেয়ে যাবেন ।

যারা এই রোগের ভুক্তভোগী, তাদেরও এক ধরনের শারীরিক ও মানসিক কষ্ট প্রতিনিয়ত হয় ।
তারপরেও আমি কখনোই চাই না , কারো এমনটা হোক । আর যদি কারো হয়েই যায় , তবে তার প্রতি অবশ্যই সহনশীলতা আচরণ করা আমাদের সকলের উচিত ও দরকার ।

আজ আর মাঝ রাতে ঘুম হবে না । হঠাৎ করেই এই দমকা হাওয়া আর বিজলীর ঝলকানিতে হঠাৎই বাচ্চাটার মুখটা দেখে বেশ ভালোই অস্থিরতায় ভুগছি । বেশ খারাপ লাগছে , সেই কান্নার আওয়াজটা যেন ক্রমাগত কানে বাজছে।

Banner-3.png

ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

অটিজম মানষিক বিকাশজনিত একটি রোগ।এই বাচ্চারা একটু বয়স হলে আস্তে আস্তে সব করতে পারবে, তবে ওই প্রচুর নার্সিং দরকার আর দরকার প্রচুর ধৈর্য্যর। তবে একটা ভাল কথা শুনাই,অটিজম আক্রান্ত বাচ্চারা অনেক সময় ম্যাথ,ড্রয়িং এগুলোতে পারদর্শী হয়ে ওঠে। ধন্যবাদ ভাইয়া বাচ্চাটি ও তার বাবা মার দুঃখ বোঝার ও আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য।

ম্যাথ আর ড্রয়িং শুধু না , আসলে তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দেওয়া ও নার্সিং করা হলে , তারা সবকিছুতেই ভালো করবে ।

ভাই রাত্রে কান্নার আওয়াজ এর কথা শুনে আমি প্রথমে মনে করছিলাম আপনার দুই মাস আগে যে ফ্ল্যাটে উঠেছেন, ফ্ল্যাটে কোন ভূত আছে।। কিন্তু পড়ে দেখি যে না একটা অটিজম শিশুর কান্না। শিক্ষক দম্পতি হলেও অনেক জিনিসের দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগামী হওয়ার ফলে তার চিকিৎসা করার জন্য আসলেই দুষ্কর। এটা শুনে আমার অনেক খারাপ লাগলো ভাই। আমি ছেলেটি সুস্থতা কামনা করছি।

আপনার চাওয়া আর আমার ভাবনার ভিতরে কোন পার্থক্য নেই ভাই , আমিও চাই বাচ্চাটা দ্রুত সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাক ।

আসলে আজকাল মানসিক রোগ গুলো অনেকটা হাসির পাত্র হয়ে উঠছে।তাই বাবা মা চাইলেও সমাজের মাঝে এনে বাচ্চাগুলোকে কষ্ট ভুলাতে পারেনা।দোয়া করি বাচ্চাটার জন্যে।

তারপরেও পারিপার্শ্বিক লোকজনগুলো এমন ভাবে বাচ্চাটার দিকে দেখে, যেটা অনেকটাই দুঃখজনক ।

অটিজম শব্দটি শুনলেই হৃদয় কেঁপে ওঠে। আসলে যারা এই রোগে আক্রান্ত তাদের দেখলে সত্যিই অনেক খারাপ লাগে। যেহেতু তার মানসিক বিকাশ ঘটে না তাই তার বাবা-মাকেও বেশ সময় দিতে হয়। কিন্তু চারপাশের মানুষজন যখন বাঁকা চোখে তাকায় তখন পরিবারের সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। ভাইয়া আপনার লেখাগুলো যখন পড়ছিলাম তখন মনে হচ্ছিল যেন সেই বাচ্চা ছেলেটির কান্না আমার কানেও ভেসে আসছে। পুরো ব্যাপারটি সত্যিই অনেক দুঃখজনক। সৃষ্টিকর্তা যেন কাউকেই এভাবে কষ্ট না দেয় এই প্রার্থনাই করি।

আসলেই ব্যাপারটি আমাকে বেশ ব্যথিত করেছে আপু । বারবার যেন অসহ্য একটা যন্ত্রণায় ভুগছি ।

ভাই প্রথমে আপনার গল্পটি পড়তে মনে হচ্ছিল কোন ভয়ানক গল্প হবে, কিন্তু যখন বুঝতে পারলাম বাচ্চাটি অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধী তখনই কেমন যেন খারাপ লাগলো। আসলে আমাদের সমাজে এরকম অনেক বাচ্চা রয়েছে। যারা খুবই কষ্টে বেড়ে উঠছে এবং যাদের নিয়ে পথ চলা খুব কষ্টকর। পরিবারের অনেক কষ্ট হয়। এই দ্রব্যমূল্য বাজারের তাদেরকে পরিবারের খুব সমস্যা হচ্ছে। যাই হোক এরকম বাচ্চা আমাদের আত্মীয় ভিতর রয়েছে তাই আমি বিষয়টি বুঝতে পেরেছি।

ছোট বাচ্চাটার প্রচুর খেয়াল আর যত্নে রাখা প্রয়োজন ৷ আসলে জন্মের পর থেকে অনেক শিশুই এমন অটিজম রোগে আক্রান্ত হয় ৷ আর আমরা তাদের অবহেলা করি , কিন্তু তাদের সাথে মিশলে ভালো আচরণ করলে তাদের মানসিক বিকাশ ঘটে , কিন্তু আমরা পারিপার্শ্বিক লোকজনগুলো তা করি না , অন্য চোখে তাকাই , যেটা সত্যিই দুঃখজনক ৷ খুব খারাপ লাগলো ছোট বাচ্চাটির এমন অবস্থার কথা জেনে ৷ ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে শেয়ার করার জন্য ৷

ভাই আজকে আপনার গল্পটি পড়ে খুবই খারাপ লাগলো। আসলে বোবাকান্না গল্পটি নাম অবাক করা ছিলো, গল্পটি যেন আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। আসলে আমাদের সমাজে এরকম প্রতিবন্ধী অনেক শিশু রয়েছে। যাদের খুবই নার্সিং দরকার। তারা নার্সিং পেলে অনেক ভালো কিছু করতে পাবরে।

অটিজম যেহেতু একটা জেনেটিক ডিজঅর্ডার তাই জিন থেরাপি করলে যদিও বা ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে তবে সেটাও বড় সড় সংখ্যার টাকার প্রয়োজন। আর তার ট্রিটমেন্ট ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ কোথাওই নেই। এই অবস্থায় বাচ্চা যা চায়, যেমন ভাবে চলতে চায় তেমনই রাখা উচিত।আর স্পেশাল অ্যাটেনশন দেওয়া উচিত। এটা একদমই ঠিক দাদা যে নিজের প্রতিবেশী হিসেবে এমন বাচ্চা থাকলে মনের ভেতরটা একটু খচখচ করেই।