লোভ||সত্য ঘটনার শিক্ষনীয় গল্প

in hive-129948 •  2 years ago 
আমার বাংলা ব্লগবাসী।আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি। আজ আপনাদের সাথে লোভ নিয়ে মজার একটি গল্প শেয়ার করব।

pexels-dexon-dave-silva-1567828.jpg
সোর্স

"লোভ" হল আমাদের আদিম রিপু গুলোর মাঝে একটি। যারা রিপু বোঝেন না তাদের জন্য বলি রিপু হচ্ছে আমাদের চরিত্রে থাকা খারাপ দিক গুলো। আমাদের রিপু ছয়টি।যথা:কাম,ক্রোধ,লোভ,মোহ,মদ,মাৎসর্য। আজ আমরা ছয়টি নিয়ে নয় আজ শুধু মাত্র লোভের গল্প শুনব।

এখন চলুন লোভের গল্প শুনি। আমি বরাবরই বলি যেখানে যা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই,সেখানে সেটা পেলেই বুঝতে হবে এটা ফাদ।কি বুঝলেন না? গল্প শেষে বুঝতে পারবেন।

আমার পাড়ার এক ছোট ভাই একদিন নাচতে নাচতে হাজির।দেখেই মনে হইতেছে সে ঈদের দিনের মত খুশি।কিন্তু সেদিন ঈদ ছিল না। তাই ছোট ভাইরে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই ঘটনা কি? এত খুশি কেন?

ছোট ভাই বলল,ভাই আগে চা খাইয়া নেন। আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম প্যারাসুট ছাড়া।যে ছোট ভাই জীবনে একটা চকলেট পর্যন্ত খাওয়ায় নি সেই ছোট ভাই আজ চা খাওয়াচ্ছে।বুঝলাম ঘটনা সাংঘাতিক। তখন বললাম চা খেয়ে কি হবে? তার থেকে একটু ভাই একটু বিরিয়ানী খাই।

ছোট ভাই তাতেই রাজি।উলটা বিরিয়ানীর সাথে আবার খাসির মাংস আবার খাওয়া শেষে কোকা কোলা ফ্রি।এতে সন্দেহ আরো বাড়ল। যাই হোক আমার কি।ওর খুশি আরো মেলা দিন টিকে থাক।কিন্তু হাজার হলে আমিও তো মানুষ,তাই শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, ভাই তুই এত খুশি ক্যা?(কেন)

তখন ছোট ভাই বলল,ভাই খুব শীঘ্রই তো আমি কোটিপতি হচ্ছি। আমি তো সেই খুশি। নিজে হতে না পারি। কিন্তু মানুষকে তো গুল দিতে পারব অমুক কোটিপতি আমার ছোট ভাই। চিন্তা করুন আমি কত অল্প তে খুশি। যাই হোক এখন গল্পে আসি। খুশি হবার পর মনে হল,আরে এ তো কোন ব্যবসাপাতি করে না,একদম বেকার আমার মত।তাইলে এ কোটিপতি হবে কিভাবে?

যাই হোক লজ্জা শরম ত্যাগ করে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম,ভাই তোর এই কোটিপতি হবার পেছনের গোপন রহস্য কি? আমারেও বল কোটি পতি না হই অন্তত হাজারপতি হই।বিনিময়ে তোর জন্য প্রতি মাসে কাচ্চি ফ্রি।

তখন ছোট ভাই বলল আরে ভাই আমি কোটিপতি মানুষ আপনার থেকে খাব কেন? যান আমি আপনারে প্রতি মাসে খাওয়াবো।তা ছোট ভাই যখন ইচ্ছা করেছে আমাকে প্রতি মাসে খাওয়াবে, তাতে তো আর বাধা দেওয়া যায় না।তাই বললাম,"ঠিক আছে তুই খাওয়াস"।এরপর ছোট ভাই তার কোটিপতি হবার পেছনের রহস্য জানাতে শুরু করল।

ছোট ভাইয়ের ভাষায় বলছি,

ভাই কয়দিন আগে একটি বিদেশী মেয়ে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দেয় আমাকে।আপনি তো জানেন,ইদানিং প্রেমের টানে বিদেশী মেয়েরা বাংলাদেশে চলে আসছে।তাই আমিও একটা চান্স নেওয়ার জন্য রিকুয়েস্ট accept করলাম।এরপর ভালই কথা বার্তা চলতে লাগল।কিছু দিনের মাঝেই গার্লফ্রেন্ড না হলেও বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে গেল।

ও বলতে ভুলে গেছি,মেয়েটির নাম ক্লারা।আমেরিকান মেরিন ফোর্সে চাকুরি করে।বর্তমানে ইরাকে পোস্টিং। সেখানে যুদ্ধের ময়দানে ওরা অনেক সোনা টাকা পয়সা পায়।যেগুলো ওরা নিজেদের কাছেই লুকিয়ে রাখে।আমি তখন বলদের মত হিসাব মিলাচ্ছিলাম,ইরাকে ওরা সোনাদানা পায় তার সাথে এর কোটিপতি হবার সম্পর্ক কি?

আমার মনে অবস্থা বুঝতে পেরেই হয়ত ছোট ভাই বলল,আরে আপনি আগে পুরো শোনেন তারপর হিসাব মিলান। তো কিছুদিন আগে বলল সে তার বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরুপ আমাকে দেড় কেজি সোনা আর কয়েকলাখ ডলার পাঠাবে।

ওর কথা শুনে আমি ভাবছিলাম আমি বুঝি ভুল শুনেছি।তাই আরেকবার জানতে চাইলাম কত কেজি সোনা? ও বলল ভাই আপনি প্রথম বারেই ঠিক শুনেছেন।আমি ওকে বুঝাইলাম ভাই তোর সাথে কেউ মজা নিয়েছে।এগুলো স্ক্যাম।তুই যেন আর কথা বলিস না ঐ মেয়ের সাথে।কয়দিন পর তোর থেকে টাকা পয়সা চাইবে।

ভাই ভাবল আমি ওর কোটিপতি হওয়া মেনে নিতে পারছি না।হিংসে করছি।তাই ওরে কথা বলতে নিষেধ করছি।মনে করাই স্বাভাবিক,কারন আমরা বাংগালীরা তো আন্যের ভাল সহ্য করতে পারিনা। যাই হোক ছোট ভাই রেগে চলে গেল।কয়দিন আর ভাইয়ের কোন দেখা নেই।আমি ভাবলাম কোটিপতি লোক হয়ত আমার মত গরীবের সাথে কথা বলবে না।

কয়দিন পর আবার সেই ছোট ভাই হাজির।তবে আজকের চেহারা সেদিনের চেহারার সম্পূর্ণ বিপরীত।সে বলল ভাই আপনিই ঠিক বলেছিলেন।সম্পূর্ণ স্ক্যাম।আমার প্রায় দেড় লাখ টাকা গচ্চা গেছে। এখন আব্বুও আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।

আমি বললাম খুলে বল।তখন সে বলতে শুরু করল।আমার সাথে রাগ করে চলে যাওয়ার পরদিনই সে মেয়ে নাকি ওর জন্য সেই সোনা আর টাকা গুলো পাঠিয়ে দেয়।তার দুইদিন পর ঢাকা এয়ারপোর্ট কাস্টমস থেকে তাকে জানানো হয়,তার জন্য কিছু উপহার সামগ্রী এসেছে।ছাড়াতে দেড়লাখ টাকা লাগবে এখনই। নইলে এই উপহার ফেরত যাবে।

ফেরত চলে যাওয়ার কথা শুনে আমি বললাম ভাই অপেক্ষা করেন।আমি টাকা পাঠাচ্ছি।ফোনে বললাম বটে। কিন্তু আমার কাছে একপয়সাও নেই।তখন মনে পড়ল আব্বুর টাকা আছে ঘরে।সেখানে থেকে আপাতত দেই। পরে কোটিপতি হলে আবার রেখে দেবো। এরপর টাকা নিয়ে বিকাশ করে দিলাম। তখন বলল গিফট পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

এরপর আজ কয়েকদিন হতে চলল তার গিফটের ও খোজ নেই,আবার সেই মেয়েও তাকে ব্লক দিয়েছে।এখন ছোট ভাই পড়ে গেছে মহা ফাপড়ে।তারপর মড়ার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে গত কালই ছোট ভাইয়ের বাবা টাকার হিসেব করেছে।আর তাতেই ধরা পড়ে সেখানে টাকা কম।তারপর ছোট ভাই ধরা খেয়ে যায়,আর তার বাবা রাগ হয়ে তাকে বেড় করে দিয়েছে।ফলে ছোট ভাই ঠিক করেছে সন্ন্যাসী হবে।আর সেজন্য বিদায় নিতে এসেছে আমার কাছে।

তখন ছোট ভাইকে শান্তনা দিয়ে বললাম চিন্তা করিস না দুই একদিনের মধ্যেই রাগ পড়ে যাবে তখন আবার ঠিকই ডেকে নেবে।এই কয়দিন তুই আমার সাথেই থাক।কয়েকবার বোঝানোর পর রাজি হল। কয়দিন পর অবশ্য সব ঠিকঠাক হয়েছিল।তাই আপনাদের বলি কেউ এমন কোটিপতি হবার ফাদে পড়বেন না। মনে রাখবেন,এই দুনিয়ায় কিছুই ফ্রি না।তাই কেউ এমন টোপ দিলে তাকে সাথে সাথেই ব্লক দিন, আর সাবধানে থাকুন।

আজকের পর্ব এপর্যন্তই।আশা করি গল্পটি আপনাদের উপকারে লাগবে।ধন্যবাদ সম্পুর্ণ গল্পটি পড়ার জন্য।ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।

VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR
SET @rme as your proxy
witness_vote.png

banner-NEW.png
break2.jpg
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
break2.jpg

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

হা হা হা 😄
ঘটনাটা মজার হলেও শিক্ষনীয় বটে।
সবথেকে মজার ব্যাপার হলো এই ক্লারা আমাকে ইমেইলে বেশ কিছুদিন মেইল করেছে তবে লাষ্টে ওটাকে ব্লাক লিষ্টেড করেছি। এই একই গল্প ছিল 😄
আমি বুঝতে পেরে সাথে সাথেই ব্লক।
যাক আপনার ছোট ভাই বেশ শিক্ষা পেয়েছে, আশাকরি সে এখন সচেতন হবে।
ভালো শিক্ষনীয় বিষয় নিয়ে লিখছেন ভাই।
ধন্যবাদ ভাই 🤗

সবাই আপনার মত সচেতন হলে আর এই স্ক্যাম গুলো চলত না।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

আপনাকে ধন্যবাদ এরকম শিক্ষনীয় বাস্তবধর্মী গল্পটি প্রকাশ করার জন্য। অন্তত একজন মানুষ সচেতন হলে এটাই এই পোস্টের সার্থকতা কারন এরকম ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে।

এই ধরনের প্রতারক অনেক আছে। আপনার ছোট ভাই প্রতারক চক্রে পড়েছে। আসলে লোভ মানুষকে অনেক ক্ষতি করে। কুঠি প্রতি হওয়ার স্বপ্ন দেখে সে আপনাকে বিরিয়ানি খাওয়ালো। আপনার পোস্টটি পড়ে লোকটির জন্য অনেক দুঃখ লাগতেছে। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুক এবং ভালো কাজ করার তৌফিক দান করুক।

ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

লোভ এমন একটি জিনিস মানুষের অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলে। আর আপনার ছোট ভাই সেরকম এক সক্রের ফাঁদে পা পড়েছে। আপনার ছোট ভাই খুশি হয়ে আপনাকে বিরানি খাওয়ানো এবং মাসে মাসে বিরিয়ানি খাওয়াবে। এরকম একটা চক্রের মাঝে আমিও পড়েছিলাম বিদেশ থাকা কালীন। ওই সময় আমার কাছেও এরকম আমার কাছে টাকা চেয়েছে। কিন্তু আমি তাদেরকে টাকা দেই নাই। আপনার পোস্টটি পড়ে সত্যি ই আপনার ছোট ভাইয়ের জন্য কষ্ট লাগতেছে।

অনেক বড় বাচা বেচে গেছেন ভাইয়া। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার মন্তব্যের জন্য।