সোর্সপ্রথম আলো ফেসবুক পেজ
গতপর্বে আমরা জেনেছি জ্বীনের বাদশা অপরাধী গ্রুপ কিভাবে নিজের শিকার সিলেক্ট করে আর কিভাবে সেই শিকার করে আর তাদের শিকার ধরার একটা পদ্ধতি। আজ জানব তাদের শিকার ধরার দ্বিতীয় পদ্ধতি।
এখন মনে করুন আপনার কোন দুর্বলতা নেই বা আপনাকে ইমোশোনাল ব্ল্যাকমেইল করে লাভ নেই তখন আপনার উপর প্রয়োগ করা হবে দ্বিতীয় পদ্ধতি।আপনাকে তখন শোনানো হবে একটি আজব গল্প। বলা হবে আপনার প্রাচীন কোন পূর্বপুরুষ খুবই ধার্মিক ছিল,তার ছিল পোষা কিছি জ্বীন। আর যে কল করেছে সে হচ্ছে সেই জ্বীন গুলোর বাদশাহ বা সর্দার। আপনার বর্তমানের অর্থনৈতিক দুরবস্থা দেখে সেই জ্বীন গুলো তাদের সর্দারের কাছে অনুরোধ করেছে যাতে তিনি আপনার জন্য কিছু করেন।
সেই জ্বীন গুলোর অনেক অনুরোধে বাদশাহর মন গলে,ফলে উনি আপনার জন্য এক ডেগচি সোনার ব্যবস্থা করেছেন।আর সেটা জানানোর জন্যই একটি মাজারের খাদেম বা মসজিদের ইমামের উপর ভর করে আপনাকে কল দিয়েছে।লোভী মানুষের সাধারণত এতেই কাজ হয়ে যায়,কিন্তু তারপরেও যদি কাজ না হয় তাইলে বার বার আপনাকে কল করে একই কথা জানানো হবে। সেই সাথে বারবার বলা হবে উনি আর পৃথিবীতে বেশিদিন থাকতে পারবেন না,তাকে আবার জ্বীনদের দুনিয়ায় ফেরত যেতে হবে।
ফলে মানুষ সেই ফাদে পা দিয়ে দেয়।এখন দ্বিতীয় ধাপ। আপনাকে প্রথমেই কিন্তু আপনাকে বলা হবে না অমুক জায়গায় এসো। আপনাকে বলা হবে মাজারে শিন্নি দিতে হবে এত টাকা পাঠাও,যদি না পাঠাও তাইলে তোমার সোনাদানা আবার পাতালে চলে যাবে। ফলে আপনি বাধ্য, এভাবে আপনার থেকে আস্তে আস্তে টাকা দুইয়ে নেওয়া হবে। তারপর একসময় যখন আপনার ধৈর্য শেষ হয়ে যাবে,যখন টাকা দিতে অস্বীকার করবেন তখন আপনাকে বলা হবে অমুক জায়গায় একটি মাজার আছে এখানে এসো।
এই যে জায়গার কথা বলা হল এটা আমাদের পাশের গ্রামে। জায়গাটার নাম বিশ্বনাথপুর। তিনদিকে নদীঘেরা অজ পাড়া-গা। পুলিশ পৌছাতে পৌছাতেই পাখি হাওয়া হয়ে যাবে। এখন আপনি টাকা জিনিসপত্র নিয়ে চলে আসলেন জ্বীনের বাদশার এলাকায়, কিন্তু চিনবেন কিভাবে? সেই সমস্যা জ্বীনের বাদশা আগেই সমাধান করে দিয়েছে। সেই ইমাম বা খাদেম থাকবে আপনাকে রিসিভ করতে। রিসিভ করার পর আপনাকে খুব খাতির যত্ন করা হবে।
তারপর আপনাকে বলা হবে এসব কাজ তো দিনের বেলা হয়না,তাছাড়া কিছু আনুষ্ঠানিকতা আছে কিছু জিনিস কেনা লাগবে আর সেই ভেট হিসবে আনা টাকা টাও নিয়ে নেওয়া হবে। তারপর দেখবেন রাতে কিছু হচ্ছে না,এরপর আপনি বার বার বলবেন তখন আপনাকে বলা হবে ধৈর্য ধরুন আজ শুভ দিন নয়। এমন ভাবে সময় পার করার পর একদিন আপনাকে বলবে আরো টাকা লাগবে জ্বীনের বাদশা তাই বলেছে।তবে কথা হল আপনাকে এই সময় একটা সোনার পুতুল হাতে দেওয়া হবে।পুতুল টা পরীক্ষা করলে বুঝবেন আসল সোনা। এতে কোন ফাকি নেই।
আপনি ভাববেন বেশ তো সোনার পুতুল যখন পেলাম তখন আরো পাবো হয়ত,তাই তখন লোভ করে আবার টাকা আনবেন। তবে হ্যা নির্দেশ থাকে জ্বীনের বাদশার কথা কাউকে বলা যাবে না এমনকি পরিবারকেও না। এভাবে যখন আপনাকে নিংড়ে নেওয়া শেষ তখন আপনাকে অনেক গহণা দিয়ে বলা হবে এগুলোই জ্বীনের সেই গহনা। তবে আপনাকে একবারই দেখানো হবে, তারপর একটি পুটুলি বানিয়ে আপনার হাতে দিয়ে বলা হবে একদম বাড়িতে গিয়ে খুলবেন।
আপনি ততক্ষণে বড়লোক হবার খুশিতে আত্মহারা। এরপর আপনি বের হবেন বাড়ির উদ্দেশ্যে,আপনাকে খুব সমাদর করে এগিয়েও দেওয়া হবে।
কি মনে হচ্ছে,এতে অপরাধ টা কোথায় হল? টাকা দিল গয়না পেল তাই না? হাহাহা আপনাকে দিনের বেলা বাড়িতে যেতে দেওয়া হবে না,বুঝানো হবে এত টাকা পয়সা নিয়ে দিনে যাওয়া ঠিক হবে না,আপনাকে রাতে যেতে হবে।এরপর যখন আপনি রাতে যাবেন,গ্রামের লোক আপনাকে এগিয়ে দিয়ে ফিরে যাবে ঠিক সেই মূহুর্তেই আপনার উপর আক্রমন হবে।আপনাকে মারধর করে সব কেড়ে নেওয়া হবে।তারপর শুধু গাড়ি ভাড়া দিয়ে বিদেয় করে দেওয়া হবে আপনাকে।
চিন্তা করুন অচেনা অজানা জায়গা,আপনার সাতরাজার ধন মানিক পেয়েও হারিয়েছেন,তারউপর মারধর।আপনার মনের অবস্থা কেমন হবে? আপনার কিছু করার ও থাকবে না।পুলিশের কাছেও যেতে পারবেন না,কারন আপনাকে হুমকি দেওয়া হবে সেই ছাড়ার সময়েই যে এমন কাজ করলেই আপনার পরিবারের পর্যন্ত ক্ষতি করা হবে। অনেক সময় অনেকে সাহস করে মামলা করে বটে কিন্তু ধরবে কাকে? কাউকে তো আপনি চেনেন না।
একসময় এই গ্রুপটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।পরে সোশ্যাল মিডিয়া,সংবাদপত্র,টেলিভিশন এ জোর প্রচার চালানোর ফলে মানুষ সতর্ক হয়।ফলে এদের রাজত্ব কমে আসে। এখন প্রায় এদের কথা শোনাই যায় না। মজার ব্যাপার জানেন কি? এরা কিন্তু মুর্খদেরই ঠকায় নি।এক এমপি কে পর্যন্ত এভাবে ভোটে জেতানোর কথা বলে ঠকিয়েছিল।এটাই ছিল কফিনের শেষ পেরেক। এরপর পুলিশ জোর তৎপরতা চালায়,পালের গোদা দের গ্রেফতার করে। একদম ভেঙ্গে যায় এই দল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এমন ঘটনা আমার বাবার সাথে অনেক বছর আগে হয়েছিল। আমি নিজেও সেই প্রতারকের কথা শুনেছি আর আমি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এভাবে প্রতারণা করে অনেক মানুষের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে।তবে এখন এমন ঘটনা খুব কমই শুনা যায়। আপনার এ পর্ব পড়ে অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আশা করি আপনাদের ক্ষতি হয়নি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপু।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একটা সময় জিনের বাদশার কথা অনেক শুনতাম তবে ইদানিং এই ঘটনাগুলো আর ঘটে কিনা আমার জানা নেই। তবে আপনার পোষ্টের মাধ্যমে এ কথা জেনে বেশ ভালই হল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যা ইদানিং এমন ঘটনা একদম কমে গেছে। মানুষ এখন অনেক সচেতন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit