বুক রিভিউ- "চাঁদের পাহাড়"--- বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়। 10% to @shy-fox & 5% @abb-school.

in hive-129948 •  3 years ago 

হ্যালো সবাইকে।
কেমন আছেন সবাই?
আশা করি সবাই ভালোই আছেন।
আমিও ভালো আছি।


৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
১৪ জুন ২০২২ ইং

আজকে আমি আপনাদের সাথে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় এর রোমাঞ্চকর জনপ্রিয় উপন্যাস "চাঁদের পাহাড়" এর রিভিউ শেয়ার করার চেষ্টা করবো। ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত উপন্যাসটি নায়ক শঙ্করের আফ্রিকা জয়ের কাহিনী নিয়ে রচিত হয়েছে। পাঠক মহলে বেশ বিখ্যাত বইটি।

P20613-212916(1).jpg

প্রতীক প্রিন্ট হাউস কর্তৃক মুদ্রিত গ্রন্থের মোড়ক ।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

উপন্যাসচাঁদের পাহাড়া
লেখকবিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়
প্রথম কাল১৯৩৭(আসল বাংলা), ২০১১(আমার সংগ্রহে থাকা কপি)
প্রকাশকএম. সি. সিরকার এন্ড সনস লিমিটেড (আসল বাংলা), শব্দশিল্প (আমার সংগ্রহে থাকা কপি)
ভাষাবাংলা
ধরণরোমাঞ্চকর
দেশভারত
পৃষ্ঠা সংখ্যা৯৫ (আমার সংগ্রহে থাকা কপি)
চরিত্রশঙ্কর
প্রসাদ দাস বন্দোপাধ্যায়
ডিয়েগো আলভারেজ
জিম কার্টার
আত্তিলিও গাত্তি

মুল কাহিনী

সংসারের টানা-পোড়নের বেহাল অবস্থায় সবে এফ,এ পাশ করা বহুল প্রতিভার অধিকারী শঙ্কর তার ভ্রমণ পিপাসা মাটিচাপা দিয়ে পাটকলের কর্মী হওয়ার জন্য মানসিক অশান্তিকে দূরে ঠেলে দিয়ে আর দশটা সাধারণ বাঙালি পরিবারের ছেলের মতো প্রস্তুত হচ্ছিলো।

কিন্তু এই ভাবনার মধ্যে একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনাক্রমে শঙ্কর গিয়ে পৌছালো সুদূর আফ্রিকায়। মোম্বাসা থেকে আসা প্রসাদ দাস বন্দোপাধ্যায় এর একটি চিঠি পালটে দেয় তার ভাগ্য। রেলওয়েতে চাকরী হয় তার৷ নতুন এক পরিবেশ নতুন একদেশ।মানুষ খেকো বাঘের ভয়, পানি সংকট, মাইলের পর মাইল ঘন ঘাস আর বনে ঢাকা। তাবু থেকে রাত বিরাতে বাঘ ধরে নিয়ে যায় মানুষ। এমনভাবে কিছুদিন চলার পর শঙ্করের বদলি হয় নতুন স্টেশনে। পূর্ববর্তী যিনি এ স্টেশনের দায়িত্বে ছিলেন তিনিও ভারতীয়। এখানে সাপের উপদ্রব, পানির সংকট। জীবন-মরণ খেলায় রাতের পর রাত পার করার এক সময় অসুস্থ এক আগন্তুক এসে হাজির হয় শঙ্করের জীবনে। ডিয়েগো আলভারেজ, দুর্ধর্ষ পর্তুগিজ এক ভাগ্যান্বেষী। তার কাছ থেকে নতুন এক রোমাঞ্চ উপভোগ করার সুযোগ পায় শঙ্কর। দূঃসাহসী, অকুতোভয়, যার আর হারানোর কিছু নেই সে আলভারেজের সাথে শঙ্কর রওনা হয় দুর্গম রিখ্টারসভেল্ট পর্বতে অজানা এক হীরার খনির উদ্দ্যেশে। অবর্ণনীয় অসহ্য অসুবিধার মধ্যে তাদের পথ চলতে হয়। এর মাঝে জোগান ফুরিয়ে আসে খাদ্যের, শুরু হয় অগ্নুৎপাত। সরে যেতে হয় একস্থান থেকে অন্যত্র। রাতে পাওয়া যায় অজানা জন্তুর ভারি পায়ের আওয়াজ। আলভারেজ নড়েচড়ে বসে খুব সতর্কতায়। গুলি ছুড়ে। হিতে বিপরীত হয়। এ জন্তু প্রাণ নিয়েছে অনেক মানুষের। এ বুনিপই (এক প্রকার জন্তু) পাহারা দেয় হীরক খনির। এভাবে এক সময় এ বুনিপের হাতে মৃত্যু হয় ডিয়াগো আলভারেজের। এভাবে একা হয়ে যায় শঙ্কর।
P20613-213029(1).jpg

একদিন শঙ্কর বুনিপের গুহায় ঢুকে পড়ে কিন্তু হীরা খুঁজতে খুঁজতে গুহার মধ্যে পথ হারিয়ে ফেলে। তারপর বহু কষ্টে পাথরের সাহায্যে গুহা থেকে সে বের হতে সক্ষম হয় এবং সাথে করে কিছু পাথর নিয়ে আসে। যে পাথরগুলো সে সাথে করে নিয়ে এসেছিলো সেগুলা ছিলো হীরা। ইতালীয় অভিযাত্রীক আত্তিলীয় গাত্তির নোট থেকে সে পরে জানতে পারে, সে যে গুহায় প্রবেশ করেছিলো সেটাই আসলে হীরার খনি যার জন্য জিম ও আলভারেজ তাদের জীবন হারিয়েছে। কিন্তু যতক্ষণে সে জানতে পারে ততক্ষণে সে কালাহারি মরুভূমিতে পথ হারিয়ে ফেলে। মরুভূমিতে পানির অভাব, মাথার উপর শকুনের ঘোরাঘুরি, পথে সিংহের সাথে যুদ্ধ। এভাবে যখন তার মুমূর্ষু অবস্থা তখন তাকে এক সার্ভে টিম খুঁজে পেয়ে সলসবেরি, রোডেশিয়ায় নিয়ে এসে বাঁচিয়ে তোলে।

সলসবেরিতে থাকা অবস্থায় সে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সে তার দেখা মধ্য-আফ্রিকার অরণ্যে লুকিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরিটার নাম দেয় মাউন্ট আলভারেজ। এর কিছু দিন পর সে দেশের মায়ায় দেশে ফিরে আসে এবং আবার সে রত্নখনির সন্ধানে একটা গোটা কোম্পানি গঠন করে আসার পরিকল্পনা করে।
P20613-213428(1).jpg

ব্যক্তিগত মতামত

বইটি পড়ার সময় মনে হচ্ছিলো আমি নিজেই শঙ্কর। ঘুরে বেড়াচ্ছি আফ্রিকার জঙ্গলে। সিংহের গর্জন আর ব্ল্যাক মাম্বার ফণা উপেক্ষা করে চড়ে উঠছি রিখটারসভেল্ট পর্বতে। সাথে আছে আমার ডিয়াগো আলভারেজের মতো তেজী সঙ্গী। বুনিপের মুখোমুখি হয়েছি। দেখেছি হীরার খোঁজে পথ হারিয়ে যাওয়া আত্তেলিও গাত্তির পড়ে থাকা কঙ্কাল আর পুরোনো দিনের চিঠি। এসব আবিষ্কার তো চারটে খানি কথা না। রোমাঞ্চে ভরপুর ভ্রমণপ্রিয় মানুষ হোক আর নাই হোক যে কাউকে শিহরিত করার মতো উপকরণ বিভূতিভূষণ চট্টোপাধ্যায় এর "চাঁদের পাহাড়" বইটায় আছে।

ভারতীয় সাহসী যুবকের বন জঙ্গলে ঘেরা আফ্রিকা ঘোরার কাহিনী বইপ্রেমিদের সব রকমভাবে রোমাঞ্চিত করে দিতে একদম প্রস্তুত। এই বইয়ে আছে আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন জ্ঞান আহরণমূলক তথ্য।

এই বইয়ের উপর ভিত্তি করে দেব অভিনীত ভারতীয় বাংলা একটা মুভি তৈরি করা হয়েছে যার নামও "চাঁদের পাহাড়"।

ব্যক্তিগত রেটিং ৪.৭/৫

ধন্যবাদ সবাইকে।
ভালো থাকবেন সবাই।
সবার জন্য শুভকামনা।



JOIN DISCORD
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

চাঁদের পাহাড় বই টি পড়বো পড়বো করে পড়া হচ্ছে না। অনেকদিন আগে একবারপড়েছিলাম আর পড়তে পারেনি। আজকে আপনার পোষ্টের মাধ্যমে অনেকটুকু অংশে পড়ে নিয়েছি। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ চাঁদের পাহাড় বুক রিভিউ টি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ।আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইল।

অনেক চমৎকার একটি বই আপু। অস্থির রোমাঞ্চে ভরপুর।
ধন্যবাদ আপু।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় আমার খুব প্রিয় কবি। আপনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর চাঁদের পাহাড় উপন্যাস টি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। বেশ ভালো লাগলো। এত অসাধারন উপন্যাস রিভিউ দেওয়ার জন্য আপনাকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

ধন্যবাদ ভাই। আমি যতটুকু পেরেছি ভাই চেষ্টা করেছি। দোয়া করবেন আমার জন্য।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর চাঁদের পাহাড় বই এর কথা কত যে শুনেছি কিন্তু আজ পর্যন্ত তা পড়া হয়ে উঠেনি, আপনার এই পোস্টটি মাধ্যমে আমার চাঁদের পাহাড় সম্পর্কে কিছু একটা পড়া হয়ে গেল। অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর পোস্ট জন্য

বইটি পড়লে আরো বেশি রোমাঞ্চিত হবেন। আমি যতটুকু পেরেছি চেষ্টা করেছি।
ধন্যবাদ ভাই

আপনি খুবই চমৎকার ভাবে আমাদের মাঝে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাঁদের পাহাড় বুক রিভিউ শেয়ার করেছেন দেখে খুবই ভালো লাগলো। বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের লেখা আমার কাছে সব থেকে বেশি ভালো লাগে। ধন্যবাদ আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

আমিও ভাই পড়ে খুব মজা পেয়েছি। একদম নিজেকে শঙ্কর মনে হচ্ছিলো।
ধন্যবাদ ভাই আপনাকে

এই বইটি পড়তে অনেকদিন থেকেই প্রিপারেশন নিয়ে ছিলাম কিন্তু এখন পর্যন্ত পড়া হয় নাই। যাইহোক আপনার পোষ্ট সম্পূর্ণ পড়লাম এবং অনেক কিছু জানতে পারলাম। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

বইটি বেশ ভালো আপু। বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় বেশ ভালো লেখেন আমরা সবাই জানি। কিন্তু একজন লেখক আফ্রিকা না গিয়েও কত নিখুঁত ভাবে সব কিছু উপস্থাপন করতে পারে সেটা আসলেই ভাবার বিষয়।
ধন্যবাদ আপু।

  ·  3 years ago (edited)

আপনি আফ্রিকার জঙ্গলে ঘুরে না বাড়ালেও যে আমার বাংলা ব্লগের সুন্দর স্থানে অবস্থান করছেন এতে কোন সন্দেহ নেই খুবই। ভাল লেগেছে আপনার এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার দেখে।

ধন্যবাদ ভাই এতটুকু সময় নিয়ে আমার পোস্ট টি পড়ার জন্য।