গাছের পরের যদি মানুষের পরম কোন বন্ধু থাকে তো সেটা হল কুকুর। পৃথিবীর সব থেকে প্রভুভক্ত প্রাণী যে কুকুর তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।একটি পোষা কুকুর তার প্রভুর জন্য জীবন পর্যন্ত দিতে পারে। তার কাছে মনিব সবার আগে।
পোষা কুকুরের কথা বাদ দিন,রাস্তার একটি কুকুর কে দুইদিন বিস্কিট বা কিছু খাওয়ান দেখবেন সে সব সময় আপনার পিছু পিছু ঘুরবে।এটা যতটা না খাওয়ার লোভে তার থেকে বেশি প্রভুভক্তির জন্য।আপনি যখন তাকে খাইয়েছেন সে তখন থেকেই আপনাকে তার প্রভু বলে ধরে নিয়েছে।
চিন্তা করুন, শূণ্য হাতে বাংলায় আসা মুমূর্ষু মীরজাফর কে নবাব সিরাজউদ্দৌলার নানা সুস্থ করে তোলেন এবং তাকে প্রধান সেনাপতির পদ দেন।তারপরেও ক্ষমতার লোভে তার নাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে মীরজাফর দ্বিতীয়বার ভাবে নি। সেখানে দুইদিন বিস্কুট খাওয়ানোর বদলে একটি কুকুর আপনার জন্য জীবন পর্যন্ত দিতে পারে।
মানুষ ও কুকুরের এই বন্ধুত্ব হওয়া কোন নতুন ঘটনা নয়। মানুষের সাথে কুকুরের বন্ধুত্বের ইতিহাস প্রায় ৩২হাজার বছর পুরোনো। আপনারা অনেকেই জানলে অবাক হবেন হয়ত,কুকুরের পূর্ব পুরুষ ছিল নেকড়ে। হ্যা ঠিকই শুনেছেন বন্য নেকড়েই বিবর্তিত হয়ে বর্তমান কুকুরে রূপান্তরিত হয়েছে।
প্রথমেই বলেছি একটি রাস্তার কুকুর কে আপনি পরপর কয়েকদিন বিস্কুট খাওয়ালেই সে আপনাকে প্রভু হিসেবে মেন নিবে,এই বৈশিষ্ট্য টা কিন্তু তাদের মজ্জাগত।অর্থাৎ তাদের ডিএনএ তে মিশে আছে মানুষকে সহজেই বন্ধু হিসেবে ভাবার গুণটি। এর কারন মানুষ ও কুকুরের প্রথম বন্ধুত্বের সূত্রপাত এই খাবারের মাধ্যমেই।
সেই আদিম যুগে মানুষ ছিল যাযাবর।অর্থাৎ নির্দিষ্ট থাকার জায়গা তৈরি করত না। সারাদিন শিকার করত,সেই মাংস খেয়ে জীবন ধারন করত। হিংস্রপ্রানীর আক্রমন থেকে বাচতে আগুন জ্বালাত। এখানেই শিকারী হিংস্র নেকড়ে মানুষের পোষ মানতে শুরু করে। আমার ধারণা,নেকড়েরা মানুষ শিকারের জন্য মানুষের আস্তানার আশেপাশে ঘোরাফেরা করত,তাদের দেখে মানুষ তাদের খাওয়া মাংসের হাড় বা মাংসের টুকরা দিত।
তখন নেকড়েরা ভাবল এ তো বেশ মজা।কষ্ট করে শিকার না করেই দিব্বি খাবার জুটে যাচ্ছে।তখন কিছু অলস নেকড়ে শিকার করার কষ্ট থেকে বাচতে মানুষের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করতে থাকে।মানুষও তাদের খাবার দিতে থাকে। এভাবে আস্তে আস্তে নেকড়ে মানুষকে শিকারের পরিবর্তে খাদ্যের সহজ যোগানদাতা হিসেবে দেখা শুরু করে।
আর আপনি কখনো চাইবেন না আপনার নিশ্চিত খাদ্যের উৎস নষ্ট করতে তাই অন্য হিংস্র প্রাণীদের থেকে এই নেকড়েরা মানুষকে রক্ষা করত।বিনিময়ে মানুষের থেকে খাদ্যপেত।এভাবেই খাদ্য ও নিরাপত্তার ভিত্তিতে মানুষ ও কুকুরের মাঝে গড়ে ওঠে এক অটুট বন্ধুত্ব।
আপনাদের কৌতুহল জাগতে পারে নেকড়ে কুকুরের পরিণত হল,তবে তাদের চেহারা ও আকারের এত পার্থক্য কেন? এই পার্থক্যটা আসলে বিবর্তনের জন্য।আমাদের বৈশিষ্ট্য ও আমাদের শারিরীক গঠণ নির্ভর করে আমাদের চারপাশের পরিবেশ এর উপর।এটা নিয়ে পরে একদিন বিস্তারিত আলোচনা করব। নেকড়ে যেখন শিকার করা ত্যাগ করল তখন তার শারীরীক আকার ছোট হওয়া শুরু করল।তার হিংস্র আচরণ হ্রাস পেতে থাকল।এভাবেই তারা বর্তমান কুকুরে পরিণত হল।
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে প্রাণীরা খুব সহজেই মানুষকে আপন করে নিতে পারে।বিশেষ করে কিছু পোষ্য প্রাণী,এছাড়া তাদের মস্তিষ্ক অনেক সচল হয়।আপনার লেখাটি শিক্ষণীয় ছিল।প্রাণীরা বিশ্বাসঘাতকতা করে না কখনোই।বিবর্তনের গল্পটি ভালো লাগলো পড়ে।নেকড়ে মনে হয় রঙের দিক থেকে ভিন্ন ভিন্ন ছিল না যেমনটি কুকুর।ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বিভিন্ন ধরনের রং না থাকলেও, নেকড়েদের রঙ এর ভিন্নতা ছিল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কুকুর খুবই প্রভু ভক্ত প্রানী। প্রভুর জন্য জীবনও দিতে পারে। বেশ কিছু তথ্য জানতে পারলাম। তথ্যবহুল পোস্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনাকেও ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit