অশেষ ব্যাধি

হ্যালো আমার বাংলা ব্লগবাসী। আশা করি সবাই ভাল আছেন।সকাল থেকে মন খারাপ। মন খারাপ এর কারন টাই আজ শেয়ার করব।

সোর্স

মহাভারতে পান্ডবরা যখন বনবাসে গিয়েছিল তখনকার একটি গল্প প্রথমে আপনাদের শুনাই। আশা করি মহাভারত সম্পর্কে সবারই একটু ধারনা আছে। মহাভারতে যখন পান্ডবরা বনবাসে গেলেন, তখন তাদের শিকার করে খাবার জোগাড় করতে হত। একদিন শিকারে গিয়ে পান্ডবরা এক বিপদগ্রস্ত ব্রাহ্মণ কে সাহায্য করতে গিয়ে খুবই তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ে। তখন জেষ্ঠ পান্ডব যুধিষ্টির নকুল কে আদেশ দিলেন জল নিয়ে আসার জন্য। ছোট ভাইও বড় ভাইয়ের আদেশ পালন করতে গেলেন।কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও ফিরে আসল না।

তখন ঘটনা কি দেখার জন্য যুধিষ্টির অপর ভাইকে পাঠালেন।কিন্তু সেও ফিরে আসল না।এভাবে যুধিষ্ঠির একে একে চার ভাইকেই পাঠিয়ে দিলেন। কিন্তু কেউ ফিরে আসল না। তখন তৃষ্ণায় কাতর হয়ে যুধিষ্ঠির নিজেই গেলেন জলের কাছে।যেই জল পান করতে যাবেন, তখন একটি দৈব বানী হয়।দৈব বাণীতে বলা হয়,আমি যক্ষ।এই জলাশয়ের মালিক।আমার অনুমতি ব্যতীত এই জল যে পান করবে তার মৃত্যু হবে। তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে, আমাকে সন্তুষ্ট করে এই জল পান করতে পারো। যক্ষ যুধিষ্ঠিরকে মোট ৩৪ টি প্রশ্ন করেন।

অধৈর্য হবেন না।আমি এখানে ৩৪ টি প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করব না।গল্পের পটভূমি টা না বুঝলে আমার পোস্ট টি বুঝতে সমস্যা হবে। আর বেশি সময় নেব না। যাই হোক,যুধিষ্ঠির যক্ষ কে বললেন ঠিক আছে আপনি প্রশ্ন করুন। যক্ষ এক এক করে প্রশ্ন করা শুরু করল,যুধিষ্ঠির সকল প্রশ্নেরই সুন্দর উত্তর দিচ্ছিল।সেখানকার একটা প্রশ্ন নিয়েই আজকের পোস্ট।
একপর্যায়ে যক্ষ যুধিষ্ঠিরকে প্রশ্ন করেন,"অশেষ ব্যাধি কি?"

প্রশ্নটি কিন্তু খুবই সহজ,এমন কোন ব্যাধি আছে যা কখনো শেষ হয়না। আপনাদের মাথায় নানা রকম রোগের নাম ঘুরছে বুঝতে পারছি,কিন্তু দু:খের বিষয় একটা রোগের নামও সঠিক নয়। যুধিষ্ঠির যে উত্তরটি দিয়েছিলেন সেটি হল লোভ।কি অবাক হলেন? আমি কিন্তু অবাক হবার কিছু দেখছি না। দাড়ান বুঝিয়ে বলছি। চিন্তা করুন তো আমাদের এত দু:খ এত দুর্দশা কেন?
উত্তর একটাই লোভ।আরেকটা উদাহরণ দেই আমরা যদি কোথাও একটা সুই কুড়িয়ে পাই,তবে আমাদের মাথায় পরবর্তী চিন্তা কি আসবে?

পরবর্তী চিন্তা আসবে ইশ!যদি একটু খানি সুতা পেতাম।তারপর সুতা পেলে চিন্তা আসবে,ইশ যদি একটু কাপড় পেতাম। এভাবে চলতেই থাকে। যখন এই জিনিস এর যে কোন একটা পাব না তখন আমাদের মন হবে খারাপ।আমাদের জীবন যাপন করতে কিন্তু খুব বেশি কিছুর দরকার নাই।সিম্পল একটি বাড়ি,দিনশেষে একটু খাবার।কিন্তু আমরা কি এই সিম্পল চাহিদার মাঝে আটকে আছি? আমাদের দরকার রাজপ্রাসাদ,রাজভোগ,দামী গাড়ি।আর এসব চাহিদা যদি আমরা সঠিক বা সৎ পথে থেকে পূরণ করতাম তাহলে আমার কোন সমস্যা নেই।

কিন্তু এসব আমরা সৎ পথে থেকে পূরণ কর‍তে পারব না তাই বেছে নিচ্ছি অসৎ পথ। আমাদের লোভের বলি হয়ে কেউ মারা যাচ্ছে কিনা সেটাও আমারা ভেবে দেখছি না।আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে লোভ চরিতার্থ করা।যেমন: কেউ সিন্ডিকেট করে কোটি কোটি টাকা ব্যাংকে রাখছে,আবার কেউ খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে সেই সিন্ডিকেট এর জন্য।অথচ যে সিন্ডিকেট করে কোটি কোটি টাকা আয় করছে তার কিন্তু এত টাকার দরকার নেই। তার পরবর্তী তিন প্রজন্ম বিলাসিতার জীবন কাটাবে তারপরেও সে অপূরণীয় লোভের জন্য পাপ করেই যাচ্ছে।

অনেকেই বলতে পারেন জীবনে চলতে গেলে অর্থ সম্পদ প্রয়োজন,তো অর্থ উপার্জনে দোষ কোথায়? আর আপনি এটাকে লোভ বলছেন কেন? না আমি অর্থ উপার্জন কে লোভ বলছি না। প্রয়োজন আর লোভের মাঝে খুব সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। যখন আপনার দশ টাকা দরকার, আপনি কষ্ট করে ১৫টাকা ইনকাম করলেন তখন সেটা লোভ নয়।কিন্তু আপনার দরকার ১০টাকা,আপনি ১০০ টাকা ইনকাম করছেন তবে সেই ইনকাম মানুষের মাথায় বাড়ি দিয়ে তখন সেটাকে লোভ বলে।কারন আপনার দরকার নাই তারপরেও আপনি থামতে পারছেন না।

যাই হোক জীবন কে সুন্দর করতে হলে লোভ নামক ব্যাধি থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।মনে রাখতে হবে লোভ এমন একটি তলাবিহীন কুয়া যা কখনো পূর্ণ করা সম্ভব না।আর এই কুয়া পূর্ণ করতে গেলে জীবন হয়ে উঠবে দু:সহ।তাই লোভকে পরিত্যাগ করি,জীবনকে সুন্দর ভাবে গড়ে তুলি।

আজকের পোস্ট এপর্যন্তই। সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ। কেমন লাগল পোস্টটি জানাবেন।ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

VOTE @bangla.witness as witness OR SET @rme as your proxy


_{আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।}

_{Posted using SteemPro Mobile}