আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি অনেক অনেক ভাল আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো আছি। শরৎকালের বৃষ্টি ভেজা সকালে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে উপস্থিত হলাম হাড় কিপটি নাটকের ১০৫ পর্বের মধ্য থেকে ৪৮ তম পর্ব রিভিউ করে শেয়ার করার জন্য। আশা করি আমার এই রিভিউ পোস্ট আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে।

নজর আলী কৃপণের ছোট কুলাঙ্গার ছেলে নহর আলী রেশমাকে সাথে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু রেশমা তার এই প্রস্তাবে রাজি হন নাই। রেশমার কথা সে প্রেম করেছে ঠিকই তাই বলে খারাপ ভাবে বিবাহ করবে না। তার বাবা কত কষ্ট করে মানুষ করেছে তাদের একটা মান সম্মান রয়েছে। সে প্রেম করেছে পারিবারিকভাবে বিবাহ করতে চায় খারাপের ধা ধারে নয়। তার এমন প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় দুজনার মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়ে গেল। তাই নহর চিন্তা নিয়েছে হারাধন দত্তের মাধ্যমে রেশমাকে বান মারতে হবে। তার এমন কুরুচি সম্পন্ন চিন্তা ধারা গোল্লা মোটেও পছন্দ করলো না। গোল্লা প্রতিবাদ করল এবং তাকে বুঝিয়ে বলল। ভালোবাসার জন্য মানুষ মরতে রাজি থাকে কিন্তু ভালোবাসার মানুষকে কখনো মারতে রাজি থাকে না। অনেক বোঝানোর পর কুলাঙ্গার বুঝতে পারলো আসলে নিজের ভুল পথে পা রাখছিল।

এদিকে নজর আলী কৃপণ সারারাত না খেয়ে রয়েছে। কারো সাথে কথা বলছে না। তার এমন অবস্থা দেখে তার স্ত্রী কমলা বানু খুবই কষ্ট পেয়েছে এবং ছেলেকে অথবা ভাগ্নেকে বলে স্বামীকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। কমলা বানুর এই স্থানে দেখা গেছে স্বামীর প্রতি অগাধ ভালোবাসা। সব সময় যে স্বামী তার কথা বুঝতে চায় না কিন্তু সে তার স্বামীর প্রতি এত ভালবাসা মহব্বত দেখিয়ে না খেয়ে রয়েছেন। তার এমন ভালোবাসা দেখে সত্যিই গোল্লা অবাক হল। এরপর তারা নজর আলীর কাছে গেল এবং সুন্দর করে বোঝানোর চেষ্টা করল। অনেক কিছু শোনার পর নজর আলী শর্তসাপেক্ষে খাবার খেতে রাজি হল।

মজনুর দোকানটা বড় ভাই দখল করে নিয়ে বেশ জমিয়ে তুলেছে। সে দোকানে এখন ক্রাম বোর্ড খেলার জন্য ভিড় জমেছে। মজনুর মত ফ্রি ফ্রি কাউকে চা খাওয়ায় না বড় ভাই। এমনকি তার দোকানের সিটে বসতে হলেও ভাড়া নেওয়ার উপক্রম। যারা দোকানে এসে বসে তাদের অবশ্যই চা খাওয়া লাগবে অথবা দোকান থেকে চলে যাওয়া লাগবে। কেউ মাগনা এসে বসে থাকতে পারবেনা। এদিকে অকারনে রেডিও চালানো হবে না। যারা দোকান থেকে কিনে খাবে মূলত তারাই বসবে এবং রেডিওর গান শুনবে। তার এমন কিপটা আচরণ দেখে মজনুর বন্ধুরা খুবই অবাক হল।

হারাধন দত্ত তার ছোট কুটুমের হাত দেখেছিল ভবিষ্যৎ রেখা যাচাই করার জন্য। কিন্তু দেখা গেল হাত দেখায় সে টাকা দেয়নি এই নিয়ে বেশ হারাধন দত্ত এবং কুটুম দের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি হল। এই মুহূর্তে হারাধন দত্ত তাদেরকে মেরে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। হঠাৎ করে মিলন নামের এক শীর্ষ এসে উপস্থিত হল হারাধন দত্তের বাড়িতে। হারাধন দত্তের কুটুমরা টাকা দিতে চাইছিল না। কিন্তু মিলন এসে সহযোগিতা করায় 10 টাকা বের করে দিয়েছে কুটুম। এমন টাকা পেয়ে এবং মিলনের সহযোগিতা পেয়ে হারাধন দত্তের মুখে অনেকটা হাসি ফুটল। এদিকে কুটুমরা বাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়ার মতো অবস্থা আর মিলন হঠাৎ এসে ঠাঁই পেয়ে গেল তাদের বাড়িতে। বলতে গেলে এই পর্বের নতুন মুখের আবির্ভাব।

নজর আলী রেশমার বাবার কাছ থেকে জমি জায়গা কিনে থাকেন। আজ রেশমা তার ছোট ছেলের প্রেমে লেগেছে। তাই নজর আলীর মনের মধ্যে সন্দেহ অনেক আগে থেকেই। এদিকে নজর আলীকে না বলে তার স্ত্রীর জব্বারের সাথে গোপন বৈঠক করেছে। প্রথমে নজর আলী সন্দেহ করেছিল তার জমি জায়গা নিয়ে চক্রান্ত চলছে। পরবর্তীতে তার স্ত্রী যখন বলে ছোট ছেলের বিয়ের জন্য সেখানে কথাবার্তা বলতে গিয়েছিল। তখন নজর আলী ধরে নিয়ে এসে রেশমার সাথে তার ছোট ছেলের বিয়ে দেওয়া এর মধ্যে জব্বারের চক্রান্ত রয়েছে। এতদিন যে সমস্ত জমি জায়গা জব্বর বিক্রি করেছিল মেয়ের বিয়ে দেয়ার মাধ্যমে এক নিমিষেই বের করে নেবে এমন ধান্দা রয়েছে তার। কিন্তু জব্বর কে সাথে নিয়ে যখন এই বিষয়ে গোপন বৈঠক করছিল, জব্বার বেশ রেগে গেল নজর আলীর কথায়। জব্বারের মনের মধ্যে এমন কোন কুচক্র বা চিন্তা নেই। নজর আলী তার জমি জায়গা কিনে যে উদ্ধার করে দিয়েছে তাও কিন্তু নয়। নজর আলী তার জমিন ফিরলেও গ্রামে অনেক মানুষ রয়েছে তার জমি কেনার। তবে এই নয় যে জমি কেনার জন্য তার কথা শুনতে হবে।

এদিকে নজর আলী কৃপণের ছোট ছেলে নহর তার ভুল বুঝতে পেরে রেশমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। কিভাবে তাদের বিয়েটা করা যায় এই নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছে। হঠাৎ এই মুহূর্তে জব্বার এসে দেখে ফেলল মেয়ের বসে থাকার দৃশ্য। তখন জব্বার কাকা তার মেয়েকে ডাক দিল। এরপর বুঝিয়েশুনে বাড়িতে পাঠিয়ে দিল। এরপর নহরকে বোঝানোর চেষ্টা করল অনেক কিছু। যেন সে আর রেশমার সাথে দেখা না করে। আর এভাবেই এই পর্বের সমাপ্তি টানে।

হাড় কিপটে নাটকের এই পর্বে আমরা বেশ কিছু বিষয় লক্ষ্য করে দেখেছি, তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে হাড় কিপটে নজর আলী কৃপণ পরিবারের উপর অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে না খেয়ে রয়েছেন। সে ধারণা করেছে তার বউ ছেলে তার উপর ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। সে মরে গেলে তারা খুশি হয়। তাই সে জব্বরের সাথে ভুল ধারণা নিয়ে আলোচনা করে। এদিকে রেশমা প্রস্তাব রেখেছিল নজর আলীর ছোট ছেলে বের হয়ে যাওয়ার জন্য, এতে রেশমা রাজি হন নাই। তাই রেশমা কে কিভাবে বান মারা যায় সে চিন্তা করছিল। ওদিকে লক্ষ্য করা যায় হারাধন দত্ত কুটুমদের মাথায় লাঠি তুলে হাত দেখার টাকা উশুল করেছে ডাবল। এখানে আমি লক্ষ্য করে দেখেছি নজর আলী কৃপণ এর নতুন ফন্দি টা বেশ দারুন ছিল। খুব সহজেই সে ভাত না খেয়ে থেকে স্ত্রীকে একটা ওয়াদার মধ্যে ফেলে। এখানে তার অভিনয়ের সার্থকতা ও বিজয় লক্ষ্য করা যায়। আর একদিকে বিজয় লক্ষ্য করা যায় হারাধন দত্তের টাকা আদায় করতে পারায়। তাই বলা যায় দুই কৃপণের এই পর্বে মুখে হাসি ফুটেছে। কিন্তু মাঝখানে রেশমাদের প্রেম-ভালোবাসার যেন অবনতি হতে চলল। তবে সবাই সবার নিজ নিজ স্থান থেকে খুব সুন্দর অভিনয় করার চেষ্টা করেছে। এদিকে মজনুর ভাই দোকান চালাতে গিয়েও বেশ দারুন কথার ছলে কৃপণতার প্রকাশ ঘটেছে। সব মিলে বেশ ভালো লেগেছে এই পর্বের অভিনয়।