স্কুলে খেজুর বিতরণের গল্প

in hive-129948 •  2 months ago 


আসসালামু আলাইকুম



হাই বন্ধুরা!

আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।

IMG_20241020_083459_691.jpg

photography device:
Infinix Hot 11s

What3words Location


গল্প: স্কুলের খেজুর বিতরণ


গল্পটা শেয়ার করার ইচ্ছা ছিল না তবুও শেয়ার করলাম প্রয়োজন মনে করে। আমি তখন অনেক ছোট ছিলাম। আমি ক্লাস বড় ওয়ানে পড়ি। আমার ভাই টুইয়ে পড়ে। আমরা দুই ভাই এক ক্লাসে ছিলাম। তবে আমি আমার ভাইয়ের দুই বছরের ছোট। ভালো কিছু পারতাম না বুঝতাম না। আমার আব্বু ভাইয়ের সাথে আমাকে ভর্তি করে দিয়েছিল যেন একে ক্লাসে দুই ভাই একসাথে বসতে পারি এই জন্য। কিন্তু সময়ের ব্যবধান তো রয়েছে। যেখানে আমার ওয়ানে ভর্তি হওয়ার বয়স হয়নি, সেখানে স্কুল ধরাতে ভাইয়ের সাথে ওয়ানে বসানো হয়েছিল। যাইহোক এভাবেই এক বছর গ্যাপ দিয়ে দেখা গেল আমি বড় ওয়ানে ভাই টু এ। আর এর মধ্যে রোজার ঈদ আসার আগে খালেদা জিয়া সরকার সকলে স্টুডেন্টদের জন্য খেজুর বিতরণ করলেন প্রত্যেকটা প্রাইমারি স্কুলে। তখন লক্ষ্য করে দেখলাম ক্লাস ওয়ান থেকে টুয়ে যারা পড়ে তাদের দুই কেজি খেজুর দেওয়া হবে। ক্লাস থ্রি থেকে ফাইভ এ যারা পড়ে তাঁদের ৩ কেজি করে দেয়া হবে।

IMG_20241020_083658_169.jpg


আমরা এই বিষয়ে অবগত ছিলাম। ক্লাসে শিক্ষকরা সবাইকে বলে দিয়েছিল নির্দিষ্ট দিন তোমরা একটি করে গামলা নিয়ে স্কুলে আসবা। অনেকে গামলা আবার ব্যাগ হাতে করে গেছিল। আমরা কোনভাবে হয়তো বিষয়টা এড়িয়ে গেছিলাম তাই ঐদিন যখন খেজুর দিবে তখন ভাইয় বাড়ি এসে একটি গামলা নিয়ে গেছিল। আমি ছোট, বেশি কিছু বুঝিনা বা মাথায় রাখতে পারি না, সবার হাতে কেন গামলা এটা সেটা। তারপর আমাদের নির্দিষ্ট ক্লাসের মধ্যে লাইনে দাঁড়াতে বলল। আমরা সবাই ক্লাসের মধ্যে লাইনে দাঁড়ালাম। শিক্ষকরা প্রত্যেকজনকে দুই কেজি করে খেজুর মেপে দিচ্ছে এবং ক্লাস থেকে বের করে দিচ্ছেন বই আর খেজুর নিয়ে সোজা যেন বাড়িতে চলে যায়। এক কথায় দ্বিতীয়বার যেন সে ক্লাসের মধ্যে না প্রবেশ করি। ছোট ওয়ান থেকে খেজুর বিতরণ হলো। আমাকে ২ কেজি খেজুর দেওয়া হলো অন্যান্যদের মতো করে। আমিও ক্লাসের মধ্য থেকে বের হয়ে আসলাম। এবার আমার ভাই পাত্র নিয়ে গেছিল একটা। যেহেতু ওয়ান, বড়-ওয়ান এভাবে সিরিয়াল করে ক্লাস থেকে দেওয়া হচ্ছে। আমার বড় ভাইয়ের আগে আমি পেয়ে গেলাম। ভাই ক্লাস টু এ পড়ে। এবার ভাইদের ক্লাসে খেজুর দেয়া শুরু হল। আমার ভাই আমার গামলাটা নিয়ে লাইনে দাঁড়ালো। ক্লাস টু এর সকল স্টুডেন্টদের যখন দেয়া চলছিল যার দেয়া হচ্ছে সে বাইরে চলে আসছে। এখন আমার ভাইয়ের পালা। আমি লক্ষ্য করে দেখলাম জানালা দিয়ে। ভায়ের হাতে গামলায় খেজুর দেখে শিক্ষকরা বলল এর হাতে খেজুর কেন। তখন শিক্ষকদের মধ্য থেকে আমাদের গ্রামের দুই জন ছিলেন। তারা বলল এই গামলার মধ্যে ওর ছোট ভাইয়ের টা। তখন বলল একই বাড়িতে দুই দুই চার কেজি খেজুর যাবে? তখন শিক্ষকরা বলল একে এক কেজি দেওয়া হোক। এক বাড়িতে চার কেজি। তিন কেজি গেলে সমস্যা নাই।

IMG_20241020_083654_488.jpg


তারপরে আমাদের শিক্ষকরা ভাইকে বুঝিয়ে বললেন বাড়িতে যদি কেউ প্রশ্ন করে গামলার মধ্যে কয় কেজি খেজুর রয়েছে বলবা ৪ কেজি। আমার ভাই বলল ঠিক আছে। তখন দেখলাম এক কেজি মেপে দিল। আমার ২ কেজি আর ভাইয়ের এক কেজি মোট তিন কেজি। আর ওদিকে ক্লাস থ্রি থেকে ফাইভ পর্যন্ত তাদের ৩ কেজি করে। আমাদের মত অনেকে ভাই বোন ছিল। তাদেরকে ঠিকভাবে মেপে দেয়া হয়েছে উপর ক্লাসে যারা ভাই বোন ছিল তারা তিন কেজি তিন কেজি ছয় কেজি পেয়েছে। বিষয়টা একটু খারাপই দেখায়। কারণ আমরা পাড়াগাঁয়ের যারা একসাথে ছিলাম সবাই একসাথে বাড়ি ফিরছিলাম। আর সবাই একসাথে বাড়ি ফিরছিলাম এই জন্যই যে ওই মুহূর্তে টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছিল। তার আগে প্রচন্ড বৃষ্টি হয়ে পানি কাদা হয়েছিল। তাই আমরা দলবদ্ধভাবেই বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছিলাম। আর সে জায়গায় আমি ছোট মানুষ। তাই সবটা দেখলাম শুনলাম জানলাম।

IMG_20241020_083505_560.jpg


যাহোক বাড়ি আসার জন্য যখন রাস্তায় উঠলাম। দেখলাম রাস্তার পাশে দোকানে থাকা চেনা পরিচিত লোকজন এক একজনার ব্যাগ থেকে গামলা থেকে খির খেজুর বের করে নিচ্ছে খেয়ে নিচ্ছে আর হাসাহাসি করছে। আমার ভাইয়ের ছোট থেকে বুদ্ধি দেখেছি। সে দেখছে এমনিতে আমাদের এক কেজি কম দিয়েছে। আবার রাস্তা থেকে বয়স্ক মানুষেরা হাই স্কুলের ছেলেরা যদি গামলার মধ্য থেকে হাতা মেরে নিয়ে নেয়, খেয়ে নেয় তাহলে কম হয়ে যাবে। এরপর সে একটা কৌশল করে কোন রকম রাস্তা ক্রস করে বন্ধুদের সাথে সঙ্গ না দিয়ে আমার সাথে নিয়ে বাগানের মধ্য দিয়ে চলে আসলো। আমাদের এখানে একটা বড় নারিকেল বাগান রয়েছে। সে বাগানের মধ্যে দিয়ে সট রাস্তায় বাড়ি আসা যায়। কিন্তু বাগানের মধ্যে দেখা গেল আমাদের বড় আব্বার একটা পাগল ছেলে আমাদের বড়। সে ভাইয়ের সাথে দেখা। সে ভাই আমাদের দেখে আমাদের কাছে খেজুর চাইলো। আমার ভাই গামলাটা তার সামনে ধরল। খেয়াল করে দেখলাম সে পাগল হলেও মানুষ মন্দ নয়। ৪/৫ পিস খেজুর নিয়ে। তার মুখের কথা স্পষ্ট নয়, তারপরেও আমাদের বলার চেষ্টা করল সাবধানে বাড়িতে নিয়ে যেতে।

IMG_20241020_083508_204.jpg


এরপর ভাইয়া চলে গেল। বাড়িতে এসে আব্বার কাছে সব বললাম। আমাদের বাড়িতে সব সময় জিনিস মাপা দাঁড়ি থাকতো। আব্বা খেজুরগুলোর ওজন মেপে দেখল ২ কেজি ৮০০ গ্রাম। তারপরে আব্বা সন্ধান নিল। কথা সত্য। নিচের শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা ২ কেজি করে পেয়েছে। উপর শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা ৩ কেজি করে পেয়েছে। সে জায়গায় আমাদের দুই ভাইয়ের চার কেজি হয়। বাড়িতে আব্বার কাছে বললাম স্যারে এমন বলেছিল। কাউকে যেন না বলে। তখন এই বিষয়টা আব্বা স্কুল পাড়ার দোকানে মানুষদের মধ্যে তুলে ধরেছে। তখন শিক্ষকরা লজ্জিত হয়েছিল। এবং বলেছিলে সেটা আমাদের ভুল হয়েছে। পরবর্তীতে দেখা যায় স্থানীয় লোকজন শিক্ষকদের এমন কর্মকাণ্ডের জন্য সিসি করেছিল। পরে কমিটির লোকজন আরো হিসাব বের করে দেখে প্রত্যেক শিক্ষক পাঁচ কেজি করে খেজুর নিয়ে গেছে বাড়িতে। এমনকি হেডমাস্টার ১০ কেজি নিয়ে গেছে। আর সেই জায়গায় স্টুডেন্টদের হক মেরে দেওয়াটা মানুষের কাছে খারাপ লেগেছে। এমনকি স্থানীয় দোকানপাশে বসে থাকা মানুষদের এক মুঠো করে খেজুর দেয়ার কথা ছিল সেটা দেয়নি। আর এই বিষয় নিয়ে আমাদের বিদ্যালয়ের একজন নীতিবান শিক্ষক প্রতিবাদ করেছিলেন কিন্তু তার সাথে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য সহকারী শিক্ষকরা খারাপ আচরণ করেছিলেন। এই বিষয়টা সেই ভালো শিক্ষক সবাইকে বলেছিলেন। তবে তখন গ্রামের লোকজন এখানে লোকজন সেই নীতিবান শিক্ষককে খুবই সম্মান করেছিলেন। আর সবাই বলাবলি করছিলা শিক্ষকদের মধ্যে যদি দুই নম্বরি থাকে তাহলে ছাত্ররা কি শিখবে। আর এভাবেই ঐদিন খেজুর বিতরণ করেছিল। জীবনে প্রথম স্কুল থেকে স্বচক্ষে কিছু একটা পেয়েছিলাম আমরা। তবে সেখানে প্রতারণা খুঁজি পেয়েছিলাম। আর সেই থেকে যত বুদ্ধি জ্ঞান হয়েছে, দিন দিন লক্ষ্য করে এসেছি; যে সমস্ত শ্রেণীর মানুষদেরকে মানুষ ভরসা করে, সে সমস্ত শ্রেণীর মানুষদের মধ্যে প্রতারণা বেশি।

IMG_20241020_084018_415.jpg


গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ফটোগ্রাফিখেজুর
বিষয়অতীত ঘটনা
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s
ঘটনার লোকেশনজুগীরগোফা
ব্লগারSumon
ঠিকানাগাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ


পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!