আজ আর নেই আমাদের প্রিয় 'রোমান্টিক'

in hive-129948 •  last year 
আসসালামু আলাইকুম

IMG_20230618_111800_240.jpg





হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। আজ আমি আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে চলেছি আমাদের প্রিয় ছাগল দুইটার কথা, যে ছাগলের মধ্য থেকে আজ আর বড় শিংওয়ালা রোমান্টিক ছাগলটি নেই যাকে কোরবানি করা হয়েছে আসন্ন ঈদুল আযহার কোরবানিতে। তবে তাদের সাথে কাটানো কিছুটা আনন্দঘন মুহূর্ত আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে চলেছি। তাই চলুন আর দেরি না করে এখনি বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক।


ফটোগ্রাফি সমূহ:



যারা বাসায় পশু পাখি পুষে থাকেন তারাই অবশ্যই জানেন পশু পাখির কতটা মায়া। তবে প্রতিবারের ন্যায় এবারও আমাদের নিজেদের ছিল পোশাক প্রাণী ছাগল। গতবারের ন্যায় এবারও ঠিক আমাদের আসন্ন ঈদুল আজহার কোরবানির ঈদে কোরবানি ছিল আমাদের নিজের হাতে পোষা প্রাণি ছাগল। ছাগলটি আমাদের নিজের বাসায় জন্মগ্রহণ করেছিল অর্থাৎ আপনারা ফটোগ্রাফিতে দেখতে পারছেন যে ছাগলটি সেটা আমাদের নিজের বাড়ির একটি অতি আদরের এবং অতি প্রিয় ছাগল। এরা দুইটা ভাই সব সময় একই সাথে চলত আর একই সাথে খেলা খেলতো। আমি যখন মাঠের পুকুর থেকে অথবা স্কুল থেকে বাসায় ফিরতাম রেস্ট নেওয়ার জন্য চেয়ার পেতে আমাদের পুকুরপাড়ের বসতাম তখন তারা দুইটা ভাই আমার পাশে আসতো এবং আমার সাথে একটু পাগলামি দেখাতো। অবশ্য এই ছাগল দুইটার পাগলামি দেখতে আমার অনেক ভালো লাগতো। বাড়িতে শুধু এই দুইটাই নয় এছাড়াও আরো চার-পাঁচটা ছাগল রয়েছে। তবে এরা দুইজন সবচেয়ে বড়, আর এদের সুন্দর পাগলামি যেন মন কেড়ে নিতো। আমাদের বাড়িতে দুইটা পুকুর রয়েছে বাড়ির উত্তর সাইডে এবং দক্ষিণ সাইডে। তবে আমরা দক্ষিণা হাওয়া উপভোগ করার জন্য দক্ষিণ সাইটের পুকুর পাড়ে একটি সুন্দর মাচা তৈরি করেছি, যেখানে রেস্ট নেওয়া হয়ে থাকে। অবশ্য এখানে লকডাউনের সময় আমার ভাই ছাত্র-ছাত্রী পড়াতো। আলহামদুলিল্লাহ এখন করোনার আবির্ভাব কমে গেছে বলেই আমাদের এখানে আর ছেলে মেয়ে পড়াতে হয় না, ভাই স্কুলে পড়িয়ে থাকে। তাই বর্তমান এই স্থানটিতে আমাদের রেস্ট নেওয়ার অন্যতম জায়গা হয়েছে, প্রচন্ড গরমের দিনে এখানে রেস্ট নিয়ে থাকি, পাশাপাশি আমাদের পরিবারের ছাগলগুলো আমাদের পাশে বসে থাকে। গত কয়েকদিন আগে আমি যখন ঠিক একই ভাবে রেস্ট নেওয়ার জন্য এই স্থানে অবস্থান করছিলাম তখন ছাগল দুইটা আমাকে দেখে আমার পাশে আসলো।

IMG_20230618_112253_593.jpg

IMG_20230618_112257_114.jpg

IMG_20230618_112306_087.jpg

IMG_20230618_112311_046.jpg

IMG_20230618_111802_041.jpg

IMG_20230618_111836_366.jpg



আমি তখন নীরবে বসে ছিলাম, দেখতে চাইছিলাম এরা দুইজন আমার আশেপাশে এসে কি করে। তবে এদের পাগলামিটা যেন মন ভরে যেত। ঠিক ওই মুহূর্তেও কিন্তু আমাদের পরিবারের ফিক্সড হয়েছিল না এবার আসন্ন কুরবানীর ঈদে কোন ছাগলটা কোরবানি করা হবে। তবে এটা নির্ধারণ করা ছিল যে এবার আসন্ন কোরবানিতে কোন ছাগল কিনে আনা হবে না এই দুইটার মধ্য থেকে একজনকে পবিত্র দিনের পথে কোরবানি দেওয়া হবে। ইতপূর্বে এদের প্রতি আমার তেমন একটা মায়ার মনোভাব বা স্নেহ দেওয়ার মনোভাব ছিল না, তবে যখন দেখলাম ঈদের দিন খুব সন্নিকটে ঘনিয়ে আছে আস্তে আস্তে তখন থেকে এদের প্রতি যেন আমার মায়ের মনোভাবটা দিন দিন বাড়তে থাকলো যখন মেয়েরা আমার পাশে অবস্থান করতো খুবই মায়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাদেরকে স্নেহ দেওয়ার চেষ্টা করতাম আর এরাও ঠিক আমার কাছে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে পড়তো আনন্দঘন নিয়ে। এদের মধ্য থেকে দুই জনই যখন তখন গায়ের লুঙ্গি অথবা জামা অথবা গেঞ্জি ধরে টান দিত, কেউ হাত পায়ের পশম ধরে টান দিত, আবার কেউ জিহবা দিয়ে গায়ের যে কোন জায়গায় চেটে দেওয়ার চেষ্টা করত, আবার মাঝে মাঝে দুই শিং লাগিয়ে হাতে অথবা পায়ে ঠেলা দিত। তাদের এই সমস্ত পাগলামি গুলো মাঝে মাঝে বিরক্ত বোধ করতাম আবার মাঝে মাঝে আনন্দ হয়ে মুখে চোখে হাত বুলিয়ে দিতাম। সেই এক থেকে দেড় বছর আগে আমাদের পরিবারের জন্ম খুবই স্নেহ মায়া মমতা দিয়ে এদেরকে লালন পালন করা হয়েছে। সিং বড় ছাগলটা অর্থাৎ যাকে কোরবানি করা হয়েছে তার নাম ছিল 'রোমান্টিক'। সেই ছোট ছোট ছাগলটা ওর নাম ছিল 'পাগলা'। পাগলা অতি আদর প্রিয়। রোমান্টিক টা একটু মেসলা টাইপের। মাঝে মাঝে হয়তো তাদের দুষ্টামির কারণে দুই একটা চড় থাপ্পড় খেয়েছে। আবার আদর পেয়েছে কিন্তু এই দিন তাদের দুই ভাইয়ের জীবনে একটি করুন অনুভূতি সৃষ্টি হবে তা হয়তো পূর্বে ভেবেছিলাম না।

IMG_20230618_112119_536.jpg

IMG_20230618_112127_897.jpg

IMG_20230618_112130_318.jpg

IMG_20230618_112132_554.jpg

IMG_20230618_112144_963.jpg

IMG_20230618_112146_197.jpg



ঈদ ঘনিয়ে আসার পূর্বে আমি মাঝে মাঝে বাড়িতে আব্বা অথবা ভাইকে প্রশ্ন করতাম কোন ছাগলটিকে কোরবানি করা হবে এবার ঈদে? তবে বাড়ি থেকে আমি উত্তর পেতাম যেটা ভালো লাগে সেটাকেই কোরবানি করা হবে যার। দেখবো একটু শরীর-স্বাস্থ্য ভালো মাংস বেশি হয় সুস্থ সবল মনে হয় ঠিক তাকে কুরবানী করাটাই উচিত। তবে মাঝেমধ্যে এমনটা কনফিউজড হয়ে যেতাম শিং বড় ছাগলটার কোরবানি করলে বেশি ভালো হবে নাকি শিং ছোটটার? শিং ছোট ছাগলটা একটু আল্লাদি টাইপের ছিল, যে কোন মুহূর্তে কাছে আসতো এবং কলের মধ্যে মাথা দিয়ে নক করে দাঁড়িয়ে থাকতো কোন বেয়াদবি করত না আবার বাড়িতে তেমন বেশি একটা জ্বালাইতো না। এদিকে উরি বড় ভাই সিং বড় ওয়ালা ছাগলটা মাঝেমধ্যে খুবই ঝামেলা সৃষ্টি করত, একটু উড়নচণ্ডী টাইপের আবার কিছুটা ম্যাচলা মত। যেকোনো মুহূর্তে ডাকাতের মত এই সেই খাবার নিয়ে খেয়ে ফেলতো, বাড়ি থেকে এই দিক থেকে ওদিকে লাফিয়ে চলতো। তবে তার এই উড়নচন্ডীর স্বভাবের কারণে একেক জনের হাতে মার খেতো। মার খাওয়ার পরেও যেন তার পাগলামি কমতো না। সবকিছুর মাঝে এই দুইটা ছাগল যেন ছিল বাড়ির সকলের অতি আদরের এবং অতি প্রিয়। তাদের দুজনার জন্য আলাদা ছিল খাবারের আইটেম। বাড়ির অন্যান্য ছাগলের যে সমস্ত খাবার দেওয়া হতো তার এদের জন্য এক্সট্রা ভাবে দানাদার খাবার দেওয়া হতো। ঈদের দুইজনার চেহারা দেখতে যেমন মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর তেমন অতি আদরে দিনকাল চলতো। তবে আজকের দিন তাদের জন্য সত্যি খুবই মায়া লাগে। আমি নিজ হাতে তাদের অনেক খাওয়াইছি একত্রে এক স্থানে বসে। আজ শুধু সেই ছোট ছাগলটি রয়েছে যে অতি আদরের। মনে হয় যেন আজও একলা পড়ে গিয়ে খুবই কষ্টে রয়েছে ওর মুখপানে তাকানো যায় না। ছাগলটি আমার সঙ্গে অর্থাৎ নিজের ভাইটাকে হারিয়ে বড় অসহায় হয়ে গেছে এদিকে প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে বাইরে কোথাও চলতে পারে না। এদের কারণে বিভিন্ন আত্মীয় বাড়িতে চলতে হচ্ছে যার জন্য ওকে একটু সময়ও দিতে পারছি না কিন্তু এই যে অতি আদরের ছাগল আমাদের। যারা পোশাক প্রাণীর প্রতি মায়া মমতা পোষণ করেন তারাই জানে কতটা স্নেহের ধন এগুলা।

IMG_20230618_112151_113.jpg

IMG_20230618_112205_928.jpg

IMG_20230618_112215_834.jpg

IMG_20230618_112221_092.jpg

IMG_20230618_112223_633.jpg


পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif


পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

এমন পরশু দিয়ে কোরবান দিতে বেশি মায়া লাগে ।নিজের পালিত পশুর প্রতি ভালোবাসা একটু বেশি থাকে। আর এরকম পশু দিয়ে কোরবান দিলে সওয়াব দ্বিগুণ হয়। কারন নিজের ভালোবাসাকে কোরবান দিয়ে দিচ্ছে। সত্যিই অবলা প্রাণীগুলোও তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারে দুষ্টামির মাঝে। যেমন শিং দিয়ে গুতা দেওয়া, আপনাকে চেটে দেওয়া,এগুলো এক ধরনের ভালোবাসা। যাইহোক আপনার কাছে খুবই খারাপ লাগছে ছাগলটির জন্য কারণ এখন আর আপনার প্রিয় ছাগলটি আপনার সাথে নেই।

একদম ঠিক কথা বলেছেন আপু

মামা আপনি আজকে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আজ আর নেই আমাদের প্রিয় রোমান্টিক কোরবানি নিয়ে একটি পোস্ট। আসলে ঈদুল আযহার এই উৎসবে আমাদের অনেক ত্যাগের বিনিময়। আমাদের সকলেই আল্লাহতালা সন্তুষ্ট লাভের উদ্দেশ্যে কোরবানি করে থাকে। আসলে ছাগল কোরবানি করে আজ আর নেই এই বিষয়ে আপনি একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন পরিবেশ ভালো লেগেছে।

হ্যাঁ আমাদের রোমান্টিক ছাগলটা সত্যি রোমান্টিক ছিল

আপনার পোস্টটি পড়ে খুবই আবেগী হয়ে গেলাম ভাই । ছাগলের প্রতি আপনার মধ্যে অন্যরকম মায়া কাজ করছে।। সত্যি গৃহপালিত পশুপাখির প্রতি একটা অন্যরকম মায়া ভালোবাসা কাজ করে। প্রাণীর প্রতি মায়া মমতা সত্যি খুব অন্যরকম। প্রিয় প্রাণীটি যখন থাকে না তখন নিজের কাজে খুবই শূন্যতা মনে হয়। এত সুন্দর পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

কিছু করার নেই ভাই নিজের পোষা ছাগল

আসলে কোরবানির নিয়মই হচ্ছে নিজের সব থেকে প্রিয় পোশা প্রাণীটিকে কোরবানি করা ।আপনারা বেশ ভালোই করেছেন বাজার থেকে না কিনে এনে নিজেদের পোষা প্রাণীটিকে কোরবানি দিয়েছেন। বিষয়টা বেশ ভালো লাগলো ।আসলে পোষা প্রাণী কোরবানি দিলে সেটা সব থেকে বেশি গ্রহণযোগ্য হয় বলে শুনেছি । যাইহোক দুটি ছাগল একসাথে বেড়ে উঠেছে , একটি আরেকটিকে ছাড়া এখন অসহায় হয়ে পড়েছে ব্যাপারটা বেশ কষ্ট লাগল। আসলে নিজের পোষা প্রাণীর প্রতি সবারই অন্যরকম মায়া থাকে। ধন্যবাদ আপনাকে।

হ্যাঁ একদম ঠিক কথা বলেছেন আপু