হ্যালো বন্ধুরা,
মনের মধ্যে একটু ভিন্ন অনুভূতি জাগ্রত হয়েছে। জানিনা কে কোন দৃষ্টিতে দেখবেন, তবুও না বললেই নয়। যেহেতু বড় হয়েছি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি আত্মীয়-স্বজন হয়েছে ঠিক তার পূর্ব থেকেই হাই স্কুল লাইফ ত্যাগ করে যখন কলেজে উঠেছি যেন মনে হয়েছিল নিজের কিছু মান সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে বাইরের পরিবেশে চলাচল করছি তাই উন্নত মানের ভালো পর্যায়ের পোশাক পরিধান করাটাই বেটার। তাই চেষ্টা করতাম বিভিন্ন মার্কেট থেকে জামা গেঞ্জি অর্থাৎ টি শার্ট ও শার্ট কিনে গায়ে দিতে। কারণ নিজের মান সম্মান বলে একটা কথা! এই যে একটি আত্ম অহংকার মনের ভেতর জাগ্রত হওয়া এটা আমি মনেপ্রাণে ঘৃণা করি। তবুও পরিবেশ বলে একটা কথা আছে যেমন পরিবেশ সেই পরিবেশের সেভাবেই তো চলতে হবে এটাই বড় কথা কিন্তু নিজের মধ্যে কখনো আত্ম অহংকার আমি প্রশ্রয় দিতে রাজি নই। কারণ ছোট থেকে এই গোহাটির গেঞ্জি গুলো গায়ে দিয়ে বড় হয়েছি অথবা নিয়মিত গায়ে দিয়েছি। এখন অবশ্য পুকুরে মাছ চাষ করতে হয় তাই চলাচলের জন্য মাছের খাবার দেওয়ার জন্য এই গোহাটের গেঞ্জি গুলো গায়ে দিয়ে থাকি কারণ এক থেকে দু মাসের মধ্যে একটি করে একটি শার্ট নষ্ট হয়ে যায় কিন্তু বাইরে চলাচল বা নিজের সম্মানের পর্যায়ে চলতে গেলে অবশ্যই সেই মার্কেটের দামি জামাগুলো পরতে হয়। ঐদিন যখন আমি গেঞ্জি বা টি শার্ট কেনার জন্য নিজের চয়েজ মত খুঁজছিলাম তখন মনের মধ্যে এই চিন্তা ধারাটাই বেশি ভেসে আসতে থাকলো। এখানে প্রত্যেকটা ঘরেই দেখলাম একই ডিজাইনের টি শার্ট রয়েছে অর্থাৎ আমি যেটা কিনব অন্যরাও সেটা গায়ে দেবে রং একই কালারের দেখতে হবে, তখন নিজের কাছে হঠাৎ কেন জানিনা মনে হয়ে উঠল আমি যেমন টি শার্ট গায়ে দেবো অন্যের গায়ে হল তেমন টি শার্ট থাকবে তখন কেমনটা লাগবে। না নিজের কাছে ঠিক এই মুহূর্তে নিজেই নিজেকে বুঝ দিলাম আমিও মানুষ তারাও মানুষ কারণ আমরা জাতিতে সব ভাই ভাই। আমার মত টিশার্ট গায়ে দিলে আমার তো কোন মান সম্মান যাবে না। বরঞ্চ মনের মধ্যে একটা ভালো লাগা আনতে হবে। এই যে হুট করে মনের মধ্যে এমন চিন্তা ভাবনা আসাটাও আমি ঘৃণা করি! যে মান-সম্মান মানুষকে মানুষ থেকে দূরে সরিয়ে দেয় সে সম্মান সম্মান আমি পছন্দ করি না। হয়তো বিভিন্ন পর্যায়ে চলতে হলে সেদিকে বিবেচনা করতে হয় তবুও এই জাতীয় টি-শার্টগুলো আমাকে গায়ে দিতে হবে নিজ প্রয়োজনে নিজের কর্মে। কারণ এখানে গোহাটের থেকে হাজার হাজার মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় একটি শার্ট শার্ট প্যান্ট নিয়ে গায়ে দিচ্ছে যারা ধনী পর্যায়ের মানুষ রয়েছে তারাও এখানে আসে। পথ চলতে পাশের কয়েকজন মানুষ আবোল তাবোল বলে বসে সেটা আমার কাছে যেন আরো খারাপ লেগে। যায় অনেকেই বলে গোহাটির টি-শার্ট বা শার্ট এই জাতীয় আত্ম অহংকার মানুষ আমি মনেপ্রাণে ঘৃণা করি। কেন মার্কেট থেকে বেশি দাম দিয়ে কাপড় কিনলেই কি মানি ম্যান হয়ে যাওয়া যায়? না সেটা কখনোই নয়। ভালো মানুষের পরিচয় তার গুণাবলীতে।
কিছুদিন আগে আমার শশুর আব্বা আমাকে খুবই পছন্দ করে একটি টি-শার্ট কিনে দিল মার্কেট থেকে যার মূল্য পড়ল ৮০০ টাকা। হয়তো আজ থেকে ১০ বছর আগে ৮০০ টাকা দিয়ে একটি শার্ট কিনতে গেলে দশবার ভাবতাম কিন্তু এখন আর সে ভাবনা আসে না কারণ নিজেই মার্কেট থেকে এভাবে কিনে থাকি কিন্তু তার পাশাপাশি আজব গো হাট থেকে টি-শার্ট কেনা বাদ দেইনি কারণ ওই একটাই মাছের খাবার দিতে গেলে ফটোগ্রাফি করতে একটু ভালো টি-শার্ট গায়ে না দিলে তো হয় না। অনেকদিন পর আমার পরিবার আবার আমার জন্য সাড়ে ৬০০ টাকা দিয়ে একটি শার্ট কিনে দিল। ঠিক এভাবে আমার দুইটা টি-শার্ট রয়েছে সাড়ে ৭০০/ ৮০০ টাকা দিয়ে কেনা যেগুলো বাইরের পরিবেশে গায়ে দি অর্থাৎ কোথাও গেলে। তাদের দেওয়া গেঞ্জি গুলো তাদের বাসায় আত্মীয়-স্বজনের বাসায় পরিধান করে যাই। পাশাপাশি গুহার থেকে কেনা এমন ব্যবহারিত রানিং গেঞ্জিও রয়েছে পাঁচ থেকে ছয়টা। একটা বিষয়ে আমি শার্ট এর চেয়েও বেশি টি-শার্ট পছন্দ করে থাকি। তাই সাটের কথা বাদ রাখলাম। তবে এই বাজারে এসে হঠাৎ মাথায় আসলো তিনটা টি শার্ট কিনব যা মাছের খাবার দেওয়া ও এমনিতেই পরিধান করার জন্য ব্যবহার করবে।
আমি এতক্ষণ আপনাদের মাঝে এত কথা লিখছি একটিমাত্র কারণ যে কারণটা আমাকে খুশি করেছে তাই। কারণটা হচ্ছে আমার নিজের বেশি দাম দেওয়া গেঞ্জি শশুরের দেওয়া বেশি দাম দেওয়া গেঞ্জি এমনকি পরিবারের পছন্দ করে কিনে দেওয়া টি শার্ট বা গেঞ্জিও যেন হার মেনে গেল। আমি তিনটা গেঞ্জি ৪৫০ টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে গেলাম এ বাজার থেকে। সেলফি তো দেখতে পারছেন এই ছেলেটার কাছ থেকে। কিছুদিন আগে আমার পরিবার বলছে তোমার গায়ে ওই গেঞ্জিগুলোর চেয়ে ও তোমার কেনা এই কম দামের গেঞ্জি গুলো আমার বেশি ভালো লাগে। হতে পারে কম দামের মার্কেট থেকে কেনা নয় তবুও যেন এই গেনজি তুমি গায়ে দিলে অনেক সুন্দর লাগে। সে বড়লোকের মেয়ে হঠাৎ করে বলে বসলাম এতে তোমার মান সম্মান যাবে না তো আমি বাইরের পরিবেশে যাচ্ছি যেখানে মান সম্মানের বিষয় রয়েছে নরমাল গেঞ্জি গায়ে দিলে কেমন দেখাবে ওয়ারড্রব থেকে দামি গেঞ্জি গুলো বের করে দাও কিন্তু সে কিছুতেই এসব গেঞ্জি গায়ে দিতে দিল না। বললো আমার বেশি ভালো লাগছে এই গেঞ্জিতে, আমার ভালোলাগা তোমাকে গায়ে দিতে হবে। আমি বললাম এই জাতীয় গেঞ্জি বাজারে অনেক মানুষের গায়ে দেখি আমার গায়ের গেঞ্জির সাথে অন্যজনের দেখতে কেমন খারাপ লাগবে না? তারপরে বউ এর মধ্যে আত্ম অহংকার খুঁজে পেলাম না। সে বলল তারাও মানুষ তুমিও মানুষ তারা গায়ে দিলে ক্ষতি কি ভালো লাগছে দেখতে এটাই গায়ে দিতে হবে। তখন আমি বললাম তোমার দেওয়া, তোমার বাবার দেওয়া অথবা আমার দামি গেঞ্জিগুলা কেন ভিতরে পড়ে থাকবে, কাচার ভয় নাকি? তখন সে মনে একটু কষ্ট পেল এতেই বুঝে নিলাম, আমার পাশে থাকা অন্যান্য বন্ধুরা যেমন অহংকারীরা দেখায় কম দামের গেঞ্জি বা শার্ট নিয়ে হাসাহাসি করে কিন্তু আমার পরিবার তেমনটা নয়। ঠিক আমার মনের মতো, যার মধ্যে আত্ম অহংকার আমি খুঁজে পেলাম না। তাই তার প্রতি যেন আমার আরো স্নেহ মমতা বেড়ে গেল। কারণ আত্ম অহংকার কারী মানুষকে আমি কখনোই পছন্দ করি না ও প্রশ্রয় দেয় না।
পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ।