🌿আমি তানহা তানজিল তরসা। আমি বাংলাদেশ 🇧🇩 থেকে বলছি। আমার স্টিমিট আইডির নাম @tanha001।
হ্যালো বন্ধুরা..........
কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছি পরিবার পরিজনদেরকে নিয়ে। আজকে আমি আপনাদের সাথে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আমাদের দেশে অনেক শিশু আছে যারা সুবিধা বঞ্চিত। অনেক শিশু আছে যারা এতিম তাদের দেখা শোনা করার মতো কোন মানুষ নেয়। এমন অনেক অনেক শিশু আছে যারা অনেক কষ্টে দিন পার করছে। আমারা কোন দিন সেই অভাগা শিশুদের খোঁজ খবর নেয় না। আমাদের সময় কয় এই সকল মানুষের খোঁজ নেওয়ার। হয়তো এমন শিশু আছে যারা তিন বেলা দূরের কথা এক বেলা ভাত খেতে পারে না। পরনে নেও লজ্জা ঢাকার মতো কোন ভালো কাপড়। এমনই একটা শিশুর জীবনের গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হলাম। আশা করছি আপনাদের কাছে আমার এই ক্রিয়েটিভ রাইটিংটি অনেক ভালো লাগবে।
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে এখানেই কেটে যায় ছোট্ট সুমনের দিন। বয়স মাত্র দশ কিন্তু চোখে তার বয়সের চেয়েও বড়ো এক শূন্যতা। জন্ম থেকেই সে জানে না বাবা-মা কে। ছোটবেলায় মা তাকে স্টেশনের এক কোণে রেখে চলে গিয়েছিল। তারপর থেকে স্টেশনই তার বাড়ি।সুমনের দিন শুরু হয় খুব ভোরে। রাতের শেষ ট্রেনটি চলে গেলে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মটায় একদমই শান্তি। এই সময়টা সে প্লাস্টিকের বোতল কুড়ায়, পেপার আর ক্যান জোগাড় করে। তার একমাত্র উপার্জন এই বর্জ্য সামগ্রী বিক্রি করা। কখনো কখনো দিনের শেষে হাতে আসে ৩০-৪০ টাকা। তবে সেই টাকা সব সময়ই তার হাতে থাকে না। স্টেশনের বড় বড় ছেলেরা আছে যাদের কাছে সবাই "গ্যাং লিডার" বলে।তারা জোর করে তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়।সুমনের খাওয়ার জন্য নির্ভর করতে হয় রাস্তার ধারের হোটেলগুলোর উচ্ছিষ্ট খাবারের ওপর। মাঝে মাঝে হোটেলের মালিক বা কর্মীরা তাকে তাড়িয়ে দেয়। আরেকবার এক মালিক তাকে খাবার দিয়ে বলেছিল, যত খুশি খাও কিন্তু আমার দোকানের সামনে আর কখনো আসবে না। সুমন কিছু না বলে মাথা নিচু করে চলে গিয়েছিল।
পেটের ক্ষুধা মেটানো যতটা কঠিন তার থেকেও বেশি কঠিন হলো রাত কাটানো। শীতের রাতে স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম পাথরের মতো ঠান্ডা হয়ে যায়। কম্বলের অভাবে কাগজ দিয়ে শরীর ঢেকে সে শুয়ে পড়ে। কিন্তু ঘুম তার কাছে বিলাসিতা। রাতের বেলা তার ভয় হয় মদ্যপ লোক, পুলিশের লাঠি, বা অন্য পথশিশুদের সহিংসতা। তার অনেক বন্ধু এসবের কারণে চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে।সুমন একসময় স্টেশনের পাশে থাকা একটি পার্কে বসে অন্য বাচ্চাদের খেলতে দেখে। তাদের পরিপাটি জামা, হেসে খেলে কাটানো দিন, আর হাতে মা-বাবার উষ্ণ স্পর্শ দেখে তার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে। নিজের মনেই বলে আমার জীবনটা কেন এমন। আমিও কি তাদের মতো জীবন পেতে পারতাম না।
তবে সুমনের জীবনে সবচেয়ে বড় দুঃখের বিষয় হলো, সে জানে না ভালোবাসা কী। কেউ তাকে কখনো আদর করে মাথায় হাত রাখেনি। একদিন এক বৃদ্ধ তাকে কিছু টাকা দিয়েছিল আর বলেছিল, পড়াশোনা করো ভালো মানুষ হও। সেদিন সুমনের চোখে পানি এসে গিয়েছিল। তার মনে হয়েছিল কেউ অন্তত একবার তাকে মানুষ হিসাবে দেখেছে।তারপরেও সুমনের কষ্টের জীবন থেমে থাকে না। স্টেশনের গন্ধ, ধুলো, শোরগোল আর অবহেলা তার পরিচিত সঙ্গী। মাঝে মাঝে সে বসে বসে ট্রেনের শব্দ শোনে। মনে মনে ভাবে, যদি এই ট্রেনে উঠে কোথাও পালিয়ে যেতে পারতাম।কোনো এক নতুন জায়গায়, যেখানে তার কষ্ট থাকবে না।কিন্তু বাস্তবতা তাকে আবার টেনে আনে স্টেশনের এই নিষ্ঠুর জীবনে। তার ক্ষুধার্ত পেট, খালি পায়ে ছেঁড়া চটি, আর দিনের পর দিন সংগ্রাম তার জীবনকে প্রতিদিন আরও কঠিন করে তোলে।সুমনের জীবন শুধু তার একার গল্প নয়। এটি প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ পথশিশুর গল্প, যারা রাস্তার ধারে পড়ে থাকে অবহেলিত, অভুক্ত, আর ভালোবাসাহীন। তাদের কান্না কেউ শোনে না তাদের কষ্ট কেউ বোঝে না। এই পৃথিবী তাদের জন্য অন্ধকারের মতো।তবে সুমনের মতো শিশুরাও একসময় স্বপ্ন দেখে। সেই স্বপ্ন হয়তো ক্ষণিকের, কিন্তু তাতে থাকে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা। হয়তো কোনো একদিন তাদের জীবনও আলোর দেখা পাবে, কিন্তু সেই আলো আসবে কেবল আমাদের সচেতনতা আর সহমর্মিতার মধ্য দিয়ে।
পোস্টের বিষয় | ক্রিয়েটিভ রাইটিং |
---|---|
পোস্টকারী | তানহা তানজিল তরসা |
ডিভাইস | রেডমি নোট ১১ |
লোকেশন | পাবনা |
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার পোস্ট টা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল। একটা বাস্তবতা তুলে ধরেছেন আপনি। পথশিশুদের দেখলে বেশ খারাপ লাগে। ওদের জন্য কিছু করতে ইচ্ছা করলেও সেটা আমার ক্ষমতার বাইরে। বেশ গুছিয়ে লিখেছেন আপনি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit