সাধক অর্জুন-পর্ব-২

in hive-129948 •  2 years ago 
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগবাসী। আশা করি সবাই ভাল আছেন।আমিও ভাল আছি।আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব সাধক অর্জুন গল্পের দ্বিতীয় পর্ব

2VZXybTSZJq1AreaDn1D7Jp7ZEvgLC9TvJctofX1ChMgSZqbFcmjg3cmEvMxwzZEuKvBVJG58WTtfwJYgEGEfMBmpawAksMPDPKK4ECWYFxSnWyChEQ7ee67z3tXWEbXjdCt3t4KvepPphwLYdPNS16uCHC.jpeg
সোর্স

গতপর্বে

তখনই হঠাৎ একটি গম্ভীর কন্ঠে আমার গবেষণা ভংগ হল। প্রথমে বুঝতে পারি নি এই রাতে বেলায় এই জনমানব শুণ্য জায়গায় মানুষ কোথা থেকে আসল।তখন আবার ধমক,কে তুমি? এত রাতে শ্মশানে বসে কি করছ?
গত পর্বের লিংক

বর্তমান পর্বে

একে তো নির্জন জায়গা,তার উপর অন্ধকার,তার উপর আবার হঠাৎ করেই মনযোগ ভঙ্গ হওয়া।সব মিলিয়ে দারুন চমকে উঠলুম।তখন সামনের লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল, "কি হে উত্তর দিচ্ছ না সে বড়? কে তুমি? এখানে এভাবে বসে আছো কেন?"

তখন আমি লোকটিকে সেই অন্ধকারে যতটা পারা যায় দেখতে লাগলাম।লোকটির মাথায় জটা,মুখে বিশাল দাড়ি গোফের জঙ্গল,গায়ে রক্তাম্বর।তখন বুঝলাম নিশ্চয় সাধু সন্ন্যাসী গোছের কেউ হবেন। তাই প্রণাম করলাম।তারপর বললাম,"বাবা আমি অর্জুন।তিনকুলে কেউ নেই,তাই ঘরে আর মন টেকে না।কেবল মনে হয় পথে পথে ঘুরি।তাই সব ছেড়ে পথেই বেড়িয়েছি।

আমার প্রণামের উত্তরে আমাকে আশীর্বাদ করে বললেন,"কাজ টা তুমি ভাল কর নি বাছা,এভাবে পথে বেড়িয়ে পড়া ঠিক হয়নি।আর তুমি কি জান তুমি শ্বশানে বসে আছো?"

এই কথা শুনে বললাম,বাবা শ্বশান তো পবিত্র জায়গা।এখানেই মানুষ তার এজন্মের সব ত্যাগ করে পরলোকে গমন করে।শ্মশানে আর ভয় কি? আমার কথা শুনে সাধু মহাশয় খুশি হলেন।তিনি বললেন,"বেশ বলেছ বাবা,অথচ সাধারণ মানুষ শ্মশান কে ভয় পায়।তা বেড়িয়েই যখন পড়েছ চল আমার সাথে। রাতে আমার সাথেই থাকবে।"

সাধুর কথায় তাকে বেশ ভাল মানুষ মনে হল।গেলাম তার সাথে।গিয়ে দেখি একটি বট গাছের নিচে মৃতদের ফেলে দেওয়া কাথা কম্বল দিয়ে একটি ঝুপড়ি মত বানানো।সাধু বললেন,"এই আমার বাস,আমরা সাধক।বেশি সুখ স্বাচ্ছন্দ সাধনার পথে বাধা দেয়।তাই কাজ চালানোর মত এই ব্যবস্থা।"এরপর তিনি সেই ঝুপড়ির এক কোনা থেকে একটি কলা আর এক ফালি পেপে বের করে দিয়ে বললেন,"এটুকু খেয়ে নাও।আমি রাতে খাইনা তাই কোন ব্যবস্থা করে রাখি নি।তাই আপাতত এটুকু খেয়েই রাত টা কাটাও।"এই বলে সাধু কোথায় যেন চলে গেলেন।

এরপর আমি খাওয়া শেষ করে বসে রইলাম।এই যে শ্মশানে আমি বসে আছি,এক সম্পূর্ণ অচেনা লোকের সাথে তাও আমার কোন ভয় ছিল না।একটু পর উনি ফিরে এলেন।আমার সামনে পদ্মাসনে বসলেন।আমি জানতে চাইলাম গুরুজি আপনার নাম কি? কবে থেকে সাধনা করছেন?

তখন সাধু বলতে লাগলেন,"নাম একটা ছিল বটে,কিন্তু সাধনার পথে প্রবেশের সময় আগের জীবনের সব ত্যাগ করতে হয়।আমার যেদিন দীক্ষা হয় গুরু নাম রাখলেন ভৈরব।সেই থেকে আমি ভৈরব নামেই পরিচিত।আমি সাধনা করছি তাও তো প্রায় ৫০বছর হতে চলল।তোমার মত বয়সে ঘর ছেড়েছিলুম"।

আমি একটু অবিশ্বাস করলুম।কারন উনার কথা মত উনার বয়স হবার কথা ৭০-৮০কিন্তু উনাকে দেখে কোনভাবেই উনাকে ৪৫-৫০এর বেশি মনে হয়না।উনি তখন হেসে বললেন,"সবই সাধনার ফল বাবা।এই শরীর কিছুই না।কোন জিনিসের যত্ন করলে সেই জিনিস যেমন অনেক দিন ভাল থাকে শরীরও তেমনি"।উনার কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম।আমার মনের কথা উনি বুঝলেন কি করে?

তারপর জিজ্ঞেস করলাম,"তাইলে কি বাবা সারাজীবন বেচে থাকা সম্ভব?"উনি হেসে বললেন,আরে পাগল মানুষ তো সারাজীবনই বেচে থাকে।যে যতক্ষণ জিবীত ছিল সেটাই তো তার সারাজীবন।তবে তোমার প্রশ্নটা আমি বুঝতে পেরেছি।"আমার মনে হয় মানুষ চিরদিন বেচে থাকতে পারেনা।জন্ম যখন হয়েছে তখন তাকে মারা যেতেই হবে,সে আজ হোক বা কাল।তবে............

আজকের পর্ব এপর্যন্তই। কেমন লাগল গল্পটি অবশ্যই জানাবেন।আপনাদের উৎসাহ পেলেই পরের পর্ব আনব।ধন্যবাদ সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য।

VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR
SET @rme as your proxy
witness_vote.png

banner-NEW.png
break2.jpg
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
break2.jpg

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

আপনার গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগল। আসলে লোকটি নিশ্চয় সাধু সন্ন্যাসী। তা নাহলে দেখতে ৪০-৫০ বছরের মতো মনে হবে কেনো?তারপর আবার আপনার মনে কথা সহজে বুঝতে পারলো।উনি ঠিক বলেছেন মানুষ সারাজীবন বেঁচে থাকে না। মৃত্যু নিশ্চিত। ধন্যবাদ আপনাকে পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।