হ্যালো বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট।
ছোটবেলার সময়টা সকলের স্মৃতিময় হয়ে থাকে। আর হয়ে ওঠে মধুর। কারণ সেই সময়টা খুঁজে পাওয়া যায় না, শুধু স্মৃতির পাতা স্মরণ করে আমরা আনন্দ অনুভব করে থাকি। আমাদের সকলের জীবনের ছোটবেলার বিভিন্ন ঘটনা রয়েছে। যে সমস্ত ঘটনাগুলো আমাদের যে কোন মুহূর্তে কোন কিছু দেখলে বা শুনলে ওই পর্যায়ের হয়ে থাকলে স্মরণ হয়ে যায়। আর কিছুটা সময়ের জন্য ভালোলাগা অনুভব করে থাকি স্মৃতি স্মরণ এর মধ্য দিয়ে। ঠিক তেমনি একটা স্মৃতিময় ঘটনা আজকে আমি আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে এসেছি। অন্যান্য ঘটনার মধ্যে এটা হচ্ছে নারিকেল কুড়িয়ে পাওয়ার ঘটনা।
আমি তখন খুবই ছোট। আমাদের প্রাইমারি স্কুলটা গ্রামে। আমাদের প্রাইমারি স্কুলে যাওয়ার পথে ছিল একটি নারিকেল বাগান। সম্ভবত সেই বাগানটা আমি আপনাদের কোন পোস্টে দেখিয়েছি,যাইহোক এই মুহূর্তে বাগানটার ফটো নেই আমার কাছে। আপনারা জানেন প্রাইমারি স্কুল শুরু হয় সকাল দশটার দিকে। আমি তখন খুব সুন্দর ভাবে সেজেগুজে স্কুলে যাচ্ছিলাম না, একদম নরমাল ভাবে চলছিলাম। মাঝে মধ্যে স্কুলে যেতাম একা একা তেমন বন্ধুদের সাথে যাওয়া হত বা হতো না। যেহেতু ছোট ছিলাম বুঝতেই পারছেন বন্ধুরা দল বেঁধে অনেকেই চলে যেত সাথে যেতাম অথবা একা যেতাম। যাই হোক হাফপ্যান্ট পরে পায়ের স্যান্ডেল আছে কি নেই ঠিক স্মরণ হচ্ছে না। আমাদের সময় তো তত বেশি সাজা গুজা থাকতো না কোন রকমে স্কুলে চলে যেতাম। তখন আমাদের রাস্তাটা সবে মাত্র পাকা হয়েছে ২০০২ সাল এর দিকে হতে পারে। নিয়মিত স্কুল যাওয়া হতো আবার নিয়মিত যাওয়া হতো না। যেদিন আব্বা বেশি মারধর করত বকতো সেদিনকেই ভয় পেয়ে পরপর স্কুলে যেতাম।
যাইহোক ঐদিন আমি একলা স্কুলে গেলাম। স্কুলে বন্ধুদের সাথে একটু মন খারাপই সৃষ্টি হল। আমি কখনো কারোর গায়ে হাত তুলতাম না বরঞ্চ অন্যরাই আমার গায়ে হাত তুলতো। আমি একটু ঠান্ডা প্রকৃতির ছিলাম। তবে বন্ধুদের সাথে খারাপ আচরণ না করে একলাই বসে বসে কান্না করে চুপ থাকলাম। এদিকে হঠাৎ প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হল। যখন প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হতো স্কুল ঘরটা ছিল টিনের চাল। তাই এই মুহূর্তে স্যারের কথা শোনা যেত না, ছেলেমেয়েরা চেঁচামেচি করত বলে স্যাররা অফিসে চলে যেত। যে যার মত ইচ্ছে করে খেলাধুলা করতো। কেউ পানিতে ভিজত। আবার কেউ ঘরের মধ্যে কলম খেলা করত। আর এই সমস্ত দৃশ্যগুলো আমি দেখছিলাম। যেহেতু মনটা বেশ খারাপ ছিল।
আমাদের সময় প্রাইমারি স্কুল যেহেতু বারোটার আগ দিয়ে ছুটি হয়ে যেত সকল বন্ধুরা যে যার মত তাদের বাড়িতে চলে যেত। ঐদিন বৃষ্টি হয়েছে তাই বন্ধুরা কেউ একসাথে কারো সাথে নিয়ে যাচ্ছে না, নতুন রাস্তা হয়েছে তাই আমাদের পাড়ার ছেলেরা রাস্তা দিয়ে নিজেদের মতো হেঁটে হেঁটে চলে গেল। আর এই মুহূর্তে মনটা আমার বেশ খারাপ থাকায় আমি আর রাস্তা দিয়ে না যেয়ে আস্তে আস্তে একা একা বাড়ির দিকে হাঁটলাম বাগানের দিক দিয়ে, এই রাস্তায় নিজের পথ চলতে ভয় লাগতো। আপনারা একটা বিষয় ভালো করে জানেন ছোটরা খেলে লজ্জা নেই বড়রা খেলে লজ্জা এর মানে হচ্ছে আছাড় খাওয়া। ঠিক কিছুটা পথ পার হতে একটি গোরস্থান ছিল। গোরস্থানের পাশ দিয়ে চলতেই পিছলে পড়ে গেলাম। গা হাত পায়ে কাদা লেগে গেল। তখন মনে হলো রাস্তা দিয়ে না গিয়ে এমনি আসাটা আমার আরো ভুল হয়েছে, এমনিতেই মন খারাপ কেউ জানি আমাকে মেরেছিল। আবার পিছলে পড়ে গেলাম মনটা যেন আরো বেশি খারাপ হয়ে গেল। এরপর উঠে বাঁশ বাগানের নিচ দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম এরপর ছিল কয়েকটা আমের গাছ অর্থাৎ আমবাগান। আমবাগান পার হয়ে রয়েছে এক পাশে বড় নারিকেল বাগান, আরেক পাশে রয়েছে বড় একটি পুকুর। আমি তখন ওই মুহূর্তে মনে করলাম এখানে গোসল করে বাড়ি যাব নাকি, কারণ এই পুকুরে গোসল করতে আসতাম আমরা। কবে কখন সাঁতার কাটা শিখেছি সেটা জানি না, তবে যাই হোক একলা থাকায় গোসল করতে ইচ্ছে হয় তারপরেও গোসল করলাম না। কারণ ভাই পাশে থাকলে সে যা বলতো আমি সেটাই শুনতাম কিন্তু একা চলতে গেলে বেশ ভয় পেতাম আমি।
এরপর সামনে কিছুটা পথ এগিয়ে আসতে দেখলাম বড় পুকুরের একটি কর্নার অংশ যেখান দিয়ে পানি বের হতো, সে জায়গাটা একটু বেশি গর্ত তারপরে রয়েছে নারিকেল বাগান। গর্ত পার হতেই দেখলাম বড় একটি ঢোড়া সাপ। সাপটা দেখে বেশ ভয় লাগছিল আবার ভয় পাচ্ছিলাম না, যেহেতু ঢোড়া সাপ। আমি গ্রামের ছেলে ছোট থেকে এসব সাপ দেখে অভ্যাস যার জন্য ওই মুহূর্তে একাধিকবার দেখা হয়ে গেছে বলেই তো ভয়টা ছিল না। কি আর করার সাপটা আমার পাশ দিয়ে পানিতে নেমে পরল। এরপর আমি নিরবে নারিকেল বাগানের মধ্য দিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম যেহেতু ছোট মানুষ নারিকেল বাগানটা বেশ বড় মনে হচ্ছিল আমার কাছে। নারিকেল গাছের গোড়ায় গোড়ায় ছিল বিভিন্ন প্রকার ঝনঝনি গাছ কারণ আমরা জানি দুই তিন ধরনের এই জাতীয় গাছ হয়ে থাকে। গ্রামের মানুষ সব গাছগুলোকে ঝনঝনি গাছ বলে চিনে থাকে। যাইহোক সে গাছের মধ্য দিয়ে আমি হাঁটতে শুরু করলাম, গাছগুলো থেকে আমি একটু বড়। এরপর যেতে যেতে পথে একদম চোখের সামনে একটা মোটা নারিকেল পড়ে রয়েছে। আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম কি ব্যাপার বৃষ্টি তো সেই কখন হয়েছে,এতক্ষণ কি এই পথ দিয়ে কোন মানুষ চলাচল করেনি। কোন কিছু সামনে বাধলে সেটা নেব কি নেব না একটু চিন্তা সৃষ্টি হয় আমার তবে তো পূর্বে কোনদিন নারিকেল পেয়েছি বলে মনে হয় না। আর সেটা হাতে তুলতে আমার খুব ভয় লাগছিল আর গা ঘেমে যাচ্ছিল। যেহেতু একা রয়েছি নারিকেলটা যদি হাতে তুলি কেউ বকবে কিনা, আবার পরে কেউ কেড়ে নেবে কিনা এদিকে হাতে বই। কারণ ছোটবেলায় সব সময় ভাইয়ের পিছে ঘুরঘুর করতাম সাথে সাথে চলতাম তাই ভয়টা আমার কম ছিল,ওই দিন কেন জানি ভাই স্কুলে যায়নি। যাইহোক এরপরে আমি নারিকেল টা হাতে তুলে নিলাম আর চারিপাশে তাকালাম আমার নারিকেল তুলা কেউ দেখছে না তো, কেউ আবার আমাকে এটা সেটা বলবে না তো। নারিকেল টা হাতে তুলে নিয়ে কানের কাছে নিয়ে একটু বাজিয়ে দেখলাম ভেতরে পানি আছে কিনা। বুঝতে পারলাম নারিকেল টার মধ্যে পানি আছে, নারিকেল টা ভালো। এরপর নারিকেল টা আমি হাতে তুলে নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম হঠাৎ মাথায় আসলো আমি তো নারিকেল নিয়ে হাটা দিয়েছি, আমার বইগুলো কই?
পিছন দিকে তাকিয়ে দেখি যেখান থেকে নারিকেল উঠিয়েছি তার একটি পাশে দুবলা ঘাসের উপর বইগুলো রাখছিলাম। নারিকেল টা হাতে পাওয়ায় কিছুটা আনন্দ আর বেশি ভয় ভয় অনুভবে বই নিতে ভুলে গেছি। এরপর যখন পিছন ফিরে বইগুলো আনতে যাচ্ছিলাম তখন ভাবছিলাম নারিকেলটা ওখানে রেখে দিয়ে বইগুলো আনবো নাকি নারিকেল হাতে রেখে বইগুলো আনব। মাথায় চিন্তা আসছে নারিকেল টা হাতে রাখলে কেউ যদি আবার দেখে ফেলে, আবার মাথায় চিন্তা হচ্ছে ওখানে রেখে বই আনতে গেলে কেউ যদি নারিকেল টা নিয়ে নেয়। এমন মুহূর্তে হঠাৎ আবার টিপটাপ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। আমি দ্রুত বইটার কাছে চলে গেলাম এবং বইগুলো নিয়ে নিলাম। এরপর আমার গায়ে থাকা জামাটা খুলে ফেললাম,জামার মধ্যে বইগুলো খুব ভালোভাবে বেঁধে নিলাম। যেন বৃষ্টির পানিতে না ভিজে। জামা খোলার পর শুধু হাফপ্যান্ট পরা, খালি গায়ে পায়ের স্যান্ডেল আছে কিনা কে জানে? অতটা স্মরণে আসছে না।
এরপর আস্তে আস্তে নারিকেল বাগান পার হয়ে মসজিদের যাওয়ার ব্যাকের রাস্তায় উঠে পড়লাম। হালকা বৃষ্টি হওয়ায় ওই মুহূর্তে রাস্তায় কোন মানুষজন ছিল না। আমার মনের ভিতর শুধু ভয় করছিল কেউ যদি নারিকেল টা কেড়ে নেয়, কোথা থেকে আনলাম কেউ যদি প্রশ্ন করে, মনে করে আমি চুরি করে আনছি শুধু এই চিন্তাগুলো আমার মাথায় আসছিল। তবে আমার কোন কালে অভ্যাস নেই কোন কিছু চুরি করার বা কারো জিনিস নিয়ে আসার জন্য। বন্ধুদের সাথে কোন কালে কোন কিছু পেড়ে খেয়েছি বলে স্মরণ আসে না। বেশি খাবড়িয়ে যাচ্ছিলাম। হয়তো আশেপাশে কোন লোকজন থাকলে নারিকেল টা হাঁতে ওঠাতাম না। কারণ চোখের সামনে পড়ে থাকা কোন জিনিস তোলার অভ্যাস আমার ছিল না। তবে বাড়ির পাশে আম কুড়ানোর অভ্যাস ছিল বেশ। নারিকেল টা বলে হয়তো হাতে উঠিয়ে ফেলছিলাম লোভে অথবা পড়ে পেয়েছি তাই। যখন রাস্তা পার ছিলাম বাড়ি পর্যন্ত আসতে খুব টেনশন হচ্ছিল। তবে যাই হোক এরপর খুব খুব দ্রুত হাটছিলাম স্কুল যাওয়ার সময় কিন্তু এত দ্রুত যাই নাই। এরপর পৌঁছে গেলাম আমাদের বাড়ির রাস্তায়। আসতে আসতে বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলাম। একদিকে জামার মধ্যে আমার বই গুলো রয়েছে আরেক হাতে বোগলের নিচে নারিকেল। যেহেতু রাস্তা পার হয়ে বাড়ির দিকে চলে এসেছি তাই খুব আনন্দবোধ করেছিলাম। আর আনন্দে আনন্দে বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতে আর একবার আচাড়র খেলাম। কি আনন্দ! ছোটবেলায় সবাই বলতাম কোন কিছু একবার হলে দুইবার হওয়া ভালো। জোড়া পুজে যাওয়া ভালো। নারিকেলটা এসে ঘরে রাখলাম। এরপর মনে হল যেহেতু দুইবার আচাড় খেয়েছি তাহলে আর একটাও কি নারিকেল পাব? এই চিন্তাধারা মাথায় রেখে চলে গেলাম আমাদের নারিকেল গাছের গোড়ায় যেহেতু আমাদের দশটা নারিকেল গাছ রয়েছে। বাড়ির এ পাশে ওপাশে যেয়ে দেখি সত্যিই আমাদের নারিকেল গাছের গোড়ায় তিন চারটা নারিকেল পড়ে রয়েছে। যেহেতু ঝড় হয়েছে আর বৃষ্টি হয়েছে তাই আমাদের গাছের পাকা নারিকেল গুলো পড়ে রয়েছে। তবে কেউ এদিকে খেয়াল করেনি। আমাদের বাড়ি একলা একটা বাড়ির মত এদিকে কোন মানুষজন আসেও না। তখন আমি আনন্দের সাথে বাড়ি থেকে একটি ডালি নিয়ে গিয়ে আমাদের নারিকেল গাছের গোড়া থেকে নারিকেল গুলো কুড়িয়ে বাড়ির মধ্যে আনলাম। আর রাস্তায় পাওয়া ওই নারিকেলের কথা বাড়িতে কাউকে বলা হলো না। বাড়ির সবাই জানলো গাছের নারিকেল পড়েছে, সুমন স্কুল থেকে এসেই নারিকেল কোড়ানো শুরু করেছে। যেহেতু বৃষ্টি আর ঝড় হয়েছে তাই কেউ ওদিকে গুরুত্ব করেনি। আর ছোটবেলায় এই সমস্ত বিষয়গুলোতে আমি সজাগ ছিলাম। যেহেতু নিজেদের গাছের নারিকেল বলে কথা। আর এভাবেই সম্পূর্ণ হলো আমার নারিকেল কুড়ানোর এক বিশেষ ঘটনা।
পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ। |
ভাইজান তোমার সেই ছোটবেলার নারকেল কুড়ানোর গল্পটি বেশ ভালো লাগলো। তবে গল্পটি খুবই লম্বা হয়ে গেছে। আমার আজও মনে আছে সে সময় আমাদের সাথে না এসে একলা একলাই মাটির রাস্তা দিয়ে বাড়িতে যেতে গিয়ে বেশ কয়েকবার আছাঢ় খেয়ে বাড়িতে আসতে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কিছু করার নেই ভাই লম্বা তো হতে পারে যেহেতু গল্প
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অসাধারণ গল্প নারকেল কুড়িয়ে পাওয়ার। খুব ভালো লাগলো।নারিকেল পাওয়ার আনন্দে বই রেখেই চলে আসছিলেন। আবার দুরু দূরু বুকে নারিকেল নিয়ে আসছিলেন কেউ যদি কেড়ে নেয়।আসলে ছোট বেলার অনেক বোকা বোকা সৃতি থাকে। আছার পড়ার অনুভূতি বাড়িতে এসে আবারও নারিকেল পাওয়ার অনুভুতি সব মিলিয়ে অসাধারণ হয়েছে ভাইয়া।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সম্পূর্ণ ঘটনা পড়ার জন্য ধন্যবাদ
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit