আনন্দমুখর পরিবেশ হওয়া শর্তেও শোকাহত একটি দিন

in hive-129948 •  2 years ago 

আজ - শুক্রবার

০৬ মাঘ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
২০ জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ


আসসালামু আলাইকুম



আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে আপনাকে স্বাগতম



হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদের কে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। আজ আমি আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছে অতি বেদনাদায়ক একটি ঘটনার পূর্ব ও পরবর্তী মুহূর্তকে কেন্দ্র করে। তাহলে চলুন মেন বিষয়ে যাওয়া যায়।


'আমার বাংলা ব্লগ'
কোয়ালিটি সম্পন্ন পোস্ট



ফটোগ্রাফি সমূহ:


প্রথম পর্যায়ের ফটোগ্রাফি

দিনটি ছিল গত বৃহস্পতিবার এর আগের বৃহস্পতিবার। খুবই আনন্দঘন একটি মুহূর্ত অতিবাহিত করছিলাম স্কুলের সকল স্টাফ মিলে। যে যার মত বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত ছিল। এদিকে ছাত্রছাত্রীরা যেভাবে আমাদের সাথে আনন্দে মেতে থাকে ঠিক তারা সেই ভাবেই অবস্থান করছিল বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের ছোট ছোট বাচ্চারা এভাবেই মুস্তাফিজুর এবং আমার হাত ধরে টানাটানিতে মেতে উঠে যেকোনো মুহূর্তে। সকালের শুরুতে এসেম্বলি ক্লাস দিয়ে শুরু হয় স্কুলের যাত্রা। তবে তার পূর্বে আমাদের যাত্রা শুরু হয় আনন্দঘন মুহূর্ত দিয়ে। আর সেটা ফটোগ্রাফির মাধ্যমেই বুঝতে পারছেন সকলে। এদিকে ক্লাসে পড়া না পারলে কান ধরে দাঁড়িয়ে রাখা অথবা বেয়াদবি করলে যে কোন প্রকার একটি লজ্জা দেওয়া এমনটাই সচরাচর হয়ে থাকে আর কি। স্কুলটা বেশ সুন্দরভাবে তখন পরিচালিত হচ্ছিল বিভিন্ন শিক্ষক দ্বারা। আমি দোতলায় ক্লাস সিক্সের ক্লাস নিচ্ছিলাম এমন মুহূর্তে লক্ষ্য করলাম আমাদের বিদায়ী ছাত্র নয়ন তার আব্বার মোটরসাইকেল থেকে হাসতে হাসতে নামলো এবং তার মা রোকসানা মেমের জন্য টিফিন রেখে গেল। কিন্তু তার কুড়ি পঁচিশ মিনিট পরে শোনা গেল তারা হেমায়েতপুর নামক একটি গ্রামের হাই রোডে এক্সিডেন্ট করেছে। রোকসানা ম্যাডাম খুবই দ্রুত বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো আমাদের রেখে। যেন আমরা সঠিকভাবে স্কুল পরিচালনা করে আসি। এই মুহূর্তটাও আমাদের জন্য ঠিক ছিল। মানসিক দিক থেকে আমরা মোটামুটি চলছিলাম আর কি। কিন্তু তার ঘন্টা দুই-তিন এর মধ্যে শোনা গেল রোকসানা ম্যাডামের আব্বা মারা গেছেন। জামাই এক্সিডেন্ট করাতে তিনি হার্ট অ্যাটাক করেছেন।

IMG_20230112_092315_500.jpg

IMG_20230112_092317_453.jpg

IMG_20230112_105129_736.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স



received_305654148004402.webp


দ্বিতীয় পর্যায়ের ফটোগ্রাফি

আমরা স্কুল তড়িঘড়ি করে বন্ধ করে দিলাম এবং সকল শিক্ষক মন্ডলী চেষ্টা করলাম দ্রুত রোকসানা ম্যাডামের বাসায় চলে আসার জন্য। আমাদের বিদ্যালয়ের ম্যাডামদের একটি ভ্যানে উঠিয়ে দ্রুত আমিও চলে গেলাম। আমি উনাদের আগে পৌঁছে গিয়েছিলাম বাসাতে। এরপর দেখলাম বড় আব্বার নিথর দেহ সানের উপর পড়ে রয়েছে। পাশের রোকসান ম্যাডাম সহ আরো অনেকে কান্না করছিল। রোকসানা ম্যাডাম আমার পাড়াতো বা নিকটস্থ বড় বোন। যেহেতু উনার আব্বা আমাদের বড় আব্বা হন। সেই দিক থেকে আমিও চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলাম না। তবে নিজের দায়িত্ব কর্তব্য দিক থেকে সমাজের অন্যান্য মানুষদের ডেকে চেষ্টা করলাম দ্রুত রুমের মধ্য থেকে লাশ বের করে বাইরে নিয়ে আসার। আর এভাবে কিছুটা সময় সেখানে অতিবাহিত হওয়ার পরে সমস্ত শিক্ষক মন্ডলী আমাদের বাসায় ডেকে আনলাম। এদিকে আমার আম্মার পায়ের আঙ্গুল ভেঙ্গে গেছে যার জন্য চলতে ফিরতে পারছিল না। তার মধ্য থেকেও চেষ্টা করছিলাম আমার ম্যাডামদের ভালোভাবে আপ্যায়ন করার। একদিকে রোকসানা ম্যাডামের আব্বা মারা যাওয়ার শোক, অন্যদিকে আমার আম্মার পায়ের আঙ্গুল ভেঙ্গে যাওয়ার এক কষ্টকর মুহূর্ত। আমি চেষ্টা করলাম শিক্ষক মন্ডলীদের সিদ্ধ ডিম, চানাচুর বিস্কুট ও ডাব গাছ থেকে দো মালা পেড়ে খাওয়ানোর। তারা হয়তো একটু সুন্দর অনুভূতি খুঁজে পেয়েছিল আমাদের বাসায় এসে কিন্তু সকলের মনের মধ্যে এক বুক বেদনা কাজ করছিল।

IMG_20230112_154924_832.jpg

IMG_20230112_154623_436.jpg

IMG_20230112_154601_966.jpg

IMG_20230112_154435_163.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স



received_305654148004402.webp


তৃতীয় পর্যায়ের ফটোগ্রাফি

যেহেতু দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে গেছে, তাই সমস্ত শিক্ষক মন্ডলী তাদের বাসায় চলে যাবে। এজন্য আমি চেষ্টা করছিলাম যেন তাদেরকে খুব দ্রুত খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বিদায় করে দিতে পারি। এদিকে লাশ কখন মাটি হবে তার নির্ধারিত সময় ঠিক করা হয়নি যেহেতু বাইরে অনেক গেস্ট রয়েছে। আমাকে অবশ্যই রোকসানা আপার বাসায় কিছুটা সময় থাকতে হবে চেয়ারের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য এবং অন্যান্য বিষয়ের জন্য। যেহেতু দূর-দূরান্ত থেকে অনেক আত্মীয়-স্বজন দেখার জন্য আসবে তাই লাশ মাটি দিতে অনেক দেরি হবে। এদিকে শিক্ষক মন্ডলীকে সুন্দর আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে বিদায় জানানো হলো। আর এরপর আমি রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম গোরস্থানের দিকে।

IMG_20230112_154453_254.jpg

IMG_20230112_154508_531.jpg

IMG_20230112_154506_446.jpg

IMG_20230112_154533947_BURST0010.jpg

IMG_20230112_155131_740.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স



received_305654148004402.webp


চতুর্থ পর্যায়ের ফটোগ্রাফি

ঘোষণা হলো রোকসানা ম্যাডামের আব্বা অর্থাৎ বড় আব্বার লাশ দাফন হবে রাত ৭:৪৫ মিনিটে যেহেতু অনেক গেস্ট দূরে রয়েছে, আসতে দেরি হয়ে যাবে তাই। এদিকে আমি মারুফ আর ইমন অর্থাৎ আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির ৩ সদস্য দ্রুত গোরস্থানে চলে গেলাম এবং বৈদ্যুতিক লাইনের ব্যবস্থা করে দিলাম। যেন জানাজা করার মুহূর্তে গোরস্থানে আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা করতে পারি। আমরা তিনজন মিলে দীর্ঘ এক-দেড় ঘণ্টা সময় মিলে লাইটিং এর ব্যবস্থা করলাম প্রায় ৪০০ গজ তারের ব্যবস্থা করে। মোটামুটি তিনজনের সহায়তায় সুন্দর আলোর ব্যবস্থা হয়ে গেল গোরস্থানে। এদিকে লাশের অবস্থা কেমন এবং আমাদের পরিবারের অবস্থা কোনটাই আমার জানা ছিল না সেই মুহূর্তে। বিকাল চারটার সময় মহল্লা থেকে বের হয়ে গোরস্থানে এসে রাত সাড়ে নটার সময় বাসায় পৌঁছেছি। তার মধ্যে মারুফ আর ইমন এক দুই বার নিজ নিজ বাসায় গিয়ে দেখা করে এসেছে কিন্তু আমার সেই সুযোগ হয়ে ওঠেনি তখন। এদিকে কারেন্ট খুব সমস্যা করছিল বারবার আসছিল যাচ্ছিল। আমি লাইটিং এর ব্যবস্থা করে দেওয়ার পরে বসে ছিলাম কবর খোঁড়া মানুষের পাশে। এরপর নির্ধারিত সময়ে দাফনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দিনের শুরুটা যেমন আনন্দ মুখোর ছিল, সমস্ত ম্যাডাম আমাদের বাসায় আসার পরে একটু ভালো লাগা অনুভূতি কাজ করছিল কিন্তু হৃদয়ের মধ্যে এক নিদারুণ কষ্ট চাপা ছিল বড় আব্বার মৃত্যুতে কারণ। উনি ছিলেন আমাদের মহল্লার এমন কি দশ গ্রামের মধ্যে অতিশয় পরিচিত এবং ভালো মানুষ। যাকে ভুলে থাকার বড় কোঠিন। দোয়া করি উনি যেন জান্নাত বাসী হোন।

IMG_20230112_171530_783.jpg

IMG_20230112_193740_158.jpg

IMG_20230112_193743_776.jpg

IMG_20230112_193853_060.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স



received_305654148004402.webp

R6TbvATub8MquGoqJZ4SE2UCpaUQzmNnWQxvJGwvYApXWE4KsVzC8vNNXWgtz7hrfoYPSrjupZgj7VtKhrH935ua1PLs4Vr7KiYnVAy3oD...tCNiac63XNuwJJZPbTjHfGPYJH4BJoHgX8HdohSPrSasKvArV8wiiFV7ntYqz66tLZiqG67BKrPAveZFRs3vaqucpJgsaE3qA6Rwasb2fYDx3U5dXGLwwRdyH8.png


আশা করি,আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনি অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে বুঝতে ও শিখতে পেরেছেন, সেই সাথে নতুন জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন। পোস্টটি উপস্থাপনা কেমন ছিল এবং এ বিষয়ে আপনার অনুভূতি কেমন, অবশ্যই কমেন্ট বক্সে আমাকে জানাতে ভুলবেন না। আপনার জন্য আমার পক্ষ থেকে শুভকামনা রইলো।

💌আমার পরিচয়💌


আমি মোঃ নাজিদুল ইসলাম (সুমন)। বাংলা মাস্টার্স ফার্স্ট ক্লাস মেহেরপুর গভমেন্ট কলেজ। আমার বাসা গাংনী-মেহেরপুর। মড়কা বাজার, গাংনী,মেহেরপুর এ গ্রীনরেইন ল্যাবরেটরি স্কুল নামক প্রি-ক্যাডেট স্কুলের সহকারি শিক্ষক । ইলেকট্রনিক্সের যন্ত্রপাতি মেরামত ও সৌর প্যানেল নিয়ে রিসার্চ করতে পছন্দ করি। প্রাকৃতিক দৃশ্য ফটোগ্রাফি করা আমার সবচেয়ে বড় ভালোলাগা। দীর্ঘদিনের আমি পাঙ্গাস মাছ চাষী এবং বিরহের কবিতা লেখতে খুবই ভালোবাসি।




পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

image.png

image.png

আমার পরিচিতিকিছু বিশেষ তথ্য
আমার নাম@sumon09🇧🇩🇧🇩
ফটোগ্রাফি ডিভাইসমোবাইল
ব্লগিং মোবাইলInfinix hot 11s
ক্যামেরাcamera-50mp
আমার বাসামেহেরপুর
আমার বয়স২৬ বছর
আমার ইচ্ছেলাইফটাইম স্টিমিট এর 'আমার বাংলা ব্লগ' এ ব্লগিং করা

zr7XQBzuvvkjgjjPxunUtP5k84gxgWc4mR8PqdBj5rx8AtXSSugGPwSy7JKyM3rgX4k3arRVPC2wT66DqiAYg2UuYrHpE94NCJsYEnjKP7Erbg.png


পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আপনার পোস্ট পড়ে অনেক খারাপ লাগল। আসলে মৃত্যু এমনি জিনিস কখন আসবে, কিভাবে আসবে বলা মুশকিল। তাই তো সবাই বলে নিঃশ্বাসে বিশ্বাস নেই। যাইহোক রোকসানা ম্যাডামের বাবার জন্য অনেক দোয়া রইল, আল্লাহ যেন উনাকে বেহেশত নসিব করে।ধন্যবাদ আপনাকে।

হ্যাঁ মানুষের জীবনটা ঠিক এভাবেই কখন চলে যাবে কেউ জানে না।

বিপদ যখন আসে চারদিক থেকে আসতে শুরু করে। স্কুল চলাকালীন সময় হঠাৎ শুনতে পেলাম দুলাভাই হেমায়েতপুর বাজারে এক্সিডেন্ট করেছে। আর কিছুক্ষণ পরেই শুনতে পেলাম আমার বড় চাচা মৃত্যুবরণ করেছে। যদিও দিনটা হাসি আনন্দের মধ্যেই শুরু করেছিলাম কিন্তু শেষের দিকটা কষ্টের ছিল।

এটাকেই বলা হয় জীবন। কখন কার জীবনে এমন দুর্যোগ নেমে আসে কে জানে।

মৃত্যু হল জীবন প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ অবসান যা সমস্ত জীবন্ত প্রাণীর মধ্যে ঘটে কিন্তু তারপরও এটা মেনে নেওয়া খুবই কষ্টের।রোকসানা ম্যাডামের শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন এবং পরম করুণাময় ঈশ্বরের নিকট তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।ঈশ্বর সবার মঙ্গল করুক এই প্রার্থনা করি। ধন্যবাদ ভাইয়া।

একদম ঠিক কথা বলেছেন,অসংখ্য ধন্যবাদ।