হাই বন্ধুরা!
আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।
Infinix Hot 11s
আমি যখন ছোট ছিলাম তখন গ্রামটা বেশ অন-উন্নত ছিল। গ্রামের রাস্তাগুলো ছিল কাঁচা বা মেঠো রাস্তা। তখন মোবাইল তো দূরে থাক গ্রামে কয়েকটা টিভি সবে মাত্র মানুষে কিনেছে এমনটা। বাড়ি বাড়ি টিউবওয়েল ছিলনা, ছিল না কারেন্টের ব্যবস্থা। আমি লক্ষ্য করে দেখতাম সারা বছরে বারোটা মাসের মধ্যে মানুষ বিভিন্ন কাজে যেমন ব্যতিব্যস্ত থাকত তেমন ১২ মাসে বিভিন্ন রকমের খেলাধুলায় মগ্ন থাকতো ছোট থেকে কিশোর যুবক বয়সে মানুষেরা। তবে তার মধ্যে আরও কয়েকটা জিনিস বেশি লক্ষ্য করতাম তা হচ্ছে বিভিন্ন দূর-দূরান্তর গ্রাম থেকে মানুষ বান্দর খেলা দেখাতে আসতো আর এই থেকে কিছু টাকা পয়সা চাল উঠাতো। আবার সার্কাস খেলা দেখাতে আসতো। নাটক অভিনয় করতে আসতো গ্রাম গ্রামে। সবেমাত্র পেটের দায়ে এ সমস্ত মানুষগুলো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এক এক গ্রামে আসতো। তারা তাদের খেলা দেখিয়ে অভিনয় দেখিয়ে চাল টাকা পয়সা উঠাতে এবং জীবিকা নির্বাহ করত। একদিন লক্ষ্য করে দেখলাম দিন দুপুরবেলা প্রচন্ড রোদ গরমের মুহূর্ত। আমাদের বাড়ির পাশে একটি ফাঁকা স্থান, সেখানে একটি তালগাছ, কয়েকটা জাম গাছ, একটি নিম গাছ, আমগাছ রয়েছে সে জায়গায় পাড়ার অনেকেই বসে গল্প করছে, কাজ করছে খেলাধুলা করছে। কত টাইনা মন মুগ্ধকর পরিবেশ পাড়ার সব মানুষের উপস্থিতি খেলাধুলা যেন প্রাণে প্রাণের মেলবন্ধন। ঠিক এমন মুহূর্তে বেশ কয়েকজন লোক আমাদের কাছে এসে উপস্থিত হল। তাদের কাছে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র রয়েছে ঢোল তবলা একতারা। তারা হঠাৎ এসে উপস্থিত হয়ে আমাদের পাশে থাকা মানুষ জনের মধ্যে বসল এবং বলল আমরা এখানে গান বাজনা করবো, যদি আপনারা চাল উঠিয়ে দিতে পারেন।
ওখানে আমার বন্ধু মারুফের দাদা অর্থাৎ মোসলেম দাদা উপস্থিত ছিলেন। তিনি ছোটকাল থেকে এমন গানের দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি আনন্দের সাথে মেতে উঠলেন এবং বললেন হ্যাঁ ঠিক আছে তোমরা শুরু করো এখনই লোকজন গুছিয়ে যাবে অনেক আমরা চেষ্টা করব যতটুক পারি টাকা চাল উঠিয়ে দেওয়ার। তারা শুরু করে দিল ঢলে বাড়ি মারা। খেয়াল করে দেখলাম তারা অনেক সুন্দর ভাবে সেগুলো বাজাচ্ছে এবং গান-বাজনা করছে। এই দেখে আমাদের গ্রামের বেশ কিছু মানুষ হাসাহাসি করল। কারণ তাদের গানের সাথে বাজনার কোন মিল ছিল না এমনটা হতে পারে। যেহেতু আমরা ছোট মানুষ আমার আর কোন কিছু পেলেই বা দেখলে আনন্দে মেতে উঠতাম ভালো-মন্দ এতকিছু তো বোঝার বয়স ছিল না। যাইহোক তারা গান-বাজনা করলো পেটের দুঃখে। সম্ভবত সারি গান, ফকিরি,লালন গীতি গান, দেশের বিভিন্ন জাতের গান কয়েকটা গাইলেন। এভাবে তারা কয়েক ঘন্টা অবস্থান করলেন। তবে আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম হঠাৎ মোসলেম দাদা বলল তোমরা এতক্ষণ গান গাইলে আমরা শুনলাম। এবার আমরা কয়েকজন মিলে গান গাইব সবাই শোনো। তোমাদের ঢোল তবলা বাজাতে হবে না।
পাশেই ছিল আমাদের এক চাচার বাড়ি। মোসলেম দাদা বলল শুধুমাত্র একটা বদনা নিয়ে আসো এদের বাড়ির মধ্যে থেকে। কেউ বলল একটা হাঁড়ি আনলে ভালো হয়। কিন্তু মোসলেম দাদা বলল হাড়ি লাগবেনা বদনা হলেই হবে। এরপর সবাই একটা বদনা ম্যানেজ করে মোসলেম দাদার হাতে দিলেন। তখন দাদা কুটুম হয়ে বসে। সেই বদনা কলের মধ্যে রেখে দুই হাতে বাজাতে থাকলেন, আর একটা সারি গান শুরু করে দিলেন। দাদার যে উঁচা কন্ঠ, মুখের আকৃতি বলার ভঙ্গি সবাইকে মুগ্ধ করতে থাকলো। দাদার তালে তালে বিশেষ বিশেষ অংশে পাশে থাকা মানুষেরা সুর টানলো এমনকি সে উপস্থিত গানের দলের লোকরাও। এমনিতেই আমরা মানুষের মুখে মুখে শুনতাম সবাই তাকে মোসলেম বয়াতি বলত। তিনি অল্প বয়স থেকে অনেক গানে দলে যুক্ত ছিলেন। তবে সাংসারিক জীবন হয়ে সেগুলো বাদ দিয়েছিলেন। তবে তার গান বাজনার ঝুল ছিল ব্যাপক। এক সময় আমারও শুনেছিলাম মানুষের দুই পক্ষ মিলে গান বাজনা করতো যাকে বলা হত গানের প্রতিযোগিতা। এক সময় নাকি এভাবে দুই পক্ষ তিন পক্ষ মিলে গানের প্রতিযোগিতা হতো। তবে যাই হোক আমাদের গ্রামে আগত সেই গানের দলের লোকরা দাদার গান শুনে মুগ্ধ হলেন এবং দাদার কাছে একটু মাথা নত করে এমনটাই বুঝাতে চাচ্ছিলেন, তারা প্রচন্ড গরিব মানুষ। গ্রামে গ্রামে এভাবে গান করে টাকা পয়সা উঠিয়ে সংসার চালান এবং তাদের দলটা পরিচয় করিয়ে বেড়ান যেন যে কোন মুহূর্ত তাদেরকে গান গাওয়ার জন্য দাওয়াত করে। আগেকার মানুষ যারা সুখ, একটু জমিদার ভালো পর্যায় ছিল তারা নাকি এই সমস্ত গানের দলকে ডাকতো গান-বাজনার আয়োজন করত।
তবে যাই হোক আমি লক্ষ্য করে দেখলাম আমাদের পাড়াগাঁয়ে অনেক মানুষ হাসাহাসি করল এবং বলল এদের টাকা পয়সা দিয়ে কি হবে যা উঠিয়েছে সবগুলো মোসলেম দাদাকে দেয়া হোক। কারণ তারা এতক্ষণ যত গান গাইছে সবই ছাগলের ভেবানোর মত। অনেকদিন পর গ্রামের মানুষ; পাড়াগায়ের মানুষ মোসলেম দাদার মুখে গান শুনতে পারলো এই গানের দলের জন্য, সবাই জেনো মোসলেম দাদাকে প্রশংসা করতে থাকলো। আমাদের সাথে খেলাধুলা করা অনেক ছোট বড় ছেলেপেলেরা মাটির থেকে ধুলি উঠাচ্ছে এবং ধুলি উড়াতে থাকলো কত হোইহুলো আনন্দ লেগেছিল ওই মুহূর্তে। তবে একটা বিষয় আমার কাছে খুব ভালো লেগেছিল সেটা হচ্ছে মোসলেম দাদা বলল এক পয়সাও নষ্ট করা যাবে না সব ওদের দিয়ে দাও। ওরা পেটের দুঃখের গ্রামে গান করতে এসেছে, দলটাকে পরিচয় লাভ করাতে এসেছে। একটা সময় ছিল আমিও ঠিক এভাবে আমাদের গানের দলে বিভিন্ন জায়গায় চলে যেতাম, আর তা দিয়ে আমাদের দল চলতো। আমাদের দলের যারা বিবাহিত সংসার করা মানুষ ছিল তাদের সংসার চলত। আমি এদের কষ্ট বুঝি। এদের জন্য আমাদের দেশে বিনোদনের সাংস্কৃতি বেঁচে আছে। তারপর যা টাকা পয়সা চাল উঠেছিল সবগুলো তাদের দেয়া হলো এবং সম্মানের সাথে কিছু খাবার খেতে দেয়া হলো। এরপর তাদের পরিচয় নিলো কোথা থেকে এসেছিল, কোথায় কোথায় গান করে, কবে থেকে এই দল বেধেছে, মোসলেম দাদা কোথায় কখন গান করেছে বিভিন্ন কিছু তারা জানতে চাইলো যেগুলো আমার মোটেও স্মরণে নেই। আর এভাবেই সম্মানের সাথে তাদেরকে বিদায় দেয়া হলো এবং আমরাও খেলাধুলা বাদ দিয়ে অনেক আনন্দ উপভোগ করেছিলাম ওই দিন। জেনো এই দিনের কথা মনে পড়লে মনে হয় বর্তমান প্রজন্ম গ্রামীণ এমন আনন্দ উল্লাস থেকে অনেকটা দূরে চলে গেছে। আগের মতো দলবদ্ধ ভাবে আনন্দ নেই সমাজের মধ্যে। কতই না সুন্দর দিন ছিল তখন। মানুষ পেটে দুঃখ বুঝত, মানুষের দুঃখ বুঝত।
গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফটোগ্রাফি | জনগণ ও প্রকৃতি |
---|---|
বিষয় | অতীত ঘটনা |
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Infinix Hot 11s |
ঘটনার লোকেশন | জুগীরগোফা |
ব্লগার | Sumon |
ঠিকানা | গাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ |
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বর্তমানে গল্প-গানের আসর জমাতে দেখতেই পাওয়া যায় না।যেটা পূর্বে গ্রামে খুবই দেখা যেত,আর বদনা তো এখন বিলুপ্ত।এখন কর্ম ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও আপনি স্মৃতিচারনমূলক গল্প-গানের আসর জমিয়েছেন জেনে ভালো লাগলো।আপনার ছেলেবেলার স্মৃতিগুলি সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে,ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আগেকার দিনের মানুষ এই সারি গান গেয়ে বেড়াতো গ্রামে গ্রামে। এর বিনিময়ে তারা চাউল সংগ্রহ করতো। সারি গান শুনতে বেশ ভালোই লাগতো। তবে এই ধরনের গানগুলো আর তেমন দেখতে পাওয়া যায় না আসলে সময়ের সাথে সাথে এই গানগুলো এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এই গানগুলো গ্রাম থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জ্বি ভাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মসলিম দাদার কথায় আজও মনে আছে। উনি অনেক ভালো একটা মানুষ ছিলেন এবং উনি প্রথম আমাদের এলাকাতে দোকান দিয়েছিলেন যাইহোক আজকের পোষ্টের মাধ্যমে পূরণো অনেক কথা মনে পড়ে গেল। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার অনুভূতি শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ উনার সাথে অনেক আনন্দ করেছি জীবনে
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit