কখনো যদি এমন হয়-
তুমি আর আমি একসাথে আমাদের সব স্বপ্ন পূরণ করবো
কখনো যদি এমন হয়-
আমি কিছু না বলতেই তুমি সব শুনে নেবে
আমাদের চলার পথও এক হয়ে যাবে তখন
আমার হাতের মুঠোয় তোমার উষ্ণ স্পর্শ থাকবে সেদিন
কেন আজ মনে হয় তুমিহিনা অসম্পূর্ণ এ পৃথিবী?
কেন আজ প্রথম প্রেমের শিহরণ তুমিবিনা অসম্পৃক্ত?
সেই তোমার পাশে কাটানো কোন এক বসন্ত
আর ভালবাসার নিঃশ্বাসে জড়িয়ে থাকা মায়াজালের হাতছানি-
আজও প্রতিরাতে আমাকে কাঁদায়
কখনো যদি এমন হয়-
সব শেষের শুরুতে শুধু তুমি আর আমি
আরেকবার হারাবো আমি তোমার বিশ্বাসে
আরেকবার তুমি ফিরবে সেদিন
আগের মতই পেছন থেকে চোখ জড়িয়ে বলবে-
বল তো আমি কে?
আরেকবার আমি তোমার মিষ্টি হাসির প্লাবনে ভেসে যাব
যেদিন মুছে যাবে এসব স্মৃতি,
হৃদয়টা হয়তো পাবে তৃপ্তি
জানি সেদিন ভাসবে চোখে
জীবনের শেষ দৃশ্যটি…
এই পর্যন্ত লিখে ডাইরিটা বন্ধ করে দেয় আবির। অনেকটাই তো লেখা হল, অথচ যার জন্য এতকিছু সে-ই আজ অন্য কারো হয়ে যাচ্ছে, অন্য কেউ আজ থেকে তাকে নিয়ে এমন কিছু লিখবে। ঠিক এমন কিছু নয়, এটা তো আবিরের ভেঙ্গে যাওয়া হৃদয়ের অতল থেকে উঠে আসা অশ্রাব্য চিৎকার। তাকে নিয়ে হয়তো লেখা হবে নতুন করে সাজান একটি ঘরের কাব্য, অথবা একই চাদরে জড়িয়ে থাকা কয়েকটি ভালোবাসারমুহূর্ত যেখানে সে অন্য কারো চোখের নীলে আপন স্বর্গখুঁজে নেবে…
রাত প্রায় ২ টা হতে চলল।এখনো ঘুম আসছে না আবিরের। বাস্তব কারণ- শত জোরাজোরিকরেও আম্মু আজ রাত ৮ টার ওষুধ গেলাতে পারেনি তাকে। আর মানসিক কারণ- আজকে আনিলার বিয়ে।
মাথারভেতরের অসহ্য যন্ত্রণাটাকে পাত্তা না দিয়ে বিছানায় উঠে বসে আবির। পিসি টেবিলের সামনে গিয়ে ল্যাপটপ খুলে বসে। আজকাল প্রায়ই ‘Bypolar Disorder’ নিয়ে ছোটোখাটো গবেষণা করে সে। এতে খুব যে লাভ হয় তা না। সবজায়গায় একই ধরণের কিছু শব্দ তার দিকে আঙ্গুল তাক করে বসে আছে-” আজীবন তোমাকে এই অসুখ নিয়েই বাঁচতে হবে। ওষুধ দিয়ে অনেকটা বড় সময় পর্যন্ত এর অস্তিত্ব ঢেকে রাখা যায়, কিন্তু ওষুধ ছাড়লেই যেই কে সেই”
প্রথম প্রথম আবিরের এই ‘আজীবন’ শব্দটা পড়লেই ভয় হত। আনিলা কি পারবে পুরো পৃথিবীর সাথে এক হাতে যুদ্ধ করে এই বাস্তবতা মেনে নিতে? এই অসুখের জন্য একটানা ৪ বছর পড়াশোনা নষ্ট হওয়া একটি ছেলের প্রতিষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকতে? বাবা হারানো এই মেয়েটা মায়ের সংসারে সারাজীবন কষ্টই পেয়ে গিয়েছে, সে কি চাইবে অসুস্থ একটা ছেলের ভার নিজের কাঁধে নিয়ে সেই কষ্টের বোঝা বাড়াতে?
এসব দুঃস্বপ্ন এক মুহূর্তেই নাই হয়ে গিয়েছিল যেদিন ধানমণ্ডির রিজবিজের দোকানে বসে কোন এক সন্ধায় আধো আলো আধো ছায়ার মাঝে আবিরের কাঁধে মাথা রেখে আনিলা সরল কণ্ঠে বলেছিল-
” তোমার সবকিছু জেনেই তো আমি তোমাকে ভালবেসেছি। আমার কাছে তো তুমি শুকনো পাতার মত ঝরে পড়া কোন প্রাণ নও। আমার কাছে তুমি ঢাকা ইউনিভার্সিটির ফিনান্সে ৫৭ তম হয়ে চান্স পাওয়া একটা তুখর ছেলে, যেই ছেলের লেখা গান শুনে নবীন বরনে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। ডেইলি স্টারে ছাপান যার প্রতিটি লেখা আমি কেটে রেখে দিতাম আররাতের বেলা পড়ার বই বাদ দিয়ে একই লেখা বারবার পড়তাম”
হ্যাঁ, আনিলা নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে করত। ওর কাছে তখন হয়তো বাস্তবতার চেয়ে আবেগের রাজ্যেরই হাতছানি ছিল বেশি। তাই জীবন আর জগতের নিষ্ঠুরতা বুঝে উঠতে পারেনি। অথবা হয়তো আনিলার মত মানুষের হাত ধরেইনতুন নিষ্ঠুরতার জন্ম হয়।
অস্বাভাবিক মানসিক চাপ এই অসুখের একটা বড় কারণ বলে মনে করা হয়। আবির ছিল বংশের বড় ছেলে, মা-বাবার প্রথম সন্তান। ছোটবেলা থেকেই বাবার ভয়ঙ্কর শাসন মাঝে বেড়ে ওঠা একজন মানুষ।মায়ের স্নেহের যতটুকু ভাগিদার সে ছিল তাও একসময় চাপা পড়ে বাবার ভয়ে ভীত মায়ের অকারন শৃঙ্খলের পিছে। সে ভাল ছাত্র ছিল তাই সবার হয়তো তাকে ঘিরে আকাশচুম্বী প্রত্যাশা ছিল। প্রত্যাশা টা কখন যে তাকে একজন কারাবন্দী মানুষ করে দিয়েছে সেটা হয়তো তার পরিবারের মানুষও বুঝতে উঠতে পারেনি। বহুদিন পর্যন্ত বাবার উপর একটা ক্ষোভ কাজ করত আবিরের। সময়ের সাথে সাথে সেইক্ষোভটাই এই অসুস্থতা আকারে বড় হয়ে দেখা দেয়।
আবির যখন বারবার ইউনিভার্সিটি তে রি-এডমিশন নিয়েও পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছিল না, মিলির মত হীন চরিত্রের একটি মেয়ের পাল্লায় পড়ে যখন পুরো বন্ধুমহলের চোখের বিষ হয়ে গিয়েছিল সে, পরিবারের কারোই যখন আর তাকে নিয়ে আশার বালাই ছিল না ঠিক সেই সময়টাতেআনিলা এসেছিল তার সাদাকালো জীবনটাতে নতুন করে রঙের ছোঁয়া দিতে।
-এই তুমি রাত ৮ টার ওষুধ খাইস?
-না
-কেন না?
-ইচ্ছা হয় নাই, তাই খাই নাই। তোমার কি তাতে?
-আমার কিছুই না। শুধু আমার বাবুটার সাথে সারারাত জেগে বসে থাকতে হবে। আমার জাগতে কোন অসুবিধা নাই, কিন্তু বাবুটাকে গান শুনাতে হবে। আমি জানি বাবুটা গান শুনাবে, কিন্তু বাবুর কাউয়া মার্কা গলা শুনে আমার শ্বশুর- শাশুড়ির ঘুম ভেঙ্গে যাবে- আমার সমস্যাটা এখানেই…
আর আনিলার এসব অকাট্য(???) যুক্তির সামনে আবিরকে সমর্পণ করতে হত।
মাঝে মাঝে আবিরের মনে হত আনিলা না থাকলে আজ হয়তো তার স্থান হত কোনমানসিক হাসপাতালের বিছানায়। তাছাড়া কোন বাসার মানুষই প্রতিদিন ভাঙচুরের শব্দ সহ্য করতে রাজি নয়। ছোটবোনটার পরীক্ষার সময়ও রাত জেগে মাকে পাহারা দিতে হয়েছে কখন না জানি ছেলে উঠে কি করে বসে- এমন ছেলেকে কেই বা ঘরে রাখতে চায়?
আর এখন এই ‘আজীবন’ শব্দটাপড়তেই আবিরের ঠোঁটে একটা বিদ্রুপের হাসি ফুটে ওঠে।আনিলা আজ হেরে গিয়েছে। আজ না, হেরেছে আরও ৩ মাস আগেই যখন আবির আনিলার ফুলার রোডের বাসার সামনে গিয়ে কাঠফাটা রোদের মধ্যে ২ ঘণ্টা দাঁড়িয়েছিল আর আনিলা বাসার নিচে এসে বলেছিল-
”চলে যাও এখান থেকে। আমারপক্ষে আর এই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না।আমি পারব না আমার মাকে এত বড় কষ্ট দিতে”
আবির কিছুই বলেনি সেদিন। আনিলার চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভেবেছিল-
”আমি তো বলিনি তোমাকে আমার হৃদয়ে এসে বাসা বাধতে, চাইনি তোমাকে আমার করে পেতে। আমার মোহে অন্ধ তুমি যেদিন আমার মাঝে ধরা দিয়েছিলে সেদিনও কি এই সমাপ্তি ভেবে রেখেছিলে?”
ল্যাপটপটা বন্ধ করে ছোট বোনের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায় আবির। ঘরের মধ্যে এই একটামাত্র মানুষ যে কিনা সত্যিকারঅর্থে তাকে বোঝে। বয়স মাত্র ১৭, অথচ কথা বলার সময়মাথা নাড়ে এমনভাবে যেন সবজান্তা শমশের। আবিরের যত গান, কবিতা আর লেখা আছে সবকিছুর প্রথম পাঠকের দাবিদার তিনি।
বোনটার বিছানার পাশে গিয়ে অবাক হয়ে লক্ষ্য করে চোখে জল নিয়ে একটা ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে সে। সেই ছবিতে বাবা- মায়ের পাশে ছোট্ট একটা আবির, সেই আবিরের কোলে অনভ্যস্ত হাতে ধরা ৯ মাস বয়সী অথৈ।
কান্নাটা গলায় এসেআটকে যায় আবিরের। নিজের কাছেই নিজেকে বড্ড অচেনা মনে হতে থাকে তখন। ঘর থেকে বের হয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় সে। চোখের সামনে তখন শেষ রাতের তারার ছড়াছড়ি আর মনের মধ্যে নিজেকে বদলে দেয়ার আরেকটা আকুতির হাতছানি।
নিয়ম কানুন যেনে পোষ্ট করলে আরো ভালো হতো।আর চেষ্টা করবেন স্প্যামিং ও আবিউজ থেকে দূরে থাকতে।স্প্যামিং ও আবিউজ এই প্লাটফর্ম এর জন্য ক্ষতিকর।আশা করছি বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
nevlu123
ভাইয়া আপনার সঙ্গে কি কন্টাক্ট করা যাবে আমি আসলে এখানে নতুন তেমন কিছু বুঝতেছিনা
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
টাইপ: চৌর্যবৃত্তি।
এ ধরনের পোস্ট আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি Allow করে না। নতুন ইউজার হওয়ার কারণে শুধুমাত্র আপনার পোস্ট Mute করা হচ্ছে। পরবর্তীতে আবার একই ধরনের কাজ করলে আপনার একাউন্ট কমিউনিটি থেকে ব্যান করা হবে।
কমিউনিটির নিয়মাবলী ভালোভাবে পড়ে নিন
https://steemit.com/hive-129948/@rme/last-updated-rules-of-amar-bangla-blog-community-16-aug-22
যে কোন বিষয়ে জানার প্রয়োজন হলে আমাদের সাথে Discord এ যোগাযোগ করুন।
Discord server link: https://discord.gg/ettSreN493
Source: https://m.facebook.com/716643888407531/photos/a.716648805073706/959318190806765/?type=3
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit