আজ - রবিবার
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাই-বোন বন্ধুদের কে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। আজ আমি পহেলা মে এর সম্পর্কে ছোট থেকে যা জানি, তো আপনাদের মাঝে শেয়ার করব। |
---|
Photography device: Infinix hot 11s
Location
প্রথমেই আপনাদেরকে আমি জানাতে চাই যে আমার পরিবারটা শিক্ষিত পরিবার। আমার পিতা মাতা উভয়েই শিক্ষিত। ছোট থেকেই লক্ষ্য করেছি, কোন বিশেষ দিবস উপলক্ষে আমার পিতামাতা বেশি সজাগ থাকবেন এবং আমাদেরকে জানানোর চেষ্টা করতেন,যেন ছোট থেকে আমরা জানতে পারি শিখতে পারি। তবে আব্বা আম্মার সুন্দর জ্ঞানটাকে আমি সর্বদা সম্মান করি। প্রথমত তাদের নিকট থেকে আমি এই মে দিবস সম্পর্কে জেনেছিলাম। পরবর্তীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বই, শিক্ষকদের মুখে এবং অনলাইন ইত্যাদি মাধ্যম থেকে আরো কিছু বিস্তারিত জানতে পেরেছি। আর আজকে যেহেতু পহেলা মে, তাই ইচ্ছা করলাম যে আপনাদের মাঝে এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানোর। যেন যারা না জানেন, তারা আমার থেকে জানতে পারে। আর কথা না বাড়িয়ে চলুন বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক। |
---|
Photography device: Infinix hot 11s
Location
'আমার বাংলা ব্লগ' কোয়ালিটি সম্পন্ন পোস্ট |
---|
সঠিক ধারণা পাওয়ার জন্য এক নজরে জেনে নেওয়া যাক এই দিনের বিশেষ কিছু প্রশ্ন ও উত্তর। |
---|
১ নং প্রশ্নঃ পহেলা মে কি দিবস? |
---|
২ নং প্রশ্নঃ এই দিবসের বিশেষ ঘটনা কী? |
---|
৩ নং প্রশ্নঃ কোথায় ঘটেছিল? |
---|
৪ নং প্রশ্নঃ কারা আন্দোলন করেছিল? |
---|
৫ নং প্রশ্নঃ এই আন্দোলনটি কখন ও কোথায় হয়েছিল? |
---|
৬ নং প্রশ্নঃ কাদের বিপক্ষে আন্দোলন? |
---|
৭ নং প্রশ্নঃ কত তারিখে এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়? |
---|
Photography device: Infinix hot 11s
Location
যখন ইউরোপ ও আমেরিকাতে শিল্প বিপ্লব সূচনা হয়েছিল, তখন স্বাভাবিকভাবে কল-কারখানা বাড়তে থাকে। আর ধনতান্ত্রিক দেশে মুনাফাকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হতো,তাই শ্রমিকদেরকে বেশি খাটানো হত। মালিকপক্ষ তাদের কলকারখানার লেবার দের কে পশুর মত খাটিয়ে নিত। যেখানে শ্রমিকরা দিনের ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করতো কিন্তু সঠিক বেতন দেওয়া হতোনা। তার ফলে শ্রমিকরা সংঘবদ্ধভাবে ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, অনেকে নিজের রক্ত ঝরিয়ে আন্দোলন সফল করেছিল। মূলত সেটাই আমরা জানি শিল্প বিপ্লবের জন্য শ্রমিক শ্রেণীর আন্দোলন এবং তার বাস্তব রুপ মে ডে বা পহেলা মে দিবস।
Photography device: Infinix hot 11s
Location
শ্রমিক শ্রেণীর লোকদের একটা নির্দিষ্ট সময় করে দেয়া হয়নি যে কতক্ষণ পর্যন্ত তারা কাজ করবে এবং তাদের বেতন কত হবে। দেখা যাচ্ছে যে বেতন এর তুলনায় তাদের কে অধিক পরিমাণ খাটিয়ে নেওয়া হচ্ছে দিনরাত। তাই এই অন্যায় জুলুম থেকে বাচার দাবিতে সকল শ্রেণীর কৃষক মজুর একত্রিত হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টার অমানুষিক পরিশ্রমের ফলে তারা হয়ে উঠতে থাকে দিনকে দিন দুর্বল ও রুগ্ন। তারা যেন পৃথিবীতে এসেছে শুধু ধনিক শ্রেণীর আরো বেশি ধনী করার জন্য। তাদের নিজের সুখ দুঃখ পরিবার সংসার বলে কোন কিছুই জেনো নেই। নির্দিষ্ট কোনো কর্মকর্তা ছিলোনা।
Photography device: Infinix hot 11s
Location
আঠারো শতকের মাঝামাঝি শ্রমিকরা সচেতন হতে থাকে তারা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু করতে থাকে। কৃষক শ্রমিক নেতারা ফিক্স করেন যে তারা দিনে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করবেনা। আর এই কর্মের জন্য ন্যায্য মজুরি তাদের দেওয়া লাগবে। এই কথা কে সামনে রেখে তারা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যান। আর এই আন্দোলন চালাতে গিয়ে অনেক শ্রমিক ধনিক শ্রেণীর হাতে প্রাণ দিয়েছেন। এই আট ঘণ্টা কাজ করার পেছনে একটি আন্দোলন সৃষ্টি হয় ইউরোপ ও আমেরিকাতে, যার নাম দেওয়া হয়েছিল 'এইট আওয়ারস লেবার'।
১৮৬৪ সাল থেকে এই দাবিতে সবাই লাগাতার আন্দোলন শুরু করে। আর এই আন্দোলন সকল শ্রেণীর কৃষক শ্রমিকেরা সমর্থন দিয়ে পথে বের হয়ে আসে আন্দোলনের উদ্দেশ্যে এবং তাদের আন্দোলন সফল করার জন্য। ১৮৬৮ সালে ইউএসএর এক আইন সভায় তা পাস হয়। একজন শ্রমিক দিনে আট ঘন্টা কাজ করবে। কিন্তু কল-কারখানাগুলো দেশে আইন মেনে নেয় না। মালিকপক্ষ তাদের লেবারকে দিয়ে আগের মত খাটাতে থাকলো।
Photography device: Infinix hot 11s
Location
ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কৃষক শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ একত্রিত হয়ে ১৮৮৫ সালে আবারও ধর্মঘট শুরু হলো। ১৮৮৬ সালের পহেলা মে থেকে আমেরিকার শ্রমিক নেতা কর্তৃক নতুন আইন পাস হলো যে শ্রমিকরা দিনে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করবেনা। আর এটাই দৃঢ়-সংকল্পবদ্ধ হলো। ১৮৮৬ সালের পহেলা মে আমেরিকার সকল শ্রমিক একসাথে দৃঢ়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে, তারা আট ঘণ্টার বেশি আর কোনোদিন কাজ করবেনা। আমেরিকার শিকাগো শহরে পহেলা মে, ১৮৮৬ সালে পাঁচ লক্ষ শ্রমিক ধর্মঘটে যোগ দিলে মালিকপক্ষ খুব ভয় পেল। শ্রমিকরা তাদের নিজ গতিতে আন্দোলন চালাতে থাকে। আর ১৮৮৬, ৩মে সেই আন্দোলনরত সাধারণ শ্রমিকের বুকে পুলিশ গুলি বর্ষণ করে, সেখানেই ৬ জন সাধারণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। আর এই হত্যাকাণ্ডের ফলে আন্দোলন আরো তীব্র হতে থাকলো। ৪মে, ১৮৮৬ আমেরিকার শিকাগো শহরে সন্ধ্যা সাতটার সময় এক শ্রমিক নেতার 'স্যামুয়েল ফিল্ডেন' এর উদ্যোগে বিশাল জনসভা হয়েছিল। সেই জনসভায় পুলিশ অংশগ্রহণ করেছিল। পাশে কোথা থেকে একটি বোমা এসে সম্মুখে বাস্ট হয় এবং ৫ পুলিশ ও ১১ শ্রমিক নিহত হয়। এতো পুলিশ শ্রমিকের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি হয়। পুলিশের গুলিতে আরো ১১ জন শ্রমিক নিহত হয়। পরবর্তীতে জানা গিয়েছিল যে পুলিশ শ্রমিকের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করতেই মালিকপক্ষ এই কাজ করেছে। পুনরায় আরো ১১ জন শ্রমিক নিহত পুলিশের হাতে জেনে সারা শহর থমথমে অবস্থা বিরাজমান।
Photography device: Infinix hot 11s
Location
শিকাগো শহরে আট জন শ্রমিক নেতাকে আটক করা হয়। তার ভেতরে একজনকে ১৫ বছরের জেল এবং ৭ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তবে সাত জনের মধ্যে একজন নিজেই আত্মহত্যা করে মারা গিয়েছিল। আর মৃত্যুদণ্ডের আগে একজন বিশেষ বাণী করে গিয়েছিলেন যে, আমাদের এই নিস্তব্ধতা একদিন সারা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করবে, শ্রমিক মজুরী জয় হবে'সেই কথার জয় হয়েছে। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সের প্যারিস শহরের এক সংবাদ সম্মেলনে পহেলা মে কে 'আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস' হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের ফলে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য দাবি আদায় করতে সক্ষম হয়। আর এই থেকে সারা বিশ্বে আজ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে প্রতি বছর এই দিনে।
Photography device: Infinix hot 11s
Location
আমাদের দেশেও যথাযথ সম্মান ও মর্যাদার সাথে এই দিনকে পালন করা হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই দিবসকে সম্মানের সাথে পালন করে এবং শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে সে সমস্ত বীর যোদ্ধাদের কে, যারা তাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এবং অন্যদের অধিকার আদায় করে দেওয়ার লক্ষ্যে আন্দোলন করেছিল, বুকের রক্ত ঝরিয়েছিল, পুলিশের হাতে মার খেয়েছিল। আরো দেশের জ্ঞানীগুণী শিক্ষিত মানুষ জনসাধারণকে সচেতন করে থাকে এই বিষয়ে। আর এই বিষয় নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান করা হয়। আমাদের দেশের সমস্ত শ্রমিক যেন তাদের কর্মের মূল্যায়ন পায়, সেই প্রচেষ্টা সরকারের প্রতিনিয়ত। আর এর জন্য রয়েছে যথাযথ নিয়ম ও আইন।
💌আমার পরিচয়💌
আমি মোঃ নাজিদুল ইসলাম (সুমন)। বাংলা মাস্টার্স ফার্স্ট ক্লাস মেহেরপুর গভমেন্ট কলেজ। আমার বাসা গাংনী-মেহেরপুর। মড়কা বাজার, গাংনী,মেহেরপুর এ গ্রীনরেইন ল্যাবরেটরি স্কুল নামক প্রাইভেট প্রি-ক্যাডেট স্কুলের সহকারি শিক্ষক । ইলেকট্রনিক্সের যন্ত্রপাতি মেরামত ও সৌর প্যানেল নিয়ে রিসার্চ করতে পছন্দ করি। প্রাকৃতিক দৃশ্য ফটোগ্রাফি করা আমার সবচেয়ে বড় ভালোলাগা। দীর্ঘদিনের আমি পাঙ্গাস মাছ চাষী এবং বিরহের কবিতা লেখতে খুবই ভালোবাসি। |
---|
পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
Photography device: Infinix hot 11s
Location
💖💞💞💖
আমার পরিচিতি | কিছু বিশেষ তথ্য |
---|---|
আমার নাম | @sumon09🇧🇩🇧🇩 |
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | মোবাইল |
ব্লগিং মোবাইল | Infinix hot 11s |
ক্যামেরা | camera-50mp |
আমার বাসা | মেহেরপুর |
আমার বয়স | ২৫ বছর |
আমার ইচ্ছে | লাইফটাইম স্টিমিট এর 'আমার বাংলা ব্লগ' এ ব্লগিং করা |
পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোষ্টে,ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ। |
---|
আপনার পোস্ট পড়ে খুব ভালো লাগলো। আজকে ভিন্নধর্মী একটি পোস্ট পড়লাম। আপনি খুব সুন্দর ভাবে প্রতিটি বিষয় উপস্থাপন করেছেন। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমি চাই আমার জানা বিষয়টা আমাদের পরিবারের লোকজন সবাই জানুক, যেহেতু 'আমার বাংলা ব্লগ' একটি পরিবার,তাই প্রকাশ করলাম নিজের সাধ্যমত।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনি মে দিবস সম্পর্কে খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে লিখেছেন প্রথমত জ্ঞান আপনি নিয়েছেন আপনার পরিবারের কাছ থেকে এর পরবর্তীতে বিভিন্ন বই-পুস্তক এর মাধ্যমে খুব সুন্দরভাবেই আমাদের সামনে মে দিবস সম্পর্কে উপস্থাপন করেছেন। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনি যে আমার এ লেখাটা পড়েছেন জেনে খুবই খুশি হলাম ভাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit