দশমীর বিদায় মূহুর্ত||শারদীয় কনটেস্ট

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)

আজ প্রত্যেকটি বাঙ্গালী হিন্দুদের মন খারাপ।কারন তাদের ঘরের মেয়ে আবার কৈলাশে ফিরে গেল।আপনারা হয়ত অবাক হবেন যে ঘরের মেয়ে আবার কৈলাশে কিভাবে ফিরে যায়?

IMG_20221005_210944.jpg

মা দূর্গা হচ্ছেন প্রত্যেকটি বাঙ্গলী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরের মেয়ের মত।বলা হয় বছরের এই চারদিন মা দূর্গাবাবার বাড়ি আসেন নাইওড় এ।আর বাঙ্গালীও তাকে নিজের মেয়ের মতই বরণ করে নেয়।

মেয়ে যাওয়ার সময় যত এগিয়ে আসে,সবার চোখেই জল চলে আসতে থাকে।অষ্টমীর সন্ধ্যা থেকে সবার মনেই চিনচিনে ব্যাথা শুরু হয়।নবমীর দিন সেই ব্যাথা বাড়তে থাকে।আর দশমীর দিন তো সেই ব্যাথা সবার চোখে মুখে দেখা যায়।প্রকৃতিতেও বেজে ওঠে বেদনার করুন সুর।

IMG_20221005_211208.jpg

আজ ছিল সেই বিদায়ের দিন।যেতে নাহি দিব হায়,তবু যেতে দিতে হয়,তবু চলে যায়।কথাটা আজ হারে হারে উপলব্ধি করে সবাই।তাই এই তিনদিন সবাই ঘোরাঘুরি করলেও** দশমীর দিন সবাই নিজের এলাকায় চলে আসে।

সকাল সকাল সবাই স্নান সেরে মন্দিরে চলে যায় অঞ্জলী দিতে।অঞ্জলী প্রতিদিন দিলেও আজকের অঞ্জলীটা হয় বিষাদ মাখা।মনের মধ্যে চলে কি যেন একটি জিনিস হারিয়ে যাওয়ার অনুভূতি।এরপর যত বেলা যায় তত এই হারিয়ে যাওয়া টা বাড়তে থাকে।আস্তে আস্তে চলে আসে বিদায়ের ক্ষণ।

IMG_20221005_211142.jpg

বাতাসে ভারি হতে থাকে, বিদায়ের সুর।বিবাহিত নারীরা লালপাড় সাদা শাড়ি পড়ে চলে আসে সিঁদুর খেলতে।বিকাল নাগাদ সিঁদুর খেলা শুরু হয়,প্রত্যেক সধবা নারী প্রথমে মা দূর্গা কে সিঁদুর পড়ান,তারপর মিষ্টি মুখ করান।এরপর তারা একে অপর কে সিদুর পড়ান,এবং মিষ্টিমুখ করান।এবং একে অপরকে আশীর্বাদ করেন তাদের শাখা সিঁদুর যেন অক্ষত থাকে।এরপরেও বারেও যেন তারা একে অপরের সাথে সিদুর খেলতে পারে।

নতুন বিবাহিতরা নতুন জামাইয়ের সাথে আসেন মা দূর্গার আশির্বাদ নিতে।ছেলেরা একে অপরের সাথে কোলাকুলি করে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানায়।এরপর বিসর্জন এর প্রস্তুতি।

IMG_20221005_220017.jpg

আজ আমি পুরো দিন ছিলাম আমার এলাকার মন্দিরে।সকাল থেকে মন খারাপ,কিন্তু কি আর করা যাবে বিদায় দিতেই হবে।অঞ্জলী দেওয়ার পর বাসায় গিয়ে জামাকাপড় পালটে আবার মন্দিরে চলে আসলাম।এসে দেখি সিদঁুর খেলা শেষ হয়েছে।সবাই বিসর্জন এর ভূতের নৃত্য শুরু করেছে।এগুলা দেখে আমার খারাপ লাগে তাই অন্যদিকে সরে গেলাম।এরপর মাকে ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হল
করতোয়া নদীর পাড়ে।আমাদের এলাকায় পাশাপাশি ৭টি পুজা হয়।এর মাঝে ৪টির বিসর্জন একসাথে হয়।এক এক করে ৪টি কাঠামোই নিয়ে আসা হলো নদীর পাড়ে।

IMG_20221005_211026.jpg

সেখানে নানা বয়স, নানা রংয়ের মানুষের মিলন মেলা বসল।দেখেই চোখ জুড়িয়ে যায়।এখানেই জমে ওঠে মিলন ও বেদনার একসাথে হওয়ার দৃশ্য।

IMG_20221005_211057.jpg
তবে আমাদের এলাকায় একটি ট্রেডিশন আছে।প্রত্যেকটি মন্ডপ থেকে আসা ঢাকির দলের মাঝে দারুন প্রতিযোগীতা চলে।এই জিনিস টা দারুন উপভোগ্য হয়ে ওঠে।সবাই খুব মজা পায়, পাশে থেকে উৎসাহ যোগায়।অনেকে তো পুরষ্কার ঘোষণা করে।তারপর যখন সবাই ক্লান্ত হয়ে যায়, তখন সবার শেষে যে বাজাতে থাকে সে বিজয়ী হয়।

IMG_20221005_211123.jpg

এরপর গোধুলীর লালিমার সাথে মেয়েকে বিদায় দিয়ে প্রত্যেকে নীরব অশ্রু ঝড়াতে ঝড়াতে বাড়ি ফিরে আসে।ফেরার সময় মুখে ছিল,"আসছে বছর,আবার হবে"।

এরপর সবাই ফ্রেশ হয়ে নিলাম।মুখের রঙ,কাদা ধুয়ে ভেজা জামাকাপড় চেঞ্জ করে নিলাম।এর একটু পড়েই পড়ে গেল বিজয়ার শুভেচ্ছে বিনিময়ের হিড়িক।আমিও তো এর বাইরে না।বিসর্জন এর পর গুরুজন দের প্রণাম করতে বের হলাম।সবাইকে প্রণাম করার পর সবাই মিষ্টিমুখ করাল।
সাথে প্রাণ ঢালা আশীর্বাদ,সমবয়সীদের সাথে চলল কোলাকুলি।

অপেক্ষায় রইলাম আবার সামনে বছরের,যেদিন কাশফুল নিয়ে আসবে মায়ের আগমনী বার্তা।শরতের নীল আকাশ ঘোষণা করবে মায়ের আসার ক্ষণ।এই চারদিন অনুপ্রেরণা যোগাবে আবার সামনে বছরের।

সবাইকে বিজয়া দশমীর অনেক অনেক শুভেচ্ছা।বড়দের জন্য রইল প্রণাম।সমবয়সী আর ছোট দের জন্য রইল প্রাণ ভরা ভালবাসা।

আসছে বছর, আবার হবে

ফটোগ্রাফারবৃত্ত
ডিভাইসরিয়ালমি সিক্স আই
লোকেশনকরতোয়া নদির পাড়
তারিখ৫/১০/২০২২

VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR
SET @rme as your proxy
witness_vote.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

ভাইয়া প্রথমে বিজয়া দশমীর অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল। অনেক সুন্দরভাবে সবাইকে নিয়ে পূজোর সময়টা কাটিয়েছেন আশাকরি। সবাইকে নিয়ে ভাল থাকবেন তাই কামনা করি। আপনার পরিবারের সবাই কে আর আপনাকে অনেক অভিনন্দন ভাইয়া।

আর তো মাত্র ১ টা বছর!