গল্প: টেপ ফিতা - প্রাইমারি জীবনের স্মৃতি

in hive-129948 •  5 days ago 


আসসালামু আলাইকুম



হাই বন্ধুরা!

আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।

IMG_20241208_114343_960.jpg

photography device:
Infinix Hot 11s

What3words Location


গল্প: প্রাইমারি জীবনের স্মৃতি


তখন প্রাইমারির কোন এক শ্রেণীতে পড়ি। আমাদের উপর ক্লাসে পড়ে নাজিউল্লাহ নামের একটা ভাই। তার আব্বা তাকে একটি টেপ ফিতা কিনে দিয়েছে। যেটা দিয়ে খুব সহজে গাছের উচ্চতা দৈর্ঘ্য প্রস্থ নির্ণয় করা যায়। এমনকি তার আব্বা তাকে কিভাবে ছাগল গরুর ওজন নির্ণয় করা যায় সেটা টেপ ফিতা দিয়ে শিখিয়ে দিয়েছে। নাজিউল্লাহ টেপ ফিতা হাতে পেয়ে খুবই আনন্দিত। ফিতার জিরো পয়েন্টে একটি টিনের অংশ রয়েছে, যেটা টেনে ধরে যে কোন জিনিসের নির্ণয় করতে হয়। আবার টিনের অংশটা ছেড়ে দিলে সেটা দ্রুত বক্সের মধ্যে জড়িয়ে যায়। সবচেয়ে ভালোলাগার বিষয় ছিল এখানে। জীবনে প্রথম এমন একটা জিনিস দেখলাম। ছেড়ে দেওয়া মাত্র ফিতাটা বক্সের মধ্যে জড়িয়ে যায়। সে টেপ ফিতার বক্স প্যান্টের পকেটে করে স্কুলে নিয়ে আসে। এরপর ছোট-বড় সকল ছেলেদের মাঝে সেটা নিয়ে ডাট নিতে থাকে ও আনন্দ করতে থাকে। তার হাতে এমন একটা জিনিস রয়েছে দেখে অনেকে অবাক হয়। প্রাইমারি লাইফ ২০০২-৪ সালের সময় হতে পারে। বুঝতে পারছেন সেই সময় তো আমাদের মত গ্রামের মানুষেরা, এই সমস্ত জিনিস দেখলে বেশ মুগ্ধ হতো।


ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে যখন শিক্ষক রুম থেকে বের হয়ে যেত, সবার মনে একটাই ঝোক ছিল কখন নাজিউল্লাহ ক্লাস থেকে বাইরে আসবে এবং তার টেপ ফিতা নিয়ে এটা সেটা করে দেখাবে। ঠিক এমনই একটা দিন। আমাদের ক্লাস থেকে স্যার বের হয়ে গেছেন। নাজিউল্লাহ ভাইদের ক্লাস থেকেও স্যার বের হয়ে গেছেন অফিসের দিকে। এই সুযোগে সে আমাদের ডাকলো। সে বলল ফিতাটা দিয়ে ছাগল মেপে দেখাবে। আমি আবার ভাবছিলাম ছাগল মাপবে কিভাবে। ছাগল মাপতে হলে তো দাড়িপল্লায় তোলা লাগবে। সে এমন ভাবে বলছিল, ছাগলের গায়ে কত কেজি মাংস আছে বলে দিতে পারবে। আমরা বেশ কয়েকজন বন্ধু অবাক হলাম। ছোট মানুষ ছোট মন, কোন কিছু দেখলে আনন্দ পায় ও অবাক হয় এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের মনের মধ্যে ভয় ছিল এখন আমাদের ক্লাসের জালাল স্যার ক্লাস নিতে আসবে। সে আবার সব সময় বেশ বড় কুঞ্চির নড়ি হাতের রাখতেন। পড়া না পারলে কখনো মারবেন না। কিন্তু বেয়াদবি করলে ঘাড় মাথা কাত করে ধরে পিছনে সজরে বাড়ি মারতেন বেশ কয়েকটা। বুঝতেই পারছেন গ্রামের প্রাইমারিতে পড়া ছেলেমেয়েরা কতটা চিল্লাপাল্লা করে।

IMG_20250126_131214_702.jpg


অন্য স্যারদের বেশি ভয় না পেলেও সবাই জালাল স্যারকে ভয় পেত। তাই আমি ভাবছিলাম জালাল স্যার যদি ক্লাসে চলে আসে তাহলে তো সমস্যা। এদিকে নাজিউল্লাহ ভাই কিভাবে ছাগল মেপে দেখাবে এটাও ইন্টারেস্ট এর ব্যাপার। যাই হোক বন্ধুদের সাথে দৌড়ে চলে গেলাম রাস্তার উপর। সেখানে বেশ মোটাসোটা অনেকগুলো ছাগল দাঁড়িয়েছিল। তারমধ্যে দেখতে অতি মানান উঁচা লম্বা এমন একটি ছাগলকে সবাই চেপে ধরল। এবার নাজিউল্লাহ তার টেপ ফিতা দিয়ে ছাগল মাপা শুরু করল। ফিতায় দূরত্ব নির্ধারণ রয়েছে যেমন ইঞ্চি ফুট ইত্যাদি। সে তার বাবার কাছ থেকে শিখে এসেছে। তাই ডাটের সাথে বলছে আর ছাগলের নিচ থেকে উপর পিছন থেকে সামনে কতটুকু লম্বা ইত্যাদি বলতে আছে। কোন কিছুই তখন আমার মাথায় ঢুকছেনা। আমার মনে শুধু এটাই চিন্তা, সে সামান্য এই জিনিসের মাধ্যমে কিভাবে বলবে ছাগলের গায়ে কত কেজি মাংস আছে। রাস্তার পশ্চিম সাইডে রয়েছে মিলঘর। যেখানে ধান ভাঙ্গিয়ে চাউল করা হয়। সেই ঘরে রয়েছে বড় এক দাঁড়িপাল্লা। যেটার উপরে মন মন ধান তুলে মাপা হয়। সবাই বলাবলি করছিল ফিতা দিয়ে মেপে কতটুক হয়। এরপর মিলঘরে দাঁড়িপাল্লায় মেপে দেখবে ছাগলটা। নাজিউল্লার মাপ ঠিক আছে কিনা। ক্লাসের বড় ভাইয়েরা এগুলো বলাবলি করছিল আর নাজিউল্লাহ মাফ ছিল। সে ছাগলের বডি টা ফিতা দিয়ে গোল করে মাপলো। এরপর হঠাৎ বলে বসলো এই ছাগলের মাংস আছে ১৫ কেজি। এরপর সবাই ছাগলটিকে মিলঘরে নিয়ে যাবে। কিন্তু ছাগলটা এতই বড় ছিল যে তাকে ঠেলে নিয়ে যাওয়া কঠিন ছিল।


ইতোমধ্যে হঠাৎ করে জালাল স্যার ক্লাসে এসে গেছেন। ক্লাসের দরজার পাশ থেকে দাঁড়িয়ে আমাদের ডাক দিলেন। আমরা তো সব ভয়ে অস্থির। সবাই ছাগল ছেড়ে দিল। নাজিউল্লাহ তার ফিতা পকেটে পুরে নিল। সবাই ক্লাসের দিকে দৌড়াতে থাকলাম। ততক্ষণে স্যার তার চেয়ার টেবিলে বসে পড়েছে। আমরা রুমে প্রবেশ করার আগে অনুমতি নিলাম। স্যার বলল সিটে যাওয়ার আগে আমার কাছে আয় সবাই। আমরা সবাই স্যারের কাছে গেলাম। স্যার প্রশ্ন করল আর বলল, বলেছি না স্যার বের হয়ে গেলে সবাই পড়তে বসবি। হাত পাত সবাই। মেয়েরা হাসাহাসি করে বলল স্যার ওরা ছাগল মেপে বেড়াচ্ছে। এরপর সবার ডান হাতের তালুর উপর কঞ্চির নড়ি দিয়ে একটি একটি করে বাড়ি মারলো। মুহূর্তের মধ্যে আমাদের হাতের তালু লাল হয়ে গেল। এরপর আমরা সিটে বসলাম। স্যার বলল স্কুলে লেখাপড়া পাগলামি খাটানো যাবে না। হাতের উপর বাড়ি মারলে কতটা যে লাগে, যারা এই মার খেয়েছে তারা জানে। এরপর দীর্ঘদিন মনের মধ্যে প্রশ্ন থেকে গেল, সে কিভাবে বলেছিল ছাগলের ওজন ১৫ কেজি। এরপর কোন এক দিন আমার অনুপস্থিতে তারা ছাগলটিকে মিল ঘরের দাড়িপাল্লায় উঠেয়েছিল অনেক কষ্ট করে। ছাগলকে কি দাঁড়িপাল্লায় উঠিয়ে মাপা যায়। ছাগল কি দাঁড়িপাল্লায় উঠে দাঁড়িয়ে থাকবে। তাদের এই পাগলামিটা অনেক মানুষকে হাসিয়েছিল। পরবর্তীতে যতটা শুনেছিলাম ছাগলের ওজন ছিল ৩০ কেজির উপরে। এখন মাংস কতটুকু হবে কে জানে। কিন্তু মাঝেমধ্যে নাজিউল্লাহ তার সেই ফিতা পকেটে করে স্কুলে আনতো। কখনো মানুষ মেপে বলতো কত সাইজ, আর কতটুকু লম্বা হলে আর্মির চাকরি পাওয়া যায়। কার গায়ের জামা প্যান্ট কত সাইজ। বেঞ্চিতে বসা নিয়ে অনেকের মধ্যে মারামারি হত। এক বেঞ্চিতে কতজন বসবে। এক বেঞ্চের কতটুকু সীমানার মধ্যে কে থাকবে। এইগুলা সে মেপে দিত। দেখা যাচ্ছে ক্লাস থেকে স্যার বের হয়ে গেলে সবাই এই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তো।


গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ফটোগ্রাফিস্কুল ও ফিতা
বিষয়অতীত ঘটনা
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s
Photo editingPicsArt app
লোকেশনজুগীরগোফা
ব্লগারSumon
ঠিকানাগাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ


পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png


file-g5jU1EzEHAcdc41yLeGvhd2C.webp


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

26-01-25

Screenshot_20250126-133227.jpg

Screenshot_20250126-133017.jpg

প্রাইমারি স্কুলের স্মৃতিগুলো মনে হয় আমরা কেউ চাইলেও মুছে ফেলতে পারব না। প্রাইমারি স্কুলের স্মৃতি গুলো এখনো মনে পড়লে নিজের অজান্তে হেসে ফেলি। নতুন নতুন বন্ধু বানানো। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে কত রকমের খেলা। পড়া দিতে না পারা। কত দুষ্টুমি হইহুল্লোর কিছুই যেন ভুলিনি। আজ আবারও আপনার পোস্টটি পড়ে প্রাইমারি স্কুলের দিনগুলোতে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে।

এটা কিন্তু ঠিক বলেছেন আপনি

প্রাইমারি জীবনের স্মৃতিগুলো মনে পড়লে মনে হয়, যেন তখনকার সময়গুলো ছিল একেবারে অপরূপ। স্কুলে প্রথম বন্ধু বানানো, টিফিনের সময় হৈচৈ, শিক্ষক-শিক্ষিকার স্নেহ, আর সরল আনন্দের দিনগুলো আজও হৃদয়ে বেঁচে আছে। সেই ছোটবেলার সহজ সুখের মুহূর্তগুলো আজও মনে পড়ে, যখন পৃথিবীটা খুবই সরল আর সুন্দর ছিল। আপনার গল্প টি পড়ে বেশ ভালো লাগলো ধন্যবাদ।

হ্যাঁ আপু এটা জীবনের সোনালী অধ্যায়।