বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বই এর জনসংখ্যা অধ্যায় টা খুললেই আমরা দেখতে পাই এই বিশ্বের জনসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।প্রতি চারমিনিটে পৃথিবীতে প্রায় একহাজার শিশু জন্ম গ্রহণ করছে।অর্থাৎ প্রতি মিনিটে ২৫০জন,প্রতিসেকেন্ডে মোটামুটি ৪জন শিশু পৃথিবীর মুখ দেখছে। এই পরিসংখ্যান থেকে সন্দেহ নেই বিশ্বের জনসংখ্যা বাড়ছে।
কিন্তু এই এত এত মানুষের ভিড়ে কিন্তু আমরা দিন দিন প্রচুর একা হয়ে পড়ছি।লক্ষ্য করে দেখুন আপনার প্রিয় বন্ধুর সাথে আপনার কত দিন আগে শেষ কথা হয়েছে? কতদিন হয়েছে পরিবারের সব সদস্যদের নিয়ে আড্ডা দিয়েছেন? শেষ কবে কারো সাথে মন খুলে কথা বলেছেন? না এখানে ঈদের ছুটি টা গণনার মাঝে পড়ে না।
আচ্ছা এমন কখনো হয়েছে কোন কারনে খুবই মন খারাপ, মানষিক ভাবে খুবই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন, কারো সাথে কথা বললে মন হালকা হয় কিন্তু আতিপাতি করে খুজেও কাউকে পেলেন না?
হয়েছে? হুম হওয়ারই কথা। কারন আমরা এখন জনসমুদ্রের মাঝে থেকেও একা।এর একটা প্রধান কারন হল একটু সেলফিস হয়ে যাচ্ছি আমরা প্রত্যেকেই। না এখানে সেলফিস আমি খারাপ অর্থে ব্যবহার করি নি।আমরা নিজেদের সমস্যার মাঝে আমরা এতটা ডুবে যাচ্ছি যে আমরা আমাদের আশাপাশের দিকে নজর দিতে ভুলে যাচ্ছি।
আমরা নিজেদের সমস্যা কে অন্ধভাবে ফলো করতেছি,ফলে আমরা ভুলে যাচ্ছি আশে পাশে আমাদের মত আরো প্রাই সাতশ কোটি মানুষ আছে। তারাও সমস্যায় আছে,তারাও কষ্ট পায় তারাও মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে। ব্রিটিশদের ডিভাইড এন্ড রুল থিওরি জানেন আশা করি,জানেন না? আচ্ছা ব্যাখ্যা করতেছি।
ব্রিটিশরা যখন প্রথম বাংলায় আসে তখন তারা দেখল বাংলার মানুষের মাঝে একতা বেশি। আর এই একতা ভাঙতে না পারলে তারা বাংলা কে নিজেদের আয়ত্বে আনতে পারবে না। তখন তারা বাংলার মানুষদের মধ্যে জাত,ধর্ম পেশা,অঞ্চলিকতার উপর ভিত্তি করে নানা ধরনের বিভেদ সৃষ্টি করে। তারপর তারা এক এক করে অঞ্চল দখল শুরু করে।
অপর অঞ্চলের লোক মনে করত ভালই হল শত্রু পরাজিত হল, কিন্তু তাদের মনে এটা আসত না আরে এরকম তো আমার সাথেও হতে পারে।ফলফল হিসেবে নিজেদের ভ্রান্ত ধারনার জন্য একতা ভেঙ্গে সবাই একা হয়ে গেল।
ঠিক এমনটাই হচ্ছে বর্তমানে আমাদের সাথে। আমরা প্রত্যেকের সমস্যা নিয়ে আলাদা হয়ে পড়ছি।প্রত্যেকেই মনে করছি আমাদের নিজেদের সমস্যা টাই বড়।কাউকে আপনার সমস্যা বলে মনটা হালকা করতে যান দেখবেন সে তার দুখের কথা আপনাকে বলা শুরু করেছে।আপনার মন তো হালকা হবেই না উলটো তার দুখ শুনে মন আরো খারাপ হবে।
এই একাকিত্বের আরেকটি কারন প্রযুক্তির অগ্রগতি। আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কিন্তু প্রযুক্তি তো মানুষকে কাছে আনছে,মানুষের মাঝে দূরত্ব কমিয়ে দিচ্ছে।তাইলে প্রযুক্তি কিভাবে মানুষের একাকিত্বের জন্য দায়ি?আপনি রাস্তায় বের হলে লক্ষ্য করে দেখবেন বন্ধুবান্ধবরা একসাথে বসে আছে ঠিকই কিন্তু সবাই তারা ফোনে ব্যস্ত।সামনে বন্ধু বসে আছে তারপরেও তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় সোশ্যাল হচ্ছে।ফলে আমরা হয়ে যাচ্ছি দিন দিন আনসোশ্যাল।যে প্রযুক্তির সোশ্যাল মিডিয়ার উদ্দেশ্য ছিল সবাইকে কাছে আনা,সেটাই এখন একজন কে আরেকজনের থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে।এমন হাজারো কারন খুজলে পাওয়া যাবে।
আসুন আমরা ভার্চুয়াল জগতে না থেকে বাস্তব জগতে বেশি সময় দেই। খোজ নিই প্রিয় মানুষগুলো। বন্ধুদের সাথে বসে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত না থেকে তাদের সুখ সমস্যা গুলো জানি। নিজের সমস্যার পাশাপাশি আশেপাশের মানুষগুলোর সুখ-দু:খের দিকেও নজর দেই।তাইলেই দেখবেন আপনিও একা নন আবার আশেপাশের মানুষরাও আর একাকিত্ব বোধ করছে না।
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
ভাই আপনার পোস্ট পড়ে খুবই ভালো লাগলো। আপনি বাস্তবতাকে একদম চোখের সামনে তুলে ধরেছেন। আমরা নিজেদের সমস্যা নিয়ে এতটাই ব্যতিব্যস্ত অন্য কারো কোন সমস্যা আছে কিনা তা জানার চেষ্টাও করি না। বন্ধুবান্ধবসহ আড্ডা দিতে পারি, কিন্তু মোবাইল ফোন থেকে চোখ সরাতে পারি না। বাড়ির লোকেদের সাথে টুকটাক কথার মাঝে চোখ ও হাত দুটোই যেন মোবাইল ফোনের সাথে কথা বলছে। আমাদের চারপাশে এত লোক তবুও আমরা যেন দিন দিন একা হয়ে যাচ্ছি। ভাই খুবই মূল্যবান কিছু কথা সুন্দর করে গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন। বর্তমান সময়ে আমাদের একাকিত্ব নিয়ে দারুন একটি পোস্ট উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনাকেও ধন্যবাদ এমন সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বর্তমান সমাজের কিছু বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন আপনার লেখার মাধ্যমে। আমার তো মনে হয় এই অ্যান্ড্রয়েড ফোন গুলোই যত নষ্টের মূল। অবশ্য সব কিছুরই ভালো এবং খারাপ দুইটা দিক থাকে। আমরা কেন যেন খারাপের দিকেই বেশি ঝুঁকে পরি। আর সবার সামনে কথা বলতে বলতে মোবাইলে স্ক্রলিং করা এক রকমের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের কাছে। আমার মনে হয় না এভাবে চলতে থাকলে আমরা সুস্থ থাকতে পারবো। দিনদিন মানসিক রোগীতে পরিণত হবে। একটা মজার ব্যাপার কি জানেন তো, আমরা নিজেরাই এই কথাগুলো বলছি , আবার দেখা যাবে একটু পর আমি নিজেই এসবের পিছনে ছুটছি। তবে আমি পারতো পক্ষে চেষ্টা করি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকার।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমি জিনিসটা অনেক আগে থেকেই ফলো করি দাদা। ফ্রেন্ড বা ফ্যামিলির সাথে থাকলে ফোন হাতে নেইনা। খুব খারাপ লাগলে বই পড়ি৷ আর সোশ্যাল মিডিয়া আপনার মত আমিও রেস্ট্রিক্ট করে দিয়েছি। ধন্যবাদ দাদা আপনার মন্তব্যটি অনেক সুন্দর ছিল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit