আজ - বৃহস্পতিবার
২২ বৈশাখ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
০৫ মে,২০২২ খ্রিষ্টাব্দ
আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে আপনাকে স্বাগতম |
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাই-বোন বন্ধুদের কে আমার পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা, সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। প্রতিবারের ন্যায় আজকে আমি আপনাদের মাঝে ইউনিক একটি পোস্ট নিয়ে উপস্থিত হয়েছি। আশা করি আপনারা সকলেই আমার এই পোস্টটি খুব মনোযোগ সহকারে পড়বেন। |
আজ আমি আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি আমারই বাড়িতে একটি বটবৃক্ষের ইতিহাস কে কেন্দ্র করে কিছু তথ্য দেওয়ার জন্য, আশা করি আপনারা গভীর মনোযোগ সহকারে পড়ে সবকিছু জেনে ও বুঝে নিবেন। আমি মনে করি লেখাপড়া করা বুদ্ধিমানের কাজ যে যত পড়বে সে ততই শিখিবে। তাই আপনারা ধীরেসুস্থে আমার এই বটবৃক্ষের কাহিনীটা পড়বেন সেই আশা ব্যক্ত করে আমি শুরু করলাম আমার বটবৃক্ষের ইতিহাস। |
আজকের বিষয়: বটবৃক্ষের ইতিহাস by @sumon09 |
আপনারা জানেন যে আগেকার দিনে বাড়ির ইটের পাচির বা দেওয়াল গাধা হত মাটি দিয়ে। আগেকার দিনে সিমেন্ট-বালি প্রচলন খুবই কম ছিল। তাই কাদা দিয়ে সুন্দরভাবে দেয়াল গাথা হত। ঠিক তেমনি আমাদের বাড়িতেও এমন দুইটা পাচির ছিল। বর্তমানে একটি রয়েছে। আমি ছোটকাল থেকে বুদ্ধি জ্ঞান হওয়ার পরে অনেকটা লক্ষ্য করে এসেছি যে বর্তমান যে দেয়ালটি রয়েছে সে দেওয়ালে একটি বটবৃক্ষ রয়েছে। গাছটি ছোট থেকেই দেখে আসছি এবং দেখছি যে একটু বড় হলেই কেটে দেওয়া হয়, যেন বাড়তে না পারে। এর প্রধান কারণ গাছটি বড় হলে দেওয়ালটা ভেঙ্গে যাবে। |
Photography device: Infinix hot 11s
Location
আপনারা হয়তো অনেকেই দেখেছেন দেওয়ালের গাছ থেকে অনেক বটবৃক্ষ হয়ে বড় গাছ হয়ে গেছে। আর বটবৃক্ষ খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। যাইহোক, যে কথা বলছিলাম, গাছটি যেন বড় হতে না পারে তাই বারবার সেঁটে দেওয়া হয়। আর যখনই সেঁটে দেয়া হয় তার চারিপাশ থেকে অনেক কুশি বের হয়। আর আপনারা তো রীতিমতো জানেন বটো বৃক্ষের পাতা খুব সুন্দর ও মোটা বড় হয়ে থাকে। ঠিক তেমনি আমাদের বাড়িতেও হয়ে থাকে। আর পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পাওয়াতে, বৃষ্টির পানি হলে গাছটি আরো সতেজ হয়ে আবার কুশি বড় হতে থাকে। বৃদ্ধি পাওয়ার চেষ্টা হয়, পুনরায় কেটে দেওয়া হয়, এভাবেই দীর্ঘ কুঁড়ি বছর লক্ষ্য করে আসছি। |
ছোটবেলায় আব্বুকে দেখেছিলাম যে গাছটি তুলে অন্য কোথাও লাগানো যায় কিনা সেই চেষ্টা করতে কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থ হয়েছে এর জন্য যে গাছটি তোলার আগেই দেয়াল ভেঙে পড়ে যাবে। তাই গাছটি এভাবেই দীর্ঘ বছর চলতে থাকলো সময়তে সময়তে অনেক কুশি হয়, মানান পাতা জন্মায়। জায়গাটা একটু বন-জঙ্গল আকার ধারণ করে থাকে আবার কেটে দেওয়া হয়। এমন একদিন লক্ষ্য করা গেল যে ওই বটবৃক্ষের শিকড় অনেক হয়ে গেছে আর তারই পাশদিয়া দেয়ালের ফাটা চেরা অংশ। অবশ্য আপনাদের জানা দরকার দেয়ালটি কিন্তু ১০ ইঞ্চির গাথনি অর্থাৎ দুই ঈটের দেওয়াল। |
Photography device: Infinix hot 11s
Location
একদিন আমাদের পরিবারের মানুষেরা লক্ষ্য করল যে দেওয়ালের মধ্যস্থানে কোন একটি কিছুর মুখ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কেউ বুঝতে পারলো না এটা কিসের মুখ। কেউ মনে করছে বড় গিরগিটি অথবা কোন কুনো ব্যাঙ ওখানে উঠে বসে আছে। তাই কেউ বেশি গুরুত্ব করল না। এভাবেই অনেক দিন পার হতে থাকলো বটগাছের কুশি বড় হতে থাকলো কিছুদিন পরে আবার সেই কুশি কাটতে গিয়ে লক্ষ্য করা গেল বট বৃক্ষের শিকড় এর পাশে ওটা একটি সাপ। সাপ দেখে তো সব ভয়ে অস্থির। কারণ মাটির গাঁথুনি ঘর বা দেওয়ালে স্বাভাবিক কোন সাপ উঠে বসে থাকে না। হয় সেটা যেকোন প্রকার বিষধর সাপ। |
পরিবারের অনেকেই সজাগ হয়ে গেল যে এই দেওয়ালে নিশ্চয়ই কোন বিষাক্ত বা মারাত্মক সাপ রয়েছে। দেখার জন্য এবং বের করার জন্য অনেক চেষ্টা করল কিন্তু কিছুতেই সম্ভব হয়নি। যেহেতু দুই ইটের গাঁথুনি ভেতরে কোন একটি স্থানে এসে প্রবেশ করেছে। আবার দেওয়াল ভাঙা যাচ্ছেনা বটবৃক্ষ নষ্ট করা যাচ্ছে না। এমনে থমথমে একটি অবস্থা আমাদের বাড়িতে বিরাজমান। হঠাৎ একদিন সন্ধ্যাবেলায় খেয়াল করলাম আব্বা এবং আম্মার মধ্যে কিছুটা কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হচ্ছে পারিবারিক কোন একটি বিষয় নিয়ে। তবে আমি যতটা জানি সেই বিষয়ে আমার আমার পুরা নিষ্পাপ ছিল আমার কোন দোষ ছিলনা। অবশ্য ঝগড়াটা ছিল আব্বার করা বোকামি। না জেনে না বুঝে আর এক জনের সাথে ঝগড়া করা। |
Photography device: Infinix hot 11s
Location
এই ঝগড়াতে আমার আম্মা খুবই কষ্ট পেয়েছিল।আব্বার ব্যবহারে আমি ও আমার ভাই খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। আম্মার কোন দোষ নেই অযথা সন্ধ্যাবেলা করে ঝগড়া করেছিল। ঠিক তখনই আমার আম্মা মুখ দিয়ে এমন একটি কথা বের করল যে আমার সাথে অকারণে ঝগড়া করছো এর শাস্তি তোমার যে কোন মুহূর্তে আল্লাহর তরফ থেকে হয়ে যেতে পারে সাবধান থেকো। কারনে অকারণে আল্লাহর কোন নিষ্পাপ বান্দার সাথে ঝগড়াঝাটি করতে নেই। দুর্বলের উপর অত্যাচার করলে সে সবলকে আল্লাহ নিজেই শাস্তি দিয়ে থাকে। যাই হোক কথায় আছে না, গরিবের কথা বাসি হলেও ফলে। তার কয়েকদিন পরেই সন্ধ্যা বেলায় ঠিকই বটবৃক্ষের নিচে দিয়ে একটি কালাই বোড়া সাপ বের হয়ে এলো। যেহেতু পূর্বেই বলেছি দুইটি দেওয়াল ছিল দুই পাশে। দেওয়ালের মাঝ বরাবর গেট এর অবস্থান। আর বটবৃক্ষ টি গেটের খুবই নিকটে। |
Photography device: Infinix hot 11s
Location
সাপটি যখন বটবৃক্ষের পাশ দিয়ে বের হয়ে গেল লাইটের আলোর ছটায় আব্বু খেয়াল করেছিল কোন একটি কিছু যেন বটবৃক্ষের নিজদিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় দণ্ডায়মান। কোন কারণে খেয়াল না করায় পরবর্তীতে যখন গেটে খিল দেয়ার উদ্দেশ্যে আব্বু গেটের পাশে যান, জিনিসটি বটবৃক্ষের নিজদিয়ে আর নেই, সেটা যেন পায়ের কাছে পড়ে আছে। যেহেতু গেটের পাশে একটু অন্ধকার ছিল। রুমের ভেতর কার বাল্বের আলোর ছটা কোনরকমে সেখান লাগতো, তাই ক্লিয়ার বোঝা যেত না। আব্বার হাতে একটি টস লাইট ছিল। আলো জ্বালানোর সাথে সাথে দেখলেন পায়ের নিচে শার্ট হয়ে পড়ে আছে আড়াই হাত লম্বা একটি কালাই বোড়া সাপ। আর এক পা ফেললেই পা উঠে যেত সাপের গায়ে। আব্বা তখন অতি ভীত হয়ে লাঠি খোঁজা শুরু করলেন কিন্তু সাপটি সেখান থেকে নড়লো না। খুব দ্রুত লাঠি নিয়ে এসে সাপের চোখে লাইট মেরে সাপটিকে আঘাত করতে থাকলেন। তখন সাপটি খুব দ্রুত লাফিয়ে লাফিয়ে উঠতে থাকলো। অনেক আঘাতের পর মনে হল যেন সাপটি মারা গেছেন। কিছুক্ষণ পর আমার এক ছোট দাদা এসে পড়ে তাকে দেখানোর সাথে সাথে বললেন এটি কালাই বোড়া সাপ। এই সাপ দেয়ালের মধ্যে থাকে। মানুষের আওয়াজ পেলেই সে চুপ হয়ে থেমে যায় দূরে কোথাও পালায় না অথবা কামড়ানোর জন্য প্রস্তুতি নেয় না কিন্তু এই সাপের বিষ রয়েছে কামড় দিলে মানুষ সহজে মারা যায়। দাদার কথার সাথে যথেষ্ট মিল পাওয়া গেল। দাদা জানতে চাইলেন কোথায় ছিল। বলা হল সে বটবৃক্ষের নিচ দিয়ে বের হতে দেখা গেছে এভাবে। |
Photography device: Infinix hot 11s
Location
উনি বললেন এই সাপের কিন্তু এখনো জান বের হয়নি একে দ্রুত পুড়ে ফেলতে হবে ওর মুখের কাছে যেন কোন স্পর্শ না হয় এই সাপ সহজে মরে না। ছোট দাদার কথা শুনে আমরা আধাঘন্টা পর সাপটিকে রাস্তায় নিয়ে গিয়ে পুড়ানোর চেষ্টা করলাম, তখনই সাপটি লাফ দিয়ে উঠলো। লাঠি দিয়ে চেপে ধরে কাজ সমাপ্ত করা হলো। পরবর্তীতে অনেকেই বলাবলি করল যে সাপে এতদিন বের হয় না। মাঝেমধ্যে শোনা যায় দেখা গেছে। দেখা গেছে আর আজকে হুট করে বের হয়েছে। নিশ্চয় হয়তো কারণ ছিল। পরবর্তীতে আব্বা-আম্মার ঝগড়ার কথাটি উঠলো,সবাই বললো অকারণে মেয়েটার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছ। কেউ কেউ বলতে থাকলো এটা অনেক আগের সাপ, হয়তো অনেক আগে থেকেই এ দেয়ালের মধ্যে অবস্থান করেছিল বটবৃক্ষের নিচে, প্রচন্ড গরম পড়াতে বের হয়েছে। নানান জনের নানান কথা চলতে থাকলো। |
Photography device: Infinix hot 11s
Location
তবে যাই হোক শেই স্মৃতি আজ থেকে দশ বছর হয়ে গেছে। তবুও সে বটবৃক্ষ সেভাবেই আজ পর্যন্ত কেটে দেওয়া হয় এবং তার পর পরই কুশি বের হয়ে নতুন রূপ ধারণ করে। জানিনা কতদিন বটবৃক্ষ টি এভাবেই বেঁচে থাকবে। এই গাছটিকে আমার দাদা দাদি দেখে গেছেন, নানা-নানি দেখেছেন। উনাদের সকলের ইহকাল ত্যাগ করা অনেক বছর হয়ে গেল। ঠিক তারা যেভাবেই এই বটবৃক্ষকে দেখে গেছেন,তাদের সময় যেভাবে কাটা হত এই পর্যন্ত ঠিক সেভাবেই কেটে দেওয়া হয়। আবার নতুন কুশি জন্মায়। এভাবেই বৃক্ষটির জীবনকাল চলতে রয়েছে অবিরাম। দোয়া করবেন যেন এভাবেই দীর্ঘদিন বেঁচে সাথে। |
আশা করি,আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনি অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে বুঝতে ও শিখতে পেরেছেন। পোস্টটি উপস্থাপনা কেমন ছিল এবং এ বিষয়ে আপনার অনুভূতি কেমন, আমাকে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আপনার জন্য আমার পক্ষ থেকে শুভকামনা রইলো। |
💌আমার পরিচয়💌
আমি মোঃ নাজিদুল ইসলাম (সুমন)। বাংলা মাস্টার্স ফার্স্ট ক্লাস মেহেরপুর গভমেন্ট কলেজ। আমার বাসা গাংনী-মেহেরপুর। মড়কা বাজার, গাংনী,মেহেরপুর এ গ্রীনরেইন ল্যাবরেটরি স্কুল নামক প্রাইভেট প্রি-ক্যাডেট স্কুলের সহকারি শিক্ষক। ইলেকট্রনিক্সের যন্ত্রপাতি মেরামত ও সৌর প্যানেল নিয়ে রিসার্চ করতে পছন্দ করি। প্রাকৃতিক দৃশ্য ফটোগ্রাফি করা আমার সবচেয়ে বড় ভালোলাগা। দীর্ঘদিনের আমি পাঙ্গাস মাছ চাষী এবং বিরহের কবিতা লেখতে খুবই ভালোবাসি। |
পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
@sumon09
💖💞💞💖
আমার পরিচিতি | কিছু বিশেষ তথ্য |
আমার নাম | @sumon09🇧🇩🇧🇩 |
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | মোবাইল |
ব্লগিং মোবাইল | Infinix hot 11s |
ক্যামেরা | Infinix hot 11s এর camera-50mp |
আমার বাসা | মেহেরপুর |
আমার বয়স | ২৫ বছর |
আমার ইচ্ছে | লাইফটাইম স্টিমিট এর 'আমার বাংলা ব্লগ' এ ব্লগিং করা |
পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোষ্টে,ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ। |
বটগাছ আর সাপের কাহিনী টা পড়ে অসাধারণ লাগল। এ যেন একটা রুপকথার গল্প পড়লাম। আপনার ছোটবেলায় আপনি দেখছি দারুণ একটা অভিজ্ঞতার সম্মূখিন হয়েছেন। আসলেই আমাদের দেশের অনেক পুরুষ অকারণেই নিজের স্ত্রীর উপর রাগারাগি করে যা মোটেও ঠিক না। শেষ পযর্ন্ত যে সাপটা আপনার আব্বার কোনো ক্ষতি করতে পারে নাই এটাই অনেক। অনেক সুন্দর গুছিয়ে লিখেছেন ভাই।।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ ভাইয়া, খুব খুশি হলো। আপনি খুব সুন্দর ভাবে পড়েছেন দেখছি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বট বৃক্ষের সাথে,৩- ৪ পুরুষের পরিচয়,সেখানে কালাই বোড়া সাপটিও পুরোনো হতে পারে। জ্ঞানে ভরা বাস্তব গল্প।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ। খুব খুশি হলাম আপনার মন্তব্য পেয়ে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
খুবই চমৎকার একটা একটি পোস্ট লেখেছেন। আমি পড়েছি,,আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit