হাই বন্ধুরা!
আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।
আমি তখন বেশ ছোট ছিলাম। এই মুহূর্তে পাড়ার বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করতাম এবং অনেক কিছু দেখতাম শুনতাম জানতাম। ঠিক তেমনি একটা ঘটনা। আমাদের বাড়ির পাশের চাচাদের একতলা ছাদের ঘরের জানালার সাইড করে ছিল বেশ কয়টা সুপারি গাছ। আর সে সুপারি গাছের পাশেই ছিল একটি পাতাবাহার গাছ। আমরা ছাদে উঠে খেলা করতাম।আর এই গাছটাকে নিয়ে আমার ছিল বেশ কনফিউশন। খেলতে গেলেই শুধু গাছটার পান বেশি লক্ষ্য করতাম আর ভাবতাম একটি গাছের পাতায় এইরকম হয় কিভাবে। কারণ এমন গাছ অন্য কোথাও কোনদিন দেখি নাই শুধু চাচাদের বাড়িতে লক্ষ্য করেছি আর গ্রামের বর্তমান একটা পার্ক রয়েছে তাদের বাড়িতে দেখতাম। আমি লক্ষ্য করে দেখেছি আমাদের বিদ্যালয়ে নবীনবরণ অনুষ্ঠান হলে স্কুল থেকে অনেকে আসতো এই পাতাবাহার গাছের কিছু পাতা ছিড়ে নিয়ে যেতে, পাশাপাশি আমাদের বাড়ি থেকে ফুলের গাছ থেকে ফুল নিয়ে যেতে। এগুলো নবীন বরণে কুচি কুচি করে কাটা হত এবং নতুনদের বরণ করতে অথবা বিদায় অনুষ্ঠানের বড় ভাইদের বিদায়ের তাদের মাথায় ফুল ছিটানো হতো।
আমি একদিন খেলতে খেলতে আমাদের চাচাদের সেই ছাদের উপরে উঠে হঠাৎ ভাবলাম এই পাতাবাহার গাছের পাতা এমন হয় কিভাবে, একটি পাতার মধ্যে বিভিন্ন কালার বা সৌন্দর্য। এরপর এ গাছ সম্পর্কে জানতে গিয়ে জানতে পারলাম ডাল ভেঙে লাগালেই নাকি এই গাছ হয়ে যায়। এই বিষয়টা আমার কাছে আরও আশ্চর্য বিষয় ছিল। গাছের ডাল ভেঙে লাগালে সেই ডাল থেকে শিকড় হয়ে গাছ হয়ে যায়, জীবনের শুরুতে আশ্চর্য বেশ অনেক কিছু জানার থাকে, তার মধ্যে আমার কাছে যেন এটা ছিল অন্যরকম।
এরপর মনে মনে ভেবেছিলাম হ্যাঁ খেয়াল করে দেখি তো মাদার গাছ, সাজনা গাছ; জিগা গাছ এই সমস্ত গাছের ডাল কেটে লাগালে গাছ হয়,তাহলে পাতাবাহার গাছের তো হতেই পারে। তাই আমি একদিন ভাবলাম এই গাছ থেকে একটি ডাল ভেঙে নিয়ে যেতে হবে এবং আমাদের বাড়ির ফুল গাছের পাশে লাগিয়ে দেখব গাছ হয় কিনা। তবে ভয় ভয় লাগতো চাচার আম্মা অর্থাৎ জালিয়া দাদি যদি বকা দেয় বা মারে। তাই ভাবছিলাম খুব গোপনে একটা ডাল ভাঙবো যেন কেউ না দেখতে পারে। যেমন চিন্তা তেমনি কাজ। আমার বর্তমান ঘরটার উত্তর সাইডে বেশ কয়েকটা ফুলের গাছ ছিল সেখানে একটি ডাল লাগিয়ে দিলাম। এরপর আমি বিকেল টাইমে খেলাধুলার ফাঁকে সেই ডালের গোড়ায় পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতাম অর্থাৎ গাছটা যেন হয়ে যায় সে আশায়। কেন জানি ছোটবেলা থেকেই গাছের প্রতি আমি অন্যরকম মনোযোগী এবং আকৃষ্ট। গাছ লাগাতে পছন্দ করি, ভালো লাগে আমার। দেখা গেল যত্ন নিতে নিতে একটা সময় এই পাতাবাহার গাছের ডালের পাতাগুলো সব ঝরে গেল। এর অনেক পর একদম মাথায় নতুন কুশি আসতে থাকল, পাতা আসতে থাকলো। এরপর তিন চারটা করে ডালপালা হতে থাকলো। সেই তখন ছোটবেলার ছোট মন ছোট একটা মানুষ, সে অনুভূতি কি যে ভালোলাগা আমার মধ্যে কাজ করতো এমনটা দেখে, তা বলে বোঝানো যাবে না। আমি যেন আরো যত্নশীল হয়ে উঠলাম পাতাবাহার ডালটার প্রতি। এরপর দেখা গেল কুশি গুলো বড় হতে থাকলো, ডাল বেঁচে গেল একদিন গাছের রূপান্তর হল। ডালটা অনেক মোটা হয়ে এরপর কুশি গুলো বড় হয়ে, ডালপালা ঝাকড়া হয়ে সুন্দর একটা পাতাবাহার গাছ হয়ে গেল। আর সেখানে আমাদের বেশ কয়েকটা ফুল গাছ থাকায় পরিচর্যা করা হতো এর জন্য গাছটা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকলো।
এরপর আমাদের বিদ্যালয় বিদায় অনুষ্ঠান অথবা নবীন বরণ অনুষ্ঠানে আমি আর বন্ধুদের সাথে অন্য কারো গাছ থেকে পাতাবাহারের পাতা ছিড়তে যেতাম না। আমার এই গাছের পাতাবাহারের পাতা ছিঁড়ে নিয়ে যেতাম আর সেই পাতাগুলো কুটি কুটি করে, ফুল ও কাগজ টুকরা টুকরা করে কেটে সুন্দরভাবে নবীন বরণের ঝুড়িতে দিয়ে দিতাম। যেমনটা দেখতাম অন্যরা নিয়ে আসতো। আর এভাবেই আমি একটি পাতাবাহারের গাছ বানিয়ে ফেলেছিলাম আমাদের বাড়িতে। মনে হয়, আমার জীবনে এটাই প্রথম ডাল ভেঙে মাটিতে লাগিয়ে গাছ তৈরি।
গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফটোগ্রাফি | ঘটনাস্থল এরিয়া |
---|---|
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Infinix Hot 11s |
লোকেশন | জুগীরগোফা,গাংনী-মেহেরপুর |
বিষয় | অতীত ঘটনা |
ঠিকানা | গাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ |
বেশ মজার একটা গল্প আপনি দেখি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আপনার গল্পটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো। এটা যেনে ভালো লাগলো যে আপনি গাছ লাগাতে পছন্দ করেন। স্কুলে পড়া অবস্থায় আমরা পাতাপার গাছের পাতা দিয়ে বড় ভাইদের নবীন বরণ করতাম এমনকি বিদায় অনুষ্ঠানেও এই গাছের পাতা কেটে তাদের মাথায় ছুড়ে মারতাম। তবে ভালো লাগার বিষয় এই যে আপনি চাচার বাড়ি থেকে গাছের ডাল সংগ্রহ করেছেন এবং সেই ডাল থেকে একটা পরিপূর্ণ গাছ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit