প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
এবারো আমি তার সাথে সহমত হলুম আর বললুম,"হক কথা বলেছেন ভূতদা।আমরা মানুষরা অন্যের ভাল মোটেই দেখতে পাইনা।কেউ উন্নতি করলেই তার পেছনে কাঠি করা শুরু করি।তা মানুষের সমাজের সাথে আপনাদের সমাজ এর আর কি কি আমিল রয়েছে দাদা?"
-অমিল বলে অমিল।তোমাদের সাথে আমাদের কোন মিলই নেই।আমাদের সমাজের সব থেকে খারাপ গালি হল "মানুষ"।তোমাদের ভূত বললে হয়ত খেপে যাও না।কিন্তু আমাদের কেউ কাউকে মানুষ বললে আর রক্ষে নেই।
তবে হ্যা একটা জিনিস তোমাদের আর আমাদের সমাজে এক। তোমাদেরও বিয়ে করতে হয় আমাদেরও বিয়ে করতে হয়।
আমি বললুম তাই? তা আপনাদের বিয়ে শাদির দরকার কি।না আছে রান্না বান্নার ঝামেলা,না আছে ছেলেপুলের দরকার।তাহলে এত শখ করে এই ঝামেলায় পড়ার দরকার টা কি?
-এই যে এতক্ষণে একটা মনের মত কথা বলেছ।আমিও তাই ভাবি কি দরকার ছিল বিয়ে করার?শুধু শুধু ঝামেলা বয়ে আনলাম।যার জন্য হলাম ভূত, সে ভূত হয়েও শান্তিতে থাকতে দিল না।
আমি কেমন যেন একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছিলাম।আমি বললুম ব্যপার কি দাদা খুলে বলুন তো?
-সে অনেক কাহিনী হে।বলতে গেলে যে রাত পুইয়ে যাবে।
-আরে দাদা গেলে যাক।আমার কোন কাজ নেই।এই সারা রাত এখানেই ঠায় বসে থাকা লাগবে।তার থেকে আপনার গল্প শুনলে অন্তত ক্ষিদে টা ভুলে থাকা যাবে।এই নিন আরেকটা বিড়ি।২টান দিয়ে শুরু করুন মশায়।
ভূতটা ২টা বেশ কড়া টান দিয়ে বলতে শুরু করল।এই ফাকে আমিও একটা ধরিয়ে নিলাম।
-শোন হে।তা প্রায় ১৫০বছর আগের কথা।যখন আমি মানুষ ছিলুম এখান থেকে তিনগ্রাম দূরে থাকতাম।পেশায় ছিলুম ব্রাহ্মণ।পুজা আর্চা করে,আর ভিক্ষে করে যা পেতাম তাই দিয়ে পেট চলে যেত।আমার কোন ছেলেপুলে ছিল না।শুধু আমি আর আমার বউ।তো আমার বউ ছিল ব্যপক মুখরা।কথায় কথায় ঝগড়া করা ছিল তার স্বভাব।এভাবেই দিন চলে যাচ্ছিল।হঠাৎ মন্দা শুরু হল।লোকজন পুজা পাঠ প্রায় করছিলই না।আবার ভিক্ষে দেওয়াও বন্ধ।কারন নিজেই খেতে পাচ্ছে না তো ভিক্ষে দেবে কি?এরফলে আমাদের অবস্থা হয়ে পড়ল শোচনীয়। কোনদিন আধপেটা কোন দিন উপোস করে দিন কাটতে লাগল।আর বউ তো এমনিতেই মুখরা,অনাহারে থেকে থেকে আরো ঝগড়ুটে হয়ে পড়ল।একদিন ভিক্ষে থেকে ফিরে এসেছি।ভিক্ষে বলে কিছুই জোটে নি।এই দেখে বউ গেল ভীষণ ক্ষেপে।এমন ক্ষেপে গেল যে ঝাটা দিয়ে দুটো ঘা লাগিয়ে দিল।আমি ব্রাহ্মণ মানুষ,সম্পদ না থাক গাঁয়ে সম্মান ছিল।তাই এই অপমান সহ্য করতে না পেরে এই গাছেই ফাস লাগিয়ে ঝুলে পড়লাম।
আমি গভীর মনযোগ দিয়ে শুনছিলাম।বলা যেতে পারে গিলছিলাম।ভূত থামতেই আমি বললাম তারপর কি হল ভূতদা?
-তারপর আর কি ব্রহ্ম্যদত্যি হয়ে এই গাছেই আশ্রয় নিলাম।ব্রাহ্মণ মরলে হয় ব্রহ্মদত্যি।সব রকম ভূতেদের মাঝে তার সম্মানই বেশি।এভাবেই কয়েকদিন বেশ কাটছিল। কয়দিন পর দেখলাম এই গাছের সামনে দিয়ে একপেত্নী উড়ে যাচ্ছে।বেশ লম্বা-চওড়া পান্তোয়ার মত গায়ের রঙ।দেখেই তার প্রেমে পড়ে গেলাম।কয়েকদিন পেছনে পেছনে ঘুরেও কাজ হল না।তাই সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিলুম।রাজিও হয়ে গেল।তারপর একদিন ধুমধাম করে বিয়েও করে ফেললাম।কিন্তু বিয়ের দিন ঘোমটা খুলতেই কেমন যেন খটকা লাগল।কেমন যেন চেনা চেনা মনে হতে লাগল।আমি ভ্যাবলা কান্তের মত চেয়ে আছি দেখে সে হেসে বলল
-কি মিনসে? এখনো চিনতে পারো নি? ভূত হয়েও ছোকছোক করার অভ্যেস এখনো যায় নি?
তার গলা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।এ আর কেউ নয়।আমার মানুষ জন্মের বউ।কিন্তু তা কি করে হবে? সে তো ছিল কাল।কিন্তু এর গায়ের রঙ যে পান্তোয়ার মত।
আমার মনের কথা যেন সে বুঝতে পারল। তাই বলল,
-তুমি মরার কয়দিন পরেই গায়ে আগুন দিয়ে আমিও চলে এসেছি।ওদিকে আমি কষ্ট করব আর এদিকে তুমি পেত্নীদের সাথে রাস লীলা করবে সেটি আমি সহ্য করব কেন? তাই চলে আসলাম।এসে দেখলাম ঠিকই ধরেছিলাম।
এই বলে ভূতদা একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলল।ফেলে বলল যার থেকে বাচার জন্য মশায় আত্মহত্যা করলুম, সে মশায় ভূত হয়েও শান্তিতে থাকতে দিবে না দেখে নিজেও আত্মহত্যা করে ভূত হল। হয়ে এখন এজীবনে এসেও জ্বালাচ্ছে।
তার গল্প শুনতে শুনতে কখন যে ভোর হয়ে গেছে টেরই পাইনি।সূর্য উঠি উঠি করছে দেখে সে বলল,মশায় আজ চললাম।তা তোমার নাম ধাম কিছুই তো জানা হল না।মাঝে মাঝে এখানে চলে আসবে।রাতের বেলা এখানে এসে ভূতদা বলে ডাক দিলেই আমি চলে আসব।এই বলে সে চলে গেল।আমিও তার থেকে বিদায় নিলাম।
ভূতদা যাওয়ার পর ভাবতে লাগলাম।বউ এমন জিনিস যে মরলেও শান্তি দেয় না।তার থেকে যাই এবেলা বউয়ের সাথে গিয়ে আপোস করে নিই।অন্যকেউ তো আর ঝাটা দিয়ে মারেনি,মেরেছে নিজের বউ। ওতে সম্মান যায়না।এই ভেবে বাড়ি ফিরে এলাম।
আমাকে দেখেই বউ দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না।বলল আমার ক্ষমা করে দাও।কাল রাগের মাথায় করে ফেলেছি।তাই বলে সারারাত বাড়ি ফিরবে না? আমি তো চিন্তায় চিন্তায় মরে যেতেই নিয়েছিলাম।এগুলো শোনার পর কি আর মন খারাপ থাকে। আমিও সব ভুলে বউকে জড়িয়ে ধরলাম।
এরপর ভূতদার সাথে আমার অনেকবার দেখা হয়েছে।সেসব গল্প না হয় আরেকদিন হবে।আজকের গল্প এপর্যন্তই
আমার গল্প ফুরোলো,
নটে গাছটি মুরোল।
গল্পটি কেমন লাগল অবশ্যই জানাবেন।জীবনে প্রথমবার গল্প লেখার চেষ্টা করেছি।আপনারা অনেক উৎসাহ দিয়েছেন।এজন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।আশা করি ভবিষ্যতেও এভাবে সাপোর্ট দিয়ে যাবেন।
***
VOTE @bangla.witness as witness OR SET @rme as your proxy
নটে গাছটি মুরোল।
গল্পটি কেমন লাগল অবশ্যই জানাবেন।জীবনে প্রথমবার গল্প লেখার চেষ্টা করেছি।আপনারা অনেক উৎসাহ দিয়েছেন।এজন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।আশা করি ভবিষ্যতেও এভাবে সাপোর্ট দিয়ে যাবেন। |
---|
***
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মজার একটা ভুতের গল্প পড়লাম। প্রথম গল্প লেখা হলেও বেশ ভাল হয়েছে। আশা করি পরবর্তিতে আরো মজার মজার গল্প পাবো। ধন্যবাদ মজার একটা গল্প শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনাকেও ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
শেষ পর্বটি খুবই ভালো ছিল। গল্পটি পড়ে খুবই আনন্দ পেলাম। আসলে আপনার থেকে এ ধরনের গল্প আরো আশা করি। এত চমৎকার গল্প শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
উৎসাহ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার গল্প টি বেশ মজা। তবে আপনার গল্প পড়ে যা বুঝলাম সব ঝামেলা কারণ হচ্ছে বউরা।ভূতেরা বউকে ভয় পায়।দাদা আপনার আর বিয়ে করা লাগবে না। হাহহাহা........ধন্যবাদ দাদা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
নাহ বিয়ে শাদি করব না। বিয়ে মানেই ঝামেলা। ধন্যবাদ দিদি সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এই কথাটা একদমই জানা ছিল না।
এটা কি ছিল ভাই। হা হা হা... শেষপর্যন্ত পন্তোয়ার মত গায়ের রং দেখে বিয়ে করে নিল।
এরই মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে গেল আপনার ভূতের গল্পের পর্ব। তবে এটাকে অনেকটা হাসির গল্প বেশি, ভূতের গল্প কম মনে হয়েছে আমার কাছে। খুব সুন্দর উপস্থাপনা ছিল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমরা ফর্সা দেখে বিয়ে করি আর ওরা কালো দেখে করে দাদা।ধন্যবাদ দাদা উৎসাহ দিয়ে সব সময় পাশে থাকার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit