শুভ হালখাতা || শ্বশুরের দোকানে হালখাতায় কিছু দায়িত্ব গ্রহণের অনুভূতি || পর্ব ১

in hive-129948 •  last year 
আসসালামু আলাইকুম

IMG_20230514_091121_987.jpg





হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। আজকে আমি আপনাদের মাঝে জীবনে প্রথম হালখাতায় আমার অংশগ্রহণের প্রথম অনুভূতি শেয়ার করতে চলেছি। যেখানে জীবনে প্রথম অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, আর সেই সমস্ত বিষয়গুলো আপনাদের মাঝে খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরবো কয়েকটি পর্বের মাধ্যমে। আশা করি প্রত্যেকটা পর্ব আপনারা দেখবেন এবং অনেক তথ্য গ্রহণ করবেন। তাই চলুন দেরি না করে প্রথম পর্ব শুরু করা যাক।


ফটোগ্রাফি সমূহ:



দিনটা ছিল ১৪ই মে, ২০২৩ সাল। আমার শ্বশুরের দোকানে প্রথম হালখাতায় অংশগ্রহণ করতে চলেছি। আর এই প্রথম ছিল শ্বশুরের দোকানে হালখাতার কার্যক্রম। শশুর হালখাতা করতে পছন্দ করে না কারণ হালখাতারে দিন টাকা উঠে না। তবে এই মুহূর্তে নতুন জামাই পেয়ে মনের মধ্যে একটু ভালোলাগা জেগে উঠেছিল আর চাইছিল যে সমস্ত টাকাগুলো লোকের বাড়িতে পড়ে আছে সেগুলো একদিনে উঠাতে পারা যায় কি দেখি। এদিকে আমাকে দায়িত্ব দিল হালখাতার কার্ডে সমস্ত নাম ও দেনা পাওনা গুলো লিখে ঠিকঠাক করে দিতে হবে। আর হালখাতার দিন দোকানে সামনে একটি টেবিল চেয়ার নিয়ে বসে থাকতে হবে যখন কাস্টমার টাকা পরিশোধ করতে আসবে তাদের থেকে টাকা বুঝিয়ে দিয়ে একটি করে মিষ্টির প্যাকেট ধরিয়ে দিতে হবে। আর এই কথাটা দীর্ঘ দুই সপ্তাহ আগে থেকে আমাকে বলে আসছিল। জীবনে এমন কোন কার্যক্রমে আমি অংশগ্রহণ করিনি তাই একটু ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছিল আমার কাছে তাই সাথে সাথে রাজি হয়ে গেছিলাম শ্বশুরের কাছে। নতুন একটা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চলেছি তাই যেন ভালোলাগাটা বেশি কাজ করছিল আমার আর কোন কাজ আমি না বলতে কখনোই রাজি নয় কারন নতুন কিছু শিখতে আমি সর্বদা প্রস্তুত। যাইহোক কাঙ্খিত দিনটা আসলো আমাদের মাঝে। আমাদের শশুরের দোকানটা হেমায়েতপুর বাজার গাংনী-মেহেরপুরে। এখানে সপ্তাহে দুইদিন হাট বসে বৃহস্পতি আর রবিবার। তাই উনি চেয়েছিলেন হাটের দিন হালখাতা হোক এতে লোকজন হার্ট করতে আসবে এবং তাদের থেকে দেনা পাওনা শোধ করা যাবে সহজে। যাইহোক হালখাতার দিন একদম সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রস্তুতি গ্রহণ করে চলে আসলাম দোকানের দিকে। প্রয়োজনীয় জিনিস পাতি সব গুছিয়ে নিয়ে এনেছিলাম। যেহেতু এবার প্রচণ্ড গরম পড়ল সময়টা ছিল মে মাস তাই দোকানে কখন কি কারেন্ট থাকে বা না থাকে তাই সৌর ফ্যানের ব্যবস্থা করেছিলাম অর্থাৎ 12 ভোল্টের ফ্যান ও ব্যাটারির ব্যবস্থা করেছিলাম কারেন্ট না থাকলেও সৌর প্যানেল দিয়ে গরমের সময় একটু ফ্যানের বাতাস খেতে পারব পাশাপাশি যে সমস্ত কাস্টমার আসবে তারা যদি চায় এখানে বসে ফ্যানের বাতাসে মিষ্টি খেয়ে যাবে তাই পানির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অর্থাৎ একদম রেডি ছিলাম কাস্টমারদের সম্পূর্ণ সার্ভিস দেওয়ার জন্য।

IMG_20230514_081408_897.jpg

IMG_20230514_083925_111.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
location



দোকানে যেয়ে শ্বশুরের কাছ থেকে হিসাবের খাতা গুলো খুব সুন্দর ভাবে বুঝে নিলাম এবং কিছু কিছু জিনিস খাতায় লিখে একদম ফিটফাট করে রাখলাম যেন কাজের মুহূর্তে কোন বাধা সৃষ্টি না হয়। আর ঠিকঠাক ভাবেই টাকা উঠাতে পারি। এদিকে দোকান ভরতি মালামাল। মালামাল কেনার জন্য পাইকারি বা খোঁজ ক্রেতারা যখন তখন আসা শুরু করে দিল, সবদিকে নজর রাখতে হল আমার আর আমার শ্বশুরের।

IMG_20230514_081838_169.jpg

IMG_20230514_091713_900.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
location



এদিকে হেমাতপুর বাজার প্রাইমারি স্কুলের টিউবওয়েল থেকে পানি এনে রাখলাম কাস্টমারদের খেতে দেওয়ার জন্য এদিকে রাস্তার পাশে ধুলা যেন না ওড়ে সেগুলো পানি দিয়ে একটু ভিজিয়ে দিলাম। ওদিকে আমার শশুর আব্বা নিয়ে আসলো দোকান সাজানোর বিভিন্ন আইটেম। আমি ভাবছিলাম উনার টানে টানে আমিও কিছু একটা করি এদিকে উনিও ভাবছিলেন আমার টানে টানে উনিও কিছু একটা করুক। আর দুইজনে এভাবেই কার্যক্রম চলতে থাকলো। তবে একটা বিষয় আমার শ্বশুরের সাথে বেশ সুন্দর হাসিখুশি কথা বলে আমাদের। আমি লক্ষ্য করে দেখলাম শ্বশুর আব্বা দোকান সাজানোর জন্য খুব ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ল এদিকে আমিও সাথে কাজ করার চেষ্টা করলাম যেয়ে ভালো করে সাজানোর কাজে অংশগ্রহণ করি কিন্তু শ্বশুর আব্বা আমাকে বলল তুমি একটু বসো, তুমি হাপিয়ে গেছ পানি এনে, জামাইকে দিয়ে এত কাজ করালে এখানকার দোকানদারেরা সবাই নিন্দা করবে। এদিকে পানি আনলাম কই আমি! শুধু শুধু একটু টিউবওয়েল চেপে একটু পানিপুরে দিয়েছি, শ্বশুর নিয়ে এসে দোকানের পাড় ভিজিয়ে ধুলা দূর করেছে। যাইহোক বসে একটু দেখতে থাকলাম আমার শ্বশুরের কার্যক্রম কিভাবে দোকান সাজায় সে। এদিকে সৌর প্যানেলের টেবিল ফ্যানের শীতল বাতাস নতুন স্থানে মন প্রাণ শীতল করতে লাগলো কিছুটা কিছুটা লজ্জা অনুভূতি ছিল বা সংকচ ছিল মনের মধ্যে। যেহেতু কোনদিন এসব কাজে অংশগ্রহণ করেনি কোথাও।

IMG_20230514_082346_574.jpg

IMG_20230514_083931_035.jpg

IMG_20230514_084529_701.jpg

IMG_20230514_084527_475.jpg

Photography device: Infinix hot 11s
location


দেখলাম এই সমস্ত জিনিস দিয়ে দোকান সাজানো আমার শ্বশুরের কাছে কি ভালো মানায়, তাই আমিও চেষ্টা করলাম নিজে হাতে ধরার জন্য। আর এভাবেই দুইজন মিলে দোকান যথেষ্ট সাজিয়ে ফেললাম। কিছুটা হলেও দোকান দেখতে বেশ ভালো লাগলো। এদিকে শশুর আব্বা বলল এগুলো টাঙ্গালেই মানুষে বুঝতে পারবে এখানে হালখাতা শুরু হয়েছে আর যারা হালখাতার কার্ড পেয়েছে সেখানে তো দেখছে কবে কখন হালখাতা, ১০ জনের বেশি জানিয়ে দেয়া লাভ নেই। যাইহোক এভাবে দীর্ঘক্ষণ ধরে দোকানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করলাম একপর্যায়ে রঙিন এই ঝিকমিকি কাগজগুলোর টাঙ্গানো হয়ে গেল। যেহেতু আমারা একটু সকাল সকাল আসার চেষ্টা করেছিলাম তাই বাজারে দোকানপাট তখনো বন্ধ ছিল আর রাস্তায় চলাচল মানুষ খুব কম ছিল। আমরা চেয়েছিলাম বাজার রানিং হওয়ার পূর্বেই আমরা নিজেদের মতো প্রস্তুতি গ্রহণ করে রেডি হয়ে যাব। এদিকে আমার শশুর আব্বা হঠাৎ আমাকে বলে উঠলো কাস্টমারদের মিষ্টির জন্য অর্ডার দিয়েছি মিষ্টি আনতে যেতে হবে পার্শ্ববর্তী পাঁচ কিলো দূরে মানিকদিয়া নামক একটি গ্রাম থেকে। তাই আমার ছোট কুটুম দোকানে এসে বসলেই আমরা চলে যাব মিষ্টি কিনতে। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো জিলাপি দেওয়া হবে কারণ অন্যান্য হালখাতা খেয়াল করেছে বেশিরভাগ জিলাপি দিয়ে থাকে আর বড় ব্যবসায়িকেরা বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি এর ব্যবস্থা করে থাকে। কিন্তু আমার শশুর বললো না আমি সকলের মিষ্টি দিতে চাই যেখানে ৪০/৫০ টাকার মিষ্টি থাকবে। আমি ভাবলাম শশুর কি ফেরালি হওয়ার ধান্দা নাকি। জামাই হিসেবে নতুন এক দেড় মাস বিবাহ করেছি তখন তাই বেশি কিছু বললাম না শুধু কানে শুনলাম আর হাঁ হু বলে বলেই সবকিছু মানিয়ে নিলাম।

IMG_20230514_085546_550.jpg

IMG_20230514_085548_829.jpg

IMG_20230514_085626_988.jpg

IMG_20230514_085628_832.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
location



হালখাতার দিন দোকানে শুভ হালখাতা লেখা কার্ড না টাঙ্গালে নয়। আর এই কার্ড আমার শ্বশুর আনতে ভুলে গেছিল। তাই আমাকে দোকানে রেখে আবার চলে গেল নিকটস্থ একটি দোকানের দিকে যেখান থেকে পুরাতন একটি শুভ হালখাতা লেখা কার্ড এনে আমার হাতে দিল আঠা লাগিয়ে যেন সামনে লাগিয়ে দেয়। তখন মনে মনে ভাবলাম শুভ হালখাতা কিন্তু পুরাতন কার্ড ব্যবহার করা হচ্ছে সামনে। না জানি কপালে কি আছে আজ। হালখাতার দিন কাস্টমারদের জন্য একটু বেশি মিষ্টি আনতে চাচ্ছে অনেক তবে সকল কাস্টমার কি টাকা পরিশোধ করবে আজ? কে জানে আমি কাউকে চিনি না হয়তো আজকেই চিনব কারা বাকি খায়। যাইহোক শুভ হালখাতা লেখা কার্ডটি আমি টাঙিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলাম দোকানের সামনে আর এভাবেই হালখাতার দিনের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন করা হলো।

IMG_20230514_091118_775.jpg

Photography device: Infinix hot 11s
location

পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif


পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

বাহ ভাই ভালো তো শশুরের হালখাতা অনুষ্ঠান আয়োজনে শশুরকে সহযোগিতা করা আদর্শ জামাইয়ের লক্ষণ। যাইহোক খুব ভালো একটি মুহূর্ত কাটিয়েছেন। ধন্যবাদ আপনাকে ভালো থাকবেন।

জানিনা কতটুকু আদর্শ জামাই হয়েছে তবে সহায়তা প্রদান করেছি বেশ

আসলে হালখাতা হলে যেন গ্রামে অন্যরকম একটা আনন্দ উৎসব চলে আসে। আপনি তো দেখছি একটা আদর্শ জামাই শশুরকে ভালোই সাহায্য সহযোগিতা করছেন হালখাতার ক্ষেত্রে। বর্তমানে একটা জিনিস সবথেকে বেশি দেখতে পাওয়া যায় সেটা হচ্ছে যে পরিমাণে বাকি থাকে তার অর্ধেক টাকাও উঠে আসে না।

একদম ঠিক কথা বলেছো তুমি

হালখাতার প্রচলনটা গ্রামে এখনো রয়েছে বিক্রেতার টাকা আদায়ের জন্য ক্রেতাকে হালখাতাই আমন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। হালখাতা হলো ফ্রিতে মিষ্টি খাওয়া শ্বশুরের দোকানে নতুন একটি অভিজ্ঞতা ও দায়িত্ব পেয়েছেন এবং খুব ভালোভাবে সে দায়িত্বটি পালন করেছেন। নতুন অভিজ্ঞতা ও দায়িত্ব পালন করা অনুভূতি শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।

জি ভাই জীবনে নতুন ও প্রথম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম

  ·  last year (edited)

ভাইয়া একসময় শুভ হালখাতার প্রচলন ছিল প্রচুর। সেই জমিদারী প্রথা থেকে সেটা চলে আসতেছে। তবে বর্তমানেও মাঝে মাজে দেখা যায়। যায়হোক আপনার শশুরের দোকানের শুভ হালখতার প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শেষ। দেখা যাক কেমন কাষ্টমার পেয়েছেন। ধন্যবাদ।

ওয়েট করেন ভাই খুব শীঘ্রই দিতে পারব তুলে ধরব