ক্রিয়েটিভ রাইটিংঃ গিরগিটির মতো মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা রুপ।

in hive-129948 •  16 days ago 
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু /আদাব

🌿আমি তানহা তানজিল তরসা। আমি বাংলাদেশ 🇧🇩 থেকে বলছি। আমার স্টিমিট আইডির নাম @tanha001


আজ ০৫ জানুয়ারি রোজ রবিবার ২০২৫ ইং:।

বাংলায় ২১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছি।আজ আমি আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট শেয়ার করবো।আমি প্রতি সপ্তাহের মতো আজ একটি ক্রিয়েটিভ রাইটিং পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।আমি লেখালেখি করতে অনেক পছন্দ করি।আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে অনেক সদস্যরা ক্রিয়েটিভ রাইটিং পোস্ট শেয়ার করে থাকেন তাদের পোস্টগুলো আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। তাদের পোস্টগুলা দেখে আমি নিজেও অনেক উৎসাহিত পাই।আশা করি আমার লেখা ক্রিয়েটিভ রাইটিং পোস্ট আপনাদের কাছে ভালো লাগবে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

man-1461448_1280.jpg

Source
শহরের এক প্রান্তে বাস করত রাহুল। তার হাসি, তার মিষ্টি ব্যবহার এবং কথাবার্তা সবাইকে মুগ্ধ করত। কেউ ভাবতেও পারত না, এই সুন্দর চেহারার আড়ালে লুকিয়ে আছে এক স্বার্থপর এবং ফাঁকি দেওয়া মন। রাহুলের জীবনের একটাই নীতি যেখানে সুবিধা সেখানেই আমি।রাহুলের স্বভাব ছিল খুব চালাক। সে মানুষের মনের দুর্বলতা ধরে ফেলে তাদের প্রভাবিত করত। অফিসে বসের সামনে সে এতটাই ভদ্র এবং কর্মঠ দেখাত যে, বস তাকে নিজের ডান হাত বলতেন। আবার বন্ধুবান্ধবদের মাঝে সে এমনভাবে মিশত, যেন তাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। কেউই কখনো বুঝতে পারত না, তাদের ব্যবহার করে রাহুল তার নিজের ফায়দা লুটছে।একদিন অফিসে নতুন সহকর্মী হিসেবে মিথিলা যোগ দিল। মিথিলা ছিল সৎ সাহসী এবং স্পষ্টভাষী। প্রথম থেকেই সে রাহুলের আচরণে কিছুটা অস্বাভাবিকতা অনুভব করেছিল। সবাই যখন রাহুলের প্রশংসা করছিল, মিথিলা তখন চুপচাপ তাকে পর্যবেক্ষণ করত।

একদিন অফিসের এক বড় প্রজেক্ট এল। সবাই মিলে কাজ করছিল। মিথিলা একটি নতুন আইডিয়া প্রস্তাব করল যা পুরো প্রজেক্টের জন্য অনেক কার্যকরী হতে পারত। রাহুল সেই সুযোগটা হাতছাড়া করল না। বসের সামনে সেই আইডিয়া নিজের বলে দাবি করল এবং সবার বাহবা কুড়িয়ে নিল।মিথিলা চুপ করে সব দেখল। কিন্তু সে চুপ থাকার মানুষ ছিল না। কাজ শেষ হওয়ার পর একদিন অফিস পার্টিতে মিথিলা রাহুলের মুখোমুখি হলো।তুমি কেন এমন করো রাহুল? মিথিলা সরাসরি জিজ্ঞাসা করল।রাহুল একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল, কী করলাম?তুমি সবার সঙ্গে গিরগিটির মতো রং বদলাও। আইডিয়া চুরি করো, মিথ্যে বন্ধুত্ব দেখাও। তোমার আসল রূপটা কী?রাহুল এক চিলতে হাসি দিয়ে বলল, আমি পরিস্থিতি বুঝে চলি। এটা যদি গিরগিটির মতো রং বদলানো হয়, তাহলে হোক। এতে ক্ষতি কী?

মিথিলা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর বলল, ক্ষতি সেখানে যেখানে তুমি নিজের প্রকৃত রূপটাই হারিয়ে ফেলছ। গিরগিটিরও একটা স্বাভাবিক রং থাকে কিন্তু তোমার সেটা কোথায়? তুমি কি জানো যেদিন কেউ তোমাকে চিনতে পারবে না, সেদিন তুমি নিজেকেও হারিয়ে ফেলবে।রাহুল এই কথাগুলো শুনে হেসে উড়িয়ে দিল। তবে মনে কোথাও একটা অস্বস্তি তৈরি হলো।

এরপর রাহুল আস্তে আস্তে পরিবর্তনের শুরু দেখতে পেলো।দিন গড়াতে লাগল। রাহুল খেয়াল করল তার চারপাশের মানুষগুলো আস্তে আস্তে তার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অফিসের বন্ধুরা তাকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এমনকি তার পরিবারও তার কথায় ভরসা রাখছে না। একদিন তার ছোট বোন শীলা বলল, দাদা তোমার কথা শুনলে এখন সবসময় মনে হয়, তুমি মিথ্যে বলছ। তুমি কি আমাদের ভালোবাসো, নাকি এটাও তোমার নাটক।এই কথাগুলো রাহুলকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিল। সে বুঝতে পারল, তার গিরগিটির মতো রং বদলানোর স্বভাব তাকে একা করে দিচ্ছে। মানুষের বিশ্বাসই তো জীবনের আসল শক্তি। কিন্তু সেই বিশ্বাসই সে হারিয়ে ফেলছে।

একদিন রাহুল মিথিলার কাছে গিয়ে বলল, তুমি সেদিন ঠিকই বলেছিলে। আমি নিজের রংটাই হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু আমি বদলাতে চাই। আমি কীভাবে আবার নিজের রং ফিরে পেতে পারি?মিথিলা এক গাল হেসে বলল, প্রথমে সৎ হও। স্বার্থের জন্য সম্পর্ক তৈরি বন্ধ করো। নিজের ভুলগুলো মেনে নিয়ে তাদের কাছে ক্ষমা চাও, যাদের তুমি কষ্ট দিয়েছ। হয়তো সময় লাগবে কিন্তু তোমার আসল রং আবার ফিরে আসবে।রাহুল এরপর ধীরে ধীরে নিজের জীবন বদলাতে শুরু করল। অফিসে সৎভাবে কাজ করা, বন্ধুবান্ধবের প্রতি আন্তরিক হওয়া এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো এসবের মাধ্যমে সে আবার মানুষের বিশ্বাস অর্জন করল।

মূলভাবঃ

পরিশেষে একটা কথাই বলতে চাই, গিরগিটি রং বদলায় নিজের টিকে থাকার জন্য, কিন্তু মানুষ টিকে থাকে সম্পর্কের বিশ্বাসে। রাহুল এই সত্যিটা বুঝতে পেরে নিজের জীবন পাল্টে ফেলল। তার জীবন প্রমাণ করল সৎ পথে চলতে কখনো দেরি হয় না।

পোস্টের বিষয়ক্রিয়েটিভ রাইটিং
পোস্টকারীতানহা তানজিল তরসা
ডিভাইসরেডমি নোট ১১
লোকেশনপাবনা
আজ এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আর লেখার অমিল ও ভূল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখেবেন।


১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।


আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়

sub>

আমি তানহা তানজিল তরসা। আমার স্টিম আইডির নাম @tanha001। আমি বাংলাদেশের একজন নাগরিক। আমি বিবাহিতা। আমার একটা ছেলে সন্তান আছে। আমি ফটোগ্রাফি, গান গাইতে,রান্না করতে ও বাইকে ঘুরতে অনেক পছন্দ করি। আমার জন্ম স্থান কালিগঞ্জ থানা ঝিনাইদহ জেলায়। আমি পেশায় এক গৃহিনী। পাশাপাশি আমি আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। আমি আমার হাসবেন্ড এর চাকরির সূত্রে পাবনা চাটমোহর এ বসবাস করছি।


সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্টটি দেখার জন্য ও সুন্দর মতামত শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। স্পেশালি ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার বাংলা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা, এডমিন ও মডারেটরদের যারা আমাকে এত সুন্দর একটা কমিউনিটিতে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে এবং আমাকে প্রতিনিয়ত সাপোর্ট করছেন।


১০%প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।


Logo.png

Banner.png

6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjnznNvfTVEwUXyMtpxmHcfPysYyJgJKtr4kEeViawuXEuo9dy3jYHS1TR1KreGTCTJkxwUyzgRttBjiswvn.png

6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo11x8ittnXZjCxVzeXe6EcY2LhnYATvoVg9pQWkha9i6dGRh5MNMnu17RgRnajr7iRuLnFnKojVVLT2Uc6.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Screenshot_2025-01-05-21-40-33-746_com.android.chrome.jpg

Screenshot_2025-01-05-21-37-58-262_com.twitter.android.jpg

Screenshot_2025-01-05-21-25-36-011_com.android.chrome.jpg

Screenshot_2025-01-05-21-25-11-942_com.android.chrome.jpg

Screenshot_2025-01-05-21-24-53-480_com.android.chrome.jpg

Screenshot_2025-01-05-21-24-01-000_com.android.chrome.jpg

Screenshot_2025-01-05-21-05-44-546_com.peak.jpg

image.png

প্রতিটি সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস থাকাটা খুবই জরুরী। আর যারা সুবিধাবাদী, তারা আসলে কারোরই আপন হতে পারে না। কারণ একটা সময় সুবিধাবাদী মানুষদের রূপ সবাই ধরতে পারে। যাইহোক মিথিলার কথা অনুযায়ী রাহুল আবারও সবার বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে, জেনে খুব ভালো লাগলো। পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মূল্যবান অভিমত ব্যাক্ত করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

আমরা মানুষ সবাই গিরগিরির মতো নিজেদের রং নিজেদের ভেতরে লুকিয়ে রাখি। যখন যেমন সুবিধা প্রয়োজন ঠিক তখন সেই রূপ দেখিয়ে নিজের স্বার্থ আদায়ের জন্য চেষ্টা করি। তোমার লেখাটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলেই মানুষ এখন গিরগিটির মতো রং ধারণ করে যার আসল রুপ বোঝা অনেক কঠিন। ধন্যবাদ তোমাকে

  ·  12 days ago (edited)

তুমি অনেক মূল্যবান একটি কথা বলেছো।তোমার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।