সেই ২৫শে মার্চ কালরাত্রি||পর্ব-২

in hive-129948 •  2 years ago 
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগবাসী।আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি।আজ ইতিহাস কুখ্যাত কাল রাত্রি নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করব।

IMG_20230325_215314.jpg
তবে পাকিস্তানী ইন্টালিজেন্স ২টি জায়গা থেকে বিপদের আশংকা করে নি। একটি হল ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ,অপরটি ইপিআর বা ইস্টপাকিস্তান রাইফেলস।এই দুটি ফোর্স পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকারের আদেশে চলত।

এই দুইটি ফোর্সকে বিপদজনক না ভাবার আরো দুইটি কারন হল এদের অস্ত্রশস্ত্র অত উন্নত ছিল না। আর তাছাড়া এই পুলিশ ফোর্স এতদিন সরকারের নির্দেশে বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি পর্যন্ত চালিয়েছে।তাই তারা যে প্রতিরোধ গড়তে পারে এটি পাকিস্তানী ইন্টালিজেন্স ভাবেই নি। কিন্তু ৭মার্চ এর ভাষণের পর থেকেই ইপিআর এবং পুলিশ পাকিস্তান সরকারের নির্দেশ অমান্য করতে শুরু করে।তখন পাকিস্তানীদের টনক নড়ে।

এদিকে আলোচনার আড়ালে চলতে থাকে অপারেশন এর প্রস্তুতি। অনেক বাঙ্গালী সেনা অফিসার আগে থেকেই আচ করতে পারেন। অবশেষে চলে আসে সেই কালরাত্রি।ঢাকা সেনানিবাস থেকে পাকিস্তানী জাওয়ানদের কনভয় বের হয়। তাদের উদ্দ্যেশ্য ছিল
১.ইপিআর সদর দপ্তর দখল।
২.রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স দখল।
৩.বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার।
৪.ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলো দখল।কারন সব আন্দোলনের সুতিকাগার হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
৫.গণহত্যা চালানো যাতে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস না পায়।
৬.রেডিও,টেলিভিশন,টেলিফোন এক্সচেঞ্জ,পত্রিকা অফিস দখল করা।যাতে তাদের এই হীন কার্যক্রম বাইরে প্রকাশ না পায়।

কথিত আছে সেনাদের নির্দেশ দেওয়া ছিল যে তাদের শুধু মাটি দরকার,মানুষের কোন দরকার নেই।তাইলেই চিন্তা করুন কতটা নির্মম ছিল তাদের পরিকল্পনা।যাই হোক এসব পরিকল্পনা নিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী উন্নত অস্ত্র-শস্ত্র, ট্যাংক নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ে।

ফার্মগেটে ইস্ট পাকিস্তান পুলিশের একজন রেডিও অপারেটর পাকিস্তানী বাহিনীর এর কনভয় দেখতে পায় এবং সাথে সাথে রিপোর্ট করে রাজারবাগে।তার রিপোর্টে সতর্ক হয়ে যায় সেখানে অবস্থানরত পুলিশের সদস্যরা।তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং অস্ত্রভান্ডার লুট করে।

তারা বিভিন্ন জায়গায় গোপনে অবস্থা নেয় পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমন রুখে দেওয়ার জন্য।একপর্যায়ে পাকিস্তানী বাহিনী রাজারবাগে এলে সম্মুখ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে পুলিশ ও সেনাসদস্য।কিন্তু সেনাসদস্যদের আধুনিক মেশিনগান,সাবমেশিন গান এর কাছে পুলিশের থ্রি নট থ্রি রাইফেল ছিল একদম বাচ্চা। ফলাফল সাহস থাকলেও পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে এই অসম যুদ্ধে পুলিশ বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধে অনেক পুলিশ সদস্য শহীদ হন,বাকিরা পুলিশের ড্রেস খুলে সিভিল ড্রেসে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। আশেপাশের লোকজন ও তাদের সাহায্য করে।

আমারা সবাই মুক্তিবাহিনী, মিত্রবাহিনীদের নাম শুনেছি।কিন্তু অনেকেই এই তথ্যটি জানিনা যে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের হয়ে মুক্তিযুদ্ধে প্রথম গুলি চালিয়েছিল পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। অন্যদিকে আরেক কনভয় বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ঘিরে ফেলে। বঙ্গবন্ধু আগেই আন্দাজ করেছিলেন এমন কিছু হতে পারে, তাই তিনি বাড়ির মহিলা ও অন্যান্য সদস্যদের নিরাপদে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেন।

এরপর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়।কিন্তু গ্রেফতার হবার আগেই তিনি দিয়ে যান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা। তার এই স্বাধীনতার ঘোষণাই বাঙ্গালীকে যুদ্ধের অনুপ্রেরণা যোগায় এবং নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ফলে আমরা লাভ করি স্বাধীনতা।

আজকের ইতিহাস পাঠ এপর্যন্তই। অনেকেই হয়ত এসব ইতিহাস জানেন।তবুও নতুন প্রজন্মের জন্য লিখে রেখে গেলাম। তারা জানতে পারবে তাদের জাতীর বীরত্বের ইতিহাস।কেমন লাগবে জানাবেন। সম্পুর্ণ পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ

VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR
SET @rme as your proxy
witness_vote.png

banner-NEW.png
break2.jpg
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
break2.jpg

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

আপনার এই পোস্টটি পড়ে আমি ২৫ শে মার্চ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারলাম যা আমার অজানা ছিল। সত্যিই ২৫ শে মার্চ একটা ভয়ঙ্কর রাত ছিল।

২৫ শে মার্চ কালরাত্রি নিয়ে বেশ সুন্দর কনটেন্ট লিখেছেন ভাইয়া। মা বাবার মুখে অনেক শুনেছি সে সব গল্প। তবে আপনার পোস্টটি পড়ে আজ নতুন করে অনেক কিছুই জানতে পারলাম। যদিও এগুলো আগে পাঠ্য বইতে অসেক পড়েছি। ধন্যবাদ আপনাকে।

ভাইয়া আপনার লেখা সেই ২৫শে মার্চ কালরাত্রি দ্বিতীয় পর্ব পড়ে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারলাম। আপনার লেখা গুলো পড়তে আমার কাছে অনেক ভাল লাগে। ধন্যবাদ ভাইয়া।