গত পর্বেঃ
স্কুল ব্যাগ কাধে করে ঝিলের পাড়ে বসে আছে রুদ্র।টিউশনে যাওয়ার কথা এসময়,কিন্তু যায় নি।যাবেই বা কোন মুখে।তিন মাসের বেতন বাকি।চক্ষুলজ্জায় ভাইয়া এতদিন কিছু বলে নি।কিন্তু ভাইয়াও তো স্টুডেন্ট।টিউশনের টাকা দিয়েই তার চলতে হয়।তাই আর থাকতে না পেরে বলেই দিয়েছেন।...............
এরপর কিছুদিন চুপচাপ থাকলেন।তারপর আবার ব্যবসার ভূত মাথায় চাপল।এবার সবাই তাকে খুব করে বোঝালেন।কিন্তু কে শোনে কার কথা।উনি ব্যবসা করবেনই।ফলাফল ধার কর্জ করে ইনভেস্ট করলেন।ফলাফল তো জানাই।আবার লোকসান।ফলে রুদ্ররা ধাক্কা খেল প্রচুর।এতদিন তাদের আর যাই হোক অভাব ছিল না।কিন্তু এখন,.......
বর্তমানেঃ
এখন যেন রুদ্ররা পড়ে গেছে অথৈ সাগরে।একে তো নিজেদের খাওয়াদাওয়া বাসা ভাড়া,তারউপর আবার ঋণ পরিশোধ।এদিকে ব্যবসা থেকেও কিছু উন্নতি হচ্ছে না।বাবাকে বার বার বলার পরেও টিউশন ফি টা ম্যানেজ হল না।বাবা কিছুই বলেন না।এদিকে চাপ দিতেও ইচ্ছা করে না।মনে হয় বাবা মায়ের উপর বোঝা হয়ে আছে।
কিন্তু সেই বা কি করবে? মাত্র ক্লাস নাইনে।এই বয়সে চাইলেও কিছু করতে পারে না। বাড়িতে একবার বলেছিল,"আমার বয়সি অনেক ছেলেরা তো গার্মেন্টস এ যাচ্ছে।আমিও যাই,কিছু না হোক দুপয়সা তো আসবে বাড়িতে"।এই কথা শুনে তো মা কান্না,বাবা তো রেগেই আগুন।" তাদের নাকি মান সম্মান যাবে,লোকে কি বলবে।আরো কত কথা।
রুদ্র বোঝে না সম্মান কিভাবে পেট ভরাবে? বা যেখানে পেটে ভাত নেই সেখানে সম্মান নিয়ে এত ভেবে কি হবে? আর থাকল লোকের কথা,আরে তাদের এই দুর্দিনে তো কেউ ১কেজি চাল দিয়ে সাহায্য করল না।তাইলে তারা কি ভাবল, না ভাবল তাতে কি যায় আসে? আর গার্মেন্টস এ কাজ করলে সম্মান যাবে কেন? সে তো কাজ করতেছে কোন চুরি নয়।
কত বড় বড় নেতা,সরকারি কর্মকর্তা আছে যারা ঘুষ ছাড়া এক পা নড়ে না এটা সবাই জানে।অথচ তাদের তো সম্মান কমে না।আর সেখানে সে তো মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ইনকাম করবে।তাইলে সম্মান যাবে কেন? ওরই তো সম্মান বেশি হবার কথা।এই দুনিয়ার নিয়ম কানুন ওর মাথায় ঢোকে না।
এসব ভাবতে ভাবতে সন্ধ্যা নেমে আসল।মানুষের কাছে বাড়ি নাকি স্বর্গ।কিন্তু রুদ্রর বাড়ি যেতে ইচ্ছা হয়না।আসলে অভাব সে নতুন দেখছে তো, তাই ঠিক অভ্যস্ত হতে পারছে না।মেনে নিতে পারছে না।সারাদিন এটা নেই, সেটা নেই এই নিয়ে বাবা মার মাঝে খিটি মিটি লেগেই আছে।যার ফলে বাড়িটা তার কাছে মনে হয় নরক।
একবার মনে হল কাকার বাড়ি যাবে,অন্তত রাতের খাবার টা খেয়ে গেলে একটু চাল বাচবে।কাকা কি না খেয়ে আসতে দেবে? আর যদি খেতে নাও বলে তবে কাকাত ভাইকে পড়া দেখিয়ে দেবার নাম করে ডিনার পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।তখন নিশ্চয় না খেয়ে আসতে দেবে না।
যেই ভাবা সেই কাজ। সে চলে গেল তার মেজ কাকার বাসায়।গিয়ে দেখে কাকার শ্বশুড় বাড়ির লোকজন দিয়ে বাড়ি ভর্তি।পোলাও মাংসের গন্ধে ঘর ভরে আছে।মনে মনে খুশিই হল রুদ্র।যাক অনেকদিন পর ভালমন্দ খাওয়া যাবে।
ভাইয়ের সাথে গল্প করতে করতে খাবার সময় হল,কাকি এসে সবাইকে ডেকে নিয়ে গেল খাবার জন্য।কিন্তু রুদ্র কে ডাকল না।রুদ্র ভাবল ওকে হয়ত একা খেতে দেবে।কিন্তু অনেক ক্ষণ পরেও তাকে কেউ ডাকল না।তবুও রুদ্র আশা নিয়ে বসে রইল। কথায় বলে না আশায় বাচে চাষা।কিন্তু কথায় বলে না,"কপালে নেই ঘি ঠকঠকালে হবে কি?"।
একটু পর কাকাতো ভাই তার মাকে বলল,মা রুদ্রদা কে খেতে দাও।তখন রান্না ঘর থেকে রুদ্রর কাকি বলল,খাবার সব শেষ। অত জনের জন্য রান্না হয়নি।বেছে বেছে এমন দিনেই আসতে হয়।আপদ।অথচ রুদ্র নিজে চোখে দেখল তার কাকি খাসির মাংস পোলাও ফ্রিজে তুলে রাখলেন সকালে গরম করে খাওয়ার জন্য।
রুদ্র তাড়াতারি বলে ওঠে।না কাকি খাবার দিতে হবে না।আমি খেয়ে এসেছি।বাড়িতে ভাল লাগছিল না তাই ঘুরতে বেড়িয়েছিলাম।এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই খোজ নিতে আসলাম তোমাদের।
মুখে হাসি রাখল বটে কিন্তু মনে মনে খুব ছোট বোধ করতে লাগল নিজেকে।কুকড়ে যেতে লাগল নিজের মাঝেই।সত্যিই তো খাবারের লোভেই তো সে এসেছিল।কি লোভী হয়ে উঠছে ও দিন দিন। অথচ আগে মা বাসায় কিছু রান্না করলে কাউকে কোন দিন কিছু ছেড়ে খেত না।নিজেদের ভাগে কম হলেও সবার জন্য পাঠিয়ে দিত। মনে মনে নিজেকেই গালি দিতে থাকল রুদ্র।
খুব কষ্টে চোখে জল আসা থেকে আটকাল।এরপর কাকাত ভাই কে ভাল থাকিস বলে চলে আসল বাইরে।গলার কাছে যেন একটা কিছু দলা পাকিয়ে থাকল।তখন মাথার ভেতর কে যেন বলে উঠল।আরে তুই গরীব তোর ইচ্ছা থাকতে নাই।আর সম্মান তো থাকতে নাই ই।এত ইমোশনাল হচ্ছিস কেন।
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনেক সুন্দর হয়েছে আপনার এই পোস্টটি। অনেক ইমোশনাল। গরীবের কোথাও কোনো দাম নেই এই গল্প আর একবার সেটা বোঝালো। কাছের মানুষরাও যে দূরে ঠেলে দেয় তা রুদ্রর কাকিমা আর একবার প্রমাণ করলো। কতটা নিষ্ঠুর হলে মানুষ বাড়ীতে খাবার থাকা সত্বেও আর একজন খিদেই কষ্ট পাওয়া মানুষকে না খাইয়ে গালমন্দ করে। অনেক দুঃখজনক রুদ্রর জীবনের গল্প।আমাদের আসে পাশে হয়তো এমন অনেক রুদ্রই প্রতিদিন খিদের জ্বালায় ঘুরছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগল। আসলে আমাদের সমাজে শুধু রুদ্রের কাকিমা নয়, এমন অনেকেই আছেন। আসলে এদের মধ্যে মনুষ্যত্ব বলে কিছুই নেই। আর সব চেয়ে বড় কথা হলো তেলে মাথায় তেল সবাই দেয়।সত্যিই তো মানুষ ঘুষ খাবে তাদের সম্মান যাবে না অথচ যারা কাজ করে খাবে তাদের সম্মান চলে যায়।দেখা যাক পরবর্তী পর্বে কি হয়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনেক সুন্দর মন্তব্য করেছেন আপু।ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
রুদ্রের কাকির মত এই সমাজে অনেক মানুষ ই আছে যাদের মানবতা বলতে কিছু নেই।রুদ্রর সাথে কাকির কথাগুলো পড়ে আমি খুব ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছিলাম।মানুষ কিভাবে পারে রক্তের সম্পর্ক একজনের সাথে। দুরের হলেও ত পারার কথা না।অনেক কষ্ট লাগলো রুদ্রর গল্পটি পড়ে। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit