হ্যালো বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। আজকে আমি আপনাদের মাঝে ছোট বেলার সুন্দর একটি গল্প উপস্থাপন করতে চলেছি হয়তো এই বিষয়টা অনেকেরই জানা, তবে কেউ এগুলো প্রকাশ করেছে বলে মনে হয় না। আশা করি গল্পটা বেশ ভালো লাগবে আপনাদের।
আমি তখন অনেক ছোট, সম্ভবত ক্লাস ওয়ান বা টু এ পড়ি, ২০০১/ ২০০২ সালের দিকের ঘটনা। আমি তখন আমাদের প্রাইমারি স্কুলে উপস্থিত হলাম এই মুহূর্তে আমার এক বন্ধু এসে আমার কাছে বলল ইন্দুরের লেজের বিনিময়ে গম দিচ্ছেরে! কথাটা তখন আমার কাছে একটু আশ্চর্যজনক মনে হল। এটা আবার কেমন কথা? যদি কথা হতো ইদুর এর বিনিময়ে গম দিচ্ছে তাহলে বুঝতে পারতাম মনে হয় কোন মানুষ ইদুর বেচাকেনা করে বা খাই। এই জন্য ইঁদুর পেলে গম দিচ্ছে কিন্তু লেজের বিনিময়ে সত্যি আশ্চর্য হলাম। এরপর আমি আমার সেই বন্ধুর কাছে জানতে চাইলাম কে দিচ্ছে কোথায় দিচ্ছে। সে আমাকে বলল আমাদের গ্রামে ওই যে ওই অফিসে থাকে দাড়িওয়ালা হুজুর ওই লোকটা দিচ্ছে।
আপনারা জেনে খুশি হবেন আমাদের প্রাইমারি বিদ্যালয় এর পাশে হাই স্কুল, ভূমি অফিস, পাশাপাশি কৃষি অফিস, ইউনিয়ন কাউন্সিল রয়েছে। কৃষি অফিসে একজন কৃষি অফিসার ছিল সেই সময়, যার নাম ছিলেন শাহ আলম হুজুর। শাহ আলম হুজুর মূলত কৃষি অফিসার হওয়ায় মানুষজনকে বলেছিল যারা যত বেশি ইঁদুর মেরে লেজ এনে দিতে পারবে তাদেরকে গম দেওয়া হবে, হয়তো সে সময় ইদুর অভিযান চলছিল। যাই হোক এখানে হত্যাকাণ্ডের কোন বিষয় আমি তুলে ধরতে আসছি না মূলত ছোটকালের সেই গল্পটাই শেয়ার কছি। শাহ আলম হুজুরের বাসা কোথায় সেটাও আমার স্মরণে নেই পরবর্তীতে উনি আমাদের ভূমি অফিস ছেড়ে অন্য জায়গায় ট্রান্সফার হয়ে গেছিলেন আজও মানুষটার চেহারা চোখে ভেসে।
এরপর আরো অন্যান্য বন্ধুরা বলাবলি শুরু করে দিল ইদুরের লেজের বিনিময়ে গম দিচ্ছে। কয়েকজন বন্ধু এসে উপস্থিত হয়ে বলল আমরা লেজ এনে দিয়েছি আমাদের গম দিয়েছে, কেউ বলল ২ কেজি কেউ বলল ৫ কেজি ঠিক এভাবেই কথার কানাকানি ছড়িয়ে পড়তে থাকলো। সময়টা সম্ভবত বর্ষাকাল পার হয়েছে এই সময় বাড়িতে বাড়িতে ইঁদুরের উৎপাত খুব বেশি থাকে। এদিকে আমাদের পরিবারেও মাঝে মধ্যে দেখা যায় বিষ দিয়ে ইঁদুর ধ্বংস করার কার্যক্রম চলছিল। স্কুলে যে সমস্ত বিষয়গুলো আজকে জেনে আসলাম সেই সমস্ত বিষয়গুলো আমিও বাড়িতে এসে বললাম মায়ের কাছে। আমার কথা শুনে মা হাসি দিয়ে বলতে থাকলো ইঁদুরের লেজ দিয়ে যদি গম দেবে তাহলে তো ভালো কথা। প্রতিদিন তো কত ইদুর মারা পড়ছে। তাহলে ইঁদুরের লেজ কেটে রেখে দেব নিয়ে যাস। মনে হল যেন আম্মা আমার কথা হাসি দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এরপর কথাগুলো আমাদের পাড়ায় ছড়িয়ে গেল।
বেশ কিছুদিন ধরে বাড়ির পাশে দু একটা দোকানে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। শাহ আলম হুজুর নাকি ইদুরের লেজের বিনিময়ে গম দিচ্ছে, একটি লেজে এক পোয়া গম। আমার চোখের সামনে আমাদের পাড়া থেকে কয়েকজন মানুষ ঠিক ইদুরের লেজ দিয়ে গম নিয়ে আসলো। এবার আমি আমাদের সারগত্রের দিকে খুঁজতে থাকলাম, কয়েকদিন আগেই তো ইঁদুর মেরে ফেলেছিল এই জায়গায় ইঁদুরের লেজ আছে কি দেখি। কিন্তু আমি সারগত্ত খুঁজে খুঁজে হয়রান হলাম কিন্তু পেলাম না। আমার খুব আফসোস মনে হচ্ছিল তখন, এরপর আমি স্কুলে গেলাম, দেখলাম কয়েকজন বন্ধু স্কুলে পড়তে এসেছে ইদুরের লেজ হাতে করে এনেছে। সবাই ক্লাসে বই রেখে লেজের বিনিময়ে গম নিয়ে আসছে। ঐদিন দুপুর বেলায় স্কুল থেকে বাড়িতে এসে মা আমাকে দেখালো চারটা ইঁদুরের লেজ, নিয়ে যাবি। আমি ইঁদুরের লেজ দেখে অনেক আনন্দ পেলাম মনে করলাম আগামীকালকে স্কুল যাওয়ার সময় লেজ নিয়ে গম না নিয়ে আজকে বিকালে গেলেই ভালো হয়। পাড়ার কয়েকজন বন্ধু মিলে বিকেল টাইমে চলে গেলাম শাহ আলম হুজুরের সেই অফিসে। শাহ আলম হুজুর আমাদের হাতে ইঁদুরের লেজ দেখে খুবই আনন্দ পেল। লেজ ঘরের মধ্যে নিয়ে চলে গেল। এরপর হাতে একটি বড় কুঞ্চির লগা নিয়ে বের হয়ে আসলো। আমি চেয়েছিলাম হয়তো এক কেজি গম হাতে করে বের হবে। উনি বের হয়ে এসে বললেন গম তো নেই ফুরিয়ে গেছে। তোমাদের এক কেজি গম পাওনা হয়েছে তাই এক কেজি বড় শিম পেড়ে দেই গাছ থেকে। কথাটা শুনে আমার মন খারাপ হয়ে গেল। আমাদের বাড়িতেই তো শিম গাছের শিম রয়েছে। তবে কি আর করার তাকিয়ে থাকলাম দেখলাম উনি কৃষি অফিসার তাই তার অফিসের বাগানটাই বড় উন্নতমানের একটা শিম লাগিয়েছে যেগুলো দেখতে স্বাভাবিক শিমের তুলনায় দুই গুন বড়। উনি আমাদের সকলকে বলে দিলেন তোমরা ইঁদুরের লেজ নিয়ে আসবে গম আসলে আমি গম দেবো। এরপর তার দেওয়া শিম নিয়ে আমরা বাড়িতে চলে আসলাম। উনি যা যা বলেছিলেন, সব বিষয়গুলো মায়ের কাছে গল্প আকারে শেয়ার করলাম।
পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ। |
এমনটা কখনো শুনি নি।।খুবই ব্যতিক্রম একটি ঘটনা।ইদুরের লেজের বিনিময়ে গম।আমার মনে হয় ইদুর নিধনের কোন সরকারি প্রজেক্ট ছিল।কিন্তু আপনার কপাল খারাপ আপনি পেলেন শিম। যাই হোক মজা পেয়েছি গল্পটি পড়ে।ধন্যবাদ ভাইয়া শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ ভাই কপালে গম না থাকায় শিম পেয়েছিলাম
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ইঁদুরের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় কৃষি অফিসার দারুন একটা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। গম দেওয়ার অনুপ্রেরণায় সবাই ইদুর মারতে শুরু করেছিল যেটা মানুষের অনেক ক্ষতি করে। আপনিও গমের আশায় গিয়েছিলেন কিন্তু গম ফুরিয়ে যাওয়ায় পেয়েছিলেন সিম ভালো লাগলো আপনার ছোটবেলার গল্পটি পড়ে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কখন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করে কে, কে জানে
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এটা তো অনেক মজা ব্যাপার।ইঁদুরের লেজের বিনিময়ে গম।অবশেষে আপনিও ইঁদুরের লেজ নিয়ে গেছেন গমের আশায় এবং এক কেজি গম পেলেন ও শিম নিয়ে চলে এসেছেন এবং আপনাদেরকে আসস্ত করেছেন পরবর্তীতে লেজ আনলে গম আসলে গম দেবেন।ভালোই আশ্চর্যজনক বিষয় এটি ।বেশ ভালোই লাগলো।ধন্যবাদ পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ বিষয়টা খুবই আনন্দদায়ক ছিল
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভিন্ন একটি গল্প ছিল ভাইয়া। পড়তে বেশ ভালো লাগলো পোস্টটি। ইঁদুরের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় দারুন একটি উদ্যোগ নিয়েছিলেন কৃষি অফিসার।ভালো লাগলো পোস্টটি অনেক ।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হঠাৎ করে ঘটনাটি মনে আশায় আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit