হ্যালো বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ একটি দিন ফুপা শ্বশুরের বাসায় অবস্থান করেছিলাম। আর সেই মুহূর্তে আমার অবস্থান আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে চাচ্ছি আজকের এই গল্পে। কতটা বিরক্তকর মুহূর্ত ছিল আমার জীবনে আশা করি এই পোস্ট পড়লে জানতে পারবেন।
আমার পরিবার, বিয়ের এক মাস পর বেশ কিছুদিন আমাকে বলেছিল 'আমার ফুফু তাদের বাসায় যাওয়ার জন্য খুব অনুরোধ করছে', বেশ কিছুদিন ধরে বিয়ের পর থেকেই নাকি সেখানে যাওয়ার জন্য আমাদের অনুরোধ করছিল কিন্তু কেন জানি আমার পরিবার রাজি হতে চেয়েছিল না সেখানে যাওয়ার জন্য। যাই হোক এক মাস পর যাওয়ার জন্য বেশ অনুরোধ চলতে থাকলো আর এদিকে আমি কারুর বাড়িতে যাওয়া বেশি পছন্দ করি না যার জন্য আমাকে তেমন একটা বেশি বলতেও পারত না। যখন তাদের অনুরোধ বাড়াতে থাকলো, নতুন জামাই তাদের বাড়িতে না গেলে কেমন হয় তাই আমার পরিবার আমাকে সেভাবে বারবার বলতে থাকলো। যখন আমি পরিবারের কথায় রাজি হচ্ছিলাম না তখন দেখা যাচ্ছে আমার শ্বশুর একাধিকবার আমাকে বলতে থাকলো, 'তোমার ফুপার বাড়িতে বেরিয়ে আসো, আমার একটা মাত্র বোন, সেখানে যদি না যাও তাহলে আমার উপর রাগ করবে এবং খারাপ বলবে, সময় সুযোগ করে সেখানে বেরিয়ে আসো' তাই দেখলাম না গেলেই নয় পরিবারের কাজ সবকিছু সামলিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম বেড়াতে যাব সেখানে। আমার পরিবার তার ফুফুদের গ্রামের বর্ণনা আমার মাঝে তুলে ধরতো। সেখানে নাকি আমাদের গ্রামের মতো কয়েকটা পুকুর রয়েছে। যেখানে খুব সুন্দর শীতল বাতাস বয়ে চলে বিকেল মুহূর্তে এবং সেখানে নাকি অনেকেই ঘুরতে যাই।
তাই দেখলাম এত করে যখন আমাকে অনুরোধ করা হচ্ছে সেখানে না গেলেই নয় তবে যেতে হলে অবশ্যই নিজের দিক থেকে কিছুটা প্রস্তুতি গ্রহণ করে যেতে হবে, যেহেতু বাইরে আমার কোন আত্মীয়ের বাড়িতে বাড়িতে থাকার অভ্যাস নেই। আর প্রচন্ড এই গরমের দিনে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া বেশ কঠিন। আবার দেখা যাচ্ছে কিছু আত্মীয় রয়েছে তাদের বাসায় গেলে থাকতে বলে, না থাকলে রাগ করে আবার পরে প্রচন্ড এই গরমের মুহূর্তে কারেন্ট থাকে না। যেকোনো মুহূর্তে কারেন্ট চলে যায়,রাত্রে যদি আত্মীয়র বাসায় অবস্থান করা হয় কারেন্ট না থাকলে প্রচন্ড গরমে কষ্ট করতে হয়। তাই আমি চেয়েছিলাম এখন যাওয়ার দরকার নেই, আর যদি যেতেই হয় শুধুমাত্র দেখা করেই চলে আসব। যাইহোক আমার শ্বশুর এবং পরিবার রাজি হল তোমরা সেখানে যে ঘুরে আসবে। আমি যখন রাজি হয়েছিলাম তখন দেখলাম সকাল করে আত্মীয়র বাড়িতে গেলেই ভালো হয় কিন্তু আমার পরিবার কেন জানি ঢিল কাটায় ছিল সেখানে রাতে অবস্থান করার জন্য কারণ তার ফুফু বলেছিল এসে থাকতে হবে। এখন সে কথা ফেলতে না পেরে ঢিল কাটিয়ে বিকাল মুহূর্তে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল যেন এক রাত সেখানে থেকে আসতে পারি এবং তাদের কথা রাখতে পারে কিন্তু আমি তো আত্মীয় বাড়িতে থাকব না কখনোই। তাই চেয়েছিলাম বারোটার দিকে যাব এবং বিকেলে ঘুরে আসব। যাইহোক ফুফুর শাশুড়ির বাড়ি এলাঙ্গী নামক গ্রাম গাংনী থানায় অবস্থিত। অবশ্য সে গ্রামে আমি দু একবার গিয়েছিলাম স্কুলের কাজে। আমরা যেতে যেতে বিকাল হয়ে গেল।
কিছুটা সময় ফুফু শাশুড়ির বাড়ি অবস্থান করার পর যেন নিজেকে টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে গেল,এতটাই প্রচণ্ড গরম আর বাড়ির পর বাড়ি থাকায় দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো আমার। এদিকে বিয়ের পর একদিন ফুপুর শ্বশুরের মুখে শুনেছিলাম তাদের বাড়ির পাশে আমার একটি ছাত্রের বাড়ি রয়েছ। অবশ্য একদিন ছাত্রকে তাদের বাড়িতে মাইক্রো গাড়ি থেকে নামিয়ে রেখে এসেছিলাম ক্যাডেট কলেজে পরীক্ষা দেওয়া শেষ করে। তাই ভেবেছিলাম হতে পারে ওই বাড়ির নিকটে আমার ফুফা শ্বশুরের বাড়ি তাই যাওয়ার মুহূর্তে কিছুটা স্বস্তি বোধ করেছিলাম এই জন্য যে যাই হোক আমার ছাত্রটাকে কাছে পাবো। ঠিক সেভাবেই দেখলাম তাদের বাসার নিকটে আমার ফুপা শ্বশুরের বাসা অর্থাৎ ছাত্রের বাড়ির পিছনের ঘরটা। আর তারা একে অপরের আত্মীয় আমার ফুফা শ্বশুর আমার ছাত্রের দাদা হয়। আমার ছাত্রের নাম গালিব। আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে প্রথমে গালিবের খোঁজ করলাম কিন্তু গালিবকে কোথাও খুঁজে পেলাম না সবাই বলল সেই স্কুল ফিল্ডে খেলতে গেছে। এই মুহূর্তে গালিবের ছোট বোনকে পাঠালাম সে যেন তার ভাইকে ডেকে আনে। গালিবের ছোট বোন খুবই আনন্দের সাথে কয়েকজন ছেলে মেয়েকে বলতে থাকলো ভাইয়ার স্যার এসেছে আজকে আমাদের বাসায় থাকবে ভাইয়াকে ডেকে আনি। যাই হোক একঘন্টা পর গালিব এসে আমাদের মাঝে উপস্থিত হলো তাকে বললাম বাবু চলো আমরা একটু ঘুরে আসি তোমাদের গ্রামটা। এদিকে রুমের মধ্যে একা বসে থাকতে যেন দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো। আমার পরিবার প্রচন্ড গরমে ঘামছে তারপরেও যেন এখানে থাকতে চাচ্ছে। কারন সে তার ফুফুকে কথা দিয়ে ফেলেছে আজকে রাত্রে আমরা তাদের বাসায় থাকবো কিন্তু আমার যে থাকা কঠিন হয়ে গেছে এখানে কারেন্ট যখন তখন চলে যাচ্ছে।
গরম আমি একদম সহ্য করতে পারি না তাই আমার বাড়িতে গরম দূর করার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে কারেন্ট না থাকলেও আমি সৌর প্যানেল দিয়ে ফ্যান চালাতে পারি। দিনের বেলায় যেন ঘরের মধ্যে টিকে থাকা আমার কঠিন হয়ে পড়ল তাই চলে গেলাম গালিবের সাথে পুকুরপাড় বেড়াতে। আমার ফুপু শ্বশুর আর গালিব আমাকে নিয়ে গেল তাদের গ্রামের পুকুর গুলো ঘুরে দেখানোর জন্য। যেতে পথে প্রথমে লক্ষ্য করলাম কয়েকটি গরুর ফার্ম পুকুরপাড়ে। এরপর একটি কাঠ বাদামের গাছ। দেখলাম পুকুর দু-তিনটা বড় বড়। এখানে বড় বিল ছিল যেখানে কোন ফসল হতো না সব ডুবে থাকতে বর্ষার সময় তাই এই পুকুরগুলো খনন করেছে। পুকুরের মধ্যে নৌকা দেখতে পেলাম। মাছের খাবার দেওয়ার জন্য এই নৌকাটি ব্যবহার করা হয় মাঝে মধ্যে নৌকায় চড়ে মাছ ধরা হয় এমনকি বিভিন্ন সময় মানুষ আসলে এই নৌকায় চড়ে ঘোরানো হয়। পুকুর পাড়ে দেখতে পারলাম অনেক ঘাস লাগানো রয়েছে গরুর জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্য যখনে পুকুরপাড়ে আসলাম তখনই আমার পেটে যন্ত্রণা শুরু হলো সেই আকারে শান্তিতে একটু ঘোরাফেরা করতে পারলাম না তাই আমার ছাত্র গালিব ও তার বোনকে আমার ক্যামেরা বন্দী করলাম কয়েকবার সুন্দর দৃশ্য দেখে। এরপর দ্রুত চলে এলাম গালিবদের বাসায়। তখন আমার পরিবার কেন জানো একটু বিরক্ত বোধ করেছিল আমার প্রতি, তাই দেখলাম ফুফুদের ঘর থেকে গালিবদের ঘরে চলে এলো আমার কাছে। সে আমাকে একটু চোখে চোখে রাখার চেষ্টা করল, যেন কোন মহিলারা আমার সাথে গল্প না করতে পারে। পরবর্তীতে জানিয়েছিল এখানে কয়েকজন মহিলা রয়েছে তারা নাকি একটু খারাপ মাইন্ডের তাই সে চাচ্ছিল আমি যেন কোন আবোল তাবোল মহিলাদের সাথে গল্পে মেতে না যায় কিন্তু সে এটা খুব ভালো করে জানে আমি অন্যান্য মানুষের সাথে কথা বলি না, তারপরেও মনের টান। এরপর গালিবদের ঘরের মধ্যে বসে কয়েকটা ফটোগ্রাফি করলাম এতেও যেন শান্তি পাচ্ছিলাম না প্রচণ্ড গরমে। ইতোপূর্বে গালিবের আম্মার সাথে আমার ২-৩ বার কথা হয়েছে কারণ সে আমার অতি পরিচিত যেহেতু গালিবকে স্কুলে নিয়ে আসতো। গালিবের আম্মা তাদের একটি জায়ের বাসায় অবস্থান করছিল ওই মুহূর্তে যখন আমরা পুকুরে ঘুরতে গেছিলাম। তিনি বলেছিল স্যার আসুন আমরা সকলে মিলে ওদিকে ঘুরতে যাই কিন্তু পেটে যন্ত্রণায় আমি রাজি হয়েছিলাম না। এরপর রাত্রে কাজের মুহূর্তে প্রচন্ড গরমে যখন ছটফট করছিলাম এই মুহূর্তে আমার পরিবার বুঝতে পারছিল আমার অবস্থান একদিকে সে কথা ফেলতে পারছিল না ফুফুদের অন্যদিকে আমার অবস্থা দেখেও সে কষ্ট পাচ্ছিল আমি তাকে গালিবদের সাথে করে ঘুরতে চলে গেলাম বাইরের দিকে যেখানে আমার আরো ছাত্র-ছাত্রীদের বাসা রয়েছে গ্রামের প্রাইমারি স্কুলটা। আমার পরিবার আমার অবস্থা বুঝে রাত্রি কালীন মুহূর্তে আমার শ্বশুরকে ডাক দিল আব্বা মোটরসাইকেল নিয়ে আসুন আমরা চলে যাব কারণ আপনার জামাই প্রচণ্ড গরমে থাকতে পারছে না আর এখানে সত্যি প্রচন্ড গরম নিজেকে হঠাৎ করে এসে মানিয়ে রাখা বেশ কঠিন। যাইহোক আমি আর আমার ছাত্র স্কুল মাঠে কিছুটা সময় অতিবাহিত করলাম তখন রাত প্রায় সাড়ে আটটা। এরপর আমরা আমাদের ফুপু শশুর এবং শাশুড়িকে বুঝিয়ে চলে আসতে চাইলাম তারা বুঝতে পারল আমার অবস্থা কারণ প্রচন্ড গরম ছিল তখন। তারা আর বেশি জড়াজড়ি করলো না বললো বাবা যখন দিনকাল ঠান্ডা থাকবে তখন আমাদের মেয়েকে নিয়ে আবার বেড়াতে আসবে এবং তখন কিন্তু অবশ্যই থাকতে হবে আমাদের বাসায়। এদিকে আধা ঘন্টার মধ্যে আমার শ্বশুর এসে উপস্থিত হল। কিছুটা সময়ের পর আমরা চলে এলাম শ্বশুর বাড়ির দিকে। আর এভাবেই বিরক্তকর একটা মুহূর্ত শেষ হয়েছিল। এমন একটা মুহূর্তে আত্মীয় বাড়িতে পেটের যন্ত্রণা আর প্রচন্ড গরমের অতিষ্ট মুহূর্তটা যেন ভুলব না কোনদিন।
পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ। |
ভালো করেছেন আপনার ফুফু শাশুড়ির বাড়িতে গিয়ে ঘুরে এসেছেন। কারন এত করে অনুরোধ করার পরে না গেলে তারা মন খারাপ করত। তাছাড়া এই গরমের মধ্যে কারেন্ট না থাকলে থাকা বেশ মুশকিল হয়ে যায়। আপনার ফুফু শ্বশুর-শাশুড়ি আপনার কষ্ট বুঝতে পেরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে জেনে ভালো লাগলো। অনেক কষ্ট গিয়েছে বোঝাই যাচ্ছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলাম আপু
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মামা আপনি আজকে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন বিরক্তকর একটি মুহূর্তের গল্প। আসলে গরমের দিনে ফুব শাশুড়ি বাড়িতে দাওয়াত খেতে গেলে তো এমন অতিষ্ঠ হতে হবে। মামা আত্মীয় বাড়িতে বেড়ানোর অভ্যাস না থাকলে কি হবে এখন বিয়ে করেছেন এখন তো আত্মীয় বাড়িতে যাওয়াই লাগবে। তবে আপনার শ্বশুর বাড়ির দাওয়াত একদিন ভাগ্নিদের সাথে করে খেলেন। ধন্যবাদ মামা গরমের এত সুন্দর গল্প শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মামা নিজের বাড়িতে থাকতাম এত কিছু বুঝতাম না এখন বুঝতে পারছি
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit