কথিত ভাই || @shy-fox 10% beneficiary

in hive-129948 •  2 years ago 

হুট করে ঘুম ভেঙ্গে যায় দীপ্তোর । মুঠে ফোনে খুদেবার্তাতে লেখা আজ কিন্তু মিছিল আছে । সময় মতো এসে পড়বি । এই বার্তা যে শুধুমাত্র দীপ্ত একাই পেয়েছে তা কিন্তু না । মোটামুটি এই হলে যারা থাকে, তারা সবাই একই বার্তা পেয়েছে । কেউ মুখ ফুটে যে কথা বলবে, তাদের আজ ক্লাস আছে এমন কথা বলার মতো সাহস যেন কারো বুকে নেই । সাড়ে নয়টাতে রসায়নের ক্লাস, কই ভেবেছিল দীপ্ত একটু রসায়নের বিক্রিয়া শিখবে তবে এখন যা হতে চলেছে, তা যেন বিক্রিয়ার থেকেও বড় কিছু ।

20220629_160139-01.jpeg

গত কয়েকদিন থেকে মোটামুটি দীপ্তর সঙ্গে এই ব্যাপার গুলোই হয়ে যাচ্ছে । আসলে সামান্য কিছু সুবিধার জন্য দীপ্ত আসলে এই বিচ্ছিন্ন ব্যাপারগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে । ঐ যে হলের একটা সিট, সস্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা-খাওয়ার ঝোঁক ও হাওয়া বাতাস গায়ে লাগানো এবং হালকা কিছু পেশী শক্তির জন্যই মনে হয় এ লোভনীয় ধাপগুলোতে পা দিয়েছিল সে । তবে সেই পা দেওয়ার মাশুল যে, এমন ভাবে দিতে হবে তা মনে হয় রোজ এখন হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে দীপ্ত ।

চোখের নিচটাতে বেশ কালচে দাগ পড়ে গিয়েছে । বিছানায় বসেই ফেলে আসা দিনগুলোর কথা ভাবছিল । সেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সময়ের কথা । বেশ ভালোই ফলাফল ছিল তার । চেষ্টার কোন কমতি ছিল না । প্রথমবারই ভর্তি পরীক্ষার যুদ্ধে টিকে গিয়েছিল নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে । পছন্দের সাবজেক্ট পেয়েছে, অনেকটা তাড়াহুড়ো করেই ভর্তি হয়ে গেল বিশ্ববিদ্যালয়ে । উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার তো সবারই ইচ্ছা থাকে । হয়তো সেই স্বপ্নই তাকে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে এসেছে ।

20220629_160137-01.jpeg

ওর যে আর্থিক অসচ্ছলতা আছে তা কিন্তু বলবো না । তবে মফস্বল থেকে উঠে আসা বেচারা এই পরিবেশে কিভাবে নিজেকে মানিয়ে নেবে, সেটা বুঝে উঠতেই অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে । আর এর মধ্যেই যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে । তাছাড়াও আজকাল এটাই তো নিয়মে পরিণত হয়ে গিয়েছে । এখানে থাকতে হলে, ওখানে যেতে হবে , অমুকের সঙ্গে মিশতে হবে , তমুকের কথায় চলতে হবে আর সহমত সহমত বলে, মুখে ফেনা তুলে ফেলতে হবে । তাহলেই তো একজন আদর্শবান কর্মী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করা যাবে ।

যে ছেলেটা বাড়িতে থাকতেও মা সকালবেলা করে কলেজে যাওয়ার জন্য ঘুম থেকে জাগিয়ে দিত । তারপর মা নিজে হাতেই খাবার প্রস্তুত করে তাকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে কলেজে যাওয়ার বন্দোবস্ত করে দিত । সেই ছেলেটা আজ নিজের মতো করেই সিদ্ধান্ত নেয় । সে আজ অন্যের ছত্রছায়ায় নিজেকে প্রতিনিয়ত প্রমাণ করার নেশায় ব্যস্ত।

20220629_153851-01.jpeg

মিছিলের সামনের লাইনে ভাইয়ের পাশে থাকার জন্য সে প্রতিনিয়ত ঝাঁপিয়ে পড়ে । ভাবা যায় ব্যাপারটা । তার মস্তিষ্কে যে কি চেপেছে , তার চিন্তাভাবনায় যে কি ঘুরপাক করছে তা বোঝা মুশকিল। অন্যের দেখানো স্বপ্নে খালি নিজেকে বিস্তার করার জন্য নিয়োজিত প্রতিনিয়ত। আচ্ছা যে ভাইগুলো মিছিলে থাকার জন্য এতো আহ্বান জানায় । আচ্ছা সেই কথিত ভাই গুলো কই থাকে সেই সময়, যখন এই ছেলে গুলো ব্যর্থতার সংজ্ঞা বয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় ।

20220629_153832-01.jpeg

যদিও এমন কথায় কারো কোন কান নেই । এইভাবে ভাবার সময় এখন কারো হাতে নেই । সকাল সকাল মিছিলে যেতে হবে তারপর শুধু স্লোগান আর স্লোগান হবে । আমার ভাই , তোমার ভাই । স্লোগানে মুখরিত হবে পিচ ঢালা রাজপথ আর মাঝেমাঝে কাঁপিয়ে উঠবে চারিপাশ।

আপাতত দীপ্তর মাথায় রসায়নের বিক্রিয়া ঢুকবে না । তার যে আজ ক্লাসে যাওয়া হবে না , সেটাও সে ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে । তবে তাও সে অবুঝ । তার মাথায় এখন শুধু মিছিলের চিন্তা ঘুরছে । তাকে রাজপথ কাঁপাতে হবে , ভাইয়ের পাশে থাকতে হবে । এইভাবেই সে প্রস্তুতি নিচ্ছে আর একে ওকে হাঁক ছেড়ে ডাকছে ।

ক্রমশ

Banner-3.png

ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

একটা সময় পর এসব ভাই নিজের আখের গুছিয়ে কেটে পরে আর ফেঁসে যায় এসব স্বপ্নে বিভর স্টুডেন্টগুলো।আজকাল তো এসবের জন্যেই অনেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষাই দেয়না।

এইটা অবশ্য একদিক থেকে ঠিকই বলেছেন ম্যাম । জায়গাভেদে চিন্তা গুলো একটু আলাদা ।

আচ্ছা সেই কথিত ভাই গুলো কই থাকে সেই সময়, যখন এই ছেলে গুলো ব্যর্থতার সংজ্ঞা বয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় ।

অসাধারণ লিখেছেন ভাইয়া। আসলে যখন লেখাগুলো পড়ছিলাম তখন চোখের সামনে সমাজের এই চিত্র গুলো ভেসে বেড়াচ্ছিল। কত মেধাবী জীবন এভাবে নষ্ট হয়ে গেছে তার হিসাব কারো কাছেই নেই। বাবা-মা অনেক স্বপ্ন নিয়ে নিজের সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায়। অথচ সেখানে গিয়ে তারা কথিত ভাইয়ের খপ্পরে পড়ে নিজের বাবা-মায়ের ও পরিবারের সব স্বপ্ন উড়িয়ে দেয়। এই কথিত ভাই গুলো শুধু নিজের প্রয়োজনেই এই মেধাবীদেরকে ব্যবহার করে। এছাড়া কিছুই নয়। যখন বিপদে পড়বে তখন সেই কথিত ভাইরাই তাকে এড়িয়ে চলবে এবং না চেনার ভান করে চলবে এটাই বাস্তবতা।

পারিপার্শ্বিক অবস্থার ভিত্তিতে লিখেছিলাম, তবে ব্যাপার গুলো আসলেই বেশ দুঃখজনক।

আপনি ঠিক বলেছেন ভাইয়া, কথিত ভাইয়েরা তাদের স্বার্থ হাসিল হয়ে গেলে এসব নিরীহ ছাত্রদের ফুটবলের মত লাথি দিয়ে ফেলে দেয়। এসব কথিত ভাইদের কারনে আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সন্ত্রাসের কারখানায় পরিনত হতে যাচ্ছে। ধন্যবাদ ভাইয়া অনেক সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।

মফস্বল থেকে আসা এরকম অনেক দীপ্তরাই আজ এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বিশব্বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যখন পড়াশোনার প্রস্তুতি নেয় আটঘাট বেধে, তখনি ঐ কথিত ভাইয়েরা এসে এই লোভ ঐ লোভ দেখিয়ে ক্লাসের দিকে না নিয়ে নিয়ে যায় ঐ রাজপথ কাপানোর জন্য। তখন কেমিস্ট্রির ল্যাবের দীপ্ত হয়ে যায় রাজপথের দীপ্ত। এই পথে একবার ঢুকে গেলে আর ফিরতে পারে না এরা। ধন্যবাদ ভাইয়া।

সমাজ এমনই দাদা, অপেক্ষায় থাকে তোমার,আমার,আমাদের দূর্বল জায়গা, নরম জায়গা খোঁজার।নরম মাটি কে ভাঙা সহজ তো দাদা। তাই এই নোংরা সমাজে নিজেদের দুর্বলতা দেখাতে নেই। খুব ভালো এবং শিক্ষামূলক লেখা পেতে চলেছি। অপেক্ষায় রইলাম।

যদিও বর্তমান অবস্থা এখন এমনটাই চলছে , দেখি সামনে লেখাটাকে একটু দীর্ঘায়িত করার ইচ্ছা আছে ।

এই ধরনের অবস্থা আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি।আমার কলেজ এর ফ্রেন্ড একটু পাওয়ার দেখানোর জন্য দীপ্তর মত কিছু পাতি নেতার পিছনে ঘুরত।এর জন্যে ওরে অনেক কিছুই সহ্য করতে হইসে কিন্তু পরে যখন বুঝছে,সে আসলে ব্যাবহার হইসে।তখন বের হইতে চেষ্টা করছে।কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।

যাইহোক আসলেই আমরা বুঝেও অবুঝ,সামান্য একটু ক্ষমতার জন্য অন্ধ হয়ে পথ চলি।।একটা গানের কিছু লাইন শোনাই 😍

ধর্ষকেরা বসে আছে সোনার সিংহাসনে
লড়ছ তোমরা তাদের হয়ে নিজেদের বিকিয়ে
ক্ষমতার লোভে বিক্রি হচ্ছ তুমি আহা কি অদ্ভুত
তোমাকে জানাই আমার মদ্ধাঙ্গুলির স্যালুট

ভালো লাগল বইলেন পরের হ্যাং আউট এ গেয়ে শোনাবো।😁

অবশ্যই তোমার গান শোনার অপেক্ষায় থাকলাম ভাই ।

মফস্বল থেকে ছেলেরা শহরে পড়তে এসে হঠাৎ করেই এলোমেলো জীবনে অভ্যস্ত হয়ে যায়। যখন বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারে তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। কিছু স্বার্থান্বেষী লোকজন এইসব ছেলেদের টার্গেট করে নিজেরা অনেক উপরে উঠে যায় আর এসব ছেলেদের ছুড়ে ফেলে দেয়। খুবই চমৎকার লিখেছেন ভাইয়া । ভালো লাগলো খুব।

বাস্তবতা বেশ নিষ্ঠুর আপু , হয়তো এমন অবস্থায় পড়ছে অনেকে প্রতিনিয়ত।

যুগে যুগে এটাই হয়ে আসছে তবে অতীতে সত্যের পথে ন্যায়ের পথে নিজের অধিকার আদায়ের জন্য মিছিল হতো আর এখন হয় দুটো টাকা কামানোর জন্য। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্টান নয় এমন টা সব খানেই হচ্ছে ভাইয়ের কথায় চলতে হবে নতুব সেটা ভুল হলেও শুনতে হবে সত্য বলা যাবে না । সত্য বললে কি হবে তা আর বললাম না। এভাবেই ক্ষমতাধর যারা তারা শোষন করছে। আগামীতেও করবে। ধন্যবাদ।

ভাই , জীবন যেখানে যেমন । তবে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বেশ জটিলতাপূর্ণ। এইটা সত্য।

সময় কখনো এক যায় না ৷একটা সময় সময়ের স্রোতে বদলে যেতে হয় ৷বলতে গেলে তখন নিজের মাথায় অনেকটা বিবেক জাগ্রত হয় ৷
তখন সে আর বসে থাকে না ৷ ছুটে একটা নতুন জীবনের খোজে ৷
যেমনটা দীপ্ত করেছে ৷