একজন সুদক্ষ কাঠমিস্ত্রির সাথে পরিচয় হওয়ার অনুভূতি

in hive-129948 •  2 years ago 

আজ - শুক্রবার

২০ মাঘ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ


আসসালামু আলাইকুম

IMG_20221009_124831_415.jpg




আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে আপনাকে স্বাগতম



হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাই-বোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। আজ আমি আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি একজন সুদক্ষ কাঠমিস্ত্রির সাথে পরিচয় হওয়ার মুহূর্ত তুলে ধরার জন্য। আর কথা না বাড়িয়ে এখনই মূল পরবে চলে যাওয়া যাক।


'আমার বাংলা ব্লগ'
কোয়ালিটি সম্পন্ন পোস্ট



ফটোগ্রাফি সমূহ:


১ নং ফটোগ্রাফি

চুল সাঁটানোর জন্য আমি একটি সেলুনে গিয়েছিলাম মড়কা বাজারে। যেহেতু এটা ছিল ২০২২ সালের অক্টোবর মাস। বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা, অনুষ্ঠান ১৯ নভেম্বর বাৎসরিক অনুষ্ঠান ছাড়া ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছিল সেইভাবে। যার জন্য চুল কেটে নেওয়ার সময় টা হয়ে ওঠে না। যাইহোক এই দিনটা ছুটির দিন হওয়ায় আমি উপস্থিত হলাম সেলুনের পাশে। কিন্তু লক্ষ্য করলাম অনেক ভিড়। তাই নিজের সিরিয়াল দেওয়া লাগলো দেড় ঘন্টা পরে আমার চুল কেটে দিবে। তাই আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম এখন কি করা যায়। প্রচন্ড গরম ছিল এই মুহূর্তে আমি স্থান খুঁজতে থাকলাম আমায় দাঁড়ানোর। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম একটি কাঠের নরমাল দোকান ঘর। তখন আমি মনোযোগ সহকারে এই কাটগুলি দেখছিলাম এবং কাঠমিস্ত্রি ভাই যে সমস্ত জিনিসগুলো তৈরি করে সেগুলো দেখছিলাম কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হলো সত্য যে দোকানটি ফাঁকা পড়েছিল দোকানের মধ্যে কোন লোকজন ছিল না যতক্ষণ। আমি এখানে এসেছি ততক্ষণ কোন লোকের চিহ্ন নেই দোকানটির মধ্যে। তবে দোকানের মধ্যে থাকা কাঠের ফ্যানটি আমাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল বারবার। এই যে সুন্দর একটি প্রতিভা আমাকে মুগ্ধ করেছে। কিছুক্ষণ পর লক্ষ্য করলাম একজনকে। একটি ক্যাপ মাথায় দেওয়া মানুষ এসে উপস্থিত হলো ওখানে। আমি যানছিলাম না উনি দোকানদার বা কাঠমিস্ত্রি। লক্ষ্য করলাম তার অনুভূতির, বিনয়ের সাথে আমার সাথে কথা বলা শুরু করলো। তারপরে আস্তে আস্তে কথার মাধ্যমে বুঝতে পারলাম উনি এই দোকানের মালিক এবং এই সমস্ত কাঠের কাজকর্মগুলো উনি করেন। তার সুন্দর সুদক্ষতার পাশাপাশি তার কথাবার্তার ব্যবহার ও সুযোগ্য ব্যক্তির মত।

IMG_20221009_124826_892.jpg

Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স


received_305654148004402.webp


২ নং ফটোগ্রাফি

এরপর উনার সাথে আমি পরিচিত হলাম। উনি আমার পাশের গ্রাম ষোল-টাকার মানুষ। যাই হোক সেও আমার পরিচয় নিলো আমিও তার পরিচয় নিলাম এভাবেই পরিচিত লাভ করলাম। তবে উনি বললেন তার নিজের গ্রামে থাকে না এখন সে গাংনীতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে এবং সেখান থেকে আসা যাওয়া করে। প্রথমত আমাকে প্রশ্ন করলেন আপনি কি কখনো কাঠের দোকানে যান নাই। আমি জবাবে বললাম হ্যাঁ একবার মাত্র গিয়েছি একটি টেবিল তৈরি করে নেওয়ার জন্য এক বছর আগে। তবে এভাবে কখনো কারোর সাথে অতি নিকট থেকে কথা বলা হয়নি। আমি সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য বোধ করছিলাম দোকানের মধ্যে কাঠের তৈরি এই ফ্যানটি দেখে। তাই কাঠ মিস্ত্রি ভাইয়ের সাথে অনেকক্ষণ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার মধ্য দিয়ে জানতে পারলাম তার দীর্ঘ ২৫ বছরের কাঠমিস্ত্রি কাজ করার কথা। আমি যখন উনার সাথে সেলফি উঠছিলাম অনেক খুবই আনন্দ বোধ করেছিলেন এবং বলেছিলেন ফেসবুকে দিয়ে দিতে। তবে আমি তাকে বলেছিলাম আমি অন্য কোন স্থানে দেবো যেখানে খুব কম সংখ্যক মানুষ দেখলে তবে আজীবন থেকে যাবে। যাইহোক আজ আপনাদের মাঝে তুলে ধরার সময় হয়েছে এই সুদক্ষ ব্যক্তির পরিচয়টা।

IMG_20221009_125546747_BURST0002.jpg

IMG_20221009_125550127_BURST0010.jpg

IMG_20221009_124616_054.jpg

Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স


received_305654148004402.webp


৩ নং ফটোগ্রাফি

উনি আমাকে বলেছিলেন প্রতিমাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা লাভ করে থাকে এই কাঠের কাজ করে। আর সে বিভিন্ন গাছ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গাছ কিনে কাট ফেড়ে বিভিন্ন প্রকার আসবাবপত্র তৈরি করে থাকেন। উনি প্রথমে আমাকে তার পরিচয় দেয়ার পাশাপাশি মোবাইল নাম্বার দিয়েছিলেন যে যেন যোগাযোগ রাখি। উনি আমাকে বলছিলেন আপনাকে প্রায় আমি এই পথে চলাচল করতে দেখি কিন্তু কোনদিন কথা হয়নি। আমি ওনাকে প্রশ্ন করেছিলাম কাঠের নকশা জাতীয় কাজগুলো কিভাবে করে থাকেন। তিনি আমাকে উত্তর দিয়েছিলে নকশা জাতীয় জিনিসগুলো উনি বাইরে থেকে তৈরি করে নিয়ে আসেন। আবার আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন আপনি এদিকে কোথায় যান। আমি উত্তর দিয়েছিলাম আমি আপনাদের বাজারের 'গ্রীনরেইন ল্যাবরেটরি স্কুল' এর একজন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছি ছয় মাস আগে। তখন তিনি বললেন আমার জানা ছিল না তবে আপনাকে অনেক দিন আগে থেকেই লক্ষ্য করি আপনি এই পথে চলেন। তখন আমি তাকে জবাবে বললাম যে আমি অনার্স মাস্টার্স মেহেরপুর গভমেন্ট কলেজে পড়েছি তাই এ বাজার দিয়ে যাওয়া আশা করি। এই বাজারে এসে থামি এবং যাই। এরপর উনি আমার কথায় মনোযোগী হলেন এবং প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকলেন। অনেক বিষয় সম্পর্কে আমি জানতে চেয়েছিলাম উনার কাছে। কত হাজার টাকার কাঠ কেনা লাগে, গাছ কেনা লাগে, উনি কি কি তৈরি করতে পারেন, উনি সব কিছুর সুন্দর উত্তর দিলেন এবং একটি বাসার কাঠ জাতীয় প্রয়োজনীয় সব কিছুই তৈরি করতে সক্ষম। আমি থাকার মুহূর্তে একটি খাটের নকশা আঁকছিলেন। খাট্টি নাকি আমাদেরই এক চাচার।

IMG_20221009_125438_683.jpg

IMG_20221009_125436_344.jpg

IMG_20221009_124705_357.jpg

IMG_20221009_124841_091.jpg

IMG_20221009_125741_982.jpg

Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স


received_305654148004402.webp


৪ নং ফটোগ্রাফি

কাঠমিস্ত্রি ভাই আমাকে বলছিলেন আমি মানুষের সাথে এভাবেই নরম সুরে কথা বলি এবং সুন্দর ব্যবহার করি কিন্তু অনেক মানুষ আমার সাথে খারাপ আচরণ করে থাকে কিন্তু তাতে আমি কোন কিছুই মনে করি না কারণ মানুষ দুনিয়াতে সামান্য কিছু দিন বেঁচে থাকে। আর মানুষের জিনিসটাই বুঝতে চায় না, যে মানুষের সাথে সুন্দর সাহায্যপূর্ণ আচরণ করে বেঁচে থাকতে হয়। আমি ওর যত কথা শুনছিলাম তত মুগ্ধ হতে থাকছিলাম কারণ সে মনে হচ্ছিল আমার মনের কথাগুলো পূর্ব থেকেই জানে এবং সেভাবেই পথ চলে। উনি লেখাপড়া বেশি করেন নাই তবে উনার সুন্দর প্রতিভা এবং কথা বলার ধরন আমাকে মুগ্ধ করেছিল। আমি যখন ওনার পাশে ছিলাম উনি তখন আমাকে জানালেন যে উনি বিভিন্ন নকশা আকৃতির খাট-পালন তৈরি করে থাকেন। এখন যেটা তৈরি করছে ঠিক সেভাবেই তৈরি হবে। নরম সুরে এত সুন্দর কথাবার্তা বলা লোক খুব কম সংখ্যক পাওয়া যায় এই দুনিয়ায়। তুমি আমাকে জানিয়েছিলেন বাজারের একদম সুন্দর জায়গাতে কাজ করতেন কিন্তু বিভিন্ন মেশিন ব্যবহারে আর সৃষ্টি হয় যা বাজারের লোকজনের সমস্যা বোধ করে তাই বাজার থেকে কিছুটা ভিতরে জায়গা নিতে হয়েছে কিন্তু যারা কাঠের জিনিস তৈরি করতে আসবে তারা আমাকে খুঁজে পায় না তার পরেও আমি নিরবে মেনে নিয়েছি। আমি ওনাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম কাঠের কিছু জিনিস আপনি বাজারে সামনে রেখে দিবেন আপনি যেখানে কাজ করছেন তার সম্মুখপানে যেন অন্যরা জানতে পারে যে এখানে কাঠের কাজ এখনো চলে। উনি বললেন সামনের একটি দোকান আমি নিব কথা কারণ হয়ে গেছে এবং যা তৈরি করব দোকানের সামনে রাখে দেবো এবং যখন তৈরি করব সেগুলো এই পাশ থেকে তৈরি করে নিয়ে যাব জানো বাজারের অন্যান্য মানুষের সমস্যা না হয় আমার কাজ করার সাউন্ডে। আমি বললাম এই বুদ্ধিটা ঠিক করেছেন। বললেন বাজার কমিটির সদস্যরা আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন বাজারে ঠিকভাবে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে যেন কাজ করতে পারি। এভাবেই অনেকক্ষণ তার সাথে কথা হল। উনার অনেক দুঃখ মুলক কথা বার্তায় যথেষ্ট সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। আর এভাবেই তার সাথে ঘনিষ্ঠ পরিচয় লাভ করলাম। এখন দেখা হলে উনি দূর থেকে আমাকে সম্মান দিয়ে বলেন স্যার ভালো আছেন। দিনকাল কেমন যাচ্ছে ইত্যাদি কথা। আর এভাবে প্রতিনিয়ত ওনার কর্মব্যস্ত মুহূর্ত লক্ষ্য করে তাকে চলতি পথে।

IMG_20221009_124640_526.jpg

IMG_20221009_124637_125.jpg

IMG_20221009_140428_572.jpg

Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স


received_305654148004402.webp

R6TbvATub8MquGoqJZ4SE2UCpaUQzmNnWQxvJGwvYApXWE4KsVzC8vNNXWgtz7hrfoYPSrjupZgj7VtKhrH935ua1PLs4Vr7KiYnVAy3oD...tCNiac63XNuwJJZPbTjHfGPYJH4BJoHgX8HdohSPrSasKvArV8wiiFV7ntYqz66tLZiqG67BKrPAveZFRs3vaqucpJgsaE3qA6Rwasb2fYDx3U5dXGLwwRdyH8.png


আশা করি,আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনি অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে বুঝতে ও শিখতে পেরেছেন, সেই সাথে নতুন জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন। পোস্টটি উপস্থাপনা কেমন ছিল এবং এ বিষয়ে আপনার অনুভূতি কেমন, অবশ্যই কমেন্ট বক্সে আমাকে জানাতে ভুলবেন না। আপনার জন্য আমার পক্ষ থেকে শুভকামনা রইলো।

💌আমার পরিচয়💌


আমি মোঃ নাজিদুল ইসলাম (সুমন)। বাংলা মাস্টার্স ফার্স্ট ক্লাস মেহেরপুর গভমেন্ট কলেজ। আমার বাসা গাংনী-মেহেরপুর। মড়কা বাজার, গাংনী,মেহেরপুর এ গ্রীনরেইন ল্যাবরেটরি স্কুল নামক প্রি-ক্যাডেট স্কুলের সহকারি শিক্ষক । ইলেকট্রনিক্সের যন্ত্রপাতি মেরামত ও সৌর প্যানেল নিয়ে রিসার্চ করতে পছন্দ করি। প্রাকৃতিক দৃশ্য ফটোগ্রাফি করা আমার সবচেয়ে বড় ভালোলাগা। দীর্ঘদিনের আমি পাঙ্গাস মাছ চাষী এবং বিরহের কবিতা লেখতে খুবই ভালোবাসি।




পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

image.png

image.png

আমার পরিচিতিকিছু বিশেষ তথ্য
আমার নাম@sumon09🇧🇩🇧🇩
ফটোগ্রাফি ডিভাইসমোবাইল
ব্লগিং মোবাইলInfinix hot 11s
ক্যামেরাcamera-50mp
আমার বাসামেহেরপুর
আমার বয়স২৬ বছর
আমার ইচ্ছেলাইফটাইম স্টিমিট এর 'আমার বাংলা ব্লগ' এ ব্লগিং করা

zr7XQBzuvvkjgjjPxunUtP5k84gxgWc4mR8PqdBj5rx8AtXSSugGPwSy7JKyM3rgX4k3arRVPC2wT66DqiAYg2UuYrHpE94NCJsYEnjKP7Erbg.png


পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

সত্যি ভাইয়া সুদক্ষ কাঠমিস্ত্রির ভাইয়ার কাজ কর্ম দেখে সত্যিই খুব ভাল লাগলো। ফ্যানটার দিকে তাকালে উনার কাজের পরিচয় বুঝা যায়। আমাদের গ্রামগঞ্জে এমন অনেক মানুষ রয়েছে যাদের ভিতরে অনেক প্রতিভা লুকিয়ে আছে। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

এত সুন্দর প্রতিভা আমাকে মুগ্ধ করেছিল