Image Source: Pixabay
স্বাগতম সবাইকে।
আশা করি সবাই ভালো আছেন।
আজকে আমরা কিছু নির্দিষ্ট ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কথা বলবো যা মূলত ওয়েব ৩.০ বেইজড। যেগুলোর কিছু কিছু খুব বেশি ভালো করা শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যে এবং এমন কিছু আছে যা সামনে আরো বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে মানুষের জীবনযাপনে।
ওয়েব ১.০, ২.০ এবং ৩.০ নিয়ে আমি আগেও কথা বলেছি। আজকে খুব বেশি কথা বলবো না।
খুব সংক্ষেপে যদি বলতে যাই ওয়েব ১.০ হলো টিম বার্নাস লি এর সেই প্রথম পর্যায়ের আবিষ্কার যেখানে আমরা সার্ভায়ে থাকা তথ্য শুধু দেখতে বা পড়তে পারতাম। ২.০ এর পরের পর্যার যেখানে আমাদের সুযোগ হয়েছিলো সেই তথ্যগুলোর সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করার। ৩.০ তো আমরা দেখতেছিই যে গত ২/৩ বছরে কি ধরণের বড় রকমের পরিবর্তন নিয়ে আসলো।
ওয়েব ৩.০ এর সাথে ডিসেন্ট্রালাইজড কথাটা খুব বেশি জড়িত। এখানকার মূল কথাই হলো গতানুগতিক ধারার মতো তথ্যের মালিকানা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে না থেকে সবার কাছেই থাকবে। এর একক কোন মালিকানা থাকবে না। ব্লকচেইন প্রযুক্তি সম্পর্কে আশা করি সবার ধারণা আছে যারা প্রযুক্তি দুনিয়ায় ঘোরাফেরা করেন বা খোঁজ খবর রাখেন। ব্লকচেইন নিয়েও আজকে অত বেশি আলাপ করবো না। আজকে আমাদের লক্ষ্য থাকবে ওয়েব ৩.০ এর কিছু চমৎকার ফিচার নিয়ে যা আগামী পৃথিবীকে বদলে দেয়ার সামর্থ্য রাখে।
চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
NFT:
Image Source: Pixabay
NFT বা Non-Fungible-Token হলো cryptographic টোকেন যা একটা ব্লকচেইনে থাকবে এবং এর রেপ্লিকা তৈরি করা যাবে না।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে cryptography টা কি?
Cryptography হলো অনলাইনে থাকা তথ্য বা ডাটার নিরাপত্তা দেয়া সম্পর্কিত বিদ্যা। এখন ধরেন আপনার কোন গাওয়া গান বা আঁকা ছবি আপনি কোথাও প্রকাশ করলেন। তো কেউ যদি চায় তাহলে আপনার এই সৃষ্টিশীল কর্ম চুরি করে নিয়ে যেতে পারবে। এইভাবে কেউ যেন আপনার কর্ম চুরি করে না নিয়ে যেতে পারে সেই নিরাপত্তা যেই বিষয় টা দিবে তাকেই বলে Cryptography যা ব্লকচেইন প্রযুক্তির মধ্যে থাকবে।
NFT কে যদি খুব সহজ ভাষায় বলি তাহলে এটা হলো কোন ডিজিটাল সম্পদ যার মালিকানা এর প্রকৃত মালিকের সম্মতি ছাড়া কেউ ব্যবহার করতে পারবে না।
এখন এই সব সম্পদের যেহেতু রেপ্লিকা আপনি বা আমি চাইলে করতে পারবো না সেহেতু এর ভ্যালু থাকবে অনেক বেশি। আমরা মেটা ভার্সের দুনিয়ার ঢুকে যাচ্ছি (মেটাভার্স নিয়ে পরে কথা বলতেছি) যেখানে এইসব সম্পদের দরকার হবে। এই সব জিনিস যে কমিউনিটি ভ্যালু তৈরি করছে তাতে খুব সহজেই বলা যায় NFT ইন্ডাস্ট্রি টা সামনে খুব ভালো করার সুযোগ রাখবে।
Decentralized Finance:
Digital assets vector created by rawpixel.com - www.freepik.com
Decentralized Finance বা সংক্ষেপে Defi হলো এমন এক ফাইনান্সিয়াল ব্যবস্থা যেখানে আপনি বা আমি খুব সহজেই গতানুগতিক ব্যাংকের মতো কাজগুলো খুব সহজেই সেরে ফেলতে পারবো । মজার বিষয় হলো এখানে এর একক কোন কর্তৃপক্ষ থাকবে না। শুধুমাত্র ইন্টারনেট থাকলেই আপনি এর সুবিধা নিতে পারবেন খুব সহজেই। এখানে আপনাকে কোন একাউন্ট খোলার ঝামেলা পোহানে হবে না, পার্সোনাল তথ্য দেয়ার কোন দরকার নেই। শুধুমাত্র একটা ওয়ালেট কানেক্ট করেই সব করে ফেলতে পারবেন। এখানে আপনার সম্পদ খুব সহজেই এবং খুব দ্রুত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যেতে পারবেন ঝামেলা ছাড়া। আপনার যদি ডিজিটাল কোন সম্পদ থাকে আপনি এখানে বন্ধক দিতে পারবেন এর বিনিময়ে লাভ নেয়ারও সুযোগ থাকবে। সেই সাথে আপনি চাইলে ঋণও নিতে পারবেন। Peer-to-Peer ট্রানজেকশন এর কথা আমরা অনেকেই হয়তো শুনেছি। যদি খেয়াল করেন দেখবেন এখন মোবাইল বাংকিং এর মাধ্যমে খুব সহজেই একজন আরেকজনকে মুহুর্তের মধ্যেই টাকা পাঠাতে পারছে। তবে এখানে ঝামেলা হলো এ ব্যবস্থা যে করে দিচ্ছে তার কাছে সে সকল কর্তৃত্ব রাখে। কিন্তু Defi তে এরকম একক কর্তৃত্ব থাকবে না কারো কাছে। এখন অনেক ব্যবসাই গতানুগতিক ব্যাংক ব্যবস্থাকে পালটে দিচ্ছে।
DAO:
This photo is created by @solaymanspn
DAO এর ফুল ফর্ম decentralized autonomous organizations যেগুলো গতানুগতিক লিডারশীপের বিপরীতে সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালিত যার পরিচালনা করা হয় এইসব Organisations এর সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে। এর সদস্য হতে আপনাকে সে DAO এর নির্দিষ্ট Cryptocurrency ক্রয় করতে হবে। কোন একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে এইসব প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা প্রস্তাবনা পেশ করে এবং এরই সদস্যরা তাদের ভোটিং পাওয়ারের মাধ্যমে ঠিক করে তা পাশ হবে কি হবে না। পুরা ব্যাপারটাই মূলত একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম। এখানে কেউ চাইলেই ম্যানুপুলেশন করতে পারবে না।
এরকম Organisation নেটিজেন মানে ইন্টারনেটের বাসিন্দাদের নিয়ে করা হয়। যেখানে একই মন মানসিকতার লোকজন একসাথে কোন একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে জড় হয়।
DAO এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে যে এর মাধ্যমে কিভাবে গতানুগতিক ভোটিং সিস্টেম পরিবর্তন করা যায় তা নিয়ে কাজ হচ্ছে।
dApps:
Digital assets vector created by rawpixel.com - www.freepik.com
dApps যার ফুল ফর্ম হলো Decentralized Applications। আমরা আমাদের মোবাইল বা কম্পিউটারে অনেক রকমের App ব্যবহার করি। এইসব App গুলোর বেশির ভাগই কিন্তু ডাটা একটা নির্দিষ্ট মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সার্ভারে জমা রাখে। মানে হলো ধরুণ আপনি আপনার ফোনে True Caller App টা চালাচ্ছেন। এটি একটি Centralized App যা আপনার কাছ থেকে নেয়া তথ্য তাদের নিজস্ব সার্ভারে জমা রাখবে। এখন চাইলেই এরা আপনার তথ্য যেকারো কাছে শেয়ার করে দিতে পারে। আবার ধরুণ আপনি ফেসবুক চালাচ্ছেন। এখন আপনার আইডি চাইলেই ফেসবুক বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু dApps এ আপনাকে কোন সিঙ্গেল অথরিটি চাইলেই সেই নির্দিষ্ট অ্যাপ ব্যবহার থেকে বিরত রাখতে পারবে না। কারণ হলো এর ডাটাগুলো কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের সার্ভারে না থেকে পুরো দুনিয়াজুড়ে হাজার হাজার কোটি কোটি মানুষের কম্পিউটারে থাকবে। তারমানে এই না যে কেউ চাইলেই আপনার তথ্যের অপব্যবহার করতে পারবে। কারণ তা কোন না কোনভাবে ব্লকচেইন প্রযুক্তির সাথে সংযুক্ত। আর আমরা জানি ব্লকচেইনের নিরাপত্তা দিনকে দিনকে কতটা জোড়ালো করা হচ্ছে। এর জনপ্রিয়তা যদিও এখন অত বেশি না তবে সামনের দিনগুলোতে এর ব্যবহার প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
GameFi:
Image Source: Freepik
GameFi হলো Game এবং Finance এর মিলনে তৈরি একটি ধারণা। আমরা অনেকেই অনেক গেম খেলে থাকি। কিছু কিছু গেইমে দেখবেন একটা নির্দিষ্ট কাজ সম্পূর্ণ করলে রিওয়ার্ড দেয়। কিন্তু এগুলোর বাস্তবিক কোন মূল্য নেই। কিন্তু এই GameFi তে আপনি যদি কোন রিওয়ার্ড পান তাহলে এর রিয়েল ভ্যালু থাকবে। আপনি চাইলে আপনার রিওয়ার্ড যেকোন জায়গায় ট্রান্সফার করে এর ফায়দা নিতে পারবেন। আমরা অনেকেই Free Fire বা Pubg খেলেছি। এখানে আমরা অনেক রকম বন্দুকের স্কিন কিনে থাকি। কিন্তু এইসব বন্দুক বা স্কিন আপনি চাইলে অন্য কোন গেইমে নিয়ে যেতে পারবেন না। কিন্তু GameFi এর কনসেপ্টে যেসব গেম তৈরি হচ্ছে সেখানে আপনি চাইলেই এক গেইমের এক্সেসরিজ অন্য গেইমে নিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন যদি অন্য ওই গেমের এনভাইরোনমেন্ট ব্যবহার করার সুযোগ রাখে। GameFi কে মুলত প্লে টু আর্ন নামে অবহিত করা যায় যা ব্লকচেইন এর উপর ভিত্তি করে তৈরি। এখন এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। আমরা অনেকেই Axie Infinity গেইমের নাম শুনেছি। এর হাইপ কেমন তা আপনারা একটু ঘাটাঘাটি করলেই জানতে পারবেন। এখানে আপনি ল্যান্ড ক্রয় করতে পারেন যা মূলত NFT। এসব NFT এর রিয়েল ভ্যালু আছে। এগুলো মার্কেটে ক্রয় বিক্রয়ের সুযোগ আছে। আপনি চাইলে বিক্রি করে টাকা নিজের পকেটে ঢুকাতে পারবেন।
ওয়েব ৩.০ এর গুরুত্বপূর্ণ আরো অনেক বিষয়ই আছে যা নিয়ে হয়তো পরে কখনো আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।