হাই বন্ধুরা!
আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।
Infinix Hot 11s
২০০৬ সাল, আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি। আমার বন্ধু মারুফ ছোট থেকে খুবই শান্ত সৃষ্ট এবং নম্র ভদ্র। ক্লাস সিক্সে উঠে চার গ্রামের বন্ধু বান্ধবী ভর্তি হলো আমাদের ক্লাসে। প্রাইমারি আর হাই স্কুল পাশা পাশাপাশি থাকাই, মনে হতো না হাই স্কুলে উঠেছে। তবে ভিন্ন ভিন্ন গ্রামের বন্ধু বান্ধবী ভর্তি হওয়াতে কিছুটা অনুভব করতাম। কিন্তু মারুফের কোন পরিবর্তন হলো না। যেমন নরম, তেমনি তার কথাবাত্রা ব্যবহার। বাড়িতে যেমন তোতলামি করত স্কুলে প্রিয় বন্ধুদের সাথে ঠিক তেমনি ব্যবহার করত। কেউ মারলে রিয়াকশন করত না। অতিরিক্ত আঘাত পেলে কষ্ট পেলে কান্না করে সে তার মতো খেলতো। কোন প্রকার প্রতিবাদ বা গায়ে হাত উঠাবে এমনটা তার মধ্যে দেখি নাই। ছোট থেকে যেভাবে মানুষ হয়েছে দুইজন ঠিক সেভাবেই বেড়ে ওঠা। তোমার সাথে কোনদিন খারাপ আচরণ বা রাগারাগি হয়নি, এই পর্যন্ত না। এভাবেই আমাদের একদিন চলতে থাকলো।
ঠিক এমনই একটা দিন। টিফিন টাইমে, সবাই যে যার মত খাওয়া-দাওয়া করছে ও খেলাধুলা করছে। মারুফ একাই বসে বসে বেঞ্চিতে খেলতে। সে ছোট থেকেই ব্যাগ পছন্দ করে। বইয়ের ব্যাগটার একটা বড় বেল্ট থাকে সেটা নিয়ে খেলতেছে। বেল্টের লাস্টের অংশে একটু তাঁর জাতীয় জিনিস থাকে, ব্যাগ ঝুলিয়ে রাখার। আগেকার সময়ের ব্যাগ বুঝতে পারছেন। যেটা নিচের অংশে বাধিয়ে ঘাড়ে ঝুলিয়ে ব্যাগটা ঘাড়ে নিয়ে চলাচল করা যেত এমন টাইপের। সুবিরুল নামের পাশের গ্রামের একটা বন্ধু মারুফের দুর্বলতা দেখে সব সময় তাকে অপমান করতো ইয়ার্কি করতো মারতো ইত্যাদি। বিষয়টা আমার কাছে খুবই খারাপ লাগলো। আমি যতটুক প্রতিবাদ করতাম। কারন সে আমার বন্ধু। এদিকে সবিরুল আমাদের বয়সে অনেক বড়। তাকেও বেশি কিছু বলতে পারতাম না। যাই হোক, ঘটনার সময় সুবিরুল মারুফকে একাধিকবার আঘাত করলো। বিষয়টা আমি দেখলাম মানা করলাম। মারুফের মন খারাপ হলো। এরপর আবার ব্যাগের সেই বেলটা মাথার উপর দিয়ে ঘোরানোর মত করে খেলছে। এবার হঠাৎ সবিরুল মারুফ এর কাছে এসে আবোল-তাবোল কি কমনি বলছে, আর মাথায় টোকা মেরে দৌড়াচ্ছে। এতে মারুক কিছুই বলল না। টিফিন টাইম শেষ হলো। টিফিনের পর তিনটা ক্লাস ছিল। দুইটা ক্লাস হয়ে গেল। লাস্টের ক্লাসের শিক্ষক ছিল না। তাই লাস্টের ক্লাস ফাঁকা যাচ্ছিল। মারুফ সেই একইভাবে খেলাধুলা করছে। আবারো সবিরুল টিফিনে যেভাবে মারুফের সাথে খারাপ আচরণ করছিল সেই ভাবেই খারাপ আচরণ করছে।
তখনও আমার বন্ধু মারুফ তার সাথে কোন বিহ্যাব করে নাই। সবিরুলের এমন খারাপ আচরণগুলো বেশ অনেক বন্ধুরা দেখে রাগ করছিল। অনেক জন বারণ করছিল কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। আমার কাছে বেশি বিরক্ত মনে হচ্ছিল তার এই আচরণ। আমি উপর ক্লাসে গিয়ে আমার বড় ভাইকে বললাম। ভাই বলল পরের দিন সবিরুলকে দেখে নেওয়া যাবে। এমনিতেই আমার ভায়ের রাগ মেলা। তবে ওই দিনটার ক্লাস ছুটি হওয়ার সময় ছিল তো। তাই ভাই আর কিছু বলতে আসেনি। যাইহোক লাস্টের মুহূর্তটা। শিক্ষক আসছে না, তাই তার মত বেঞ্চিতে বসে খেলছে ব্যাগের বেল্ট নিয়ে। সবিরুল মাঝেমধ্যে আসছে এর ওর গায়ে টোকা মারছে। মারুফের সাথে খারাপ আচরণটা বেড়েই চলতে থাকলো। এদিকে মারুফ বেল্ট নিয়ে মাথার উপর দিয়ে চোখের সামনে দিয়ে ঘোরানো খেলে, এগুলো আমাদের কয়েকটা স্যারে জানে। স্যার ক্লাস নিতে আসার সময়ও ফলো করে দেখেছে, মারুফের পড়া ধরা হয়ে গেলে আনন্দের সাথে আনমনে হয়ে এভাবে খেলা শুরু করে দিত। মাঝেমধ্যে শিক্ষকরা বকলেও মারুফের মনে থাকতো না। আনন্দ প্রকাশ করত আমার পড়া ধরা হয়ে গেছে আমি পেরেছি। এরপর সে মেতে উঠতো একা একা খেলা করাতে।
যাইহোক, ওই দিনের সবিরুলের বিরক্তিকর আচরণ গুলো লাস্টের মুহূর্তে একবারে প্রতিশোধ হিসেবে উঠে আসবে কে জানে। সবিরুল মারুফকে মাথায় টোকা মেরে দৌড় মারবে, এমন প্ল্যান নিয়ে তার মাথার কাছে গিয়েছে। ইতোমধ্যে মারুফ সে বেল্ট নিয়ে খেলছে। সবিরুল মারুফের মাথায় সজোরে আঘাত করে হাসতে হাসতে দৌড় মারতে গেছে। এমনিতেই মারুফের বেল্টের মাথায় থাকা তারের সিক সবিরুলে নাকে গেথে যায়। এক নিমিষেই নাকে টান লেগে নাক ছিঁড়ে গেল। সাথে সাথে ঝরঝর করে রক্ত বের হয়ে গেল। এমন রক্ত দেখে ক্লাসের ছেলেমেয়েরা তো অবাক। আমাদের ক্লাস রুমের মধ্যে ৩ সারিতে বেঞ্চ সাজানো থাকতো। আমরা বসতাম উত্তর সারির ফার্স্ট এর বেঞ্চে। বুঝতে পারছেন সামনে শিক্ষকের টেবিলে রাখা। টেবিলের সামনে সবিরুলের নাক থেকে রক্তের ফোঁটা ফোঁটা চিহ্নিত হতে থাকলো। এরই মধ্যে সবিরুলদের গ্রামের একটি ছেলে স্যারের কাছে চলে গেছে নালিশ দিতে। অফিস থেকে শিক্ষক আসলেন। ঘটনা শুনলেন।
ক্লাসের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীরা মারুফের পক্ষ নিয়ে কথা বলল। কারণ সারাদিন সবাই ফলো করেছে। মারুফ ইয়ারকি পছন্দ করছে না। তবুও সবিরুল তাকে বারবার আঘাত করেছে। আজকের সারাদিনটা সে মারুফের সাথে এতটা অত্যাচার করেছে যে অন্য কোন স্টুডেন্টের সাথে এমন আচরণ হলে মারামারি হয়ে যেত অনেক আগে। অতঃপর শিক্ষক সবিরুলকে সান্ত্বনা দিল এবং জগে করে পানি এনে নাক ধুয়ে দিল। মারুফকে বুঝিয়ে বললো বাবু এভাবে আর কখনো খেলবে না। যেকোনো মুহূর্তে এমন অঘটন ঘটতে পারে। কারণ ফিতা বা বেল্টের মাথায় চিকন তাঁরগুলা বেশ ডেঞ্জারাস ছিল। এদিকে সবিরুল ছাড়াও ক্লাসে যে সমস্ত বেয়াদব কোয়ালিটির স্টুডেন্ট ছিল তাদেরকে সতর্ক করে দিল। আরো বললো যদি নাক ছিঁড়ে না যেত তাহলে তার শিক্ষা হতো না। ওই দিনের পর থেকে সবিরুল আর মারুফের সাথে খারাপ আচরণ করে নাই। এরপর থেকে লক্ষ্য করে দেখেছিলাম সে দিন দিন মারুফের অনুগত্য হলো। খারাপ আচরণ থেকে দূরে থাকতো। তাইতো কথাই বলে, চোরের সাত দিন আর গেরস্থর একদিন। আবার সাকুরের টুকটাক কামারের এক ঘাই। কাউকে দুর্বল ভেবে অতিরিক্ত জ্বালাতন করা ভালো নয়। দুর্বল নিজ থেকে আঘাত করতে না পারলেও, কোনভাবে তার শোধ উঠে যায়। ঘটনাটা মনে করলাম, বেশ কিছুদিন আগে সবিরুলের সাথে দেখা হয়। তার নাকের দিকে লক্ষ্য করে দেখলাম, সেই 2006 সালের নাক ছিঁড়ে যাওয়া দাগ এখনও রয়েছে। ২০২৫ সালে এসেও যেন তার নাক সাক্ষী হয়ে রয়েছে।
গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফটোগ্রাফি | স্কুল এরিয়া |
---|---|
বিষয় | অতীত ঘটনা |
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Infinix Hot 11s |
ঘটনার লোকেশন | জুগীরগোফা |
ব্লগার | Sumon |
ঠিকানা | গাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ |
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
16-02-25
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
শেষমেষ তাহলে বেল্টের ফিতা দিয়ে নাক ছেঁড়ার মধ্যে দিয়ে বন্ধুত্ব পূর্ণ হল। যাইহোক ষষ্ঠ শ্রেণীতে অনেক গ্রামের ছেলে মেয়ে একত্রে হয়ে নতুন বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়। আর আস্তে আস্তে এদের মধ্যে থেকে প্রকৃত বা কাছের বন্ধু খুঁজে পাওয়া যায়। শেষে যেয়ে মারুফ এবং ছবিরুলের একটা খুবই সুন্দর সম্পর্ক হল এটা জেনে সত্যি ভীষণ ভালো লাগছে। খুবই সুন্দর একটি ঘটনা আমাদের সাথে শেয়ার করলেন। প্রতিটি ঘটনা শেষে যদি এরকম সুন্দর একটি বন্ধন তৈরি হতো তাহলে কতই ভালো হতো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
প্রতিটা ক্লাসে এরকম ধরনের কিছু আহাম্মক বা হাম বলা টাইপের ছেলে থাকে যেন তারা সবজান্তা এবং সব থেকে বেশি স্মার্ট। মানুষকে হেও করা বা ভুলি করা ওদের একমাত্র কাজ। মারুফ ঠিকই করেছে। ওর জায়গায় আমি থাকলে হয়তো আমি অনেক আগেই প্রত্যাঘাত করতাম। সহ্যের সীমা আছে সেটা ভুলে যায় কেউ কেউ। কোন কোন জায়গায় নিজের স্থান ঠিক রাখার জন্য এবং নিজেকে নিজের জায়গায় ধরে রাখার জন্য ঘুরে দাঁড়াতে হয়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে নরম পেলে কেউ কেউ এরকম মাথায় উঠে পড়ে।আপনার বন্ধুটি সহজ সরল ও ঝামেলায় জড়ায় না জন্য এরকম করে প্রতিনিয়ত। আসলে সব সহ্যের একটা সীমা থাকে। সীমা হারিয়ে গেলে যা হয় তাই হয়েছে। ভালো লাগলো পোস্ট টি পড়ে।ধন্যবাদ পোস্ট টি আমাদের সাথে ভাগ করে নিয়েছেন জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit