হ্যালো সবাইকে।
আশা করি সবাই ভালো আছেন।
আজকে আমরা মেটাভার্স নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
Metaverse psd created by Kerfin7 - www.freepik.com
আমরা প্রায় সকলেই মেটাভার্স শব্দ টার সাথে পরিচিত। আগামী ১০/১৫ বছর পর হয়তো আমরা এমন এক দুনিয়ায় প্রবেশ করতে যাচ্ছি যেখানে ভার্চ্যুয়ালি প্রায় সব কিছুই করা সম্ভব হবে।
আমরা লক্ষ করেছি কিছুদিন আগে ফেসবুক তাদের প্যারেন্ট কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে মেটা করেছে। আমরা দেখেছি ফেসবুকের নিজস্ব ম্যাসেজিং অ্যাপ থাকা সত্ত্বেও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ হোয়াটসঅ্যাপ কিনেছিলো। এখন মানুষ কি হারে তা ব্যবহার করেন আমাদের সবার জানা। মার্ক জাকারবার্ক তার এক ইন্টারভিউতেও বলেছেন কিছুদিন পর মানুষ এই মেটাভার্সেই বেশি সময় পার করবে (Source: Mashable)।
এখন খুব সহজ ভাষায় মেটাভার্সকে যদি বুঝতে যাই তাহলে বলতে হবে এটা এমন এক দুনিয়া হবে যেখানে মানুষ বাস্তবে না গিয়েও সেখানে যাওয়ার বা সময় পার করার অনুভূতি লাভ করতে পারবে।
আক্ষরিক অর্থে যদি যাই তাহলে Meta মানে হলো অবস্থান পরিবর্তনসূচক উপসর্গ যা মানুষকে সচেতন হতে সাহায্য করে। আর verse শব্দ টা এসেছে Universe যার মানে বিশ্ব। এখন এই Metaverse হলো এমন এক দুনিয়া যেখানে প্রত্যেকে তার নিজের অবস্থান সম্পর্কে সচেতন থাকবে। আরো সহজ করে যদি বলার চেষ্টা করি তাহলে উদাহরণ হিসেবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খেলা গেইম গুলোর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। আমরা যখন Free Fire বা Pubg খেলি তখন আমাদের সবার নিজেদের একেকটা ক্যারেক্টার থাকে গেইমে। এখন গেইমের ভিতরে যেই ক্যারেক্টারটা আছে সে যদি কখনো বুঝতে পারে যে সে গেইমের ভিতরে তার কার্যক্রম চালাচ্ছে তাহলে ওই গেইমের দুনিয়াটাকে আমরা মেটাভার্স বলতে পারবো। কিন্তু বাস্তব যেই বিষয় তা হলো গেইমের ভিতরের ক্যারেকটার টা কিন্তু এতো সচেতন না এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত। কিন্তু আমরা যে দুনিয়ার কথা এখন আলোচনা করছি সেখানে আমরা ভি-আর এবং এ-আর এর মাধ্যমে আগামী ১০-১৫ বছরের ভিতরে প্রবেশ করবো এবং তখন আমরা আমাদের অবস্থান সম্পর্কে অবগত থাকবো ওই দুনিয়ায় আর তার পরিমাণ অনেক অনেক অনেক বেশি হবে। এমন অনেকেই মনে করছেন যে আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে প্রতি ৭/৮ জনের একজন এই মেটাভার্সে সময় কাটাবে তাদের বাস্তব দুনিয়ার চাইতে বেশি। ব্যাপারটা কিন্তু খুব বেশি জটিলও না। কারণ দেখেন আমরা এখনই কিন্তু ভার্চ্যুয়ালি অনেক সময় ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম হাবি জাবি তে পরে থাকি। যদি এই 2d ইন্টারনেটেই আমরা এতো বেশি সময় পার করে থাকি বর্তমানে তাহলে একবার চিন্তা করে দেখেন সেই 3d দুনিয়ায় কত মানুষ থাকার আগ্রহ দেখাবে। খুব বেশি যে পার্থক্য থাকবে আসল দুনিয়ার চাইতে তাও কিন্তু না। অল্প কিছু তফাৎ থাকবে মাত্র। যেমন ধরুণ আপনি হয়তো কোন গন্ধের অনুভূতি পাবেন না। এরকম অনুভূতি সম্পৃক্ত কিছু বিষয় হয়তো এতে খুব তাড়াতাড়ি সংযুক্ত করা সম্ভব হবে না। কিন্তু কখনোই যে এরকম অনুভূতি সম্পৃক্ত করা যাবে না তাও না। কারণ হিসেবে যদি আজকের কম্পিউটারের কথাই চিন্তা করি দেখা যাবে চার্লস ব্যাবেজ যখন এমন একটা যন্ত্রের কথা তার সমসাময়িক বিজ্ঞানীদের সাথে আলোচনা করেছিলেন তারাও কিন্তু তাকে পাগল বলে আখ্যায়িত করেছিলো তখন। কিন্তু ব্যাপারটা কি হলো? আমরা চার্লস ব্যাবেজের ধারণার চাইতেও শক্তিশালী যন্ত্র আমাদের বর্তমানে দেখতে পাচ্ছি। হয়তো কখনো এটাও সম্ভব হবে যে আমরা ঘ্রাণ নেয়ারও সুযোগ পাবো মেটাভার্সে। আগামী ১০-২০ বছরে কত সব জিনিস আমাদের জীবনে আসবে এবং আমাদের জীবনযাপনে কত পরিবর্তন আনবে তা হয়তো আমরা আন্দাজ ও করতে পারবো না এখন। গত ৩০ বছর আগে আমরা ওই রকম ভাবে মোবাইল ফোনের সাথে পরিচিত ছিলাম না। মোবাইল ফোন কিভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পরিবর্তন এনেছে সেটা আমরা খুব ভালো ভাবেই টের পাচ্ছি। তো আশা করা যাচ্ছে Metaverse ও আমাদের জন্য অপার সম্ভাবনা নিয়ে আসবে। যদিও সকল উদ্ভাবনের ভালো দিক খারাপ দিক থাকে। আমাদের চেষ্টা থাকবে ভালো দিক টা সাদরে গ্রহণ করে খারাপ দিকটা এড়িয়ে চলার। সেই সাথে সকল উদ্ভাবিত নতুন ইন্ডাস্ট্রির সাথে ছোট ছোট অনেক ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠে। ঠিক সেই রকম ভাবে মেটাভার্সের ক্ষেত্রেও হবে। সে সকল সম্ভাবনা নিয়ে পরে হয়তো কখনো আলোচনা করা যাবে।
ভালো থাকবেন সবাই। দোয়া করবেন আমার জন্য।
সবাইকে ধন্যবাদ।