জীবনের এক কঠিন মুহূর্তের স্মৃতি স্মরণ

in hive-129948 •  4 months ago 


আসসালামু আলাইকুম




হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। আমার আজকের পোস্ট এর বিষয় ছিল বাবুর জন্মের পর তার মায়ের সেলাই কাটার দিনের অনুভূতি। সবার জীবনে কম বেশি কঠিন মুহূর্ত আসে। আর সেই মুহূর্তটা মানুষকে শিক্ষা দিয়ে যায় এবং মানুষকে সাহসী করে তোলে। জীবনের প্রথম এই অধ্যায় কেমন অনুভব করেছিলাম, তা ব্যক্ত করব অনেকদিন পর। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে এখনই শুরু করি।

IMG_20240830_224726_927.jpg


ফটোগ্রাফি সমূহ:


বেশ কিছুদিন ধরে আমার বাবুটা অসুস্থ। চেষ্টা করছি প্রতিনিয়ত তাকে সুস্থ রাখার জন্য। যে সমস্ত ঔষধ খাওয়ালে সে সুস্থহবে সেভাবেই চেষ্টা দুজনার। বাবুর সুস্থতার জন্য তার মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম। সকলে জানেন মায়ের পরিশ্রম কখনোই বৃথা যায় না এবং মা সন্তানের জন্য পরিশ্রম করতে গিয়ে বিরক্ত হয় না। ঠিক বাবুর অসুস্থতার এমন মুহূর্তে তার মায়ের পরিশ্রম দেখে মনে পড়ে গেল এই দিনের কথা। জানেন অনেকেই, সিজারে বাচ্চা হলে অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয় সন্তানের মায়ের। পাশাপাশি হয়রানির শিকার হতে হয় সন্তানের বাবার। ঠিক তেমনি দু-জনারি সে মুহূর্ত ছিল জীবনে প্রথম। কতটা ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের এই সন্তান। কতটা মন শক্ত রাখতে হয়েছিল আমার পরিবারের। যতটুক পেরেছি তার পাশে উপস্থিত থেকেছি শান্তনা দেওয়ার জন্য হোক চোখের সামনে থেকে মনে সাহস যোগানোর জন্য হোক। আল্লাহ তার মুখপানে তাকিয়ে সুস্থ রেখেই সেলাই কাটার দিন সামনে আসলো। সেলাই কাটার দিন তার আম্মা সহ আমি ক্লিনিকে নিয়ে গেলাম। আমাদের গাংনী বাজারের নামকরা তাহের ক্লিনিকে তাকে সিজার করা হয়েছিল। ঠিক সেখান থেকেই পেটের কাঁটা শুকানোর পর সেলাই কাটাতে নিয়ে যাওয়া হয়।

IMG_20240311_111549_088.jpg

IMG_20240311_111643_385.jpg


সেলাই কাটানোর মুহূর্তে তারা ২০০ টাকা জমা রাখেন। এরপর আমার হাতে একটা স্লিপ লিখে দেন। যেখানে বাবুর জন্য একটি ছোট্ট ঔষধ এবং বাবুর মায়ের জন্য মলম। এছাড়াও তার পূর্বে বাবুর মায়ের ঘা শুকানোর জন্য যে সমস্ত ঔষধ লাগবে তার একটা প্রেসক্রিপশন ছিল সেটা আমার কাছে দেয়া হয়। কারণ যেদিন বাবুর মায়ের সেলাই কাটাতে নিয়ে গেছিলাম তার পূর্বে সাত দিন বা 5 দিন ঔষধ স্মরণ করেছে বাকি ঔষধ ফুরিয়ে যাওয়ায় সেগুলো কিনতে হবে। যাহোক প্রথমত উপস্থিত যেগুলো লাগবে সেগুলো কেনার জন্য চলে গিয়েছিলাম পাশের ফার্মেসিতে। যখন আমি ফার্মেসির দিকে যাচ্ছিলাম তখন হঠাৎ যেন মনের মধ্যে কেমন একটা অনুভূতি জাগ্রত হয়েছিল। আরে এই তো সেদিন বিবাহ করলাম। এরই মধ্যে এতটা দায়িত্বের বোঝা মাথায় নিতে হচ্ছে আমার। একদিকে নিজের স্ত্রী আরেকদিকে নিজের সন্তান। হঠাৎ যদি আমার স্ত্রীর কোন কিছু হয়ে যেত তাহলে আমার জীবন কোন দিকে যেত। যেন নতুন করে একপ্রকার ভয় আমার মধ্যে প্রবেশ করছিল তখন। হয়তো উপরের কাটা শুকিয়ে গেছে। শুনেছি সেলাই কাটার পরেও ভেতরে অনেক দিন চামড়া কাঁচা থাকে। এই মুহূর্তে বেশ সাবধানতার সাথে চলাফেরা করাতে হয়। ঠিক এ সমস্ত চিন্তাগুলো যেন আমাকে আরো ভীত করে তুলেছিল। আর মন থেকে শুধু দোয়া করেছিলাম আল্লাহ দ্রুত আমার পরিবারকে সুস্থ করে দাও। তার জন্য কোন প্রকার সমস্যা সৃষ্টি না হয়। বেশি ভয় অনুভব করছিলাম তখন।

IMG_20240311_111511_857.jpg

IMG_20240311_112638_155.jpg

IMG_20240311_112649_109.jpg


ফার্মেসি থেকে যখন মলম সহ বাবুর ওষুধ নিছিলাম। তখন ফার্মেসির সেই ভাই আমাকে বেশ সাবধান করে দিয়েছিল এবং অনেক কিছু বলছিল। বলেছিল ভয়ের কোন কারণ নেই যেহেতু সেলাই কাটার মুহূর্ত হয়ে গেছে। সেলাই কাটার পূর্বে অনেকের কাঁটা স্থানে পুজ হয় এই হয় সে হয়। আপনার পরিবারে যেহেতু এই সমস্ত বিষয় নেই তাহলে আলহামদুলিল্লাহ দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে। কারণ তখন সেলাই কাটা হয়ে গেছে এরপর আমি ফার্মেসিতে। তারপর উনি বেশ সাহস দিলেন আমাকে। বললেন জীবনের প্রথম অধ্যায়। একটু ভয় লাগবে এটা স্বাভাবিক। তবে নিয়ম মেনে চললে ঔষধ খেলে পারে দ্রুত সুস্থ হবে। এরপর বড় প্রেসক্রিপশন উনার সামনে উপস্থিত করলাম। কিন্তু একটা বিষয় ছিল গাংনী বাজারে কোন ফার্মেসিতে ওষুধের ছাড় নেই। তাই মনে করলাম গাংনী বাজার থেকে ঔষধ না নিয়ে হেমায়েতপুর বাজার থেকে বাকি ওষুধগুলো কিনে দিবো। কারণ প্রথম ঔষধ গুলো আমার শশুর আব্বা কিনে দিয়েছিল। ওই মুহূর্তে আমার কাছে টাকা ছিল না তবে টাকা উঠাতে পারতাম লসে। পরবর্তীতে টাকা উঠেছিলাম তাই ভেবেছিলাম আজকে বাকি ওষুধ তো আমারে কিনে দিতে হবে। কারণ সব সময় আমি একটা বিষয় খেয়াল করি আমার কাছে টাকা পয়সা থাকলে অন্যের পানে কখনো তাকানোর চিন্তা করে না। শুধু এটাই জেনে নিলাম কত টাকা খরচ হতে পারে। উনি বলেছিলেন প্রায় ১৫০০ টাকা খরচ হবে। ওই মুহূর্তে আমার কাছে ২৫০০ টাকা ছিল। এরপর ভেবেচিন্তে দেখলাম বাবুর মায়ের বোনের ছেলের বৌভাতের অনুষ্ঠান রয়েছে সেখানে যেতে হবে। তাই দ্রুত এখান থেকে সেই এলাকার দিকে যেতে পারলেই ভালো। তাই হেমায়েতপুর বাজার থেকে ঔষধ নিলে হয়তো কিছুটা সাশ্রয় হবে এবং এখান থেকে দ্রুত সেখানে চলে গেলেও নিজের জন্য ভালো।

IMG_20240311_112837_578.jpg

IMG_20240311_123916_799.jpg

IMG_20240311_123926_200.jpg


এরপর দ্রুত গাংনী বাজার ত্যাগ করলাম এবং বাবুর মাকে নিয়ে চলে গেলাম শ্বশুরবাড়িতে। কারণ বুঝতে পারছেন এমন অসুস্থ রোগীকে বাইরে রাখা বেশিটা সময় ঠিক নয়। এদিকে আমার ছোট বাচ্চা। এরপর হামায়েতপুর বাজারে এসে তাদেরকে তাদের গ্রামে পাঠিয়ে দিয়ে আমি এখান থেকে ঔষধ নিলাম। লক্ষ্য করে দেখলাম বাকি ওষুধগুলো গাংনী বাজারে প্রায় ১৫০০ টাকার মত খরচ হবে বলেছিল কিন্তু এখানে টোটালি খরচ হলো ১২০০। তাহলে বুঝতে পারছেন মানুষের কতটা সুযোগে টাকা হাতিয়ে নেয়। যাই হোক এই দিনের মুহূর্তগুলো আমার জন্য বেশ কঠিন ছিল। হয়তো মনের অনুভূতি মনেই রেখেছিলাম বাইরে প্রকাশ করিনি সেভাবে। তবে কেন জানি হঠাৎ সে কঠিন মুহূর্তের কথা স্মরণে আশায়, বাবু অসুস্থ থাকায় ও মোবাইলে ফটো থাকায় তা শেয়ার করে দিলাম।

IMG_20240311_112658_750.jpg

IMG_20240311_120432_522.jpg


PB8ro82ZpZP35bVGjGoE93K3E4U5KX8KtMBJ2rhmkyLqtRRZvVw9YH8hEBg7DJQKSJLWf7VJRhnjGRYSDmuGDMSHAPBRbiRis5HV4ATHTF7QvLHc.png

পোস্ট বিবরণ


বিষয়বাবুর মায়ের সেলাই কাটার দিন
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s
লোকেশনগাংনী-মেহেরপুর
ব্লগার@sumon09
দেশবাংলাদেশ


পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif


পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

ভাই আমি আজকে আমাদের মাঝে খুব সুন্দর একটা পোস্ট শেয়ার করেছেন। তাছাড়া আপনার পোস্ট পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আরেকটা বিষয় হচ্ছে মানুষ সুযোগ পেলেই ধান্দা করবে। কেননা মানুষ সুযোগে অসৎ ব্যবহার করে। যেটা আপনার সাথে হয়েছিল। যেখানে আপনার বারোশো টাকায় হয়ে যাবে সেখানে আপনার থেকে ১৫০০ টাকা নেয়া হয়েছিল। তাছাড়া এই পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ

আশা করি, আপনার স্ত্রী ও বাবু এখন সুস্থ আছেন।আসলে সকলের জীবনেই এমন খারাপ সময় আসে যা ধৈর্য্য ধরে মোকাবিলা করতে হয়।আপনিও তাই করেছেন,সিজার করলে একটু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।যাইহোক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য।

হ্যাঁ, আপনাদের দোয়ায় ভালো আছে।