একাকি বিকেল

in hive-129948 •  10 months ago 

image.png

বিকেল ৫ টা।ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয় হিমেল।
হেডফোন আর মোবাইলটা নিয়ে ছাদের দিকে
রওনা হয়।চোখের ঘুম ঘুম ভাবটা এখনো কাটে
নি।
বড় বড় নিশ্বাস নিতে নিতে ছাদের দিকে
এগোচ্ছে।বাড়িটা ২ তলা তাই ছাদে যেতে এত
সময় লাগে নি।ছাদে উঠতেই গেটটা ধাক্কা
দিয়ে খানিকটা সড়িয়ে দেয়।গেটটা সড়াতেই
পশ্চিম দিকের মিষ্টি আলোটা চোখে এসে
লাগে।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখটা ঢেকে
নেয়।তারপর আবার হাতটা সড়িয়ে মিষ্টি
রোদের আলোর সজ্ঞে নিজেকে মানিয়ে
নেয়।
.
আস্তে আস্তে ছাদের বাম দিকে যেতে শুরু
করে
হিমেল।বামের দিকে একটা বসার জায়গা
আছে
সেখানে গিয়ে বসে হিমেল।ঘুম ঘুম চোখে
পকেট
থেকে হেডফোনটা নিয়ে মোবাইলে প্লাগ ইন
করে।তারপর মিউজিক প্লেয়ারে গিয়ে
তাহসানের “তোমায় ঘিরে” গানটা ছেড়ে দু-
কানেই হেডফোন গুজে দেয়।ফুল সাউন্ডে
গানটার
সাথে তাল মিলাতে থাকে আর দু-হাতে ভড়
করে
নিচে পা টা নাড়াতে থাকে।
.
ইদানীং হিমেলের চুল আর দাড়িগুলা একটু বড়
হয়ে গেছে।এমন না যে কাটতে সময় পায় না।
সময়
পায় কিন্তু নিজের প্রতি একটা অবহেলা
কিছুদিন ধরে কাজ করছে ওর ভিতর।আর
এমনিতেও
চুল আর দাড়ি বড় রাখতে ভাল লাগে
হিমেলের।
চুল আর দাড়ি বড় রাখার পিছনে একটা দুষ্ট
গল্প
আছে:
.
ক্যাম্পাসে একদিন ভাবনার সাথে বসে
থাকার
সময় হিমেল অন্য একটা মেয়ের দিকে চায় আর
ভাবনা তা লক্ষ্য করে খুব রাগ করে।ভাবনার
রাগ
ভাজ্ঞানোর অনেক চেষ্টা করে হিমেল কিন্তু
কিছুতেই রাগ ভাজ্ঞানো যাচ্ছিল না।
অবশেষে
যখন হিমেল ভাবনাকে একটু হাসিয়ে দেয় তখন
ভাবনা হিমেলের বড় চুলগুলা ধরে একটা মোচড়
দেয়।আর দাড়িগুলা নাকি ভাবনার খুব পছন্দ
হতো
তাইদাড়িগুলাও রেখে দেয়।
.
এখন আর ভাবনা এই দুনিয়াতে নেই কিন্তু ওর
ভাল
লাগার সৃতি হিসেবে এই দাড়ি আর চুলগুলা
রেখে
দিয়েছে।চুল মাঝে মাঝে কাটলেও দাড়িতে
কোন প্রকার কাটাছেড়া করে না হিমেল।
৫ বছর আগে ব্রেষ্ট ক্যান্সারে মারা যায়
ভাবনা।
তার আগে প্রতিদিন বিকেলেই দুজন ছাদে
উঠে
হাত ধরে গান গাইত আর বিকেলটাকে উপভোগ
করতে।যা এখন হিমেল একাই করে।
.
বলতে বলতে অনেক সময় পাড় হয়ে গেল
গানগুলাও
একের পর এক চেঞ্জ হতে লাগল।এতক্ষণ
প্রতিটা
গানের সাথেই তাল মিলাচ্ছিল হিমেল।এখন
“আমি শুনেছি সেদিন তুমি” গানটা বাজছে।
বসার উচু স্থানটা ছেড়ে পশ্চিমের
রেলিংটার
সামনে গিয়ে দাড়ায় হিমেল।সামনের ডুবন্ত
সূর্যের দিকে চেয়ে গানটার প্রথম ২ লাইন
বলছিলো হিমেলঃ

আমি শুনেছি সেদিন তুমি সাগরেরও ঢেউ
চেপে
নীল জল সমুদ্র ছুয়ে এসেছ।
.
লাইনটা বলার পরই কেনো জানি হেসে দেয়
হিমেল।মুচকি মুচকি হাসে।তারপর গানের ধ্যান
ভেজ্ঞে মনের কথায় মগ্ন হয়ে পড়ে।নিজে
নিজেই বলতে থাকেঃ
কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি।সত্যি খুব মনে
পড়ছে তোমার কথা।তুমি কি শুনতে পাচ্ছো?
.
খানিকটা মনস্থির করে আবার মুচকি হেসে
ভাবতে লাগেঃ
তুমি তো চলে গেছ।কিন্তু তোমার দেয়া একটা
জিনিস আমাকে খুব ভালবাসে আর আমিও
তোমার মতোই ওটাকে ভালবাসি।ভালবাসার
যে অভ্যাসটা করে দিয়ে গেলে তা কখনোই
ভোলার মতো নয়।
.
সূর্য ডুবতে আর খানিক সময় বাকি।সন্ধ্যা
সন্ধ্যা
ভাব।পিছ থেকে ছোট পায়ের দৌড়ানোর
একটা
আওয়াজ পাওয়া গেল কিন্তু হিমেল তা শোনার
মতো নয়।কারন কানের হেডফোনের আওয়াজে
বাইরের কিছুই শোনা যায় না।সূর্য্যকে ডুবতে
দেখে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ছাড়ে হিমেল।
পশ্চিমেই তাকানো আর রেলিংটার উপরে
হাত
দুটো দেয়া।
.
কেও একজন হিমেলের ডান পা দু হাত দিয়ে
কষে
ধরে নিয়েছে।এতক্ষনে ধ্যান ভাজ্ঞল
হিমেলের।
নিচে তাকাতেই পায়ের পিছ থেকে চাদের
মতো
একটা হাসি ফুটে উঠল।তা দেখে হিমেলও
একটা
মুচকি হাসি দিয়ে উঠল।কান থেকে
হেডফোনটা
নামিয়ে কষে ধরা হাতটা ছাড়িয়ে নিল
হিমেল।
হাতটা ছাড়াতেই মুখটা ঘুড়িয়ে চলে যেতে
লাগল।
পিছে ঘুরতেই হিমেল ঝাপটি মেরে ধরে
জিজ্ঞাস করতে লাগলঃ
কি হয়েছে মামুনি।পাপার সাথে কি রাগ
করেছ?
হিমেল যার সাথে কথা বলছে সে তার ৫
বছরের
মেয়ে তানহা।
তানহা মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়।হিমেল
হাসতে হাসতে আবার জিজ্ঞাস করেঃ
বলনা মামুনি কি হয়েছে?
তানহা হিমেলের কাছ থেকে হাতটা ছাড়িয়ে
আমতা আমতা করে বলেঃ
তোমার সাথে কথা বলবনা।
কেনো মামুনি?
তানহা পাকামো ভাব ধরে বলেঃ
তুমি পচা।ঘুম থেকে উঠে একাই ছাদে চলে
এসেছ।
হিমেল দাত বের করে হাসতে হাসতে বলেঃ
কেনো মামুনি?তুমি কি ভয় পেয়েছ?
তানহা একটু রাগি ভাব করে বলেঃ
না।আমি ব্রেভ গার্ল।আমি ভয় পাই না।
ও তুমি তো পাপার ব্রেভ গার্ল আমি ভুলেই
গিয়েছিলাম।
ভাবনা ভ্রু কুচকে বলেঃ
আবার আজ আমার বার্থডে তুমি আমাকে
চকলেট
ও দাওনি।তোমার সাথে কথা নেই।
হিমেল জ্বিহে কামড় দিয়ে কানে ধরে বলেঃ
সরি মামুনি আমি ভুলেই গিয়েছি।মাফ করে
দাও।
তানহা রাগ ভেজ্ঞে বলেঃ
ঠিক আছে।কিন্তু আমার চকলেট দাও।
হিমেল দাড়িয়ে গিয়ে তানহাকে বলেঃ
পকেটে একটা যাদুর রাজ্য আছে ওখানে হাত
দাও
পেয়ে যাবে।
কথাটা শুনে ততক্ষনাক পকেটে হাত দেয়
তানহা।
আর পকেটে থাকা চকলেট গুলি নিয়ে খুশিতে
লাফাতে থাকে।
.
আর হিমেল বলে উঠেঃ
হ্যাপি বার্থডে মামুনি।এখন খুশি তো?
তানহা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।
তারপর হিমেল তানহাকে কোলে নিয়ে
পশ্চিমের আকাশে চেয়ে মনে মনে বলেঃ
.
দেখেছ।তোমার মেয়ে কত বড় হয়ে গেছে।আজ

বছর হলো।ও সম্পুর্ন তোমার মতো।রাগ করে
থাকতেই পারে না।
.
সূর্য সম্পুর্ন ডুবে গেছে।সন্ধ্যা হয়ে গেছে।তাই
হিমেল তানহার সাথে কথা বলতে বলতে নিচে
চলে যায়।আর শেষ হয়ে আরেকটা নিসজ্ঞ
বিকেল।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

নিয়ম কানুন যেনে পোষ্ট করলে আরো ভালো হতো।আর চেষ্টা করবেন স্প্যামিং ও আবিউজ থেকে দূরে থাকতে।স্প্যামিং ও আবিউজ এই প্লাটফর্ম এর জন্য ক্ষতিকর।

টাইপ: চৌর্যবৃত্তি।

এ ধরনের পোস্ট আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি Allow করে না। নতুন ইউজার হওয়ার কারণে শুধুমাত্র আপনার পোস্ট Mute করা হচ্ছে। পরবর্তীতে আবার একই ধরনের কাজ করলে আপনার একাউন্ট কমিউনিটি থেকে ব্যান করা হবে।

কমিউনিটির নিয়মাবলী ভালোভাবে পড়ে নিন
https://steemit.com/hive-129948/@rme/last-updated-rules-of-amar-bangla-blog-community-16-aug-22

যে কোন বিষয়ে জানার প্রয়োজন হলে আমাদের সাথে Discord এ যোগাযোগ করুন।

Discord server link: https://discord.gg/ettSreN493

Source:https://www.facebook.com/taslimamediabd/photos/a.1576212992446858/2005213339546819/?type=3