বন্ধুদের সাথে কাটানো কিছু সুন্দর মুহূর্ত// 10% beneficiary @shy-fox

in hive-129948 •  3 years ago 

আসসালামু আলাইকুম, সবাই কেমন আছেন?আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আপনাদের দোয়ায় আমিও ভালো আছি।আজকে আমি আমার কিছু ভ্রমণের সুন্দর মুহূর্ত আপনাদের কাছে শেয়ার করব।
আজ সকাল আটটার দিকে হঠাৎ করে আমার রংপুরের তিনটি বন্ধু আমাকে ফোন দেয়। তারা দিনাজপুরে ঘুরতে আসবে। সকাল বেলা আমার ঘুম না ভাঙ্গায় তাদেরকে আমি বলি বন্ধু আমার শরীরটা খুবই অসুস্থ আমি হয়তবা যাইতে পারব না, তোমাদের সঙ্গে ঘুরতে। কিন্তু তাদের জিদের কাছে আমি হেরে গেলাম। তারা আমার মেসে এসে আমার ঘরের দরজায় ধাক্কা দেয়। আমি একটু রাগী অবস্থায় দরজা খুলে দেখি আমার তিন বন্ধু আমার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। তারা আমার কোন কথা না শুনে সরাসরি এক বোতল পানি আমার শরীরের উপর ঢেলে দিল। তারা বন্ধু বলে আমি কিছু বলতে পারলাম না। তাছাড়া তারা অনেকদিন পর আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে এবং ঘুরতে এসেছে আমি তো আর না বলতে পারিনা। তাই বলে দিলাম তোমরা বস আমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসি। তারা বসল আমি ফ্রেশ হয়ে আসলাম। তারা আমাকে সকালের নাস্তা করতে দিল না ,বলল বন্ধু বাইরে কোথাও খেয়ে নিব আমরাও না খেয়ে এসেছি। আমিও বললাম আচ্ছা ঠিক আছে চলো বাইরে গিয়ে কোন হোটেলে সকালের নাস্তাটা সেরে তারপরে আমরা গন্তব্যে রওনা দিব। একটা হোটেলে ডুবে নান রুটি আর মুরগির মাংস দিয়ে সকালের নাস্তা শেষ করলাম।

নাস্তা শেষ করার পর তার আমাকে জিজ্ঞাসা করল বন্ধু দিনাজপুরে ঘোড়ার মত সবথেকে পুরনো কোন জায়গা আছে নাকি? আমি বললাম হ্যাঁ আছে তো অনেকগুলা। কান্তজিউ মন্দির, তারা বললো আচ্ছা ঠিক আছে আজকে সেখানে ঘুরতে যাব। তো আমি বললাম বন্ধু দেখো এখান থেকে কান্তজিউ মন্দির অনেক দূরে এবং গাড়ি ভাড়া অনেক বেশি। তারা বলল আচ্ছা সমস্যা নাই চলো, আজকে ঘুড়ার উদ্দেশ্যে আসছি যত দূরেই হোক ঘুরে তারপর বাসায় যাব। আমিও না বললাম না। চারজন মিলে একটা অটো ঠিক করলাম। জনপ্রতি ভাড়া ছিল 60 টাকা করে। অটোতে ওঠার পর গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

অটোতে যাওয়ার সময় তাদেরকে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড, হাজী মোহাম্মদ দানেশ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ভুট্টা ও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, দেখিয়ে দিলাম। তারা বলতেছে দিনাজপুর আসলেই কৃষি দিক দিয়ে একটু উপরে দিনাজপুরের মাটি অনেক উর্বর। রাস্তার দুই পাশে লিচুর বাগান দেখে তারা অবাক হয়ে বলতেছি। বন্ধু, তুমিতো আমাদের একবারও দিনাজপুরের লিচু খাওয়াইলা না। আর শুনেছি দিনাজপুরের লিচু অনেক সুস্বাদু ও অনেক মিষ্টি হয়। তো আমি বললাম ইনশাআল্লাহ সামনেবার তোমাদের লিচুর সময় দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসবো। তারা বললো আচ্ছা ঠিক আছে।

IMG-20211019-WA0041.jpg

Device: iTel + 1

Click: mahin , Sourov , @tareq123

IMG-20211019-WA0018.jpg

Device: iTel + 1

Click: mahin , Sourov , @tareq123

তারপর যাওয়ার সময় অনেক হাসাহাসি পুরনো কথা সব মিলিয়ে অনেক সুন্দর একটা মুহূর্ত ছিল। এভাবেই প্রায় দেড় ঘন্টা আমরা অটোতে বসে গল্প করতেছি এবং কান্তজিউ মন্দির এর উদ্দেশ্যে যাচ্ছি। প্রায় দু'ঘণ্টা লাগলো আমাদের সেখানে পৌছাইতে। ওখানে নেমে অটোর ভাড়া দিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলাম। তারপর একটা সেভেন আপ খেয়ে মন্দিরের ভিতরে ঢুকে পড়লাম। সেখানে ডুবেই মন্দিরের বারান্দায় সেই মন্দির সম্পর্কে কিছু তথ্য লেখা ছিল সেগুলো পড়লাম আমার বন্ধুরাও পড়ল। তারা বলল এত পুরনো নিদর্শন আর হাতের কারুকার্য কিভাবে তৈরি করেছে। আসলে বিষয়টা আমার অজানা তাই আমি তাদের বিষয় টা জানাইতে পারি নাই। এরপর মন্দির এর সাইট দিয়ে চতুর্পাশে একটু ঘুরে দেখলাম ।তারপর তারা বলল বন্ধু কয়েকটি ছবি তোলা যাবে। আমি বললাম হ্যাঁ অবশ্যই। তারা মন্দিরের বারান্দায় উঠে চেয়েছিল, কিন্তু আমি বললাম এখানে উঠলে মন্দিরের পুরোহিত গালি দিতে পারে নিচ থেকেই তোমরা ছবি তোল। তারা নিজ থেকেই ছবি তুলল।

তারা ছবি তোলা শুরু করলো, হাসাহাসি, সব মিলে সেখানে খুব সুন্দর সময় কাটালাম। ওখানে প্রায় ত্রিশ মিনিটের মতো আমরা অপেক্ষা করে পুরা মন্দির টা ভালোভাবে দেখলাম। সেই পুরনো আলপনা মনের ভিতরে বিভিন্ন প্রশ্ন জাগিয়ে তোলে। কিন্তু সেখানে এই বিষয়ে বলার মতো কোনো মানুষকে খুঁজে পেলাম না। যে ব্যক্তি কে বলতেছি এই আলপনার বিষয়ে সে ব্যক্তি বলতেছে আমরা ঠিক বলতে পারব না। তাই সুন্দর আলপনা গুলো সম্পর্কে যারা হয়নি তবে দেয়ালের ছবিগুলো দেখলে মনে হয় আদি যুগের মানুষেরা তাদের জীবন নির্বাহ কিভাবে করত, কিভাবে সমাজ পরিচালনা করত সেই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে আর বেশিক্ষণ সময় দেয়নি বাইরে এসে একটা দোকানের উঠানে বসে কয়েকটা ছবি তুললাম এরপর কান্তজিউ জাদুঘর এ প্রবেশ করলাম। সেখানে প্রবেশের জন্য 20 টাকা করে টিকিট নিয়েছিলাম। আমরা মনে করেছিলাম ভিতর ডুবে পুরনো মূর্তি গুলোর ছবি তুলতে পারব। কিন্তু ভিতরে ঢুকার আগেই সেখানের গেটম্যান বলে দিলে ভিতরে গিয়ে কোন ছবি তোলা যাবে না। আমি আর এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন করিনি।

IMG-20211019-WA0055.jpg

Device: iTel + 1

Click: mahin , Sourov , @tareq123

IMG-20211019-WA0035.jpg

Device: iTel + 1

Click: mahin , Sourov , @tareq123

IMG-20211019-WA0036.jpg

Device: iTel + 1

Click: mahin , Sourov , @tareq123

IMG-20211019-WA0004.jpg

Device: iTel + 1

Click: mahin , Sourov , @tareq123

IMG-20211019-WA0003.jpg

Device: iTel + 1

Click: mahin , Sourov , @tareq123

সেখানে ডুবে কালো পাথরের মূর্তি, পোড়ামাটির মূর্তি, কাচের পুতি, ইত্যাদি অনেক কিছুই দেখলাম। আসলেই সেখানে শিক্ষামূলক অনেক কিছুই ছিল। এই নিত্যনতুন বিষয়গুলো আমাকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছে।

IMG-20211019-WA0053.jpg

Device: iTel + 1

Click: mahin , Sourov , @tareq123

IMG-20211019-WA0051.jpg

Device: iTel + 1

Click: mahin , Sourov , @tareq123

জাদুঘর থেকে বের হয়ে আমি এবং আমার বন্ধুরা 5 মিনিট উত্তর পাশে হাটলাম। সামনে বিশাল একটি নদী। সেই নদীর নাম হল কাহারোল নদী। বর্তমানে নদীর পানি খুবই অল্প পরিমাণ ছেলেরা জাল পেতে মাছ ধরতেছে সেটাও দেখলাম। বন্ধুরা বলতেছি ব্রিজে অনেক সুন্দর ছবি আসবে। কয়েকটি ছবি তুলি নাই। আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে আমিও ছবি তুলব তোমরা আমাকে ছবি তুলে দাও।

IMG-20211019-WA0042.jpg

Device: iTel + 1

Click: mahin , Sourov @tareq123

ব্রিজে প্রায় 30 মিনিটের মত অপেক্ষা করেছিলাম, ছবি তুললাম। আর আজকের প্রকৃতিতে অনেক বেশি সুন্দর ছিল। সুন্দর বাতাস মনটাকে ঝুলিয়ে দিয়েছিল। সেখানেই একটা অটো ঠিক করলাম। সেখান থেকে দিনাজপুর মহারাজার মোড় পর্যন্ত ভাড়া নিল জনপ্রতি 40 টাকা করে। তারপর আমরা চার বন্ধু অটোতে বসে পড়লাম। অটোতে বসে সবাই ছবিগুলো দেখতেসি কোনটা ছবি বেশি ভালো হয়েছে, কোনটা খারাপ হয়েছে, কোন ছবিটা ডিলিট করতে হবে এগুলো নিয়ে পরামর্শ করতেছি।

হঠাৎ এভাবেই আবারো দেড় ঘন্টা ভ্রমণ করলাম। এরপর মহারাজার মোড়ে এসে তাদেরকে পার্বতীপুরের বাসে উঠিয়ে দিলাম। সেখান থেকে তাদেরকে বিদায় দিয়ে আমি একটা অটো নিয়ে আমার মেসে চলে আসলাম। এসে দুপুরের ভাত খেয়ে গোসল করলাম। গোসলের পর একটু ঘুম দিয়ে প্রায় 7:30 মিনিটে ঘুম থেকে উঠলাম।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

বন্ধুদের সাথে আপনি বেশ ভালো একটা সময় পার করেছেন। আমিও মাঝে মধ্যে আমার বন্ধুদের সাথে এমন ভাবে যেকোন একটা জায়গায় রেনডমলি ভাবেই ডিসাইড করে ঘুরতে বের হয়ে পড়ি। আসলে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া মানে একটা আনন্দ, উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরি হওয়া। ধন্যবাদ ভাই আপনাকে এমন একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

ধন্যবাদ ভাইয়া।

আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে অনেক সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছেন। আপনার ঘুরাঘুরির মুহূর্তগুলো অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ আপু

আসলে ভাইয়া বন্ধুদের সাথে ঘোরাঘুরি করার মত আর মজা কোনখানে পাওয়া যায় না। দেখেই বোঝা যাচ্ছে আপনার আজকের দিন টা অনেক সুন্দর কেটেছে। আপনার কাটানো সুন্দর মুহূর্ত গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

জি ভাইয়া ঠিক বলেছেন। বন্ধু পাশে থাকলে সব সময় হাসিখুশি থাকা সম্ভব ।ধন্যবাদ।

খুব সুন্দর আড্ডায় মেতেছিলেন বন্ধুদের সাথে।সুন্দর হয়েছে আপনার পোস্টটি।ধন্যবাদ আপনাকে।

ধন্যবাদ

বন্ধু মানে অন্য কিছু, বন্ধু মানেই ভালো সময়। আমিও অনেকদিন হচ্ছে বন্ধুদের সাথে বের হইনা। আপনার ছবিগুলো দেখে আমার বন্ধুদের কথা মনে পড়ে গেল। মনে হচ্ছে একদিন সময় করে বের হতেই হয় আর ছবিগুলো খুব ভাল ছিল। ছবিগুলো যে জায়গায় তুলেছেন জায়গাটি তো জাস্ট অসাধারণ ছিল। আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আমাদেরও একই অবস্থা হয় কোনটা ডিলিট করবো, কোনটা আপলোড দিব এসব দেখতে থাকি! পড়ে মজা পেলাম।

জি ঠিক বলেছেন। বন্ধু মানে খুশি।জীবনে খুশি থাকার একটি প্রধান কারণ হলো বন্ধু। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।