আজ - বৃহস্পতিবার
Photography device: Infinix hot 11s
Location
আমার বাংলা ব্লগ বাসিরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাই-বোন বন্ধুদের কে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানায়। আশা করি সকলেই ভাল আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। হয়তো এই ঘটনাটি পড়লে আপনাদের অনেক ভালো লাগবে, তাই আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক। |
---|
নিরব নিস্তব্ধ রাত। পথ চলছিলাম একা একা, রাত্রি তখন প্রায় পৌনে একটা। আশেপাশে কোন মানুষজন ছিল না। গন্তব্যস্থান ছিল মাঠে পুকুরের দিকে। পুকুর পাহারার জন্য গেছিলাম। অনেকেই জানেন আমি পাঙ্গাস মাছ চাষ করে থাকি, তাই মাছ পাহারার উদ্দেশ্যে রাতে পুকুরের দিকে যেতে হয়। তাহলে বুঝতেই পারছেন রাতে চলাচল, একলা কেমন ভাবে নিজেকে সেভ রেখে চলতে হয়। হাতে বেশি কিছু থাকে না। একটি টর্চ ও একটি লাঠি আর নিজের মনের মধ্যে অফুরন্ত সাহস। তাই নিয়ে পুকুর পাহারা করতে যেতে হয় একা একা বিলের পুকুরে।
Photography device: Infinix hot 11s
Location
প্রতি রাতের ন্যায় এমন একটা রাতে পুকুরের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ভয়ানক সেই রাতের ঘটনা শেয়ার করতে যাচ্ছি, যে ঘটনাটি আপনাদের মনের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে। গা শিউরে উঠবে আতঙ্কে। একটু নিজের গভীর মন থেকে অনুভব করার চেষ্টা করুন, একা একা রাত গভীরে পথ চলা বাঁশ বাগানের নিচ দিয়ে কতটা সাহস মন নিয়ে চলতে হয়। হঠাৎ করে বাঁশ পাতার উপরে খড় মড় শব্দ হয়ে ওঠে আতঙ্কে বুক কেঁপে উঠতে পারে যদি জানা না থাকে এটা গেলে একটি ছুঁচো বা ইঁদুর। আবার আরেকটু পথ পার না হতেই হঠাৎ করে নিকট থেকে ডেকে ওঠে শেয়াল, হুক্কা হুয়া! মাঝে মাঝে পাশ দিয়ে দুই তিনটা শিয়াল নির্ভয়ে পার হয়ে চলে যায়। মাঝে মাঝে কিছু ব্যাঙ দেখা যায়, যা সামনে নিরবে বসে থাকে পোকামাকড় খেয়ে ক্ষুধা নিবারণের আশায় কিন্তু তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করা বড়ই কঠিন। কারণ সে লাফ দিলেই হিসু করতে করতে চলে যায়। তবে রাতে চলাচলের কারণে এই সমস্ত বিষয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা হয়ে যাওয়ার ফলে আর ভয় লাগে না। যে দিনের ঘটনা, ঠিক তেমনি কিছু পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছিল। যা সৎ সাহস এই মন থেকে মেনে নিয়ে চলতে পারছিলাম কারণ এ সমস্ত বিষয়ে আর মনের মধ্যে কোন ভয় নেই আমার।
Photography device: Infinix hot 11s
Location
বাড়ি থেকে বাগান অতিক্রম করে মাঠ, মাঠ অতিক্রম করে অসংখ্য পুকুর। যখন নিজের পুকুরের নিকটে উপস্থিত হলাম তখন খুব সাবধানে জায়গায় জায়গায় নিজেকে দাঁড়াতে হয় এবং মাঠের পরিবেশ লক্ষ্য করতে হয় খুব নীরবে, আশেপাশে কোন চোর ডাকাত বা ভয়ানক জীবজন্তু আছে কিনা। এক কথায় নিজেকে সেভ রাখার জন্য অনেক সচেতন থাকতে হয় সেই মুহূর্তে কারণ পাশে কেউ থাকেনা। নিজের সাহসে নিজেকে সেভ রেখে নিজের পুকুরের মাছগুলোকে সেভ রাখার প্রত্যাশায় মাঠের উদ্দেশ্যে আসা। ঠিক এই দিন একইভাবে আমি মাঠের পরিবেশের অবস্থান লক্ষ করার চেষ্টা করছিলাম হঠাৎ করে কেমন জানি মনের মধ্যে ভীতু সংকোচ হতে থাকলো। বুঝলাম না মাঝে মাঝে গা শিউরে উঠতে থাকলো কোন কিছু বুঝতে পারার আগেই। আশেপাশে ভয়ানক তেমন কোন কিছু আমি লক্ষ্য করলাম না। নিজেকে আড়াল করার উদ্দেশ্যে একটি কলা ঝাড়ের নিচে অবস্থান করলাম। অবশ্য আমাদের এখানে পুকুর গুলাতে বিভিন্ন বিষাক্ত সাপের ভয় রয়েছে, তাই জিন্সের প্যান্ট পড়ে পায়ে গাম্বুট জুতা পরে মাঠের দিকে আসতে হয়। আমিও ঠিক সেভাবে প্রস্তুত ছিলাম। তবে নিজেকে একটু এভাবে রেডি করে মাঠের দিকে আসলে নিজের মধ্যে অনেক গুণ সাহস বেড়ে যায়। নিরব নিস্তব্ধ রাত দূর-দূরান্ত থেকে শিয়ালের হুক্কা হওয়া আওয়াজ কানে আসতে থাকলো। আমি টর্চ না জ্বালিয়ে নিরবে অবস্থান বুঝে নিলাম। অনেকক্ষণ পর লক্ষ্য করলাম আশেপাশে তো কেউ নেই তাই আমার নিজের পুকুরগুলোতে টর্চ লাইটের আলো মারলেই ভালো হয়। পুকুরের মধ্যে টর্চ মারার জন্য যখন সামনের দিকে এগোতে থাকলাম হঠাৎ করে ঝোপের মধ্য থেকে দুইটা আলো জ্বলে উঠল আমার টস লাইটের আলোর সাথে সাথে। আমি পুনরায় থমকে গেলাম দাঁড়িয়ে পড়লাম সাহস নিয়ে কি হতে পারে অত দূরে ঝপের মধ্য থেকে জ্বলে উঠছে। আমি জানি কুকুর, শিয়াল, বিড়ালের চোখে টর্চ লাইটের আলো লাগলে তা জ্বলে ওঠে। ভেবে দেখলাম হয়তো এমন কিছুই হতে পারে তাই নির্ভয়ে আবারও সামনের দিকে এগোতে থাকলাম নিজের পুকুর গুলো দেখার উদ্দেশ্যে। কিছুটা পথ সামনে এগিয়ে আবার চেষ্টা করলাম ওই সোজা লাইট মেরে দেখি তেমন চোখ জ্বলে ওঠে কিনা। কিন্তু তখন লক্ষ্য করলাম নেই সেখানে আর জ্বলে ওঠা চোখ দুটো।
Photography device: Infinix hot 11s
Location
মনে মনে ভাবলাম হয়তো আমার ভয়ে প্রাণীটি দূরে কোথাও পালিয়ে গেছে। আরো ভাবলাম হয়তো হতে পারে পরিচিত কোন প্রাণী। যখন দেখতে পেলাম না টর্চ মারা সত্বেও আর সেই চোখ দুটি, নির্ভয়ে সামনের দিকে এগোতে থাকলাম হঠাৎ বুনো বিড়ালের কন্ঠ ধনী কানে আসতে লাগলো অতি নিকট থেকে মাপ! মাপ! শব্দ। হয়তো হঠাৎ আতঙ্কিত হয়ে ওঠে নিজের মনের মধ্যে জেগে থাকা সেই সাহসটি আবারও ফিরে এলো নির্ভয়, চলতে থাকলাম। কারন এমন ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটে থাকে আমার সাথে।
আমি মনে মনে ভাবলাম যদি কোন হিংসুক প্রাণী এই মুহূর্তে আমাকে অ্যাটাক করে তাহলে আমি কী করে তার থেকে নিজেকে সেভ করব? আবারও মনের মধ্যে হঠাৎ জাগ্রত হল যদি কোন সন্ত্রাসী আমাকে অ্যাটাক করে তাহলে কিভাবে তাদের থেকে নিজেকে বাঁচাবো? এমন ভাবনা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে পুকুরের ভেড়ির দিকে টর্চ মারি। আবারো টস লাইটের আলোর সাথে দূর থেকে জ্বলে উঠলো দুইটি জ্বলন্ত চোখের দৃশ্য। তখন সোজা পথ হওয়ায় আমি দ্রুত তার পানে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করলাম কি জিনিস আমি দেখব, তবে বন জঙ্গল হওয়ার কারণে যেতে একটু দেরি হচ্ছিল। রাত গভীর, নিঝুম রাত, ঘন কালো অন্ধকার চারিপাশ। মনের সৎ সাহস নিয়ে ছুটে চলতে থাকলাম তার পানে আমাকে জানতেই হবে। তবে সঠিক স্থানে যে আর কোন কিছু চোখে বাধলো না নিজের মনের মধ্যে একটি অন্যরকম অনুভূতি কাজ করতে থাকলো। হয়তো কোন কিছু আমার সাথে খেলা করছে এই গভীর রাতে। তাহলে কি তার ভাবনায় আমি চিন্তিত থাকবো, নাকি পুকুর পাহারার জন্য এসেছি প্রতিদিনের ন্যায় শান্তভাবে নিজেকে কোন একটি গাছের নিচে অথবা পুকুরের মাছের খাবার দেওয়ার মাচার উপরে নিজেকে শান্তভাবে থামিয়ে রাখবো? ভেবে পেলাম না।
Photography device: Infinix hot 11s
Location
অনেকক্ষণ ঘন আঁধারে নিজেকে থামিয়ে রাখলাম নির্বাক দৃষ্টিতে, মাঝে মাঝে মনের মধ্যে কিছুটা ভয় সঞ্জয় হতে থাকলো। আবারও টর্চ মারলাম পুকুরের এপাশে ওপাশে কোন দিক থেকে কোন সিগন্যাল আসছে না। হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি এলো উপর পানে আকাশের দিকে টর্চ লাইটের আলো মেরে ধরে রাখলাম দূরের পুকুর থেকে কেউ জানে আমাকে সিগন্যাল দিচ্ছে যে মাঠে পুকুরে মাছ পাহারার জন্য মানুষ রয়েছে। তবে তা আমার থেকে অনেক দূরে। এখানে আমার কোন বিপদ হলে দেখার মত কেউ নেই। মাছের খাবার দিয়ে মাছের উপরে বসে থাকলাম নিরবের কোন দিকে টর্চ না মেরে। কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ করে লক্ষ্য করলাম নিকটে কোন একটি শব্দ হচ্ছে। অন্ধকার তার দিকে লক্ষ্য করার চেষ্টা করলাম, মনে হলো কিছু একটা জানি লাফাচ্ছে। সাথে সাথে তার দিকে লাইটের আলো মারলাম। দেখলাম একটি বিড়াল এই গভীর রাতে ক্ষুধা নিবারণের আশায় গ্রামের ঘরবাড়ি অতিক্রম করে এই গভীর পুকুরের বনে ইঁদুর ধরার আশায় এসেছে।
তখনই বুঝতে পারলাম হয়তো এতক্ষণ আমি যাকে নিয়ে আতঙ্কিত হয়েছিলাম তা এই বিড়াল হতে পারে।
Photography device: Infinix hot 11s
Location
মনের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি এলো। তবে কেমন জানি বিড়ালটি পিছন দিকে থাকার সময় আমার মনের মধ্যে ভয় লাগছিল, তাই আমি তার পানে ঘুরে বসে ছিলাম। সে কি করে দেখার আশায়। মাঝে মাঝে তার পানে লাইট মারছিলাম। পুকুরে অনেক ছোট ছোট শামুক হয়ে থাকে, আর এই শামুক তুলে খাওয়ার জন্য বুনো ইঁদুরগুলো রাতে পুকুরের ধার দিয়ে চলাচল করে। তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পারলাম বিড়ালটি ইঁদুর ধরার জন্য পুকুরের ধারে অবস্থান করছে। যখন আমি তার চোখের দিকে লাইট মারতে থাকলাম সে নিরবে চোখ বুজে থমকে দিতে লাগলো। আবার যখন তার চোখের দিকে টর্চ মারছিলাম, তখন আবার চোখ দুটো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে থাকলো। তখন মনের মধ্যে কিছুটা ভয় আবার কিছুটা সাহস কাজ করছিল।
Photography device: Infinix hot 11s
Location
বেড়ালটিকে নিয়ে ভাবছিলাম, এই গভীর রাতে সে চরাই করার উদ্দেশ্যে গ্রামের বাড়ি গুলো ছেড়ে গভীর বন জঙ্গলের মধ্যে ইঁদুর ধরার আশায় চেষ্টা চালাচ্ছে। সাধারণত বিড়ালেরা গ্রামের মানুষের ঘরবাড়ির বাইরে দূরে কোথাও যেতে চায় না। ইঁদুর ধরার ইচ্ছে হলেও ঘরবাড়ির মধ্যে থেকে ধরার চেষ্টা করে থাকে কিন্তু এভাবে মাঠে গভীর রাতে তেমন একটা দেখা যায় না। তবে বিড়ালটিকে আমি সাকসেস হতে দেখি নাই সে এদিক ওদিকে নির্ভয়ে ইঁদুর ধরার আশায় চেষ্টা করছিল। আর কেমন জানি একটু অসতর্কতার সাথে চলতে থাকলো, মনে মনে ভাবলাম হয়তো আমাকে দেখে সে কিছুটা সাহস পেয়েছে ঠিক আমি যেমন তাকে দেখার পর স্বস্তি পেয়েছি। না হলে রাতের বেলায় এমনভাবে একটি বিড়াল অসতর্ক অবস্থায় কিভাবে থাকতে পারে যে কোন মুহূর্তে বুনো বিড়াল অথবা শিয়ালে তাকে অ্যাটাক করে খেয়ে ফেলতে পারে। আবার কিছুটা মনের মধ্যে এমন চিন্তা ভাবনাও আসলো শুনেছি জিন পরীরা নাকি বিড়ালের রূপ ধরে থাকে! তবে এমন কোন ভয় আমার মধ্যে কাজ করছিল না নিজের মনের মধ্যে সেই সাহস বিদ্যা মান ছিল তাই আর বসে না থেকে নিজের পুকুর গুলোতে এ পাশ থেকে ওপাশ, ওপাশ থেকে এপাশ টর্চ লাইটের আলো মেরে আবারো থেমে থাকলাম। তবে চারিপাশে আলো মেরে এসে যথাস্থানে ফিরে এসে বিড়ালটির আর সন্ধান পেলাম না। ভাবলাম হয়তো সে চলে গেছে তার খাদ্যের সন্ধানে অথবা পাড়াগাঁয়ের উদ্দেশ্যে। এরপরের দীর্ঘক্ষণ একা একা পুকুরে বসে থাকা এপাশে-ওপাশে লাইটের আলো দিয়ে সতর্ক হওয়া বা মানুষকে সতর্ক করানোর। কোন খারাপ টাইপের মানুষ যেন পুকুরের দিকে না আসে অর্থাৎ প্রতি রাতের মতো নিজের কাজ করতে থাকলাম। তবে যাই হোক আর কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি আমার। অনেক কিছুর সম্মুখীন হতে হয় বৃষ্টির রাতে। বৃষ্টিতে ভিজে যেতে হয়, গরমের দিনে কষ্ট করে নিজেকে সামলে চলতে হয় সাপ-পোকাড়ের কামড় থেকে।
Photography device: Infinix hot 11s
Location
তবে এই সমস্ত বিষয়গুলো থেকে নিজের মনের মধ্যে যথেষ্ট সাহস সৃষ্টি হয়ে থাকে এবং নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন হয়ে থাকে। তবে এই কথা সত্য, একা একা গভীর রাতে বন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে পুকুরে মাছ পাহারা করা বড়ই কঠিন ব্যাপার। তবে আজ আর নয় কথা হবে পরবর্তী কোনো পোস্টে ততক্ষণ ভালো থাকবেন সবাই। আল্লাহ্ হাফেজ।