"পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস "

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)

বন্ধুরা
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজ পহেলা মে। সবাইকে জানাই আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের শুভেচ্ছা।মহান মে দিবস আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসাবে পরিচিত। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আজ সরকারি ছুটির দিন। শ্রমজীবী মানুষের কাছে এই দিনটি আলাদা করে কোন গুরুত্ব উপলব্ধি না করা গেলেও আজ থেকে ১৩৭ বছর আগে এক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শ্রমিকরা অধিকার আদায় করেছিলেন। আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলন ও শ্রম অধিকার আদায়ের এই দিনটি বছরের পর বছর ধরে বিশ্বব্যাপী যথাগত মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। শ্রমিকদের সম্মানে মে দিবস বা পয়লা মে কে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে পালন করে বিশ্বের প্রায় ৮০ টি দেশে।


copyright free image source : PixaBay

উনিশ শতকের প্রথম দিকে শ্রমিকদের প্রতি মুহূর্তে শোষিত হতে হয়েছিল মালিকদের কাছে। সপ্তাহে প্রায় ছয় দিন দৈনিক ১০থেকে ১২ ঘন্টা কাজ করার পর জুটতো সামান্য মুজুরি। এছাড়া শ্রমিকদের কাজ করানো হতো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। যেখানে রোগ ব্যাধি লেগে থাকত। তখন শ্রমিকদের কোন সংগঠন ছিল না যারা শ্রমিকের কথা মালিকের কাছে বলবে। এরই পাশাপাশি সারা বিশ্বে তখন শ্রমজীবী মানুষদের জন্য সমাজতন্ত্র ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। মালিক ও শাসক শ্রেণীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। ১৮৮৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে এক দল শ্রমিক মালিকপক্ষকে আট ঘন্টা কর্ম সময়ের নির্ধারণের দাবি জানায়। এই দাবি পূরণের সময় হিসেবে ১৮৮৪ সালের পয়লা মে কে নির্ধারণ করেন শ্রমিকরা। কিন্তু মালিকরা শ্রমিকদের এই দাবি কানাই তোলেনি।তাই ১৮৮৬ সালের ৪ ঠা মে হে মার্কেট নামক স্থানে ফের আন্দোলন গড়ে তোলেন। শ্রমিকরা এ সময় হে মার্কেট স্কয়াকে শ্রমিক পক্ষে বক্তব্য রাখেন আমেরিকান লেবার এক্টিভিক্ক্ট আগস্ট স্পিস। শ্রমিক দলের কিছু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন পুলিশ। এ সময় সবার দৃষ্টির আড়ালে হঠাৎ পুলিশের উপর বোমা নিক্ষেপ হলে নিহত হন এক পুলিশ কর্মকর্তা।এই ঘটনায় ক্ষুদ্ধ পুলিশ শ্রমিকের উপর গুলি বর্ষন করতে থাকে। পুলিশের গুলিতে নিহত হন ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক। পুলিশের উপর কে বা কারা বোমা নিক্ষেপ করেছিলেন তা সঠিক জানা না গেলেও পুলিশ হত্যার দায়ে আগস্ট স্পিস সহ আরো ৮ জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়। অভিযুক্ত বাকি দুজনের একজন কারাবন্দী অবস্থায় আত্মহত্যা করেন। আর অন্য একজনের ১৫ বছরের কারাদণ্ড হয়। এই ঘটনার দুশো বছর পর ১৮৮৯ সালে প্যারিসে ফরাসি বিপ্লবের দুশো বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে ১৮৯০ সাল থেকে শ্রমিক আন্দোলনের এই দিনটি উদযাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রমাণিত হয় পুলিশের উপর বোমা হামলার দায়ে যাদের শাস্তি দেওয়া হয় তারা মূলত দোষী ছিল না। তবে প্রকৃত দোষী কে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১৯০৪ সালে নেদারল্যান্ডের আমস্টার দামে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি আদায় শাস্তি প্রতিষ্ঠাতার জন্য বিশ্বব্যাপী মে মাসের প্রথম দিন মিছিল ও শোভাযাত্রার আয়োজন করতে সব সমাজবাদী গান্ত্রিক দল ও শ্রমিক সংঘের প্রতি আহ্বান করা হয়। এই আহ্বানে সাড়া হিসেবে বিশ্বের প্রায় সব শ্রমিক সংগঠন পহেলা মে কে বাধ্যতামূলক ভাবে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঠিক এই ভাবে ধীরে ধীরে রাশিয়া, ভারত, বাংলাদেশ , চীন প্রভৃতি দেশে এই দিনের তাৎপর্য ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা পায় শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘন্টার কাজ করার দাবি।

খেটে খাওয়া মানুষ আমি
শ্রমিক আমার নাম,
তপ্ত রোদে দগ্ধ হয়ে ই
ঝরাই গায়ের ঘাম।
ইটের বোঝা মাথায় তুলে
গড়ি প্রাসাদ বাড়ি,
জলের উপর সেতু করে ই
পাড় করে দেই গাড়ী।
সুই সুতোতে নিত্য বুনি
বস্ত্র শত শত,
কলকারখানায় ঘুরাই চাকা
রাত দিন অবিরত।
রক্ত পানি করেই হাটি
ঝড়াই গায়ের ঘাম,
মানুষ বলে ওরা কি আর
দেয় আমাদের দাম।
আয়েশ করে ই সাহেব বিবি
কাটান সুখে দিন,
আমরা শ্রমিক তবু কেন
হয় না যে শোধ ঋণ!
ন্যায্য দাবি হয়নি পূরণ
আজ ও হেলায় রই,
মে দিবস টি আসলে শুধু এসব কথা কই।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পহেলা মে তে হয়,
সেমিনারে বড় বুলি তখন শুধু কয়।।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

আজকের দিন এবং দিবসটি নিয়ে খুব সুন্দর কিছু কথা তার সাথে অতীত ইতিহাসটা তুলে ধরেছেন বৌদি। তবে নিচের কবিতাটি আমার কাছে বেশ দারুণ লেগেছে, লাইনগুলো মাঝে যেন শ্রমিকের অধিকারের বাস্তব চিত্রটা ফুটে উঠেছে।

খেটে খাওয়া মানুষ আমি
শ্রমিক আমার নাম,
তপ্ত রোদে দগ্ধ হয়ে ই
ঝরাই গায়ের ঘাম।

আজ মে দিবস।এই দিনটি শ্রমিক দিবস হিসেবে স্বীকৃত। দিদি এই দিনটি নিয়ে যে ইতিহাসের ঘটনা তা আপনি পোস্টের মাধ্যমে খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। অনেক অজানা কিছু জানা গেলো পোস্ট পড়ে। আপনি দিনটিকে নিয়ে শ্রমিকদেরকে ঘিরে দারুন একটি কবিতা শেয়ার করেছেন। খুব সুন্দর হয়েছে দিদি।সুন্দর এই পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই আপনাকে। অনেক শুভকামনা রইলো দিদি।

খেটে খাওয়া মানুষ আমি
শ্রমিক আমার নাম,
তপ্ত রোদে দগ্ধ হয়ে ই
ঝরাই গায়ের ঘাম।

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস সম্পর্কে অনেক সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন বৌদি। এই তথ্যগুলো আগে জানা ছিল না। আজকে অনেক কিছুই জানতে পারলাম। আপনি দারুন একটি কবিতা লিখে শেয়ার করেছেন বৌদি। কবিতাটি সত্যিই ভালো লেগেছে। কবিতার লাইন গুলো যেন হৃদয় স্পর্শ করেছে। আসলে খেটে খাওয়া সেই অসহায় মানুষগুলোর ঘামের বিনিময় আমরা হয়তো সঠিকভাবে দিতে পারি না। আমাদের সবারই উচিত তাদেরকে সম্মান করা।

ইটের বোঝা মাথায় তুলে
গড়ি প্রাসাদ বাড়ি,
জলের উপর সেতু করে ই
পাড় করে দেই গাড়ী।
সুই সুতোতে নিত্য বুনি
বস্ত্র শত শত,
কলকারখানায় ঘুরাই চাকা
রাত দিন অবিরত।

বাহ্ বৌদি শ্রমিক দিবস কে কেন্দ্র করে যেমন কিছু সুন্দর সুন্দর কথা উপহার দিলেন তেমন উপহার দিলেন সুন্দর কিছু কবিতার লাইন। আপনার কবিতার উপরের লাইন গুলো পড়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।

আজকের এই দিবসটি নিয়ে আপনি খুবই সুন্দর কিছু কথা লিখেছেন না বৌদি। আপনার লেখাগুলো পড়ে আমার খুব ভালো লেগেছে। আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস উপলক্ষে আপনি অনেক তথ্য গুলো এখানে শেয়ার করেছেন। আপনার এই লেখা থেকে অনেক জানা অজানা জিনিস জানতে পারলাম। সুন্দর তথ্য গুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ বৌদি।

খুব সুন্দর লিখেছেন বৌদি। আসলে এতো কাহিনী জানা ছিল না। আপনার পোস্ট পড়েই জানলাম। আমাদের এত আরাম-আয়েশের জীবনের পিছনে এই শ্রমিক ভাইদের যে কতোটা অবদান আছে। তা আমরা মাঝেমধ্যেই ভুলে যাই।

মে দিবস নিয়ে কিছুটা ইতিহাস আগে থেকেই জানতাম। তবে আজকে আপনার লেখাগুলো পড়ে আরও বিস্তারিত জানলাম দিদিভাই। কিন্তু একটা মজার ব্যাপার জানেন কি দিদি ভাই, এখনকার যারা শ্রমিক মে দিবস পালন করে থাকেন তারা অনেকেই এই দিবস নিয়ে ঠিকমত জানেনই না। তাদের জানা নেই এই দিবস টার তাৎপর্য আসলে কি। যাই হোক অনেকদিন পর আপনার লেখা কবিতা পড়লাম। দুর্দান্ত শুরুটা ছিল দিদিভাই।

বৌদি, মে দিবস পালিত হওয়ার পিছনের এতো গভীর বিস্তারিত ঘটনা আমার তেমনভাবে জানা ছিল না। কবিতা লেখার শুরুতে যে তথ্যগুলো দিয়েছেন, তা বেশ ভালোভাবে পড়ার চেষ্টা করলাম এবং একটু হলেও কৌতুহল কাজ করছিল। তারমানে পুলিশের উপর বোমা নিক্ষেপ করেছিল মালিকপক্ষ, এমনটাই তো আমার মনে হচ্ছে।

বেশ বাস্তবিক একটা কবিতা লিখেছেন।

শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য 🙏

"পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস " সম্পর্কে আপনার লেখাগুলো পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। অতি চমৎকার লিখেছেন আপনি। প্রিয় বৌদি পহেলা মে সম্পর্কে আপনার লেখা কবিতাটি পড়ে আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়ে গেছি। অসাধারণ একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।