"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা -৩৯।। "ঝাল ঝাল নবরত্ন ভর্তা"steemCreated with Sketch.

in hive-129948 •  last year 

বন্ধুরা
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন।সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি । আজ আপনাদের সাথে প্রতিযোগিতার বিষয় নিয়ে হাজির হয়েছি। যদিও এবারের বিষয়টি আমার খুবই পছন্দের। আমার বাংলা ব্লগ প্রতিবারই অনেক মজার মজার আয়োজন করে থাকে। তবে এবারের প্রতিযোগিতার বিষয়টি বেশ ভালো ছিলো।প্রতি বারই এরকম নতুন নতুন প্রতিযোগিতা দেখলে আমার খুব ভালো লাগে। কারণ এই প্রতিযোগিতার কারনে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। তাই এত সুন্দর প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য এডমিন ও মডারেটর ভাইয়া ও আপুদের জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। বিশেষ করে @nusuranur আপুকে ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য। আর ভর্তা কম বেশি সকলেই খুব পছন্দ করে। আমাদের বাঙালিদের ভর্তা না হলে যেন দিনই চলে না। আর ভর্তা যদি ঝাল ঝাল না হয় তাহলে খেতে ভালো লাগে না। যদি ও আমি ঝাল বেশি খেতে পারি না। তবুও ধোয়া উঠা গরম ভাতে ভর্তা খেতে খুব ভালোই লাগে। তাই তো সবকিছু মাথায় রেখে আজ আমি তৈরি করতে চলেছি ঝাল ঝাল নবরত্ন ভর্তা। আসলে নবরত্ন বলতে আমরা নয় ধরনের আপনাকে বুঝে থাকি। আর এখানে ভর্তার এই রকম নাম দেওয়ার পিছনে কিছু কারণ আছে । আমি এখানে নয় ধরনের উপকরণে তৈরি করা হয়েছে বলে এর নাম দেওয়া হয়েছে নবরত্ন ভর্তা। এই নামটি শুনে হয়তো অনেকেই একটু অবাক হচ্ছেন। তবে প্রথমে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এই ভর্তা আসলে কি খাওয়া যাবে? আর নয় ধরনের উপকরণে তৈরি করা সেগুলো বা কি?এই ভর্তা একবার কেউ খেলে দ্বিতীয় বার খেতে চাইবেন। আর আমাদের হাতের কাছের উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
যখনই আমার প্রিয় মানুষটির মুখে প্রতিযোগিতার কথা শুনেছিলাম সেদিন থেকেই ভাবছি কি তৈরি করা যায়। কারণ ভর্তা আমার বা আমার পরিবারের সকলের কাছে খুবই পছন্দের একটা খাবার। আমাদের বাড়িতে প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন ভর্তা তৈরি করা হয়ে থাকে। আর মাঝে মধ্যে তো ২০ - ২৫ রকমের ভর্তা করে থাকি এর প্রমাণ আমাদের নিলয়। এবার নববর্ষের দিন আমি ২৫ রকমের ভর্তা তৈরি করেছিলাম। আর আমার মা আসলে তো প্রায়ই ১০ রকমের ভর্তা তৈরি করে থাকেন তার প্রিয় জামাইয়ের জন্য। আর আপনাদের দাদা ভর্তা খেতে খুবই পছন্দ করে। আর নতুন কিছু হলে তো কথাই নেই। আর তাই প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই এটা সম্ভব হয়। কারণ অন্য সময় খুব একটা তৈরি করা হয়ে ওঠে না। আর আপনারা তো জানেন নতুন নতুন কিছু তৈরি করতে আমার বেশ ভালো লাগে। যদি ও বাবুকে নিয়ে খুব একটা হয়ে ওঠে না তারপর ও চেষ্টা করি। তবে আশ্চর্য হলে ও সত্যি যখনই কোন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে তখনই চমক প্রদ ভাবেই আমার কাজের চাপ চলে আসে। এটা কেন হয় আমার সাথে বুঝতে পারি না। আমি সবসময় ভাবি সময়ের মধ্যে তৈরি করতে কিন্তু হয়ে ওঠে না। যাইহোক এবার ও ভেবেছিলাম সময়ের আগে তৈরি করবো আর মা বাবা আছে তো কোন অসুবিধা হবে না। কিন্তু সেই ব্যস্ততা এসে গেলো। আর আমার বাবুর দুষ্টুমি। তারপর ও যে ভর্তা তৈরি করতে পেরেছি আর সেটি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরেছি এটাই অনেক। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে আমরা মূল পর্বে ফিরে যাই।

IMG_20230712_133419.jpg

IMG_20230712_133821.jpg

IMG_20230712_133828.jpg
উপকরণ:
১.কুমড়োর খোসা - পরিমান মতো
২. লাউয়ের খোসা - পরিমান মতো
৩. কুচো চিংড়ি - ১ কাপ
৪. ইলিশ মাছের পেটি -৩ টি
৫. চুই ঝাল - পরিমান মতো
৬. ছোট সাইজের আলু -১ টি
৭. লেবুর পাতা - ৭/৮ টি
৮. ধনিয়া পাতা - হাফ কাপ
৯. কাচা মরিচ - ৪ টি
১০. কালো সরিষা - ১ চামচ
১১. সরিষার তেল - ৪ চামচ
১২. লবণ -৩ চামচ

IMG_20230711_193847.jpg
কুমড়োর খোসা

IMG_20230711_193945.jpg
লাউয়ের খোসা

IMG_20230711_194104.jpg
আলু ও চুই ঝাল

IMG_20230712_091932.jpg
কুচো চিংড়ি ও ইলিশ মাছ

IMG_20230712_100828.jpg
লেবুর পাতা, কাচা মরিচ, লবণ ও কালো সরিষা

IMG_20230712_105957.jpg
ধনিয়া পাতা

IMG_20230713_072710.jpg
সরিষার তেল
প্রস্তুত প্রণালী:
১. প্রথমে কুমড়োর খোসা ও লাউয়ের খোসা কেটে ধুয়ে নিতে হবে। আলু ও চুই ঝাল কেটে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর কড়াইতে পরিমান মতো জল দিয়ে সবকিছু একসাথে ভালো করে সেদ্ধ করে নিতে হবে।সেদ্ধ হয়ে গেলে একটা পাত্রে নামিয়ে নিতে হবে।

IMG_20230711_214258.jpg

IMG_20230711_214355.jpg

IMG_20230711_215815.jpg

IMG_20230712_094218.jpg
২. এবার মাছ ও চিংড়ি মাছ জল দিয়ে ভালো ধুয়ে হালকা লবণ ও হলুদ মাখিয়ে নিতে হবে।

IMG_20230712_092339.jpg
৩. চুলার উপর একটা ফ্রাই প্যান বসিয়ে দিতে হবে। ফ্রাই প্যান গরম হয়ে গেলে পরিমান মতো সরিষার তেল দিয়ে দিতে হবে। তেল গরম হয়ে গেলে লবন ও হলুদ মাখানো ইলিশ মাছ গুলো ভেজে নিতে হবে। বাদামি রঙের করে ভেজে নামিয়ে নিতে হবে। ওই একই তেলে চিংড়ি মাছ গুলো দিয়ে দিতে হবে। চিংড়ি মাছ গুলো বাদামি রঙের করে ভেজে নামিয়ে নিতে হবে।

IMG_20230712_092619.jpg

IMG_20230712_092719.jpg

IMG_20230712_092755.jpg

IMG_20230712_093552.jpg

IMG_20230712_093644.jpg

IMG_20230712_094109.jpg

IMG_20230712_093815.jpg

IMG_20230712_094405.jpg

৪. আবার ফ্রাই প্যানে হালকা তেল দিয়ে দিতে হবে। তেল গরম হয়ে গেলে সেদ্ধ কুমড়োর ও লাউয়ের খোসা ফ্রাই প্যানে দিয়ে হালকা ভেজে নিতে হবে । ভেজে একটা পাত্রে নামিয়ে নিতে হবে।

IMG_20230712_094326.jpg

IMG_20230712_094927.jpg

IMG_20230712_095243.jpg

IMG_20230712_095333.jpg
৫. এরপর ভাজা খোসা ব্লেন্ডারে দিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ব্লেন্ড করা হলে একটা বাটিতে রেখে দিতে হবে।

IMG_20230712_095533.jpg

IMG_20230712_100111.jpg
৬. এবার শীল বাটায় ১ চামচ কালো সরিষা ও এক চামচ লবণ ৪ টি কাচা মরিচ দিয়ে একসাথে বেটে নিতে হবে। এরপর কুচো চিংড়ি ভালো করে বেটে নিতে হবে। আর ইলিশ মাছ গুলোর কাটা বেছে নিতে হবে।

IMG_20230712_101022.jpg

IMG_20230712_101203.jpg

IMG_20230712_101232.jpg

IMG_20230712_101322.jpg

IMG_20230712_102245.jpg

IMG_20230712_102945.jpg

৭. এবার সেদ্ধ আলু ও চুই ঝাল একসাথে মেখে নিতে হবে। তারপর পরিমান মতো লবণ ও লেবুর পাতা একসাথে ভালো করে চটকে নিতে হবে। চটকে নিয়ে ইলিশ মাছের সাথে মেখে নিতে হবে।

IMG_20230712_102701.jpg

IMG_20230712_102914.jpg

IMG_20230712_103240.jpg

IMG_20230712_103421.jpg

IMG_20230712_103655.jpg

IMG_20230712_103713.jpg

IMG_20230712_103727.jpg
৮. এরপর ফ্রাই প্যানে আবার হালকা সরিষার তেল দিয়ে দিতে হবে। তেল গরম হয়ে গেলে ব্লেন্ড করা খোসা ও বাটা চিংড়ি মাছ একসাথে মিশিয়ে ফ্রাই প্যানে দিয়ে একটু ভেজে নিতে হবে। একটু শুকিয়ে গেলে একটা পাত্রে নামিয়ে নিতে হবে।

IMG_20230712_104337.jpg

IMG_20230712_104531.jpg

IMG_20230712_104732.jpg

IMG_20230712_105045.jpg
৯. এবার পরিমান মতো তেল, লবণ ও ধনিয়া পাতা কুচি দিয়ে ভাজা খোসা বাটা ও চুই ঝালের সাথে ইলিশ মাছ একসাথে মিশিয়ে ভালো করে মেখে নিতে হবে।

IMG_20230712_110244.jpg

IMG_20230712_110548.jpg

IMG_20230712_110619.jpg

IMG_20230712_120546.jpg

IMG_20230712_120613.jpg

IMG_20230712_120620.jpg

IMG_20230712_120729.jpg

IMG_20230712_120736.jpg
১০. পরিবেশনের আগে এবার একটা প্লেটে করে সাজিয়ে নিলাম।

IMG_20230712_133324.jpg

IMG_20230712_133458.jpg
এবার তৈরি হয়ে গেল ঝাল ঝাল নবরত্ন ভর্তা । এই ভর্তা খেতে সত্যি অনেক সুস্বাদু ছিলো। ভর্তায় হালকা লেবুর পাতা ঘ্রাণ পাওয়া যাবে।এই লেবুর পাতা দেওয়ার জন্য ভর্তার স্বাদ দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। একটু খানি ভর্তা দিয়ে একথালা ভাত নিমিষে শেষ হয়ে যাবে। আশা করি,এই ভর্তার রেসিপিটি আপনাদের ভালো লাগবে। আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।

IMG_20230712_133828.jpg

IMG_20230712_133419.jpg

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

বাপরে বাপ এতোগুলো জিনিস একসাথে দিয়ে একটি রেসিপি। এগুলো তৈরি করতেও তো সময়ের প্রয়োজন। আর তার মধ্যে আবার আমাদের টিনটিন বাবুর দুষ্টুমি। সব মিলিয়ে আপনি তো বেশ জমদোস একটি ভর্তার রেসিপি তৈরি করে নিলেন। শুভ কামনা রইল আপনার প্রতি।

বৌদি আপনার তৈরি করা এই ভর্তার রেসিপি অসাধারণ হয়েছে। আমাদের সকলের প্রিয় দাদা ভর্তা খেতে পছন্দ করেন জেনে ভালো লাগলো।আর আপনার হাতের তৈরি ভর্তা দাদার প্রিয় বোঝাই যাচ্ছে। কারণ আপনি দারুন ভর্তার রেসিপি তৈরি করেছেন। বিভিন্ন প্রকারের সবজির খোসা সাথে ইলিশ মাছের পেটি ও চিংড়ি মাছ দেওয়াতে মনে হচ্ছে খেতে ভীষণ মজার হয়েছে। দারুন একটি রেসিপি শেয়ার করেছেন বৌদি।

এত কিছুর সংমিশ্রণ এ ভর্তা মজা না হয়ে কোথায় যাবে।সাথে ইলিশ আর চিংড়ি থাকলে তো কথাই নেই। দেখেই মনে হচ্ছে খেতে বেশ ভালো হয়েছে। গরম গরম ভাতের সাথে খেতে জাষ্ট অসাধারণ লাগবে।পরিবেশন বেশ ভালো হয়েছে। ধন্যবাদ

দিদি আপনি ভর্তা তৈরী করতে শিল পাটা ব্যবহার করবেন সেটা আমি কল্পনাও করি নাই। শুনেছি শিল পাটার ভর্তা অনেক মজা হয়। আর আপনি যে উপকরন ব্যবহার করেছেন মজা হবেই। ধন্যবাদ দিদি।

ওয়াও! এককথায় দুর্দান্ত একটি রেসিপি শেয়ার করেছেন বৌদি। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন দেখে খুব ভালো লাগলো বৌদি। ঝাল ঝাল নবরত্ন ভর্তা দেখেই তো খেতে ইচ্ছে করছে। বেশ কয়েকটি উপকরণ দিয়ে সত্যিই খুব লোভনীয় একটি রেসিপি তৈরি করেছেন। খেতেও মনে হচ্ছে খুব ইয়াম্মি লেগেছে। রেসিপির পরিবেশনা তো জাস্ট অসাধারণ হয়েছে। যাইহোক এমন মজাদার একটি রেসিপি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

ভিন্ন প্রকার একটি রেসিপি নিয়ে আজ আপনি আমাদের মাঝে কনটেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন। আপনার এই সুন্দর অংশগ্রহণ দেখে যেন মুগ্ধ হয়ে গেলাম। অবশ্য লাউ এর খোসা কখনো রেসিপি করে আমাদের পরিবারের খাওয়া হয়নি। তবে শুনেছি এবং ব্লগেও দেখেছি। এত সুন্দর করে এই সমস্ত উপাদান গুলো রান্না করে দেখিয়েছেন দেখে বড়ই ভালো লেগেছে।

বৌদি আপনি ব্যস্ততার মাঝে ও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন দেখে বেশ ভালো লাগে।আপনার রেসিপিগুলি বরাবরই দারুণ হয়।আর ইলিশ মাছ হলে তো কথাই নেই।আপনার তৈরি ভর্তাটি দেখেই আমার খেতে মন চাইছে।নয় ধরনের উপকরণে তৈরি বলে নামটিও বেশ সুন্দর হয়েছে।লেবু পাতা দেওয়াতে গন্ধটাও নিশ্চয়ই দারুণ হয়েছিল, ধন্যবাদ বৌদি।

দিদিভাই, কোন রেসিপি প্রতিযোগিতা আসলেই আপনার রেসিপি গুলো দেখলে আমার চোখ রীতিমত কপালে উঠে যায়। এভাবেও ভর্তা বানানো সম্ভব!! আমি জাস্ট ভাবতেই পারছি না। অনেকটা সময় নিয়ে পোস্ট টা দেখলাম। আমার মনে হয় না এর থেকে ইউনিক ভর্তা রেসিপি আমি আগে কখনো দেখেছি। আর লেবুর পাতা দেওয়ার ব্যাপারটাও দারুন লেগেছে। ইস্ খেতে পারতাম যদি গরম ভাত দিয়ে!!! সত্যি দিদিভাই জিভে জল চলে এসেছে পুরো। রান্নার ব্যাপারে আপনি সবসময় সেরা 👌👌👌