আজ - শনিবার
হ্যালো বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। আজ আমি আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি সুন্দরবন ভ্রমণের দৃশ্য নিয়ে। যেখানে আমরা তিন বন্ধু মিলে ঘুরতে গিয়েছিলাম। প্রথমে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম সুন্দরবনের ঘুরতে যাব কিন্তু বিভিন্ন বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। সবকিছু অতিক্রম করে আমরা তিন বন্ধু ঘুরতে যেতে পেরেছিলাম। তারই কিছু দৃশ্য আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে এসেছি।
'আমার বাংলা ব্লগ' কোয়ালিটি সম্পন্ন পোস্ট |
---|
১৭ ই নভেম্বর ২০২২ আমি আমার দুই বন্ধু মিলে সুন্দরবন ভ্রমণে গিয়েছিলাম। আমাদের তিনজনের জীবনে এই প্রথম সুন্দরবন ভ্রমণ। আমরা সাতক্ষীরা থেকে সুন্দরবনে গিয়েছিলাম। আমরা যে পথ দিয়ে গিয়েছিলাম তা হচ্ছে কালবাড়ী, বুড়িগোয়ালিনী, শ্যামনগর,সাতক্ষীরা। প্রথমে আমরা তিন বন্ধু আকাশ নীলা ইকো ট্যুরিজম সেন্টারে প্রবেশ করলাম। এরপরে সাগর মাঝি নামের একজন নৌকা চালকের সাথে আলাপ-আলোচনা করলাম কিভাবে কত খরচে আমরা কতদূর পর্যন্ত সুন্দরবনের ভ্রমণ করতে যেতে পারবো। সাগর মাঝি বিস্তারিত আমাদের জানিয়ে দিল। আমি আর আমার বন্ধু মিলন যাওয়ার জন্য খুবই উৎসাহিত ছিলাম কিন্তু অপর বন্ধু জুলহাস খুবই ভীত হয়েছিল নদীতে নামায়। তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আমরা কোন মত যাওয়ার চেষ্টা করলাম। এরপর নির্ধারিত হলো ৭০০ টাকার বিনিময়ে আমরা ভ্রমণ করতে যেতে পারবো সুন্দরবনের মধ্যে তিন কিলোমিটার পথ। যাইহোক মহান আল্লাহর নাম নিয়ে আমরা রাজি হয়ে গেলাম এবং শুনেছিলাম সুন্দরবনে অনেক বানর দেখা যায়। আর তাদের যদি খাবার দেয়া হয় তাহলে তারা অনেকজন সামনে আসে যা নদী থেকে অতি নিকট থেকে উপভোগ করা যায়, ভিডিও ফটো করা যায়। তাই সেই কথা শুনে আমরা রাজি হয়ে গেলাম তাদের খাবার কিনতে যাওয়ার জন্য এবং খাবার কিনে আনলাম।
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স
আমরা তিন বন্ধু ঠিকঠাক ভাবে নৌকাতে বসে পড়লাম এবং মাঝি নৌকা চালানো শুরু করল। এমন মুহূর্তে একটি ট্রলার এসে আমাদের পাশ দিয়ে চলে গেল। চলে যাওয়ার কয়েক মিনিট পরে নদীতে ধরে ঢেউ শুরু হলো এবং আমাদের নৌকা জোরে জোরে দুলতে থাকলো। যাইহোক আমরা জীবনে এই প্রথম নদীর বুকে নৌকা ভ্রমণ করলাম এবং নদীর বুকে নৌকায় চড়ে ঘুরে বেড়ানোর অনুভূতি খুঁজে পেলাম। অবশ্য খুবই ভালো লাগছিল এভাবে নৌকায় চড়ে ঘুরে বেড়াতে। আমরা লক্ষ্য করলাম সাগর মাঝি অতি দক্ষতা সম্পন্ন একজন ব্যক্তি যিনি খুব দ্রুত নৌকা চালাতে পারেন এবং কোন পথ সামনে রেখে কিভাবে দ্রুত সুন্দরবনের দিকে যেতে হবে তা তার জানা রয়েছে পনেরো থেকে কুড়ি বছরের অভিজ্ঞতায়। তুমি আমাদের জানালেন এই পানিগুলো লবণাক্ত। এগুলো মুখে দিলে বুঝা যাবে যে পানি কেমন লবণাক্ত। তাই আমার দুই বন্ধু শোনা মাত্র মুখে দিয়ে চেক করল।
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স
আমাদের নৌকা আস্তে আস্তে নদীর মাঝখানে চলে গেল। তখন সাগর মাঝি আমাদের সাথে অনেক বিষয় নিয়ে গল্প শুরু করে দিল। কারণ তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় অনেক কিছুর সম্মুখীন হয়েছে এই নদীতে। তাই সে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ভয়ানক ঘটনাগুলো আমাদের মাঝে বলা শুরু করল। অবশ্য ভয় বলে আমার মধ্যে তেমন বেশি কিছু কাজ করে না, যার জন্য আমার শুনতে খুব ভাল লাগছিল। মিলন মোটামুটি শোনার চেষ্টা করেছি কিন্তু জুলহাস খুবই ভয় পাচ্ছিল তার কথাগুলো শুনে। যখনই সাগর মাঝি বলল কুমিরের গল্প তখন সে তো ভীতু হলো এবং বলল আমাদের এখানে কুমির আছে নাকি হঠাৎ কি কখনো নৌকায় আক্রমণ করে? মাসি বলল কেউ বলতে পারেনা এখানে কুমির আছে কিনা তবে নদী যেহেতু থাকতে তো পারে কারণ সুন্দরবনে কত কিছুই থাকে আর এখানে কমে থাকবে সেটা স্বাভাবিক তবে আজ পর্যন্ত তেমন কোনদিন অ্যাটাক হতে হয়নি কুমিরের সাথে। তবে সুন্দরবনে আমরা যেখানে যাচ্ছি সেখানে ভয়ানক কিছু ঘটনা সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাদের। হঠাৎ করে জুলহাস বন্ধু বলে উঠলো এখন না হয় এসব কথা আপনি রাখেন শুনেছি এখানে বানর ও হরিণের দেখা মেলে তাহলে কিভাবে দেখা মিলবে আপনি সুন্দরবনের কতটা নিকট দিয়ে চলবেন এই সমস্ত প্রশ্নগুলো জুলহাস করতে থাকলো। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে সাগর মাঝি নৌকায় একদম সুন্দরবনের নিকট দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল। জুলহাস আবার ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করলো বোনের মধ্য থেকে বাঘ এসে আবার আক্রমণ করবে না তো? সত্যি মানুষের প্রাণের ভয় অনেক বেশি। যাই হোক তেমন কোনো ভয় ভীতি আমার মধ্যে কাজ করছিল না তাই আমি নির্ভয়ে বানর আর হরিণের সন্ধান করতে থাকলাম একদম নদীর মাঝখান থেকেই।
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স
আমরা অনেক দূর থেকে হরিণ সহ অন্যান্য কিছু প্রাণীর দেখা পেয়েছিলাম যা বুঝে ওঠা কঠিন। তবে এমন একটি মুহূর্তে আমরা চলতে চলতে হঠাৎ লক্ষ্য করলাম গাছে গাছে বানর ঝুলে রয়েছে যা ভালোভাবে ক্যামেরাবন্দি করতে পারি নাই কারণ তখন ক্যামেরা বন্দীর চেয়ে স্বচক্ষে দেখতে বেশ ভালো লাগছিল। হঠাৎ ছাগল মাঝি মুড়ির প্যাকেট হাতে নিয়ে হাত উঁচা করে বুঝিয়ে দিল যে আমাদের হাতে খাবার রয়েছে আর ডাকতে থাকলে বান্দরগুলোকে। ঠিক ওই মাত্র বোন থেকে দু একটা করে বানর দৌড়াতে দৌড়াতে একদম নদীর পাড়ে চলে এলো আর সেই সমস্ত বানরগুলোকে দেখে অন্যান্য বানরাও দৌড়াতে দৌড়াতে গাছছ থেকে বোন থেকে নেমে এলো। আর এমন সুন্দর দৃশ্য দেখে আমার বন্ধু জুলহাস হঠাৎ ভয় কমিয়ে বানর নিয়ে খেলা শুরু করে দিল খাবার দিতে থাকলো নদীর পাড়ে আর বানররা খুটে খুটে খাওয়া শুরু করল। আমার খুব ইচ্ছে হয়েছিল নৌকা থামিয়ে একটু বনের মধ্যে প্রবেশ করি। কিন্তু জোয়ারের পানি নেমে যাওয়ায় অনেক কাদা ছিল তাই আমরা নামার চেষ্টা করিনি যেহেতু আমাদের জুতা ছিল পা ভিজে জুতা নষ্ট হবে এমন একটা চিন্তা এদিকে সাগর মাঝি জানালো এখানে নামা নিষেধ যেহেতু বর্ডার গার্ড সবসময় এদিক সেদিক থেকে লক্ষ্য রাখে। তাই আমাদের আর সুন্দরবনের মাটিতে পা রাখা হলো না সুন্দরবনের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে এবং বন্যপ্রাণী গুলো দেখে আনন্দ উপভোগ করছিলাম। পাশাপাশি ফটো আর ভিডিও করছিলাম আমরা সকলে মিলে। এদিকে সাগর মাঝে আমাদের সমস্ত গাছগুলো চিনিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল। আমরা জানি সুন্দরবনে অনেক প্রকার গাছ থাকে যেমন সুন্দরী, শাল গাছ, গরান, গ্যাওয়া ইত্যাদি এছাড়াও নাম না জানা অনেক গাছ। আমরা কিছুক্ষণ বানরের সাথে আনন্দ করে আরো দুই কিলো ভেতরে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করলাম। যেহেতু আমাদের তিন কিলো পথ ঘোরাতে নিয়ে এসেছে তাই জানতে পারলাম সাগর মাঝি এই নদীর ছোট খাল দিয়ে আমাদের সুন্দরবনের মাঝখানে প্রবেশ করাবে। তাই আমি আমার বন্ধুদের মনে সাহস যোগালাম, মনে রাখো এখানে সবাই ঘুরতে আসে খালের মধ্য দিয়ে সুন্দরবনের মধ্যে অনেকেই প্রবেশ করে। আশা করি আমরা ঠিক ভাবে যেতে পারব এবং ফিরে আসতে পারবো তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তাই সবার মনে সাহস যদি আবারো আমারও চলতে শুরু করলাম নদীর মধ্য দিয়ে একদম খাল দিয়ে সুন্দরবনে ভেতরে যাওয়ার জন্য। আর সেই সমস্ত বিস্তারিত আলোচনা করব সামনে কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকুন
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স
💌আমার পরিচয়💌
আমি মোঃ নাজিদুল ইসলাম (সুমন)। বাংলা মাস্টার্স ফার্স্ট ক্লাস মেহেরপুর গভমেন্ট কলেজ। আমার বাসা গাংনী-মেহেরপুর। মড়কা বাজার, গাংনী,মেহেরপুর এ গ্রীনরেইন ল্যাবরেটরি স্কুল নামক প্রি-ক্যাডেট স্কুলের সহকারি শিক্ষক । ইলেকট্রনিক্সের যন্ত্রপাতি মেরামত ও সৌর প্যানেল নিয়ে রিসার্চ করতে পছন্দ করি। প্রাকৃতিক দৃশ্য ফটোগ্রাফি করা আমার সবচেয়ে বড় ভালোলাগা। দীর্ঘদিনের আমি পাঙ্গাস মাছ চাষী এবং বিরহের কবিতা লেখতে খুবই ভালোবাসি। |
---|
পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমার পরিচিতি | কিছু বিশেষ তথ্য |
---|---|
আমার নাম | @sumon09🇧🇩🇧🇩 |
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | মোবাইল |
ব্লগিং মোবাইল | Infinix hot 11s |
ক্যামেরা | camera-50mp |
আমার বাসা | মেহেরপুর |
আমার বয়স | ২৬ বছর |
আমার ইচ্ছে | লাইফটাইম স্টিমিট এর 'আমার বাংলা ব্লগ' এ ব্লগিং করা |
পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ। |
---|
নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জেনে সত্যিই ভালো লাগলো। যেহেতু এটা আপনার প্রথম নৌকা ভ্রমন ছিল তাই আনন্দটা নিশ্চয়ই অনেক বেশি হয়েছে। তবে পাশ দিয়ে যখন বড় কোন ট্রলার যায় তখন একটু ভয় লাগে মনে হয় যেন ঢেউয়ের বেগে নৌকা ডুবে যাবে। যাই হোক তিন বন্ধু মিলে ভ্রমণ করেছেন এবং অনেক সুন্দর সময় কাটিয়েছেন বুঝতেই পারছি। আপনার ভ্রমণের গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জি আপু এটা আমার জীবনে প্রথম নৌকা ভ্রমন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সুন্দরবন যাওয়ার অনেক বেশি শখ তবে এখনো যাওয়া হয়নি। আপনারা দেখছি খুব চমৎকারভাবে নৌকায় ভ্রমন করছেন খুব ভালো লাগলো ভাই ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
দোয়া করি যেন সখ পূরণ হয়
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাইয়া আপনি আপনার বন্ধুদের নিয়ে সুন্দরবন ঘুরতে গিয়েছেন দেখে ভালো লাগলো। বাইরে ঘুরতে যেতে কার না ভালো লাগে। তবে সুন্দরবন এখনো যাওয়া হয়নি। সুন্দরবন গিয়ে আপনি এই প্রথম নৌকা ভ্রমণ করেছেন শুনে ভালো লাগলো। আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইল ভাইয়া। অনেক ভালোভাবে সুন্দরবন ঘুরে আসুন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আবারো নতুন অনুভূতি তুলে ধরব
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাইয়া আপনারা তিনজন মিলে খুব সুন্দর ভাবেই সুন্দরবন ভ্রমন করেছেন। আপনারা গিয়েছেন সাতক্ষীরা দিয়ে আর আমি গিয়েছিলাম মংলা বন্দর দিয়ে। বিডিও আর ফটোগ্রাফি গুলো অনেক সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এবার মংলা বন্দর দিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit